অগ্রিম টিকিট কিনে
টোকিও স্টেশনে বসে আছি।
যেনো রঙবেরঙের ট্রেনের
মেলা বসেছে এখানে;
পোষমানা অজগরের ভঙ্গিতে
তারা এঁকেবেঁকে এসে জড়ো হচ্ছে
আর, কিলবিল করে ছড়িয়ে পড়ছে
নিক্কনে-ক্যাননে তোলা
রঙিন ছবির মতো জাপানের
মনোরম দ্বীপ থেকে দ্বীপান্তরে।
আমি হিরোশিমা যাবো। আমাদের রঙ ওঠা
প্রভাতী সুরমা বা তিস্তার মতো
কোনো ঝাঁকুনি না-দিয়ে, আমাকে অবাক করে
ঘড়ির কাঁটায় ঠিক সকাল ন’টায়
স্টেশন ছাড়লো শিনকানসেন।
অন্তরাল থেকে কোনো এক রূপসী সুরেলা কণ্ঠে
জানাতে লাগলো একটার পর একটা স্টপেজ:
নাগোয়া ওসাকা কিয়োটো কুবে নজুমি ইত্যাদি…
একটি শিশুর মিষ্টি চিৎকার ছাড়া কোন হইচই নেই;
ট্রলিতে আপেল নাশপাতি কলা কেক,
কুংফু-সুমোর ছবিঅলা রঙচঙে ম্যাগাজিন
আর ঝকঝকে জাপানি অক্ষর-আঁকা
বাহারি পসরা নিয়ে
বারবিডলের মতো শুভ্র তরুণীরা
বারবার মাথা নিচু করে।
শিনকানসেন এক প্রেমের কানন;
আলোছায়াময় কোমল নিরবতায়
দোলনচাঁপার মতো জোড়ায় জোড়ায়
প্রেমিক যুগল কব্জিতে আদর করে;
ঘনচুলে আঙুল বোলায়, চুমু খায়;
গোপনে চোখের জল ফেলে;
কেউ বা অচেনা বেদনায়
রাতের তারার মতো খসে পড়ে।
শিনকানসেন খুব দ্রুত ছোটে;
তবু, পদ্মাবোট আর জাপান-যাত্রী’র
তোসামারু জাহাজের মতোই
তেমন নড়াচড়া নেই তার;
ভেতরে সে শান্ত, স্থির।
এমন সুন্দর স্নিগ্ধ যাত্রাপথে
রবীন্দ্রনাথকে না-দেখে
এই নগণ্য কবিকে সে লিখতে দিল
এক নতুন কবিতার মহার্ঘ খসড়া।
জয়তু কবিতা ধন্য কবি
জয় শিনকানসেন।