উন্নয়নের রাজনীতি তিনঃ আওয়ামী লীগের চলছে সুদিন

ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি

Sharing is caring!

বরিশাল জেলার উন্নয়ন চিত্রের সাথে এখানকার রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা ওতোপ্রোতো ভাবেই জড়িত। স্বাভাবিক কারণেই উন্নয়নের পথের হাঁটতে হাঁটতে রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম উঠে আসে এবং আসবেই। কেননা বরিশালের সদর রোড দিয়ে চলতে গেলে অশ্বিনী কুমার টাউন হলটি যেমন চোখে পড়ে তেমনি চোখে পড়ে এখানের প্রথম নারী মেয়র প্রার্থী ডাঃ মনীষা চক্রবর্তীর মানবতার বাজার। আবার একদিন পরই সেই বাজার বন্ধ করে দেয়ার দোষ আওয়ামী লীগের ঘাড়ে। দুদিন পরেই আবার মনীষা ও তার দল বাসদের মানববন্ধন কর্মসূচিতে স্থানীয় কাউন্সিলরের হামলা এবং সেই দোষও চাপলো মেয়র সাদিক ও ছাত্রলীগের মাথায়।
যদিও এ অভিযোগ হেসে উড়িয়ে দেন জেলার সাধারণ সম্পাদক।
আর মহানগর সহ সভাপতি বলেন, যে কাউন্সিলর এর কথা তারা বলছেন, সে তো আওয়ামী লীগের লোকই নয়। তার ভাই আওয়ামী লীগ নেতা।

এ বিষয়ে বাসদ নেত্রী ও সাবেক মেয়র প্রার্থী ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী সাংবাদিক সালেহ টিটুকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, গত তিনবছরে অসংখ্য বার তারা এই কথাই বলে আসছে। এই শহরে আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোনো দলকেই তারা রাস্তায় নামতে দেয়না। নামলেই গুন্ডা বাহিনী পাঠিয়ে হামলা চালায় নয়তো পুলিশ দিয়ে আটকে দেয়। বাসদ কোনো মেরুদণ্ডহীন দল নয়, হামলা মামলার ভয় দিয়ে আমাদের রাস্তায় নামা আটকানো যাবেনা।

এটা যে নেহাত আওয়ামী লীগের উপর দোষ চাপানো তাও কিন্তু নয়। কেননা, বরিশাল জেলাই শুধু নয়, সম্পূর্ণ বিভাগে হাতে গোনা নির্দষ্ট কিছু মানুষ ছাড়া এই বরিশাল অঞ্চলের পশুপাখিও এখন আওয়ামী লীগ সমর্থক। আর এখানের আওয়ামী লীগ মানেই হচ্ছেন সেরনিয়াবাত সাদিক ‍আবদুল্লাহ পরিবার। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তিবিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক (মন্ত্রী) আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি বরিশাল তথা বরিশাল বিভাগের আওয়ামী লীগের প্রাণপুরুষ।

সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ তারই সুযোগ্য সন্তান। আর দেশবাসীকে এটা মনে করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন নেই যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর তাদের পারিবারিক সম্পর্কের কথা। তাহলে আবার মনে পড়ে যাবে ৭৫ এর ঘৃণিত ইতিহাস।

বরিশালের ‍উন্নয়ন চিত্র ‍এক ও দুইযে ‍আমরা দেখেছি ও জেনেছি স্থানীয় সাংবাদিকদের নাজেহাল দশা ‍এবং ‍একক দাপটে বরিশালে বিএনপির পরিণতি।
একই অবস্থা ‍বরিশাল আওয়ামী লীগের নয় কি? এখানের তৃনমুল থেকে নগর পর্যন্ত সবাই ‍আওয়ামী লীগের কর্মী। জেলা- উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব আছে বলে মনে হয়নি।

মহানগর বিএনপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মনিরুজ্জামান ফারুক

বিএনপির মহানগর সহ সভাপতি মনিরুজ্জামান ফারুক ‍এর দাবি বিএনপির মতোই ‍এখানে ‍আওয়ামী লীগেরও ‍একক দাপট। সর্বত্র ‍একটি পরিবারের লোকের ক্ষমতা ‍আঁকড়ে থাকার চেষ্টাই দেখতে পাবেন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদগুলো নিজ আত্মীয় পরিজনের জন্য।

মহানগর ‍আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি গাজী নঈমুল হোসেন লিটু প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, বিএনপি পিছন থেকে রাতের ‍আঁধারে ক্ষমতায় ‍আসা দল। তারাতো কারো অবদানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাবেনা। হাসানাত ‍আব্দুল্লাহ না থাকলে বরিশালে তাদেরও অস্তিত্ব থাকতোনা।

বরিশালের আওয়ামী লীগ যে প্রচণ্ড শক্তিশালী তা এখানে তাদের নানান কর্মসূচি পালনের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকায় স্পষ্ট ফুটে ওঠে। তবে মহানগর বা জেলা ছাত্রলীগের বিগত প্রায় দশবছর কোনো কমিটি হয়নি যা ছাত্র নেতৃত্বের জন্য কষ্টের বিষয়।

এখানে খুবই উল্লেখযোগ্য আর একটি বিষয় হচ্ছে, সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ‍এতোটাই সরল যে, তার নিজ নামের ফেসবুক পেজটি খুললেই বরিশালের বর্তমান মেয়র কখন কি করছেন, তা জানতে ও দেখতে পাবেন যে কেউ। ইচ্ছে করলে মন্তব্যও করতে পারবেন। আর ‍এখানেই অল্পদিন আগে তিনি পুলিশের ‍উদ্দেশ্যে কিছু বক্তব্য দিয়েছেন, তিনি বলেছেন – “আওয়ামী লীগের কাউন্সিলররা বা কর্মী সবাই তার নিজের লোক। প্রয়োজন হলে তিনি বকবেন তাদের, তিনিই আদর করে কোলে তুলে নেবেন। অন্যকেউ তাদের কিছু বলতে হলে তার অনুমতি লাগেবে।”

তার এই সহজসরলভাবে সবাইকে আপন করে নেয়ার সুযোগ নিয়ে কিছু অনুপ্রবেশকারী মেয়র সাদিক ও তার পরিবারকে বরিশালবাসীর নিকট হেয় করার জন্য উঠে পরে লেগেছে বলে মনে করেন কাউন্সিলর লিটু।

অন্যদিকে মহানগর বা সিটি ‍এলাকায় ঘুরে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও খেটে খাওয়া মানুষের সাথে কথা বলে ‍এটা পরিষ্কার যে, সেরনিয়াবাত সাদিক মেয়র হয়ে আসার পরই বদলে গেছে বরিশালের অনেকগুলো অবৈধ ভবনের চিত্র। যা দেখে খুশি সাধারণ মানুষ। হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করে সেই টাকায় কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করে ভূয়সী প্রশংসা যেমন কুড়িয়েছেন তেমনি প্রায় তিনহাজার বাড়ি মালিকের কাছে নেতিবাচক হয়েছে তার কর্মকাণ্ড। ৫২ হাজার বাড়িঘরের মধ্যে এটা খুবই সামান্য। তবে এতে বাসা ভাড়া বেড়ে যাওয়ার ‍আতঙ্কে ভুগছেন প্রায় অর্ধ লক্ষ ভাড়াটিয়া। আর গরীব বান্ধব খ্যাত বাসদ নেত্রী ডাঃ মনীষার মাথাব্যথা এদের জন্য।

মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক ‍আব্দুল্লাহ

মেয়র সাদিকের ভালো কাজের ‍আর ‍একটি হচ্ছে, তিনি পরিচ্ছন্ন কর্মীদের পরিচয়পত্র প্রদান করে নগট টাকার অপচয় থেকে রক্ষা করেছেন বিসিসিকে। যা খুবই প্রশংসনীয় কাজ হিসেবে আলোচনা করেন বরিশালবাসী। ‍এতে কর্মকর্তারা কে‍উ কেউ বেজার হলেও খুশি পরিচ্ছন্নকর্মীরা। আর তার দোষ যা আলোচনা হয়, তা শুধু ‍ঐ একক সিদ্ধান্ত গ্রহণ। প্রশাসন বা সহকর্মী কাউকে তোয়াক্কা না করে নিজেই হুটহাট সিদ্ধান্ত গ্রহণের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। আর একটি অভিযোগ হচ্ছে, অজ্ঞাত কারণে তিনি সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলছেন। যা মোটেই উচিত হচ্ছেনা বলে মনে করেন দৈনিক কীর্তনখোলা পত্রিকার সম্পাদক।

এদিকে বরিশাল শহরের সাংবাদিক অঙ্গনে প্রবেশ মাত্র যে শব্দটা বার বার কষ্ট দিয়েছে – তা হচ্ছে সাবধান। এখানে আওয়ামী লীগ ও মেয়র সাদিক এর বিরুদ্ধে কেউ কিছু লেখবেনা। কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধেও কিছু লেখা যাবেনা, সবাই মেয়র এর লোক। সাবধান।

অথচ এই – সাবধান – শব্দের উচ্চারণ টাই মেয়র সাদিক ও বরিশালের আওয়ামী লীগের জন্য প্রচণ্ড ক্ষতিকর তা কি তারা বোঝেননা? কেননা, বহিরাগত বা অতিথি কোনো আন্তর্জাতিক মিডিয়ার কানে এই – সাবধান – শব্দটি পৌঁছলে শুধু বরিশালে নয়, বাংলাদেশেও নয়, বিশ্বের দরবারে দূর্বল হবে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অবস্থান।

অবশ্য ‍ঐ সাবধান বাণীর বিষয়টির ‍উত্তর খুঁজে পাওয়া যায় মেয়র সাদিকের ফেসবুক পেজেই। সেখানে এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছেন, ‍সাংবাদিকরা। আপনারা শুধু নেগেটিভ লিখবেননা। ‍উন্নয়ন কিছু যে হচ্ছে সেটাও লিখুন। ‍আমার ভালো কাজগুলো কি ‍আপনাদের চোখে পড়েনা?
অথচ মেয়র হবার পর থেকে সেরনিয়াবাত সাদিক ও বরিশাল সিটি করপোরেশন কোনো বরাদ্দ পাচ্ছেনা। নিজের বেতনটাও পাচ্ছে না সে। ঘর থেকে টাকা এনে কিম্বা অপসোনিন বা অন্যকোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে অনুরোধ জানিয়ে টাকা এনে মসজিদ বা সড়ক উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। অথচ একনেক সভায় পাশ হয়ে বিসিসি এর জন্য বরাদ্দ টাকা মন্ত্রী পরিষদে পরে আছে। যা নিয়ে আসার কোনো উদ্যোগই তিনি গ্রহণ করেন নাই বলে শোনা যায়।

অন্যদিকে প্রশাসনের সাথেও বিসিসি মেয়র এর একটা অদৃশ্য দ্বন্দ্ব লেগেই আছে। আর দ্বন্দ্বটা সবচেয়ে বেশি পুলিশের সঙ্গেই যেন। যা তার বক্তব্যে বারবার প্রতিফলিত হয়েছে। এ সব অনিয়ম ভয় শঙ্কা নিয়ে আমরা কথা বলি- বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও ১৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্যানেল মেয়র ১ গাজী নঈমুল হোসেন লিটুর সাথে।
তিনি বলেন, মেয়র হবার পর থেকে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বরিশাল সিটির উন্নয়নের জন্য যা করেছেন তা বরিশালবাসীকে অবশ্যই কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, বরিশাল সিটি করপোরেশন বিসিসিকে তিনি দূর্নীতি মুক্ত করেছেন।

গাজী নঈমুল হোসেন লিটু

বরিশালের রাজনৈতিক অবস্থা বলতে যেয়ে আবেগাপ্লুত গাজী নঈমুল হোসেন লিটু জানান, বিগত দশবছরে বরিশালের আওয়ামী লীগ শুধু বরিশাল নয়, পুরো দক্ষিণ অঞ্চলেই প্রচণ্ড শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে । আমাদের জেলা সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এর ঐকান্তিক চেষ্টায় বিগত বারো বছরে যে উন্নয়ন বরিশালে হয়েছে তা বরিশালবাসী ইতিপূর্বে কখনো পায়নি। আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন লেবুখালী সেতু ও পায়রা বন্দর। যা বরিশালবাসীর ভাগ্য বদলে দেবে। লিটু জানান, বরিশালে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আছেন বর্তমান সিটি করপোরেশন মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ এবং জেলার সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস।

বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট আইনজীবী তালুকদার মোঃ ইউনুস বরিশাল-১ আসন থেকে ২০০৮ সালের নবম ও বরিশাল-২ আসনথেকে ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।জেলায় তার রাজনৈতিক অবদান অনস্বীকার্য। তিনি জানান, মেয়র নির্বাচিত হবার পর থেকেই সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বরিশাল সিটি করপোরেশনের উন্নয়নের জন্য সবরকমের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি একইসাথে মহানগর আওয়ামী লীগকেও শক্তিশালী করে তুলেছেন। এই জেলায় আওয়ামী লীগের অবস্থান খুবই শক্তিশালী। আমাদের জেলা সভাপতি আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এর নেতৃত্বে শুধু বরিশাল নয়, সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে শক্তিশালী করেছেন। এখানে মহানগর আওয়ামী লীগের কোনো কাজে জেলা আওয়ামী লীগ হস্তক্ষেপ করবেনা কিন্তু জাতীয় সব অনুষ্ঠান যৌথভাবে করবে এটাই নিয়ম।

বরিশালে ‍আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার বার বার ক্ষমতায় আসার কারণেই দেশের প্রতন্ত অঞ্চল থেকেও ধারাবাহিক উন্নয়ন হচ্ছে। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত কে আরো শক্তিশালী করতে সকল নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিরলসভাবে কাজ করছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সর্বত্র আমাদের জয়জয়কার দেখতে পাবেন। বিদ্রোহী প্রার্থী যারা ছিলো তারাও সবাই সরে দাঁড়াচ্ছে। তা না হলে কেন্দ্রীয়ভাবে কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ করার হুমকী এসেছে।
বিএনপি থেকেতো এই নির্বাচনে কেউ অংশ নিচ্ছেন না? তাহলে?
এ কথার কোনো উত্তর না দিয়ে ব্যস্ততার কথা বলে ফোন কেটে দেন সাবেক সাংসদ।
তবে আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্যে এটা পরিষ্কার যে বরিশালের আওয়ামী লীগও বিএনপির মতোই একই ব্যক্তির উপর নির্ভরশীল। যা ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরির পথে মারাত্মক বাঁধা।

Print Friendly, PDF & Email

Sharing is caring!