উন্নয়নের বরিশাল দশঃ শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন চায় জনমত

আরিফ আহমেদ

Sharing is caring!

আগামী বিশ বছরেও বরিশাল তথা বাংলাদেশের কোথাও আওয়ামী লীগের বিকল্প হবেনা। কারণ, গত চোদ্দ বছরে তারা অর্থাৎ শেখ হাসিনা সরকার যে উন্নয়ন দেখিয়েছেন তা বিগত কোনো সরকার দেখাতে পারেনি। এভাবেই আবেগাপ্লুত মন্তব্য বরিশালের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের। তাদের বেশিরভাগেরই দাবী এবার সরকার একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করে আমাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিন।

দৃশ্যমান উন্নয়ন পদ্মাসেতু,পায়রাসেতু ছাড়াও ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকার পূর্ণ করে গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষের মনে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার। তাই বরিশাল বিভাগের ছয়জেলা ছাড়াও, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলের মানুষের কাছে আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প নেই দাবী করেন বরিশালের জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মোঃ ইউনুস।

প্রায় একই দাবীতে হাস্যোজ্জ্বল অভিবাদন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলেরও। তিনি বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহের চার জেলায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই। বাহাউদ্দীন নাসিম ভাইয়ের সম্প্রতি ময়মনসিংহ ভ্রমণ ও তার জনসমর্থন দেখে এটা পরিষ্কার বলা যায়, বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাইবে সাধারণ মানুষ।

সরেজমিনে ময়মনসিংহ ভ্রমণে সেখানের রাজনীতি ও যানজট নিয়ে প্রতিবেদক আরিফ আহমেদ এর সাথে আলোচনায় আরো কথা বলেছেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন, স্থানীয় সংগঠনের নেতা ও সাংবাদিক স্বাধীন চৌধুরী, বিভাগীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদক ফখরুল আলম বাপ্পী চৌধুরী, সাংবাদিক শাহ মোহাম্মদ রনিসহ আরো অনেকে। সকলের বক্তব্যে এটা পরিষ্কার যে, আগামী নির্বাচন যদি নিরপেক্ষ নির্দলীয় কোনো প্রতিনিধির অধীনেও হয়, তাহলেও আওয়ামী লীগের বিজয় সুনিশ্চিত। তবে ভারতের আদলে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের পক্ষে সকলেই ঐক্যমত পোষণ করেন।

সম্প্রতি বরিশালের দশটি উপজেলা । বরিশাল সদর, বাকেরগঞ্জ, বাবুগঞ্জ, আগাইলঝাড়া, উজিরপুর, হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ, মুলাদী, বানারীপাড়া, গৌরনদী এলাকায় জনমানুষের সাথে কথা বলে এবং ৮৭টি ইউনিয়নের ১,১১৬টি গ্রামের নির্বাচনী তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ২১জুনের নির্বাচনে জেলার ৫০ ইউনিয়ন পরিষদের প্রায় সবকটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে। আগামী ১১ নভেম্বর ৩৭ টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনকে ঘীরে চলছে জোর প্রচার প্রচারণা। তবে এ প্রচারণায় অনুপস্থিত বিএনপি।

কড়াপুরের বংশেরহাটে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষে।

বরিশালের রায়পাশার কড়াপুর, বানারীপাড়া, উজিরপুর, শায়েস্তাবাদ, চরকাউয়া, চাঁদপুরা, দাড়িয়াল, কবিরাজের হাট, দুধল মাদ্রাসা ও গোমা বাজার এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, আগামী ১১ নভেম্বরের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির তেমন তৎপরতা না থাকলেও ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলন ও আওয়ামী লীগের অবস্থান প্রচণ্ড শক্তিশালী।
শায়েস্তাবাদ বাজার কমিটির উপদেষ্টা জাকির মণ্ডল, মাছ বাজারের আড়ৎদার খোরশেদ মুন্সি, গ্রামবাসী শওকত হোসেন জানান, এখানে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দেয়া হলেও আমরা দলমত নির্বিশেষে বিচার করি। স্থানীয় এই নির্বাচন যতই দলীয় হোক আমাদের কাছে জাতীয় নির্বাচনটাই শুধু দলীয়। আর দল মানে এখানে হয় আওয়ামী লীগ নয়তো বিএনপি। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন দায়সারা নির্বাচন হবে। যা মোটেও প্রত্যাশা নয় সাধারণ মানুষের কাছে।
তাদের মতে, আওয়ামী লীগের পরাজয়ের ভয় মোটেই নয় আর। বিগত সব সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বিবেচনায় বর্তমান সরকারের ভূমিকা অনেক প্রশংসনীয় বলে দাবী শায়েস্তাবাদ এলাকার বাসিন্দাদের। যে কারণে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় সুনিশ্চিত বলে মনে করেন গ্রামবাসী ও ব্যবসায়ীরা।

শায়েস্তাবাদ বাসীর দাবী ভোটাধিকার ও রেশনিং পদ্ধতি।


শায়েস্তাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের পর পর দু’বারের নির্বাচিত ও জেলার সর্বকনিষ্ঠ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের আরিফুজ্জামান মুন্না বলেন, ইউপি নির্বাচনে যে ই প্রার্থী হোক এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়ী হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা এখন ঐক্যবদ্ধ সবাই। আমাদের রাজনৈতিক অবিভাবক হাসনাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে শুধু জেলায় নয়, পুরো বরিশাল বিভাগে আওয়ামী লীগ এখন শক্তিশালী ও সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতীক।

চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান মুন্না নিজেও রেশনিং পদ্ধতি চান তার এলাকার মানুষের জন্য।


আগামী নির্বাচনের পুনরায় প্রার্থীতা প্রত্যাশী মুন্না নিজেও। শায়েস্তাবাদ ইউপি নির্বাচন কে সামনে রেখে এখানে আরো প্রচারণা চালাচ্ছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মামুন তালুকদার এবং ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মোঃ তুহিন। বিএনপির মুরাদ হাওলাদার এখানে আগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও এবার তার ভুমিকা নিরব বলে জানালেন গ্রামবাসী।

গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, বানারীপাড়া ও উজিরপুর আওয়ামী লীগের ঘাটি এলাকা। জেলা সভাপতি পার্বত্য মন্ত্রী আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর নিজ এলাকা এটি। হিন্দু ও খ্রিস্টান অধ্যুষিত এখানের গ্রামে গ্রামে পাকা সড়ক ও ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়ে আগামী নির্বাচনের জয় নিশ্চিত করে রেখেছেন আওয়ামী লীগের এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। এমনটাই দাবী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সাংসদ আইনজীবী তালুকদার মোঃ ইউনুসের। তবে এখানে বিএনপির জহির উদ্দিন স্বপন এর জনসমর্থন উড়িয়ে দেয়া যায়না বলে দাবী করেন আগৈলঝাড়ার অনেকে। গৌরনদী বাজার এলাকার মানুষের মাঝে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের পরামর্শ বারবার উঠে আসে। ব্যবসায়ী আলমগীর বলেন, ভারতের সিনেমা৷ নাটক, পণ্য সব নকল হয় বাংলাদেশে। ওদের নির্বাচন কমিশনটার নকল হয় না কেন?

এদিকে দাড়িয়াল এর কামারখালী বাজার, কবিরাজের হাট ও দুধল মাদ্রাসা হাটের মানুষের বক্তব্য হচ্ছে, পায়রা বা লেবুখালী সেতুকে ঘীরে চরকাউয়া থেকে গোমা সড়কের উন্নয়ন এবং তালুকদার হাট ও গোমা সেতুর কাজ সম্পন্ন হলে এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটে যাবে। যা বিগত সময়ে কেউ ভাবেনি। তাই নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনেও যদি নির্বাচন হয় তাহলে বরিশালের ছয়টি জেলার বেশিরভাগ আসনে আওয়ামী লীগের জয় সুনিশ্চিত বলে দাবী করেন এখানের বাসিন্দা ও সাধারণ মানুষ।
অন্তত কামারখালী বাজারের ব্যবসায়ী শাকিল মের্ধা, কবিরাজের হাটের ফারুক সিকদার, কেনান মীরা, দুধল মাদ্রাসা হাটের মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মুফতি মাওলানা সাইফুল্লাহ এভাবেই ব্যক্ত করেন আওয়ামী লীগের অবস্থান। তবে এখানেও মাওলানা সাইফুল্লাহ নির্বাচন কমিশন বিষয়ে গুরুত্ব দেয়ার অনুরোধ জানান সাংবাদিকদের প্রতি।

গোমা ফেরিঘাট

অন্যদিকে বরিশাল সদর উপজেলার চাঁদপুরা ইউনিয়নের নির্বাচনে জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (চরমোনাই)এর মোঃ আলী আজিম খান। স্থানীয় বাসিন্দা ও সংবাদকর্মী হৃদয় মোহাম্মদ মনির জানান, এখানে প্রচারণায় আলী আজিম খান এগিয়ে আছেন। আওয়ামী লীগের বিভক্তিতে এখানে দুজন প্রার্থী প্রচারণা চালাচ্ছেন। মোঃ হেলাল উদ্দিন খান এবং এইচ এম জাহিদ দুজনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে জোর তদবির চালাচ্ছেন।
হৃদয় আরো বলেন, তবে সাধারণ মানুষের মাঝে নির্বাচন নিয়ে কোনো উৎফুল্লতা নেই। এখানে বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ আমান উল্লাহ আমান এবার সতন্ত্রপ্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নিচ্ছেন। তার স্থানে এবার মোঃ হেলাল বিশ্বাস জামাত ইসলামের প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক ইউপি সদস্য ইউসুফ চাচা ও আমি

চাঁদপুরা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সবসময় জাতীয় নির্বাচনে গুরুত্ব বহন করে দাবী করে সাবেক ইউপি সদস্য ইউসুফ সিকদার বলেন, এবার ইউনিয়ন ও জাতীয় উভয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অবস্থান অনেক শক্তিশালী।
বরিশাল, ময়মনসিংহ ও রাজবাড়ির দৌলতদিয়া ফেরীঘাটের আলোচনায় এটা পরিষ্কার যে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় নিয়ে প্রায় নিশ্চিত আমজনতা। তবে সকলের দাবী একটাই ভারতের নির্বাচন কমিশন এর আদলে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন আমাদেরও হোক।

Print Friendly, PDF & Email

Sharing is caring!

About the author

ডিসেম্বর ৭১! কৃত্তনখোলার জলে সাঁতার কেটে বেড়ে ওঠা জীবন। ইছামতির তীরঘেষা ভালবাসা ছুঁয়ে যায় গঙ্গার আহ্বানে। সেই টানে কলকাতার বিরাটিতে তিনটি বছর। এদিকে পিতা প্রয়াত আলাউদ্দিন আহমেদ-এর উৎকণ্ঠা আর মা জিন্নাত আরা বেগম-এর চোখের জল, গঙ্গার সম্মোহনী কাটিয়ে তাই ফিরে আসা ঘরে। কিন্তু কৈশরী প্রেম আবার তাড়া করে, তের বছর বয়সে তের বার হারিয়ে যাওয়ার রেকর্ডে যেন বিদ্রোহী কবি নজরুলের অনুসরণ। জীবনানন্দ আর সুকান্তে প্রভাবিত যৌবন আটকে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় পদার্পন মাত্রই। এখানে আধুনিক হবার চেষ্টায় বড় তারাতারি বদলে যায় জীবন। প্রতিবাদে দেবী আর নিগার নামের দুটি কাব্য সংকলন প্রশ্ন তোলে বিবেকবানের মনে। তার কবিতায়, উচ্চারণ শুদ্ধতা আর কবিত্বের আধুনিকায়নের দাবী তুলে তুলে নেন দীক্ষার ভার প্রয়াত নরেণ বিশ্বাস স্যার। স্যারের পরামর্শে প্রথম আলাপ কবি আসাদ চৌধুরী, মুহাম্মদ নুরুল হুদা এবং তৎকালিন ভাষাতত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রাজীব হুমায়ুন ডেকে পাঠান তাকে। অভিনেতা রাজনীতিবিদ আসাদুজ্জামান নূর, সাংকৃতজন আলী যাকের আর সারা যাকের-এর উৎসাহ উদ্দিপনায় শুরু হয় নতুন পথ চলা। ঢাকা সুবচন, থিয়েটার ইউনিট হয়ে মাযহারুল হক পিন্টুর সাথে নাট্যাভিনয় ইউনিভার্সেল থিয়েটারে। শংকর শাওজাল হাত ধরে শিখান মঞ্চনাটবের রিপোটিংটা। তারই সূত্র ধরে তৈরি হয় দৈনিক ভোরের কাগজের প্রথম মঞ্চপাতা। একইসমেয় দর্শন চাষা সরদার ফজলুল করিম- হাত ধরে নিযে চলেন জীবনদত্তের পাঠশালায়। বলেন- মানুষ হও দাদু ভাই, প্রকৃত মানুষ। সরদার ফজলুল করিমের এ উক্তি ছুঁয়ে যায় হৃদয়। সত্যিকারের মানুষ হবার চেষ্টায় তাই জাতীয় দৈনিক রুপালী, বাংলার বাণী, জনকণ্ঠ, ইত্তেফাক, মুক্তকণ্ঠের প্রদায়ক হয়ে এবং অবশেষে ভোরেরকাগজের প্রতিনিধি নিযুক্ত হয়ে ঘুরে বেড়ান ৬৫টি জেলায়। ছুটে বেড়ান গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। ২০০২ সালে প্রথম চ্যানেল আই-্র সংবাদ বিভাগে স্থির হন বটে, তবে অস্থির চিত্ত এরপর ঘনবদল বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, আমাদের সময়, মানবজমিন ও দৈনিক যায়যায়দিন হয়ে এখন আবার বেকার। প্রথম আলো ও চ্যানেল আই আর অভিনেত্রী, নির্দেশক সারা যাকের এর প্রশ্রয়ে ও স্নেহ ছায়ায় আজও বিচরণ তার। একইসাথে চলছে সাহিত্য বাজার নামের পত্রিকা সম্পাদনার কাজ।