রুবল লোদী প্রচারবিমুখ বন্ধু আমার

আরিফ আহমেদ

Sharing is caring!

স্বপরিবারে রুবল লোদী

বগুড়া থিয়েটারের -কথা পূর্ণবর্ধন- নাটকের প্রথম মঞ্চায়ন অনুষ্ঠানে প্রখ্যাত নাট্যকার অধ্যাপক প্রয়াত সেলিম আল দীন স্যার, আন্তর্জাতিক নাট্যনির্দেশক নাসিরউদ্দিন ইউসুফ, সাংবাদিক ও ঐতিহ্য গবেষক বন্ধু সায়মন জাকারিয়া সহ আরো অনেকের মাঝে আমিও ছিলাম দর্শক সারিতে। নাটকের চমৎকার মঞ্চায়ন শেষে পরিচয় হয় তৌফিক হাসান ময়না এবং তার অন্যতম সহচর রুবল লোদীর সাথে। ১৯৯৮ সালের এই পরিচয় বদলে যায় গভীর বন্ধুত্বে। রুবল লোদী। বয়সে আমার এক বছরের বড় হয়েও অনায়াসে তুই তোকারির বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে আমাদের। বগুড়া গেলেই তার ঘরই হয় আমার আশ্রয় স্থল। হোটেল বা মোটেলের নাম নেয়াও হয় অপরাধ। রুবল, কমল ( কমল আজ নেই। আল্লাহ তাঁকে শান্তিতে রাখুন) দুজনেই ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে ওঠেন আমার। ২০০৫ পর্যন্ত এ ঘনিষ্ঠতা অটুট ছিল। তারপর ধীরে ধীরে ব্যস্ততার প্রয়োজনে যোগাযোগটা কমে যায়। তাই বলে মনের টান কমেনি কখনোই।
প্রচার বিমুখ রুবল লোদী নিজেকে লুকিয়ে রেখে অন্যের কৃতিত্ব তুলে ধরেন সবসময়।
কতবার বলেছি, তোকে নিয়ে একটা স্টোরি করি। এ কথা বলার পর থেকে যোগাযোগ আরো কমে যায়। চ্যানেল আইয়ের নাটকে রুবল লোদির অভিনয় মুগ্ধ দর্শক হয়ে মাঝে মধ্যে তার দেখা পেতাম। চ্যানেল আইয় ভবনে এসে হয়তো মনে মনে সে আমাকে খুজতো বলেই দেখাটা হয়ে যেত তখন। সর্বশেষ চ্যানেল আই ছেড়েছি ২০১৪ তে। ওটাই ছিলো আমাদের এখন পর্যন্ত শেষ দেখা বলা যায়। যদিও ঢাকা থিয়েটার উৎসবের আগে তাও দেখা হবার সুযোগ ছিলো। আমি ঢাকায় যখন রুবল বগুড়ায়। আর আমি এখন বরিশালে,  রুবল আছে ঢাকায়।

ফেসবুকের কল্যাণে প্রায় প্রতিদিনই দেখা হয় তার ছবি ও লেখার সাথে। এ দেখায় চোখ জুড়ালেও মন কি জুড়ায়?
আমার বন্ধু রুবল লোদী- চিৎকার করে সবাইকে বলতে চাই।
বলতে চাই কারণ আমিও গর্বিত হতে চাই এটা বলে।
রুবল লোদীর টাইমলাইনে হঠাৎ নীচের লেখাটি দেখে চমকে উঠি।

রুবল লিখেছেন –
আমি যখন ভাবছিলাম বগুড়ার মতো শহরে একটি আধুনিক সিনেমা হল নেই কিন্তু কে এই শুণ্যাতা পুরনের দ্বায়িত্ব নেবে ঠিক তখনি বছর তিনেক আগে রুবেল ভাইয়ের সাথে আমার দেখা হয়ে যায়। ঢাকা থেকে আয়নাবাজি সিনেমার প্রচারের দ্বায়িত্ব দেয়া হয় আমাকে। এর আগেও আমি বগুড়ার অনেক সিনেমা হল মালিকের সাথে কথা বলেছি বিষয়টা নিয়ে। বিভিন্ন অজুহাতে তারা এড়িয়ে গেছেন। শেষমেশ রানার গ্রুপের পরিচালক সাইরুল ভাই আমাকে ডেকে বললেন রানার প্লাজায় সিনেপ্লেক্স করা যায় কিনা দেখতে। আমি অনেক ভাবেই পর্যবেক্ষণ করলাম। প্রকৌশলী নিয়ে গেলাম। অবশেষে বিফল মনোরথে ফিরতে হলো। কোন ভাবেই সম্ভব না। আমি রুবেল ভাইকে মধুবন সিনেমা হলটি সংস্কার করার অনুরোধ করি। তাঁর বোধেও এমন ভাবনার কথা জেনে যারপর নেই খুশী হলাম। এরপর থেকে আমাদের ঘনিষ্ঠতা আরো বাড়লো। কাজ শুরু করলেন। কিন্তু তা যে এত ব্যাপক পরিসরে হবে চিন্তায় আসে নাই। সিনেমা হলের আসন কেনার জন্য তিনি আমাকে সঙ্গে করে চায়না যেতে চাইলেন। আমি তাঁকে খরচ কমানোর পরামর্শ দিলাম। কিন্তু রুচি যাঁর রাজকীয় তিনি আমার কথায় কান দেবেন কেন! তাঁর রুচির তারিফ না করা অসম্ভব। অবশ্য শিল্পের প্রতি নিগুঢ় প্রেম না থাকলে এমনটা সম্ভব নয়। বগুড়ার মধুবন সিনেমা রূপ নিল মধুবন সিনেপ্লেক্সে। যদিও আনুষ্ঠানিক ভাবে এর উদ্বোধন হয়নি। পরীক্ষামুলক ভাবে শুরু হয়েছে দর্শনীর বিনিময়ে প্রদর্শনী। গত শুক্রবার থেকে মধুবনের বিশাল পর্দায় দেখা যাচ্ছে নিখাদ দেশী চলচ্চিত্র ‘পদ্মাপুরাণ’। ঐদিন সন্ধ্যায় রুবেল ভাইয়ের জরুরি তলবে আমি আর ডা. জাহিদ উপস্থিত হলাম মধুবনে। ছবির কনটেন্ট

মধুবম সিনেপ্লেক্স

পারিবারিক আবহের বাইরে কিনা সেটা পরিষ্কার হওয়ার জন্য তিনি আমাদের হলে বসার আমন্ত্রণ জানালেন। আমি টিকিট নিতে উদ্দ্যত হলে তনি বাঁধা দিলেন। ফ্রি খাওয়া বাঙ্গালীর কিনে খাওয়া অভ্যাস নেই। পারলে জোর করে ফ্রি খায়। আমরা একবারও ভাবতে চাই না কি পরিমান কষ্ট করে এতো লগ্নীর মাধ্যমে পুরো বগুড়াবাসীকে তিনি সম্মানিত করেছেন। এখন বগুড়ার মানুষের দ্বায়িত্ব হচ্ছে তাঁকে সম্মান দেখানো। আমি তো ছেঁচড়ার দলভুক্ত। ভাগ্যিস ডা. জাহিদ আমার সাথে ছিলেন নচেৎ এই বোধ হয়তো আমার জাগ্রত হতো না। তিনি টিকিট না কেটে ঢুকবেন না। আমরা টিকিট কেটে প্রেক্ষাগৃহে ঢুকলাম। রুবেল ভাই নিজে আমাদের বসিয়ে দিয়ে গেলেন। জাহিদ ভাই বললেন “এতো আরামে তো ঘুমিয়ে পড়বো”। সত্যিই বর্ননাতীত সুখানুভূতি। সরকারী নির্দেশনা থাকলেও নানা তালবাহানায় সেগুলোর সুবিধা পাওয়া দুষ্কর। এই সিনেমা হলের দ্রব্য সামগ্রী আমদানীতে যে সকল সুবিধা পাওয়ার কথা দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তার নুন্যতমও সহযোগীতা করেন নি। সকল প্রতিকুলতা উপেক্ষা করেও রুবেল ভাইদের মতো শিল্পমনা মানুষরা এমন উদ্যোগকে সফলতায় রূপদান করেন। চলচ্চিত্র হচ্ছে একটা জাতিকে পরিচিত করার অনত্যম অস্ত্র। সেই অস্ত্র শানিত করার মাধ্যম প্রেক্ষাগৃহ। প্রেক্ষাগৃহের অক্সিজেন দর্শক। দর্শক আসবে। টিকেট কাটবে। সিনেমা দেখবে তবেই না এই শিল্প টিকে থাকবে। তখন সবাই মিলে হবে শিল্পের পৃষ্ঠপোষক। পদ্মাপুরাণ দেখলাম। বেশ ভাল একটি সিনেমা। অতি সাধারণ মানুষের জীবনের গল্প। সিনেমা শেষে দর্শক দেখে মন ভরে গেল। এই সংকটে এতো দর্শক আশার সঞ্চার ঘটায় বৈকি। মহিলাদের আধিক্য চোখে পড়ার মতো। মনে হলো সবার মনোভাব আমার মতোই ‘আবার আসতে হবে’ টাইপ। আগামী শুক্রবার থেকে কান চলচ্চিত্র উৎসব মাতানো সিনেমা ‘রেহানা মারিয়াম নূর’ প্রদর্শিত হবে। দেখব নিশ্চয়। ধন্যবাদ রুবেল ভাই। বিনোদনহীনতায় ভোগা বগুড়ার মানুষের জন্য এই শিক্ষামূলক বিনোদন ব্যাবস্থা করার জন্য। সকল প্রকার সহযোগীতার জন্য আমি এই প্রতিষ্ঠানের পাশে আছি। বগুড়ার মানুষ হিসেবে মধুবন সিনেপ্লেক্স এখন আমার গর্ব করার অপরিহার্য উপাদান।

Print Friendly, PDF & Email

Sharing is caring!

About the author

ডিসেম্বর ৭১! কৃত্তনখোলার জলে সাঁতার কেটে বেড়ে ওঠা জীবন। ইছামতির তীরঘেষা ভালবাসা ছুঁয়ে যায় গঙ্গার আহ্বানে। সেই টানে কলকাতার বিরাটিতে তিনটি বছর। এদিকে পিতা প্রয়াত আলাউদ্দিন আহমেদ-এর উৎকণ্ঠা আর মা জিন্নাত আরা বেগম-এর চোখের জল, গঙ্গার সম্মোহনী কাটিয়ে তাই ফিরে আসা ঘরে। কিন্তু কৈশরী প্রেম আবার তাড়া করে, তের বছর বয়সে তের বার হারিয়ে যাওয়ার রেকর্ডে যেন বিদ্রোহী কবি নজরুলের অনুসরণ। জীবনানন্দ আর সুকান্তে প্রভাবিত যৌবন আটকে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় পদার্পন মাত্রই। এখানে আধুনিক হবার চেষ্টায় বড় তারাতারি বদলে যায় জীবন। প্রতিবাদে দেবী আর নিগার নামের দুটি কাব্য সংকলন প্রশ্ন তোলে বিবেকবানের মনে। তার কবিতায়, উচ্চারণ শুদ্ধতা আর কবিত্বের আধুনিকায়নের দাবী তুলে তুলে নেন দীক্ষার ভার প্রয়াত নরেণ বিশ্বাস স্যার। স্যারের পরামর্শে প্রথম আলাপ কবি আসাদ চৌধুরী, মুহাম্মদ নুরুল হুদা এবং তৎকালিন ভাষাতত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রাজীব হুমায়ুন ডেকে পাঠান তাকে। অভিনেতা রাজনীতিবিদ আসাদুজ্জামান নূর, সাংকৃতজন আলী যাকের আর সারা যাকের-এর উৎসাহ উদ্দিপনায় শুরু হয় নতুন পথ চলা। ঢাকা সুবচন, থিয়েটার ইউনিট হয়ে মাযহারুল হক পিন্টুর সাথে নাট্যাভিনয় ইউনিভার্সেল থিয়েটারে। শংকর শাওজাল হাত ধরে শিখান মঞ্চনাটবের রিপোটিংটা। তারই সূত্র ধরে তৈরি হয় দৈনিক ভোরের কাগজের প্রথম মঞ্চপাতা। একইসমেয় দর্শন চাষা সরদার ফজলুল করিম- হাত ধরে নিযে চলেন জীবনদত্তের পাঠশালায়। বলেন- মানুষ হও দাদু ভাই, প্রকৃত মানুষ। সরদার ফজলুল করিমের এ উক্তি ছুঁয়ে যায় হৃদয়। সত্যিকারের মানুষ হবার চেষ্টায় তাই জাতীয় দৈনিক রুপালী, বাংলার বাণী, জনকণ্ঠ, ইত্তেফাক, মুক্তকণ্ঠের প্রদায়ক হয়ে এবং অবশেষে ভোরেরকাগজের প্রতিনিধি নিযুক্ত হয়ে ঘুরে বেড়ান ৬৫টি জেলায়। ছুটে বেড়ান গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। ২০০২ সালে প্রথম চ্যানেল আই-্র সংবাদ বিভাগে স্থির হন বটে, তবে অস্থির চিত্ত এরপর ঘনবদল বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, আমাদের সময়, মানবজমিন ও দৈনিক যায়যায়দিন হয়ে এখন আবার বেকার। প্রথম আলো ও চ্যানেল আই আর অভিনেত্রী, নির্দেশক সারা যাকের এর প্রশ্রয়ে ও স্নেহ ছায়ায় আজও বিচরণ তার। একইসাথে চলছে সাহিত্য বাজার নামের পত্রিকা সম্পাদনার কাজ।