যানজটে নাজেহাল ময়মনসিংহঃ সচেতন মেয়র জানালেন প্রশাসন

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাহিত্য বাজার

Sharing is caring!

যানজটে নাজেহাল ময়মনসিংহঃ সচেতন মেয়র জানালেন প্রশাসন

দীর্ঘ যানজটের কবলে পরে প্রতিদিন নাজেহাল হচ্ছেন বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার বাসিন্দারা। এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সচেতন আছেন সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু, জানালেন সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা।

২০ সেপ্টেম্বর দুপুরে ময়মনসিংহ জেলা শহরের মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ড পার হতেই দীর্ঘ যানজট দেখে মনে হলো ঢাকার সদরঘাটের চিত্র যেন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি এখানেই। মেডিকেলের সামনে এমন যানজট ও ফুটপাত দখলের বাণিজ্য আর কোনো জেলা শহরে চোখে পড়েনি।
মাসকান্দা থেকে চরপাড়া মোড়ের এই যানজটই শেষ নয়, এরপর ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড, গাঙ্গিনার পাড়, নতুনবাজার মোড়, টাউনহল মোড়, কাচারী মোড় ছাড়াও ছোট বাজার বড় বাজার সড়কের অবস্থা ঢাকাকেও হারমানাবে যানজট প্রতিযোগিতায়।
আর এ সবকিছুর জন্য সিটি মেয়রের উদাসীনতাকে দায়ী করলেন স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে শহরে অবাধে ইজিবাইক ও অটোরিকশা চলাচলের অনুমতি দিয়ে গাড়ি প্রতি ৬০০০ টাকা নগদ আয়ের পথ তৈরি করছে সিটি করপোরেশন। যে কারণে গাড়ির সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে যানজট।

অন্যদিকে ইজিবাইক ও অটোরিকশা চালকদের দাবি ইচ্ছে মতো রিউন্যু চার্জ বসিয়ে জবরদস্তি করা হচ্ছে তাদের সাথেও। নির্দিষ্ট সংখ্যক ইজিবাইক চলার কথা থাকলেও টাকার বিনিময়ে যাকে ইচ্ছে অনুমোদন দিচ্ছে তারা।

চরপাড়ার ব্যবসায়ী আব্দুল কাদির বলেন, যতটুকু উন্নয়ন সবটাই দৃশ্যমান সড়কের। অলিগলির সড়কগুলোর বেহাল দশা। আর ইজিবাইক ও অটোরিকশা এতো বেড়েছে যে যানজটের মুল কারণ এগুলো।

নগরে যানজট বাড়ার কারণ হিসেবে সিটি করপোরেশন বলছে, ময়মনসিংহ একটি পুরোনো শহর। সড়কগুলো খুব সরু। গত ১০ বছরে এ নগরে মানুষ বেড়েছে কয়েক গুণ। নগরের ভেতর দিয়ে অন্তত ছয়টি রেলক্রসিংয়ে আটকা পড়তে হচ্ছে যানবাহন। তা ছাড়া নগরে নিয়ম না মেনে প্রতিদিন চলছে অসংখ্য ইজিবাইক ও রিকশা। এসব কারণে অনেক চেষ্টা থাকার পরও যানজট সমস্যার কোনো সমাধান হচ্ছে না। তবে খুব দ্রুত, পরিবহনমালিক, শ্রমিক, ট্রাফিক বিভাগ, রেলওয়েসহ বিভিন্ন বিভাগের মানুষদের নিয়ে সিটি করপোরেশন একটি সভা করে যানজট থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে আলোচনা করবে।
(যদিও গত চার বছরে এই সভায় কোনোকিছুই চূড়ান্ত করতে পারেনি সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।)

এসব সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা বলেন, যানজটের আরও কারণ থাকলেও মূলত সড়কে ইজিবাইক ও রিকশার কারণে তা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রায় এক বছর ধরে নগরের বিভিন্ন সড়কে দেখা যাচ্ছে ইজিবাইক প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি। অনেক ইজিবাইক একজন কি দুজনের বেশি যাত্রীও পাচ্ছে না। অথচ একটি ইজিবাইকে সাত থেকে আটজন যাত্রী বসতে পারে। সিটি করপোরেশনের উচিত, এসব ইজিবাইক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা। পাশাপাশি শুধু প্রধান প্রধান সড়কের উন্নয়ন না করে অলিগলির সড়কগুলো দ্রুত সংস্কার করার অনুরোধ বাসিন্দাদের।

ময়মনসিংহের ট্রাফিক পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান এ বিষয়ে বলেছেন, বেশিরভাগ ইজিবাইক ও অটোরিকশা চালকদের কোনোরকম প্রশিক্ষণ নেই। যানবাহন চালানোর বিষয়ে এদের মাঝে কোনো সচেতনতাও নেই।
তিনি বলেন, এসব চালকদের সচেতনতা সৃষ্টির বিষয়ে সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা চলছে।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের হিসাবে, বর্তমানে বৈধ ইজিবাইকের সংখ্যা ছয় হাজার। আর রিকশার সংখ্যা ১০ হাজার।

কয়েকজন চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিটি করপোরেশন নির্বাচন হওয়ার পর থেকে ময়মনসিংহ নগরে বেড়েছে ইজিবাইক। শহরতলিতে থাকা কয়েকটি ইউনিয়নের ইজিবাইক ও রিকশা শহরে প্রবেশ করতো না আগে। নির্বাচনের পর থেকে এসব ইজিবাইক নিয়মিতভাবে ময়মনসিংহ নগরে চলাচল করছে। তাছাড়া সিটি করপোরেশন থেকে অনুমতি পাওয়া ইজিবাইকগুলো জোড় ও বিজোড় সংখ্যায় ভাগ হয়ে একদিন পরপর পালাক্রমে চলাচল করার নিয়ম। জোড় ও বিজোড় সংখ্যায় ভাগ করা ইজিবাইকগুলো লাল ও সবুজ রঙে চিহ্নিত। তবে এ ক্ষেত্রেও অনেক চালক নিয়ম না মেনে প্রতিদিন চালাচ্ছেন। আবার অনেকেই রাতারাতি ইজিবাইকের রং বদলে নিয়ে ভুয়া নম্বর ব্যবহার করে প্রতিদিন চলাচল করছে। এ কারণে নগরের বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য নাগরিক মঞ্চ, নাগরিক আন্দোলন কমিটিসহ একাধিক নাগরিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে সিটি করপোরেশনের কাছে বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা নাগরিক মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা কবি ও সাংবাদিক স্বাধীন চৌধুরী ।
তিনি বলেন, যানজটের কারণে বর্তমানে ময়মনসিংহ নগরী বসবাসের অযোগ্য হয়ে পরেছে। এ সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে দিনে দিনে মানুষের ভোগান্তি বাড়বে যা মোটেও কাম্য নয়।

নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগের যুগ্ম আহ্বায়ক আইনজীবী শিব্বির আহমেদ বলেন, যানজটের কারণে বর্তমানে ময়মনসিংহ নগরী বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। প্রয়োজনে সুশীল সমাজ ও নাগরিক কমিটির সাথে বৈঠক করে পদক্ষেপ নিতে পারেন তারা।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সিইও) আনোয়ার হোসেন মুখোমুখি সাক্ষাৎকারে বলেন, যানজটের বিষয়টি মেয়র মহোদয় জানেন। তিনি এ নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে সভা করে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহনের চেষ্টা চালাচ্ছেন । ইতিমধ্যে নাগরিক সমাজের সাথে বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। আসলে আমাদের এই সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম মাত্র দু বছরের। এখানে অলিগলিতে সরু রাস্তা। তারউপর সব রাস্তা সিটি করপোরেশনের নয়। আমরা সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার চেষ্টা করছি।

আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালাচ্ছি। তবে যানজট সহনীয় পর্যায়ে নেওয়ার জন্য আইন প্রয়োগের চেয়ে সবার সহযোগিতা বেশি প্রয়োজন। এখানে ১৭ টি রেলপথ রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৩২ টি ট্রেন চলাচল করলে ৩২ বার যানজটের সৃষ্টি হয়। এসব বিষয় মাথায় রেখে মেয়র মহোদয় পরিকল্পিত নগরায়ন চেষ্টা করছেন। বাস ও ট্রাক ষ্ট্যাণ্ড শহরের বাইরে নেয়া, রেলপথগুলো ঘুরিয়ে দেয়া এবং মেডিকেলের সামনের ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর নীচে কার পার্কিং ব্যবস্থা ইত্যাদি বেশকিছু উদ্যোগ ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নিয়েছে। একটু সময় লাগবে এগুলোর বাস্তবায়ন দেখতে।
সে সময় যতটা খুশি লাগুক তাতে আপত্তি নেই নগরবাসীর। তবে এই মুহূর্তে মেডিকেলের সামনের ফুটপাত হকার মুক্ত হোক এটাই তাদের একান্ত দাবী। একইসাথে ইজিবাইক ও অটোরিকশা চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করার পরামর্শ তাদের। এজন্য সিটি করপোরেশনের নিজস্ব ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কর্মী থাকা জরুরী মনে করেন নগরবাসী।

Print Friendly, PDF & Email

Sharing is caring!