হায় ভোলা মন : আবারো মগের মুল্লুকে পদার্পন

আরিফ আহমেদ

Sharing is caring!

যুদ্ধ করেছি
শুদ্ধ হতে,
মুক্ত স্বদেশে।
এখনো
অশুদ্ধ জাতি,
পারিনি বাঙ্গালী হতে। (২৫ মার্চ স্মরণে)

Robi-2লাখো মানুষের উপস্থিতিতে জাতীয় পতাকা তৈরির পর, এবার লাখো কণ্ঠের জাতীয় সংগীতে বিশ্বরেকর্ড গড়ার প্রতিযোগিতা চলছে। এতে ব্যয় হচ্ছে কয়েকশ কোটি টাকা।
শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর বা গণজাগরণ মঞ্চ ১৬ কোটি মানুষকে জাতীয় পতাকা হাতে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে দিল মাত্র একদিনের নোটিশে এবং জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন হলো বিনাখরচে। সেখানে কোটি কোটি টাকার অপচয় করে ৩ লাখ মানুষের সমাগম ও বিশ্বরেকর্ড গড়ার বিস্ময়কর প্রতিযোগিতা এবং সবকিছু দেখেও কিছুই না দেখার ভান কওে থাকা আমাদেও সুশীল সমাজের আচারণে বার বার একটা কথাই মনে পড়ে – এটা কি মগের মুল্লুক নাকি?
এই চুপ ব্যাটা এটা আর্মিদেও কাজ দেখছোনা? আর্মিদেও কাজ মানেই কিছু বলা যাবেনা? সেনাবাহিনী দেশের নিরপত্তার নিশ্চয়তা বাদ দিয়ে ইদানিং ঠিকাদার আর বিনোদনের কাজ করছে দেখেও চুপ থাকতে হবে? সেনাবাহিনীর লোকেরা কি এই বাংলাদেশের নাগরিক নয়? তারা কি এসব বিষয়ে জড়িত হয়ে বিতর্কিত হচ্ছেন, না ভালো আছেন?
ছোটবেলা চাচা-মামাদেও মুখে প্রায়ই শুনতাম এই মগের মুল্লুক শব্দটি। কেন বা কি এই মগের মুল্লুক তা বুঝতাম না। তবে আজকের এই বাংলাদেশে ভোট দেয়ার অধিকার বঞ্চিত মানুষের কাতাওে দাঁড়িয়ে যখন দেখি পদ্মাসেতু  আজো হল না। ভাড়া বিদুৎ বোঝা টানতে গিয়ে বাড়ছে বিদুৎ বিল, বাজার দর, নিত্য পণ্যের দাম বৃদ্ধিও সাথে সাথে বাড়ছে চুরি, ছিনতাই আর হত্যা। একইসাথে পাল্লা দিয়ে কমছে শ্রমজীবী মানুষের আয় রোজগার তখন এই শত শত কোটি টাকা খরচ কওে বিশ্বরেকর্ড গড়ার বিষয়টা শুধু হাস্যকরই নয় অনেক প্রশ্নেরও জন্ম দেয় মনে। এর পিছনে বড় কোনো ষড়যন্ত্র নেইতো। দশ ট্রাক অস্ত্র বহনের মতো আরো বড় কোনো ঘটনার আঢ়াল করতে মানুষকে ব্যস্ত রাখার কৌশল নাতো এটি? সাংবাদিক বন্ধুরা দযা করে চোখ কান খোলা রাখুন। রামপাল বিদুৎ, তিস্তার পানিতে বাঁধ বা বর্ডার এলাকায় কোনো অনিয়ম কিম্বা বঙ্গোপসগওে নতুন কোনো তৎপরতা চোখে পড়লেই প্রতিবাদী হোন।
অনেক বিষয় নিয়ে আমাদের সংবাদ মাধ্যমের আর কোনো সাড়া শব্দ নেই। সাগর রুনি হত্যা, নারায়নগঞ্জের ভারতীয় কনটেইনার ঘাট নির্মার্ণেও সেই টেন্ডার, ট্রানজিট বিষয় সব ধামাচাপা পওে আছে এই সব জাতীয় বিশ্বরেকর্ডেও আঢ়ালে।
আনন্দেও খাতিওে যদি মেনেও নেয়া যায় যে, ২৬ মার্চ প্যারেড গ্রাউন্ডের এই মহামিলন, লাখো কণ্ঠের জাতীয় সঙ্গীতের পরিবেশনা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস বিশ্বকে মুগ্ধ করলো, আমরাও মুগ্ধ হলাম। তারপর…?
কি হবে তারপর? একটা দিনের মাত্র একঘন্টার বিনোদন ব্যয় যদি ৩০০ কোটি টাকা হয়, সে বিনোদন আমাদের কতটা প্রয়োজন?
লাখো মানুষের উপস্থিতিতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পতাকা তৈরি কওে রবি আজিয়াটা যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে তা রবি আজিয়াটাদের প্রচারণার অংশ। সে জন্য যে ব্যয় সেটা ঐ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল থেকে। কিন্তু একটি রাষ্ট্র কি একই কাজ করতে পারে? সেটা কি মানানসই?
এ নিয়ে একদম নিরব আমাদেও তথাকথিত সুশীল সমাজ ও নাগরিক সমাজ নেতৃবৃন্দ। কারণ সেনাবাহিনী জড়িত। সেনাবাহিনী যদি ঠিকাদারি আর বিনোদনের জন্য কাজ করতে পাওে তবে তাদেও নিয়ে আমরাও কথা বলতে পারি। আমরা তো বলছি না যে দেশের মুল বাজেটের ৩০ ভাগ তাদেও জন্য ব্যয় করে বিনিময় কি পাচ্ছি? সেনানিবাসের অভ্যন্তওে তারা যে পৃথক রাজত্ব তৈরি কওে রেখেছে, এ নিয়েও তো কখনো প্রশ্ন করেনি কেউ। কিন্তু আজ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি কি? আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি দশা, উপজেলা নির্বাচনকে ঘীরে সরকারী জয়ের অপচেষ্টায় সহিংশতা ক্রমে বাড়ছে। ২৪ মার্চ একদিনে ১৪টি খুন সংবাদ রয়েছে পত্রিকায়। এ সব যেন সেনাবাহিনী সদস্যরা দেখতে না পায় তাই তাদের আউটসোর্সিং কাজে ব্যস্ত রাখা  সরকারী হঠকারিতার অংশ এই লাখো কন্ঠের গান। হায় ভোলা মন… আর কবে তুই নিজের উপর করবি শাসন?।
১৬ কোটি মানুষের মধ্যে গুটিকয় অন্ধ আওয়ামী লীগার বাদে বাকি সবাইকে অবুঝ আর নাদান বানালো শেখ হাসিনার সরকার । কি মস্ত প্রহসন?

Print Friendly, PDF & Email

Sharing is caring!

About the author

ডিসেম্বর ৭১! কৃত্তনখোলার জলে সাঁতার কেটে বেড়ে ওঠা জীবন। ইছামতির তীরঘেষা ভালবাসা ছুঁয়ে যায় গঙ্গার আহ্বানে। সেই টানে কলকাতার বিরাটিতে তিনটি বছর। এদিকে পিতা প্রয়াত আলাউদ্দিন আহমেদ-এর উৎকণ্ঠা আর মা জিন্নাত আরা বেগম-এর চোখের জল, গঙ্গার সম্মোহনী কাটিয়ে তাই ফিরে আসা ঘরে। কিন্তু কৈশরী প্রেম আবার তাড়া করে, তের বছর বয়সে তের বার হারিয়ে যাওয়ার রেকর্ডে যেন বিদ্রোহী কবি নজরুলের অনুসরণ। জীবনানন্দ আর সুকান্তে প্রভাবিত যৌবন আটকে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় পদার্পন মাত্রই। এখানে আধুনিক হবার চেষ্টায় বড় তারাতারি বদলে যায় জীবন। প্রতিবাদে দেবী আর নিগার নামের দুটি কাব্য সংকলন প্রশ্ন তোলে বিবেকবানের মনে। তার কবিতায়, উচ্চারণ শুদ্ধতা আর কবিত্বের আধুনিকায়নের দাবী তুলে তুলে নেন দীক্ষার ভার প্রয়াত নরেণ বিশ্বাস স্যার। স্যারের পরামর্শে প্রথম আলাপ কবি আসাদ চৌধুরী, মুহাম্মদ নুরুল হুদা এবং তৎকালিন ভাষাতত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রাজীব হুমায়ুন ডেকে পাঠান তাকে। অভিনেতা রাজনীতিবিদ আসাদুজ্জামান নূর, সাংকৃতজন আলী যাকের আর সারা যাকের-এর উৎসাহ উদ্দিপনায় শুরু হয় নতুন পথ চলা। ঢাকা সুবচন, থিয়েটার ইউনিট হয়ে মাযহারুল হক পিন্টুর সাথে নাট্যাভিনয় ইউনিভার্সেল থিয়েটারে। শংকর শাওজাল হাত ধরে শিখান মঞ্চনাটবের রিপোটিংটা। তারই সূত্র ধরে তৈরি হয় দৈনিক ভোরের কাগজের প্রথম মঞ্চপাতা। একইসমেয় দর্শন চাষা সরদার ফজলুল করিম- হাত ধরে নিযে চলেন জীবনদত্তের পাঠশালায়। বলেন- মানুষ হও দাদু ভাই, প্রকৃত মানুষ। সরদার ফজলুল করিমের এ উক্তি ছুঁয়ে যায় হৃদয়। সত্যিকারের মানুষ হবার চেষ্টায় তাই জাতীয় দৈনিক রুপালী, বাংলার বাণী, জনকণ্ঠ, ইত্তেফাক, মুক্তকণ্ঠের প্রদায়ক হয়ে এবং অবশেষে ভোরেরকাগজের প্রতিনিধি নিযুক্ত হয়ে ঘুরে বেড়ান ৬৫টি জেলায়। ছুটে বেড়ান গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। ২০০২ সালে প্রথম চ্যানেল আই-্র সংবাদ বিভাগে স্থির হন বটে, তবে অস্থির চিত্ত এরপর ঘনবদল বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, আমাদের সময়, মানবজমিন ও দৈনিক যায়যায়দিন হয়ে এখন আবার বেকার। প্রথম আলো ও চ্যানেল আই আর অভিনেত্রী, নির্দেশক সারা যাকের এর প্রশ্রয়ে ও স্নেহ ছায়ায় আজও বিচরণ তার। একইসাথে চলছে সাহিত্য বাজার নামের পত্রিকা সম্পাদনার কাজ।