শপথ শেষে দায়িত্ব নিলেন উপদেষ্টারা: আছেন দূই সমন্বয়ক
বিশেষ প্রতিবেদক
বঙ্গভবনের দরবার হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা শপথ নিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে প্রথমে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। এরপর বাকি ১৬ উপদেষ্টার মধ্যে ১৩ জন শপথ পাঠ করেছেন। ৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ২৭ মিনিটে তারা শপথ নেন। এদিন রাত ৮টায় তাদের শপথ গ্রহণের কথা থাকলেও তা পিছিয়ে দেওয়া হয়।
ফারুক-ই-আযম, বিধান রঞ্জন রায়, সুপ্রদীপ চাকমা ঢাকার বাইরে থাকায় তারা শপথ পাঠের এই আনুষ্ঠানিকতায় উপস্থিত হতে পারেননি বলে জানিয়েছেন মন্ত্রীপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে রয়েছেন দুজন ছাত্র–সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ ভূঁইয়া ও মো. নাহিদ ইসলাম। তারাও এই সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ পাঠ করেছেন। এতে সৃষ্টি হলো নতুন ইতিহাস। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো সরকারের সর্বকনিষ্ঠ উপদেষ্টা হলেন তারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম দুই সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আকুবপুর গ্রামে। তার পিতার নাম মো. বিল্লাল হোসেন ও মাতার নাম রোকসানা বেগম।
আসিফ মাহমুদ (২৬) আদমজী ক্যান্টমেন্ট কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও কলেজটির বিএনসিসি ক্লাবের প্লাটুন সার্জেন্ট ছিলেন। কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে তিনি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী।
আর নাহিদ ইসলামের (২৬) ডাকনাম ‘ফাহিম’। তিনি বিবাহিত। তার জন্ম ১৯৯৮ সালে ঢাকায়। বাবা শিক্ষক। ঘর সামলে সন্তানদের মানুষ করেছেন মা। ছোট এক ভাই রয়েছে তাঁর। তিনি সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করছেন তিনি।
বাকি উপদেষ্টারা হলেন;-
১। সালেহ উদ্দিন আহমেদ,
২। ড. আসিফ নজরুল,
৩। আদিলুর রহমান খান,
৪। হাসান আরিফ,
৫। তৌহিদ হোসেন,
৬। সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান,
৭। মো. নাহিদ ইসলাম,
৮। আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া,
৯। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন,
১০। ফরিদা আখতার,
১১। আ.ফ.ম খালিদ হাসান,
১২। নূর জাহান বেগম,
১৩। শারমিন মুরশিদ
এর আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করতে বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন শান্তিতে নোবেলবিজয়ী গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার রাত ৮ টা ২৮ মিনিটে তিনি তার গাড়ি বহর নিয়ে বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন। এর আগে বিএনপির নেতৃবৃন্দ, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন।
তার আগে দুপুর ২টা ১১ মিনিটে ড. ইউনূসকে বহনকারী ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ সময় বিমানবন্দরে ড. ইউনূসকে স্বাগত জানান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ তিন বাহিনীর প্রধান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা, নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
এসময় বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে ড. ইউনূস বলেন, গত কয়েকদিনে দেশের মধ্যে যে সহিংসতা হয়েছে সেগুলো ষড়যন্ত্র। এটাকে রোধ করতে হবে। তাদের লাঠিপেটা করলে হবে না। সহিংসতাকারীদের আইনের হাতে তুলে দিতে হবে। কোনো প্রকার প্রতিহিংসামূলক কাজ করা যাবে না।
তিনি বলেন, আমার ওপর যদি আস্থা এবং বিশ্বাস রাখেন তাহলে এটা নিশ্চিত করতে হবে কারো ওপর কোনো প্রকার হামলা করা যাবে না, বিশৃঙ্খলা করা যাবে না। যদি বিশৃঙ্খলা করা হয় তাহলে আমি এই দায়িত্বে থাকব না।
ড. ইউনূস বলেন, নতুন বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ নতুন বিজয় দিবস শুরু করল। আমাদের এখন এগিয়ে যেতে হবে। যারা এটি করেছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা, তারা (সমন্বয়করা) দেশকে রক্ষা করেছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, দেশবাসীর কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা যদি আমার ওপরে বিশ্বাস রাখেন, ভরসা রাখেন, তাহলে দেশে কারও ওপর কোনো হামলা আর হবে না। যদি হয়, তাহলে আমি আপনাদের সঙ্গে থাকব না।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করাকে গুরুত্ব দিয়ে ইউনূস বলেন, যেজন্য আন্দোলন হয়েছে সেটার ফলাফল যেন ব্যর্থ না হয়। পুনর্জন্মে যে বাংলাদেশ পেলাম সে বাংলাদেশ যেন পূর্ণতা পায়। যে বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ নতুন করে বিজয় পেল তা যেন পূর্ণতা পায়।
এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আজকে আমার আবু সাঈদের কথা মনে পড়ছে। যে আবু সাঈদের কথা দেশের প্রতিটি মানুষের মনে গেঁথে আছে। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে দেশে দ্বিতীয় স্বাধীনতা এসেছে। এসময় তিনি তরুণ সমাজকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, তরুণ সমাজ যেন নিজেদের মতো করে দেশটা সাজাতে পারে।