এস এম খালেদ : একজন সঙ্গীত পরিচালকের গল্প

আরিফ আহমেদ

Sharing is caring!

হ্যাপীটাচ

হ্যাপীটাচ ব্যান্ডের লাকী আখন্দ ও অন্যান্য সদস্যরাসহ এস এম খালেদ

এস এম খালেদ

এস এম খালেদ

এই নীল মনিহার, এই সর্ণালী দিন
তোমায় দিয়ে গেলাম, শুধু মনে রেখ।

দ্বীপ জ্বালা রাত জানি আসবে আবার
কেটে যাবে জীবনের সকল আধার।
কিম্বা
আমায় ডেকোনা ফেরানো যাবে না
ফেরারী পাখীরা কুলায় ফেরেনা।
বিবাগী এ মন নিয়ে জন্ম আমার
যায় না বাধা আমাকে
কোনো পিছু টানের মায়ায়।।
হ্যাপী টাচ ব্যান্ডের এই অসাধারণ গানের মাঝেই আজো বেঁচে আছেন হ্যাপী আখন্দ। বড় ভাই লাকী আখন্দ-এর কণ্ঠে আজো এ গানের ঝলক চোখে জল ঝরিয়ে যায় হিসেবী শ্রোতার। লাকী আখন্দ যখন গেয়ে ওঠেন –
আবার এলো যে সন্ধ্যা, শুধু দু’জনে… চলনা ঘুরে আসি অজানাতে… গানটি, তখন তার চোখ শুধু হ্যাপীকে নয়, খুঁজে বেরায় আরো একজন গীটারিস্টকে। যে ছিল হ্যাপীটাচের লিড প্রাণ। যার টুং টাং গীটারের শব্দে প্রাণ পেত নীল মনিহার বা লাকী আখন্দ এর অন্যসব গানগুলো। তিনি এস এম খালেদ

লাকী আখন্দ এর ভাষায়, খালেদ এর লিড ও বেইজ ছিল আমাদের প্রাণ। তা না হলে আমাদের কণ্ঠ মার খেয়ে যেত। ওর মত করে কেউ এতটা নিখুতভাবে পলাতক আমি বা নীল মনিহারের মিউজিক এডজাস্ট করতে পারতো না।
এস এম খালেদ বলেন, দীর্ঘ ৭ বছর হ্যাপীটাচের সাথে ছিলাম। ওটাই আমার জীবনের সেরা সময় ছিল। লাকী ভাই অনেক কিছু শিখিয়েছেন, দেখিয়েছেন। তার কাছেই আমার সেরা শিক্ষাকাল কেটেছে। এরপর বিভিন্ন কারণে হ্যাপীটাচ টেকেনি, তবে আমাদের যোগাযোগ আজো অটুট আছে। জীবীকার প্রয়োজনে ব্যান্ডের অনেকে অনেক দূরে সরে গেলেও পরস্পর বন্ধন ছিন্ন হয়নি।

মীরপুর ১১ নম্বরের বাংলা স্কুলের বিপরীতে এক চা দোকানে হঠাৎ-ই দেখা এসএম খালেদ এর সাথে। সঙ্গে আছেন হ্যাপীটাচের ড্রামিস্ট স্বপন, বর্তমানের আলোচিত গীটারিস্ট শান্ত ও জেমস ভক্ত গীটারিস্ট ও ড্রামিস্ট জেমস বাবু নামের দুইজন বন্ধু।
কুশল বিনিময়ের শেষে জমে ওঠে আড্ডা। অনেকটা স্মৃতি সাতার শেষে জানতে চাইলাম খালেদ ভাই, বর্তমানে আপনি কি করছেন?
মৃদু হাসলেন অভিমানের সাগরে ডুবে থাকা খালেদ। সে হাসিতে অনেকটা অবজ্ঞা ঝওে পরছে, জোনো উল্টো জানতে চাইছেন, আমার এতোটা কাছে থেকেও কোনো খোঁজ রাখনা আমার আর আজ জানতে চাইছো আমি কি করছি?
কিন্তু মুখে বললেন,  আগে বল তুমি কি গান শোনো?
সরল সোজা স্বীকারোক্তি দিলাম – না খালেদ ভাই, আমি ইদানিং কোনো গান ই শুনিনা। গান লিখিও না।
033গান শোনো না, এটা ঠিক, তবে লেখনা এটা মনে হচ্ছে সত্য বলনি। কারণ প্রমিথিউস এর বিপ্লব তোমার একটা কবিতায় সুর দিয়েছে ও গানটি বাজারে এসেছে –
“ বিধাতা বিরুপ হলে ক্ষমা পাওয়া যায় যে
পাপ আর পূণ্যিতে কাটাকাটি হয় যে
তুমি বিরুপ হলে প্রিয়া প্রাণ রাখা যায় যে
এান ভাঙ্গাতে, মন রাঙ্গাতে
সারা যনম যায় যে…।”
খুব সম্প্রতী চট্টগ্রামের মেয়ে মুক্তা মজুমদার (বর্তমানে ভারতে সেটেল) তোমার একটি গানে সুর দিয়েছে – ঠিক কি না বল?
আমি লজ্জা পেলাম, আমার খোঁজ তিনি রাখলেও তাঁর কোনো খোজই আমি রাখিনি। অথচ কিশোর বয়সে তিনিই আমাদেও তিনবন্ধুকে গীটার শেখাতেন। সবার থেকে বেতন নিলেও আামাকে শেখাতেন বিনাপয়সায়। আমার লেখার হাত দেখে তিনি আমাকে টেনে নিয়ে যান লাকী আখন্দ এর কাছে। আর আমাকে দেখেই চমকে ওঠেন লাকী আখন্দ। নিজের সখের একোস্টিভ গীটারটি আমাকে দান করেন, এই বলে যে, এই গীটারটিতে হ্যাপীর ঁেছায়া আছে। তুই দেখতে অনেকটা হ্যাপীর মত, এটা তুই-ই নিয়ে যা। আমি কবি, কবিতা, গল্প ভালো লিখি, কিন্তু গানের প্রতি আমার আগ্রহ ছিল অনেকটা জোর করা বা ধার করা। তাই মিউজিক আমাকে দিয়ে হয়নি।
লজ্জানত চোখেই খালেদ ভাইকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে অবশেষে যেটুকু জানতে পারলাম তাই তুলে ধরছি পাঠকের কাছে।

Nisiddo-maksudফেরদৌস ওয়াহিদ, ফিরোজ শাহি, আবদুল হাদি, ফাতেমাতুজ্জোহরা প্রমুখদেও সাথে কাজ কওে এখন অনেক অভিজ্ঞ খালেদ ভাই সম্প্রতী প্রতিবিম্ব জিরো পয়েন্ট এর মিউজিক পরিচালনা করে যথেষ্ট খ্যাতি ও সুনাম অর্জন করেছেন। খুব শীগ্রই পরবর্তী এ্যালবাম বাজাওে আসবে বলে জানালেন তিনি।
১৯৬৮ সালে করাচীতে জন্ম নিলেও শরীফ মোহাম্মদ খালেদের পৈত্বিক নিবাস কিন্তু চাঁদপুরে। হ্যাপীটাচ বন্ধ হবার পরে ফিডব্যাক খ্যাত জনপ্রিয় শিল্পী মাকসুদের নিষিদ্ধ এ্যালবামের কয়েকটি গানে সুর ও মিউজিক করেন তিনি। এর মধ্যে সুজানা ও বৈশাখী গানটি অনেকেরই হৃদয়ে স্থান দখল করেছে।
ভালো গল্পের সিনেমায় কাজ করার ইচ্ছে ছিল প্রথম থেকেই। সুযোগটা এলো শহিদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ইমপ্রেস টেলিফিম এর ব্যাণাওে নির্মিত ছবি ‘বাংলা’ নামের চলচ্চিত্রে। আহমদ ছফার ওংকার উপন্যাস অবলম্বনে বাংলা নামের এ ছবিতে দুটি গানের সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেন এসএম খালেদ।
‘এ সিঁদুরে সন্ধ্যা’ গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন ফাতেমাতুজ্জোহরা আর ‘কথারো ভিতরে কথা থাকে’ গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন সামিনা নবী।
এর কিছুদিন পরই ইমপ্রেস টেলিফিম এর আরেকটি ‘ভালোবাসার সাদাকালো’ নামের চলচ্চিত্রে ৬টি গানের সুর ও সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্ব পেলেন খালেদ ভাই। ৪টি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফাতেমাতুজ্জোহরা ও ২টিতে সুবীরনন্দী। এসএম খালেদ বলেন, এই চলচ্চিত্রের সঙ্গীত আয়োজনের দায়িত্ব প্রাপ্তিটা আমার জন্য মাইলফলক । কারণ, প্রতিবছর ফেব্রুয়ারিতে মহান ভাষা দিবসের চলচ্ছিত্র উপলক্ষে এটিএন ও চ্যানেল আই এখন পর্যন্ত এ চলচ্ছিত্রটি পরিবেশন করে আসছে।
বর্তমানে কবি আলমাহমুদ এর উপন্যাস নিষিদ্ধা নারী অবলম্বনে নির্মানাধীন চলচ্চিত্রে তিনটি গানের সুর ও সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটছে এস এম খালেদের। চলচ্চিত্রটির সঙ্গীতায়োজন প্রায় শেষের পথে। এতে কন্ঠ দিয়েছেন এন্ডু কিশোর ও কিরণ চন্দ্র।

Print Friendly, PDF & Email

Sharing is caring!

About the author

ডিসেম্বর ৭১! কৃত্তনখোলার জলে সাঁতার কেটে বেড়ে ওঠা জীবন। ইছামতির তীরঘেষা ভালবাসা ছুঁয়ে যায় গঙ্গার আহ্বানে। সেই টানে কলকাতার বিরাটিতে তিনটি বছর। এদিকে পিতা প্রয়াত আলাউদ্দিন আহমেদ-এর উৎকণ্ঠা আর মা জিন্নাত আরা বেগম-এর চোখের জল, গঙ্গার সম্মোহনী কাটিয়ে তাই ফিরে আসা ঘরে। কিন্তু কৈশরী প্রেম আবার তাড়া করে, তের বছর বয়সে তের বার হারিয়ে যাওয়ার রেকর্ডে যেন বিদ্রোহী কবি নজরুলের অনুসরণ। জীবনানন্দ আর সুকান্তে প্রভাবিত যৌবন আটকে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় পদার্পন মাত্রই। এখানে আধুনিক হবার চেষ্টায় বড় তারাতারি বদলে যায় জীবন। প্রতিবাদে দেবী আর নিগার নামের দুটি কাব্য সংকলন প্রশ্ন তোলে বিবেকবানের মনে। তার কবিতায়, উচ্চারণ শুদ্ধতা আর কবিত্বের আধুনিকায়নের দাবী তুলে তুলে নেন দীক্ষার ভার প্রয়াত নরেণ বিশ্বাস স্যার। স্যারের পরামর্শে প্রথম আলাপ কবি আসাদ চৌধুরী, মুহাম্মদ নুরুল হুদা এবং তৎকালিন ভাষাতত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রাজীব হুমায়ুন ডেকে পাঠান তাকে। অভিনেতা রাজনীতিবিদ আসাদুজ্জামান নূর, সাংকৃতজন আলী যাকের আর সারা যাকের-এর উৎসাহ উদ্দিপনায় শুরু হয় নতুন পথ চলা। ঢাকা সুবচন, থিয়েটার ইউনিট হয়ে মাযহারুল হক পিন্টুর সাথে নাট্যাভিনয় ইউনিভার্সেল থিয়েটারে। শংকর শাওজাল হাত ধরে শিখান মঞ্চনাটবের রিপোটিংটা। তারই সূত্র ধরে তৈরি হয় দৈনিক ভোরের কাগজের প্রথম মঞ্চপাতা। একইসমেয় দর্শন চাষা সরদার ফজলুল করিম- হাত ধরে নিযে চলেন জীবনদত্তের পাঠশালায়। বলেন- মানুষ হও দাদু ভাই, প্রকৃত মানুষ। সরদার ফজলুল করিমের এ উক্তি ছুঁয়ে যায় হৃদয়। সত্যিকারের মানুষ হবার চেষ্টায় তাই জাতীয় দৈনিক রুপালী, বাংলার বাণী, জনকণ্ঠ, ইত্তেফাক, মুক্তকণ্ঠের প্রদায়ক হয়ে এবং অবশেষে ভোরেরকাগজের প্রতিনিধি নিযুক্ত হয়ে ঘুরে বেড়ান ৬৫টি জেলায়। ছুটে বেড়ান গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। ২০০২ সালে প্রথম চ্যানেল আই-্র সংবাদ বিভাগে স্থির হন বটে, তবে অস্থির চিত্ত এরপর ঘনবদল বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, আমাদের সময়, মানবজমিন ও দৈনিক যায়যায়দিন হয়ে এখন আবার বেকার। প্রথম আলো ও চ্যানেল আই আর অভিনেত্রী, নির্দেশক সারা যাকের এর প্রশ্রয়ে ও স্নেহ ছায়ায় আজও বিচরণ তার। একইসাথে চলছে সাহিত্য বাজার নামের পত্রিকা সম্পাদনার কাজ।