দেখা থেকে লেখা : সরেজমিনে ভোট কেন্দ্র

আরিফ আহমেদ

Sharing is caring!

টুঙ্গিবাড়িয়া ভোট কেন্দ্র

ফাঁকা মাঠে গোল
ফাটাই নিজের ঢোল
মন যা চায় করি
পরের ধনে পোদ্দারি।।।।

(যেহেতু বিএনপি নির্বাচন বয়কট করেছে, তাই নিজেদের মধ্যে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের এই নির্বাচনে কোনো সংঘাত আশা করেন নাই বরিশালের সচেতন নাগরিক সমাজ। তারপরও বেলা বারোটার মধ্যে দুইজন নিহত ‍এবং সন্ধ্যার পরে ‍একজনসহ শতজন আহত হবার সংবাদে আমরাও আহতদের দলভুক্ত হলাম। সালাম মহাশয় সালাম)

২১ জুন সোমবার ২০২১। বরিশাল বিভাগের ১৭৩ টি ইউপিতে সকাল আটটা থেকেই ৯ লাখ ২০ হাজার ৩৩০ এবং পুরুষ ৪ লাখ ৬৮ হাজার ১৩৩ জনের ভোট গ্রহন শুরু হয়েছে। চারিদিকে থেকে প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য আমাকে উৎসাহিত করলো কোনো একটি কেন্দ্র সরাসরি কাছ থেকে দেখার। কীর্তনখোলা পত্রিকার সম্পাদক ও ঢাকার এসএ টিভির বরিশাল প্রতিনিধি সালেহ টিটু বললেন, চলেন শহরের বাইরে টুঙ্গিবাড়িয়া ইউপি পর্যবেক্ষণ করে আসি। দুই বন্ধু বাইক নিয়ে ছুটলাম।
বেলা ৯টা ৩৫ এ আমরা বারইকান্দি কেন্দ্রের কাছে পৌঁছে থমকে গেলাম। কাঁচা সড়ক। বৃষ্টিতে হাটু কাঁদা। সকাল সাতটা থেকেই বরিশাল অঞ্চলে বৃষ্টি চলছে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে শুধু আমরা নই শত শত মহিলা পুরুষ ভোটার চলছেন ভোট কেন্দ্রের দিকে।যা ‍আমার কাছে ‍একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল। কেনেনা ‍আমি পরিস্থিতি যা দেখেেছি ও যেসব মন্তব্য গত দুমাসে শুনেছি তার সাথে ‍এই চিত্রের কোনো মিল নেই।কারণ ‍এখানের সবাই ‍একবাক্যে ‍আওয়াম লীগ সমর্থক। তাই ‍আওয়ামী লিগের ভোটের প্রয়োজন নেই বলেই সকলের ধারণা।

যাইহোক বারইকাঠী কেন্দ্রর অনেকটা ‍আগেই দাঁড়িয়ে ‍আমরা যখন ভোটারদের কাদামাখা যাত্রাপথ দেখছি ঠিক তখন ভোটারদের একজন বললেন, এই সেন্টারে মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে পারবেন না। তাছাড়া এখানে ভোটারও কম। আপনারা পতাং, সিংহেরকাঠী বা টুঙ্গিবাড়িয়া সেন্টারে যান। ওখানে মোটরসাইকেল নিয়ে সহজে যেতে পারবেন। আর ওই দুটো কেন্দ্রই গুরুত্বপূর্ণ।
সুন্দর পিচঢালা পথে আমরা পৌঁছলাম পতাং মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। অবাক বিস্ময়ে দেখলাম আবালবৃদ্ধবনিতা উৎসব আমেজে ঘীরে আছেন ভোটকেন্দ্রের তিনপাশে। চারপাশে নয়, কারণ, একপাশে গ্রামের বাড়িঘর লোকালয়।

আমরা ভিতরে প্রবেশ করে আরো হতভম্ব হলাম। নারীদের দীর্ঘলাইন। স্বতঃস্ফূর্ত লাইন পুরুষদেরও। এটা আমরা আশাই করিনি। দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা মনির জানালেন, ‍এটা গুরুত্বপুর্ণ কেন্দ্র। তাই টহলরত বিজেবি ছাড়াও এখানের কেন্দ্রে কর্মকর্তাসহ ২৫ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। আছেন মোবাইল টিম ও আনসার সদস্য।
আমরা ‍এই কেন্দ্রের ‍একটি মাত্র দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করশাম। চারপাশে দেয়াল ঘেরা চমৎকার নিরাপত্তাবেষ্টনীর ‍একটি ভোটকেন্দ্র ‍এটি। হঠাৎই দরজায় কিছুটা শোরগোলে ‍আমরা ‍এগিয়ে গেলাম।
থুরথুরে বৃদ্বাকে দেখে আমাদের ক্যামেরা আর চুপ থাকতে পারলোনা। নাতির কোলে চড়ে দাদি এলেন ভোট দিতে। ভাঙ্গা ভাঙ্গা ফোকলা দাঁতে আনন্দের সাথে জানালেন, কতবছর পর একটা ভোট দেবার সুযোগ পাইছি। গতবারতো আমার ভোট ভুতে দিছিলো। মরি না বাঁচি এইবার ভোটটা দিয়া যাই।
ভোট দেয়া হলে বৃদ্ধার পিছু নিলাম। কেন্দ্র থেকে অনেকটা দূরে সরে গিয়ে জানলাম তিনি ‍আওয়ামী লীগ সমর্থক দাবী করে ভোট দিয়েছেন নাদিরা রহমান, চশমা মার্কায়। আরো জানলাম, পথে কম হরেও দশজনই ‍আমাকে জানালেন, অনেকটা ‍ইচ্ছে করেই জানালেন ‍এখানের সবাই ‍আওয়ামী লীগ। ‍আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প নাই।
চেয়ারম্যান পদে টুঙ্গিবাড়িয়া ইউপিতে মোট পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ‍আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান বাহাউদ্দীন আহমেদ। একবারেই নবাগত একজন সাবেক সরকারী ‍উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সহধর্মিনী নাদিরা রহমান চশমা মার্কা। আনারস নিয়ে মাসরুর আলম নাসির মিয়া, ঘোড়া মার্কা নিয়ে জব্বার মোল্লা ‍এবং হাতপাখা প্রার্থীর নামই জানেনা এখানের অনেকে । নিতান্ত নিরিহ প্রকৃতির মানুষ মোকলেছুর রহমান।
এখানের ঘুড়ি মার্কার মেম্বর প্রার্থী মামুন জানালেন, মোট নয়টি ভোট কেন্দ্র এখানে।
ধোপাকাঠি, বারইকান্দি, সিংহের কাঠি বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু অন্যগুলোতে সুযোগ পেলেই হাঙ্গামা হয়। পতাং কেন্দ্রতে প্রায় তিনহাজার (২৮৫৬) ভোটার রয়েছে। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র কারন চেয়ারম্যান প্রার্থী তিনজনের বাড়ি এখানে কাছাকাছি। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টুঙ্গবাড়িয়া। ওখানে ৩২০০ ভোটার।

আমরা ভিতরে মহিলাদের দীর্ঘ লাইনে যখন মুগ্ধ ঠিক তখন বাহিরে একটা হট্টগোল পুলিশের বাঁশির হুইশেলে একটা আতঙ্ক টের পেলাম।বাহিরে উঁকি দিয়ে বিষয়টি কি জানার চেষ্টা। কোনো এক প্রার্থীর সমর্থক তখন ব্যালট ছিনতাই ব্যালট ছিনতাই বলে গান গাওয়ার চেষ্টা করে এলাকায় গন্ডগোল পাকানোর চেষ্টা করছে। পুলিশ তাকে তাড়া করলে সে পালিয়ে যায়।
বেলা ১১টা ৩০। টুঙ্গবাড়িয়ার ভোটকেন্দ্র থেকে ফোন এলো। কাশিপুর, জাগুয়া ও চরবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিনিধিরা অবশ্য বিচ্ছিন্ন কিছু বিশৃঙ্খলার কথা বললেন। তবে ভোটারদের উপস্থিতি তা দূর করে দিয়েছে। বলা চলে সবখানে একইচিত্র। উৎসব আমেজে নারী-পুরুষের ভোট প্রদানের এই দৃশ্য ২০০১ এর নির্বাচনকে স্মরণ করিয়ে দিলো।
এদিকে ভোলা পটুয়াখালী , বরগুনা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের অবস্থা জানতে ব্যাকুল আমি। বন্ধু সালেহ টিটু বললেন, একটু ধৈর্য ধরুন। সব পাবেন। বেলা বারটায় এসএটিভির লাইভ সম্প্রচার পতাং কেন্দ্র থেকে। তারপরই ব্যবস্থা করছি। টিটু তার লাইভ প্রোগ্রাম শুরু করলেন… ।
লাইভ শেষ করেই সালেহ টিটু ফোনে কয়েকজন প্রতিনিধিকে ফোন করে সদরের ৪টি ইউপির সংবাদ নিলেন। জানা গেল মুলাদির ছবিপুর এলাকায়, উজিরপুরে ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা ও হিজলায় হরিনাথপুর ইউনিয়ন এর ৬ নং ওয়ার্ড বদরটুনি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্র দখল করে নেয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। অন্য সব কেন্দ্রে সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচনের সংবাদ পাওয়া গেল। তবে সবজায়গায় মেম্বর প্রার্থীদের মধ্যে একটা গন্ডগোল পাকানোর চেষ্টা ছিল।
এদিকে জেলার ৫০টি ইউপির নির্বাচন সম্পর্কে বেলা দুটা পর্যন্ত কিছু পৃথক বিশৃঙ্খলা ছাড়া শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের সংবাদ পাওয়া গেছে। তবে ভোলা ও বরগুনায় ব্যাপক সহিংসতা ঘটেছে বলে জানা গেছে। চারটার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে বলে আশা করছি।

Print Friendly, PDF & Email

Sharing is caring!

About the author

ডিসেম্বর ৭১! কৃত্তনখোলার জলে সাঁতার কেটে বেড়ে ওঠা জীবন। ইছামতির তীরঘেষা ভালবাসা ছুঁয়ে যায় গঙ্গার আহ্বানে। সেই টানে কলকাতার বিরাটিতে তিনটি বছর। এদিকে পিতা প্রয়াত আলাউদ্দিন আহমেদ-এর উৎকণ্ঠা আর মা জিন্নাত আরা বেগম-এর চোখের জল, গঙ্গার সম্মোহনী কাটিয়ে তাই ফিরে আসা ঘরে। কিন্তু কৈশরী প্রেম আবার তাড়া করে, তের বছর বয়সে তের বার হারিয়ে যাওয়ার রেকর্ডে যেন বিদ্রোহী কবি নজরুলের অনুসরণ। জীবনানন্দ আর সুকান্তে প্রভাবিত যৌবন আটকে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় পদার্পন মাত্রই। এখানে আধুনিক হবার চেষ্টায় বড় তারাতারি বদলে যায় জীবন। প্রতিবাদে দেবী আর নিগার নামের দুটি কাব্য সংকলন প্রশ্ন তোলে বিবেকবানের মনে। তার কবিতায়, উচ্চারণ শুদ্ধতা আর কবিত্বের আধুনিকায়নের দাবী তুলে তুলে নেন দীক্ষার ভার প্রয়াত নরেণ বিশ্বাস স্যার। স্যারের পরামর্শে প্রথম আলাপ কবি আসাদ চৌধুরী, মুহাম্মদ নুরুল হুদা এবং তৎকালিন ভাষাতত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রাজীব হুমায়ুন ডেকে পাঠান তাকে। অভিনেতা রাজনীতিবিদ আসাদুজ্জামান নূর, সাংকৃতজন আলী যাকের আর সারা যাকের-এর উৎসাহ উদ্দিপনায় শুরু হয় নতুন পথ চলা। ঢাকা সুবচন, থিয়েটার ইউনিট হয়ে মাযহারুল হক পিন্টুর সাথে নাট্যাভিনয় ইউনিভার্সেল থিয়েটারে। শংকর শাওজাল হাত ধরে শিখান মঞ্চনাটবের রিপোটিংটা। তারই সূত্র ধরে তৈরি হয় দৈনিক ভোরের কাগজের প্রথম মঞ্চপাতা। একইসমেয় দর্শন চাষা সরদার ফজলুল করিম- হাত ধরে নিযে চলেন জীবনদত্তের পাঠশালায়। বলেন- মানুষ হও দাদু ভাই, প্রকৃত মানুষ। সরদার ফজলুল করিমের এ উক্তি ছুঁয়ে যায় হৃদয়। সত্যিকারের মানুষ হবার চেষ্টায় তাই জাতীয় দৈনিক রুপালী, বাংলার বাণী, জনকণ্ঠ, ইত্তেফাক, মুক্তকণ্ঠের প্রদায়ক হয়ে এবং অবশেষে ভোরেরকাগজের প্রতিনিধি নিযুক্ত হয়ে ঘুরে বেড়ান ৬৫টি জেলায়। ছুটে বেড়ান গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। ২০০২ সালে প্রথম চ্যানেল আই-্র সংবাদ বিভাগে স্থির হন বটে, তবে অস্থির চিত্ত এরপর ঘনবদল বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, আমাদের সময়, মানবজমিন ও দৈনিক যায়যায়দিন হয়ে এখন আবার বেকার। প্রথম আলো ও চ্যানেল আই আর অভিনেত্রী, নির্দেশক সারা যাকের এর প্রশ্রয়ে ও স্নেহ ছায়ায় আজও বিচরণ তার। একইসাথে চলছে সাহিত্য বাজার নামের পত্রিকা সম্পাদনার কাজ।