একজন দায়িত্বশীল শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিঃ আওয়ামী লীগের গর্ব

ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি

Sharing is caring!

একজন দায়িত্বশীল শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিঃ আওয়ামী লীগের গর্ব

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, মতিয়া চৌধুরী, সাজেদা চৌধুরীর পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যে কজন নারী নেতৃত্ব সুনাম ও দক্ষতার সাথে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় রেখেছেন বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি তাদের অন্যতম একজন। তিনি যে শুধু একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তা কিন্তু নয়, ঢাকার সাংস্কৃতিক অঙ্গন বিশেষ করে ঢাকা থিয়েটার ও রবীন্দ্র সংগীত সম্মেলন পরিষদের সাথেও তার রয়েছে নাড়ির টান। যদিও নিজ এলাকা চাঁদপুরে তাকে ঘীরে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত বিরোধী পক্ষের বেশকিছু রটনা রয়েছে তবে তা বিরোধিতা জন্য বিরোধ বলেই মনে করেন দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ।

চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ- সভাপতি আলহাজ মো. ইউসুফ গাজী জানান, বিগত ১৩ বছরে ডা. দীপু মনি এমপি’র নির্বাচনী এলাকায় বহু সরকারি স্থাপনা নির্মিত হয়েছে এবং এসব স্থাপনার জন্য জমি অধিগ্রহণও করা হয়েছে। এসব জমিতে কোথাও কখনো ডা. দীপু মনি বা তার পরিবারের কোনো জমি কখনো ছিল না। তার উদ্যোগে চাঁদপুর হাইমচরে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে জমির মূল্য শতাংশ প্রতি ৫ হাজার টাকা থেকে কয়েক লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে এখন। সরকারের নিকট থেকে ক্ষতিপূরণ লাভের আশায় বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে সেখানেও ডা. দীপু মনি বা তার পরিবারের কোনো সদস্য কখনো কোনো জমি ক্রয় করেননি। আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র সহসভাপতি আরো বলেন, গত ১৩ বছরে কোনো নিয়োগ, কোন টিআর, কাবিখা বিতরণে, কোনো প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় বা অন্য কোনো কার্যক্রমে ডা. দীপু মনি বা তার পরিবারের কোনো ধরনের আর্থিক অস্বচ্ছতা বা অনিয়ম পাওয়া যাবেনা। এ বিষয়ে জেলার সরকারি- বেসরকারি কর্মকর্তাসহ জেলার রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ জনগণ সবাই অবগত আছেন। কী উদ্দেশ্যে হঠাৎ করেই আজ ডা. দীপু মনিকে অসৎ প্রতিপন্ন করার, হেয় করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ আসলে বিএনপি নেতৃবৃন্দের সাথে মিলে এসব অভিযোগ এনেছেন বলে মনে করেন এই নেতা। 

২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর ‘চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১৯’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। সংসদে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে বিল পাস হয় ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। ১৫ সেপ্টেম্বর সরকারি গেজেটের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। ২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে চাঁবিপ্রবির উপাচার্য  হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পান অধ্যাপক ড. মো. নাছিম আখতার।ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য চাঁদপুর জেলা শহর থেকে চার কিলোমিটার দক্ষিণে চাঁদপুর–হাইমচর উপজেলা সড়কের ঠিক পূর্বপাশে সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামে ৬০ একর জায়গা অধিগ্রহণের কাজ চলমান ছিলো। মূলত এই কাজেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে দীপু মনি পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে । চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘চাঁদপুর সদর উপজেলার ১১৫ নম্বর লক্ষ্মীপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের নির্ধারিত বাজারমূল্য অনুযায়ী নাল, বাড়ি/বাগান, পুকুর/ডোবা ও ভিটি শ্রেণির মূল্য পর্যায়ক্রমে ১৩ হাজার ৮০২ টাকা, ২৩ হাজার ৯৬৬, ৩৮ হাজার ৯৫৬ এবং ৩৩ হাজার ২৯৪ টাকা ধরে প্রকল্প প্রাক্কলন দাঁড়ায় ১৯৩ কোটি ৯০ লাখ ৬৫ হাজার ৫০৭ টাকা। কিন্তু দেখা যায়, সর্বশেষ নির্ধারিত মৌজা মূল্যের তুলনায় অধিগ্রহণের নিমিত্ত সংগৃহীত দরপত্র চরম অস্বাভাবিক।’ অর্থাৎ আগে সেটির প্রাক্কলন মূল্য দেখানো হয়েছিল ৫৫৩ কোটি টাকা। যাতে সরকারের ৩৫৯ কোটি ১৬ লাখ ৬১ হাজার ৭৮২ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। প্রস্তাবিত চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের নির্ধারিত স্থান

এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হবে, সেখানে সারাদেশ থেকে শিক্ষার্থীরা পড়তে আসবে। অথচ এটি করা হচ্ছে প্রত্যন্ত গ্রামে। যেখানে যাতায়াতের সেরকম ব্যবস্থা নেই। পাশাপাশি ওই জায়গাটি মেঘনা নদী থেকে ৭০০ মিটার দূরে। যে কোনো সময় মেঘনার খরস্রোতে ভেঙে যেতে পারে। এরকম একটা জায়গা উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পছন্দ করেছেন তারা, আবার ওইখানে তারা নিজেরাই জমি কিনেছেন। এটা পরিষ্কার যে, ব্যক্তিগত লাভের জন্য এটি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর বড় ভাই জে আর ওয়াদুদ টিপু, মামাতো ভাই জাহিদুল ইসলাম রোমান, সেলিম খানসহ অনেকে জড়িত, যারা শিক্ষামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত। তাদের নামে-বেনামে সেখানে জায়গাও কেনা হয়েছে।

চাঁদপুর-৪ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) মুহাম্মদ শফিকুর রহমানও সেখানে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কলাম লিখেছেন। তিনি দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ৫০০-৬০০ কোটি টাকার বাণিজ্য হচ্ছিল অবাধে। এর পেছনে যেহেতু খোদ শিক্ষামন্ত্রীর ক্ষমতা ও তার ভাইয়েরা জড়িত, তাই কেউ মুখ খুলছিল না। চাঁদপুরের সচেতন নাগরিকরা অতি সঙ্গোপনে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টিতে বিষয়টি আনলে একটি জরিপ করা হয়। জরিপে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসতে শুরু করে। দেখা যায়, অধিগ্রহণের জন্য চিহ্নিত জমির প্রতি শতাংশের মূল্য স্থানীয়ভাবে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা, ভিটি বাড়ি হলে প্রতি শতাংশ ৩২ থেকে ৩৩ হাজার টাকা। প্রভাবশালী মহল এই জমি প্রকারভেদে ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা দলিলে লিখিয়ে কিনে নেয়। ১৪-১৫ হাজার টাকা শতাংশ জমি আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার দলিল করে সরকারের কাছ থেকে ২০ গুণ বেশি দাম পকেটস্থ করার ফন্দি আঁটা হয়েছিল। এমপি শফিকুর রহমানের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য স্থান নির্ধারণই হয়েছে আত্মঘাতী। যেটি খরস্রোতা মেঘনা পাড়ে। ভাঙনপ্রবণ মেঘনা পাড় থেকে ৫০০-৬০০ মিটার ভেতরে চাঁদপুর থানার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদ এলাকা। এই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সেলিম খান। তিনি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং তার ভাই ডা. টিপুর অত্যন্ত কাছের লোক বলেও অভিযোগ তাদের। 

এনিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বেশ আলোচনা চলছে। কেউ বলছেন, থলের বিড়াল বেরিয়ে এসেছে। কেউ বলছেন, এটি সরকারের একজন স্বচ্ছ ও সৎ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। তবে শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, নদীর পাড়ে প্রত্যন্ত গ্রামে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়টি অনন্য উদাহরণ হতে পারে এ ক্ষেত্রে। সুশিক্ষার বিস্তারে এমন স্থানই শিক্ষার জন্য আদর্শ স্থান বলে মনে করেন এই জ্ঞানাচার্য। 

নিজ এলাকা ও দলীয় নেতাকর্মীদের কিছু অংশের বিরূপ মন্তব্যে ক্ষুব্ধ শিক্ষামন্ত্রী এ বিষয়ে প্রথমে কিছুই বলতে রাজী হননি। পরে অনেক অনুরোধে ডা. দীপু মনি বলেন, ‘আমার বড় ভাই (জে আর ওয়াদুদ টিপু) একজন চিকিৎসক। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি অল্প অল্প করে জমি কিনেছিলেন, হাসপাতাল ও বৃদ্ধাশ্রম করার জন্য। যখন ওই জমিটা আমরা চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চাঁবিপ্রবি) জন্য পছন্দ করি, অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরুর পর আমার ভাই তার জমি বিক্রি/হস্তান্তর করেছেন। এর বাইরে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চাঁবিপ্রবি) জন্য যে জমি চিহ্নিত আছে, সেখানে আমার বা আমার পরিবারের কারও কোনো জমি নেই। গত ১৩ বছরে আমার নির্বাচনী এলাকায় অনেক অবকাঠামো হয়েছে, হচ্ছে। আজ পর্যন্ত অধিগ্রহণকৃত জায়গায় আমার বা আমার পরিবারের কারও এক ছটাক জমিও ছিল না। বাস্তবিক অর্থে চাঁদপুরে আমার কোনো জমিই নেই।’ যাদের জমি আছে বলে নাম এসেছে জাহিদুল ইসলাম রোমান ও সেলিম খান; তারা রাজনৈতিক ও আত্মীয়তার কারণে ঘনিষ্ঠ স্বীকার করে ডা. দীপু মনি বলেন, ‘ওখানে আমার পরিবার বলতে আমার একমাত্র ভাই। তবে জাহিদুল ইসলাম রোমান আমার জ্ঞাতি হিসেবে আত্মীয়। জাহিদুল ইসলাম রোমানের নানা এবং আমার দাদা, তারাও ডিস্টেন্ট (দূর সম্পর্কীয়) কাজিন। সেই অর্থে তিনি আমার ভাই। তার থেকে অনেক বড় সম্পর্ক হলো—রাজনৈতিকভাবে আমরা ঘনিষ্ঠ। আমার রাজনৈতিক পরিবার অনেক বড়। চাঁদপুরে আমার রাজনৈতিক পরিবারের মানুষের সংখ্যা লাখেরও বেশি। সেলিম খান অধিগ্রহণকৃত এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনিসহ প্রতিটি ইউনিয়ন চেয়ারম্যানই আমার ঘনিষ্ঠ, এটাই স্বাভাবিক এবং এটাই হওয়া উচিত।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘যখনই অধিগ্রহণ হয়, সেখানে জমি কেনার একটা প্রবণতা থাকে। কিংবা যাদের জমি আছে, স্থাপনা বানিয়ে ফেলে। এই অনুশীলন বাংলাদেশের সর্বত্র আছে। চাঁদপুরেও সম্ভবত সেটা ঘটে থাকতে পারে। সেটা আমি জানি না। কে আমার সঙ্গে রাজনীতি করেন বা করেন না, কে জমি কিনেছেন? ওটা আমার দেখার বিষয় নয়। ওটা দেখার সময়ও নেই আমার। রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠ বা আত্মীয়-অনাত্মীয় কেউ জমি কিনলেও আমার কিছু বলার নেই।’

তিনি বলেন, ‘ওই জায়গায় যে অধিগ্রহণ করা হচ্ছে, সেটা আইনসম্মতভাবে অধিগ্রহণ বা প্রাক্কলন হয়েছে কি না, এটা ভূমি মন্ত্রণালয় দেখবে। এটা তাদের কাজ। বা সরকারের অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ থাকলে তারা দেখবে। সেই জায়গায় যদি জমির মূল্য সঠিক না হয়, তাহলে সে ব্যাপারে যা ব্যবস্থা নেওয়ার সেটাও সরকারই নেবে। সেখানেও আমার কোনো বিষয় নেই। আমার যেটা দেখার দরকার, আমার এলাকায় যে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপন করার কথা, সেটি যথাসময়ে স্থাপিত হচ্ছে কিনা। এটা যেন ভূমি সংক্রান্ত কোনো সমস্যা বা তৈরি করা কোনো সমস্যা দিয়ে ঝুলে না যায়, বিলম্বিত না হয়, এটা দেখা আমার কাজ। একটি সুশিক্ষিত জাতি আমাদের সবার আগে প্রয়োজন। আমি সেই চেষ্টাটুকুই করছি ও করবো। 

ডা. দীপু মনি অভিযোগ তুলে আরো বলেন, ‘এর আগে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের জায়গার অধিগ্রহণ নিয়ে এই রকম একটা মহল প্রশ্ন তুলেছে। যখনই কোনো বড় উন্নয়নমূলক কাজের কথা হয়, তখনই এই জমি ভেঙে যাবে, এটা নষ্ট হবে, এরকম নানান কিছু বলা হয়। এই বলে মেডিকেল কলেজের জমি অধিগ্রহণের কাজটাও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। হাইমচরে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হওয়ার কথা, সিদ্ধান্ত হয়ে আছে। সেটার জমি অধিগ্রহণ কাজও হচ্ছে ধীরগতিতে। তার কারণ একটা মহল কিছুতেই চাইছে না—ওইখানে (চাঁদপুর-৩) আমার মাধ্যমে এই বড় বড় কাজগুলো হোক। সব জায়গায়ই রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকে। রাজনৈতিক নানান রকম দ্বন্দ্ব-কলহ থাকে। আমার ওখানেও হয়তো কম-বেশি কিছু আছে। সেটা একটা ভিন্ন দিক।

দীপু মনি বলেন, আমার মত একটাই, যে মূল্য যথাযথ হয়; সে মূল্যেই সরকার আইন অনুযায়ী অধিগ্রহণ করবে। কোনো বিলম্ব ছাড়াই যেন আমার বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। যারা আমার বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আপত্তি তুলছেন, তারা যেন সফল না হন। কারণ তারা চাঁদপুরের উন্নয়ন চান না’

দীপু মনি জোর দাবি জানিয়ে বলেন, যে অপপ্রচারটা চলছে, ওটা ভাঙণপ্রবণ এলাকা, ওখানে বিশ্ববিদ্যালয় করা যাবে না; সেটা সঠিক নয়। দেখে-শুনেই ওই জায়গায়টি নেয়া হয়েছে। অনেকগুলো দিক বিবেচনা করা হয়েছে। শহরের মধ্যে নয়, মহাসড়কের পাশে নয়, অনেকগুলো জেলার সঙ্গে যাতায়াত সুবিধা আছে, এরকম একটা জায়গা এটি। এটি নদীর পাড়ে বা নদীর কাছের জায়গা। তবে ওখানে বেড়িবাঁধও আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডও মতামত দিয়েছে যে, জায়গাটিতে এই স্থাপনা করা যাবে।’

একাধারে ডাক্তার ও আইনজীবী দীপু মনি একাদশ জাতীয় সংসদের নতুন মন্ত্রিসভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং করোনাকালীন সংকটে অত্যন্ত সুকৌশলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা ব্যাবস্থার নিয়ন্ত্রণে নিজের দক্ষতা ও সুনাম বৃদ্ধি করেন। এর আগে ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বেও সফলতা দেখিয়েছেন তিনি। তিনিই ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম মহিলা পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

৮ ডিসেম্বর, ১৯৬৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশের এই প্রথম পররাষ্ট্র ও শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের প্রথম কাউন্সিল-নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এম.এ ওয়াদুদের কন্যা। তিনি হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস এবং বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে এলএলবি উত্তির্ন হন । এমবিবিএস ডিগ্রি লাভের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব পাবলিক হেলথ থেকে এমপিএইচ ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমঝোতা ও দ্বন্দ্ব নিরসন এর ওপর একটি কোর্স সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের একজন আইনজীবী। দীপু মনি ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়- প্রতিবেশী দেশসমূহের সাথে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে তিনি কমনওয়েলথ মিনিস্ট্রেরিয়াল অ্যাকশন গ্রুপ-এর প্রথম নারী এবং দক্ষিণ এশীয় চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন। এছাড়া তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমুদ্র জয় করে। এতে করে বাংলাদেশ সরকার প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার এবং ভারতের সাথে প্রায় চার দশকের সমুদ্র সীমা সংক্রান্ত অমীমাংসিত বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় চূড়ান্ত ভাবে নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করে । সামাজিক উন্নয়ন এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে তাঁর অনন্য অবদানের জন্য তিনি মাদার তেরেসা আন্তর্জাতিক পুরষ্কারে ভূষিত হন। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পুনরায় চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। একই সাথে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিলে তিনি পুনরায় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। ৬ জানুয়ারী ২০১৯ এ তিনি একাদশ জাতীয় সংসদের অধীনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের এ্যাডভোকেট তৌফীক নাওয়াজ দীপু মনি`র স্বামী। তিনি আন্তর্জাতিক একটি ল’ফার্মের প্রধান। তিনি উপমহাদেশের দু’ হাজার বছরের ঐতিহ্য মন্ডিত ধ্রুপদী সঙ্গীতের উৎস হিসেবে পরিচিত ‘আলাপ’ এর একজন শিল্পী। তাঁদের রয়েছে দু’সন্তান। পুত্র তওকীর রাশাদ নাওয়াজ ও কন্যা তানি দীপাভলী নাওয়াজ।

Print Friendly, PDF & Email

Sharing is caring!