পথরেখা
আলমগীর রেজা চৌধুরী
পথরেখা মুছে গেছে
ষোল ফিট প্রশস্ত কংক্রিট রাস্তা চলে গেছে গঞ্জের দিকে
সরু রাস্তার পাশের লাজুক লজ্জাবতী
ঢাকা পড়ে গেছে অনেক লতাগুল্ম বর্ধনশীল তরু প্রজাতি ।
না ।কোনও চিহ্ন নেই
গহীন বনভূমির নিঃস্তব্দতায় উদাসীন দুপুর
একদা প্রবল বর্ষণে ধেয়ে আসা জল
লালমাটির খাড়ি বেয়ে ভিজিয়ে দিয়েছে
বিস্তীর্ণ সার সার তমাল তরু,সেগুন আর গজারির শরীর ।
আর ক্যানিয়নে জালি পেতে যে কিশোর শত শত দিনরাত্রি
ডানকানা ,আর বেতরংগী্র পিছনে জমা রেখেছে ;
কষ্টকর ফেনায়িত সময়ের ফলক ।
সাক্ষী আছে, অশীতিপর হামিদা বেওয়া
উপত্যকায় বসে থাকে জলপাত্র হাতে
ক্লান্ত পথিকের জলতৃষ্ণা নিবারণের দরদী মানবী ।
সাক্ষী আছে, ঝাঁক ঝাঁক হরিয়াল আর টিয়ের দঙ্গল ।
না ওরা এখন কেউ নেই।
বৃক্ষ কর্তন করে বনভূমি জুড়ে গড়ে উঠেছে সামরিক ব্যারাক
প্রতিদিন তারস্বর চিৎকার করে কনভয় ছুটে যায়
দিনভর চানমারির শব্দে পাখিদের দল পালায় দূরে
প্রাকৃতিক এইসব সন্তানেরা সন্ত্রস্ত পদভারে হেঁটে যায়।
কংক্রিটে প্রতিদিন সহস্র ফৌজি পা লেফট –রাইট লেফট –রাইট …
শুধু আমার পদরেখা মুছে গেছে ।
মহাজন
আলমগীর রেজা চৌধুরী
বাড়িটি ভেঙে গেলে একটি পৌরাণিক ছবি মুছে যাবে ।
অনেক জুঁই ,চামেলি বকুলতলার ভোর ,
ধূসর বিকেলে এপেনটুর সারি ,
ফটোগ্রাফে বাড়িটির আঙিনার দৃশ্যকল্প ।
ওই বাড়িটি অনাবিষ্কৃত থেকে যাবে ।কেন যাবে?
বাড়িটির খিলানে কোনো কারুকাজ নেই
স্থাপত্যহীন একটি সাধারণ বঙ্গীয় বাড়ি ।
সামান্য বৃষ্টিতে মেঝেতে জল গড়ায়
পরিশুদ্ধ বৃষ্টি শেষে
গোল চাঁদ উঠে আসে
হারিকেনের আলোয় রুবা ঝুঁকে ঝুকে
পড়ে, বাবুরাম সাপুড়ে ।
ওই বাড়ির সন্তান তরুণ যুবা আসাদ ।
ওর আঙিনায় বেড়ে উঠেছে পুরাণের বীর;
ঠিক এভাবেই বাড়িটির সব অর্গল
খুলে যায় সুবিস্তৃত প্রান্তর –
আর আমি ওই বাড়ির আঙিনায় হেঁটে যাই ।
নিজকে পৌরাণিক ভাবি –
ভাবনায় কবি কালিদাসের মেঘকীর্তন ।
নিজকে বলি , আমি আসাদ ।
মহাজন ।রক্তের মহাজন ।
মাতৃভূমির মহাজন । ভোরের মহাজন ।
হরতাল
আলমগীর রেজা চৌধুরী
তবু ওরা এখনো মিছিলে যায়
মানুষকে নিয়ে নিরন্তর এই যে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা
আমার ভালো লাগে না
মিছিলের ওই যে হাত একদিন বড়ো প্রিয় ছিল
ওই হাত মানুষের প্রিয় ছিল
লক্ষ প্রাণের প্রবহমানতায়
উচ্চারিত শ্লোগান- মানুষের মাঙ্গলিক উৎসব ।
অথচ সবকিছু বুঝে গেছে মানুষ ,
সব ভুল, সব ছলনা
মানুষকে নিয়ে সারারাত ব্যপে হত্যার মচ্ছব চলে…
একদিন সংবাদপত্রের ব্যানার হেডে ছাপা হয়-
কাল মিছিল ,কাল হরতাল ।