কিডনী নেবেন, কিডনী! একজন শিল্পীর আর্তনাদ

ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি

Sharing is caring!

কীডনী নেবেন কিডনী, একজন লেখকের নির্ভেজাল কিডনী? এভাবেই গলায় কিডনী বিক্রির প্লাকার্ড ঝুলিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটির নাম সাইফুল্লাহ নবীন। একজন মুক্তিযুদ্ধের গল্প লেখক, শিশু সাহিত্যিক এবং চিত্রশিল্পীর এই প্লাকার্ড চোখে পড়েনা পাশ ঘেষে ছুটে চলা পাজেরো মালিকের, মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিকের। চোখে পড়েনা মানবতা বাজারের মানব দরদী ডাঃ মনীষা চক্রবর্ত
ীর।

করোনাকালে ঋনের বোঝা শোধ করতে না পেরে কিডনী বিক্রির প্লাকার্ড গলায় ঝুলিয়ে প্রদর্শন করছেন মুক্তিযুদ্ধের গল্প লেখক, শিশু সাহিত্যিক এবং চিত্রশিল্পি সাইফুল্লাহ নবীন। গত রবিবার বেলা সাড়ে ১২্টার দিকে বরিশাল নগরীর টাউন হলের সামনে এই প্লাকার্ড বহনরত দেখা যায় তাকে।

তার বাড়ি বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার চরহোগলা গ্রামে। এর আগে লেখালেখির পাশাপাশি ঢাকায় বাংলা একাডেমীর একুশের বই মেলায় বর্নমালা শিল্প ও স্টল সাঁজসজ্জার কাজ করতেন তিনি।

তার গলায় ঝুলানো প্লাকার্ডে লেখা রয়েছে – ‘করোনার ২ বছরের কাছাকাছি, অসহায় মানুষ, অসহায় আমি, কাজ নেই কর্ম নেই, ৩ লাখ টাকা ঋণ, ঋণ পরিশোধ করতে কিডনী বিক্রি করতে চাই, রক্তের গ্রুপ বি পজেটিভ’।
এ সময় কৌতুহলী লোকজন দাঁড়িয়ে তার প্রদর্শিত প্লাকার্ড পড়েন। কিন্তু তাদের কাছেও ছিল না সহানুভূতির কোন কথা। এ সময় এক ব্যক্তির চোখে পানি আসলে তা লুকানোর চেষ্টা চালিয়ে সেখান থেকে সটকে পড়েন।

সাইফুল্লাহ নবীন জানান, তার বড় ছেলে বিএসসি’তে পড়ছেন। একমাত্র মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে এবং ছোট ছেলে অস্টম শ্রেনীতে অধ্যয়নরত। পরিবারে রয়েছে ৫ সদস্য। এ অবস্থায় করোনকালীন প্রায় দুই বছরে জমি বন্ধক রেখে এবং আত্মিয়-স্বজদের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা ধার দেনা করে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করেছেন। এখন আর কেউ টাকা ধার দিতে চায় না।
বই লেখার সন্মানীর টাকাও দেয়না প্রকাশকরা। এ কারণে পরিবার পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে আছেন তিনি। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া এবং সংসারের ব্যয় নির্বাহসহ ঋণের টাকা পরিশোধ করতে কিডনী বিক্রি করা ছাড়া তার আর কোন উপায় নেই।

সাইফুল্লা নবীনের প্রকাশিত ৪৯টি বই বাজারে রয়েছে। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ১০টি, শিশুতোষ গল্পের বই ২১টি, উপস্যান ১৪টি এবং শিশুদের ছবি আ‍ঁকার বই রয়েছে ৪টি। করোনাকালে বই বিক্রি শূন্যের কোটায়। সাইনবোর্ড শিল্প তথা ছবি আকার কাজও নেই। গলায় প্লাকার্ড তাই যে কোনো সময় রশি হতে পারে ভাই।

Print Friendly, PDF & Email

Sharing is caring!