সাহিত্য বাজার…..
ছোটবেলা থেকে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকাটিকে দেখেছি এই বাংলাদেশের পাঠকের মনে জায়গা করে নিতে। সেই থেকে অনেকটা ঈর্ষাকাতর হয়েই আনন্দবাজার -এর মতো কিছু করার ইচ্ছে আমার। সর্বপ্রথম চেষ্টা ছিল ‘সাড়া’ নামের ম্যাগাজিন। বাংলাদেশের প্রথম মডেলিং ম্যাগাজিন নন্দন এবং নাটকের ম্যাগাজিন নাট্যপত্র করতে ব্যর্থ হয়ে বরিশালের সৈয়দ দুলালকে উৎসাহিত করি এ রকম একটি পত্রিকার জন্য। তখন আমি দৈনিক জনকণ্ঠের একজন নিয়মিত সাংস্কৃতিক প্রদায়ক। সৈয়দ দুলাল প্রথমে আকাশলীনা, পরে আনন্দ আকাশ এবং তারও পরে আনন্দলিখন পত্রিকার কাজ নিয়মিত করেন। তবে সেটি হয়ে যায় গতানুগতিক। এ সময় দৈনিক ভোরেরকাগজে প্রথম মঞ্চনাটকের জন্য পৃথক পাতা তৈরিতে প্রয়াত সঞ্জীব চৌধুরীকে অনেকটা বাধ্য করি। যে কারণে মেলায় যুক্ত হয় নাট্যমঞ্চ।
পরবর্তীতে ২০০৭ সালে সাহিত্য বাজার নিয়ে কাজ শুরু। অনেকটা জাতীয় অধ্যাপক প্রফেসর ডাঃ এম আর খান-এর উৎসাহে ও আশ্বাসে আমরা ছুটে যাই রাজশাহীতে। কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের কাছে, তার ঘরে। তাঁর লিখিত সম্মতি নিয়ে আমরা ছুটে যাই আরো দুজনের কাছে – নাট্যজন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ, নাট্যজন সারা যাকের আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলী হতে সম্মতি দেন। আমাদের উপদেষ্টারা কেউই কিন্তু শুধু নামসর্বস্থ উপদেষ্টা ছিলেন না। প্রফেসর ডাঃ এম আর খান ছাড়া প্রত্যেকেই নিয়মিত পরামর্শ ও সহযোগিতা দিতেন। ২০০৯ সালের অমর ২১শে বইমেলায় প্রথম লিটলম্যাগ কর্ণারে স্টল পেল সাহিত্য বাজার। এ জন্য সে সময়ের দায়িত্বরত সরকার আমীন -এর কাছে আমাদের অনেক কৃতজ্ঞতা। ২০১০ সালে সাহিত্য বাজার একইসাথে বাংলাদেশের ৪৪টি জেলায় পৌছে যাচ্ছিল নিয়মিত মাসিক হিসেবে। আমাদের খুব আলোচিত বিষয় ছিল জেলায় জেলায় সাহিত্য ও জীবনকথা বিভাগ দুটি।
সাহিত্য বাজারের উপদেষ্টা হাসান আজিজুল হক ও সারা যাকের ছিলেন আমাদের নিয়মিত সমালোচকও। তারা বারবার বলছিলেন সাহিত্য বাজার পূর্ণাঙ্গ হচ্ছে না। এটিকে আরো সুন্দর কর। আরো অনেক কিছু যুক্ত করার আছে। অনুবাদ আর শিশুতোষ, সাহিত্য সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষদের খোঁজখবর দিচ্ছনা কেন?
কিন্তু সুন্দর করতে হলে ছুটতে হবে, ছুটতে হলে যে টাকা লাগে। জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও নির্দেশক সারা যাকের তার নিজের পকেট থেকে প্রায় প্রতিসংখ্যার জন্যই ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা দিতেন। খুব একটা বিজ্ঞাপন না পাওয়ায় তাই অনিয়মিত হয়ে যায় সাহিত্য বাজার।
একইসময় পত্রিকার সরকারী অনুমোদন বা রেজিষ্ট্রেশন বিষয়ে নোটিশ আসে। সারাদেশে সাহিত্য বাজার তখন বেশ আলোচিত নাম। অনেকটা বাণিজ্যিক ধারায় এর যাত্রা বলে ২০১১ সালের অমর একুশে বইমেলাতে লিটলম্যাগ কর্ণারে সাহিত্য বাজার-এর স্থান দেয়া নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় একাডেমী প্রশাসন ও লিটলম্যাগ নেতাদের মধ্যে । এতে করে মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, পরিচালক ও মেলার সদস্য সচিব, শাহিদা খাতুন এবং প্রিয় মানুষ সরকার আমীন-এর অনুরোধে সাহিত্য বাজার সে বছর স্টল নেয়া থেকে বিরত থাকে ও পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ এক ইউনিট স্টল সাহিত্য বাজারকে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন সয়ং মহাপরিচালক। তাই তিনি কথাও রাখেন, ২০১২ তে সাহিত্য বাজারকে পূর্ণাঙ্গ স্টল দিয়ে। তবে এ মেলায় সাহিত্য বাজারের ক্ষতি হয় প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা ও শ্রম। যা সবটাই চাপে উপদেষ্টা প্রফেসর ড. এম আর খান, সারা যাকের ও সহধর্র্মিনী সুলতানা নাজ-এর উপর।
এদিকে দেখতে দেখতে ৫ বছরে পা রাখে সাহিত্য বাজার। তাই তো ৫ বছরপূর্তী উৎসব করা খুব জরুরী হয়ে পরে। গ্রামীণফোন মিডিয়া প্রধান, বাংলালিংক, সিটিসেলসহ প্রায় সকলের কাছেই ধর্ণা দেয়ার পর গ্রামীণওয়ালারা নিশ্চিত আশ্বাস দেন সাহায্য করবেন। কাজ শুরু হয়। চ্যানেল আই ও ডেইলী স্টার মিডিয়া পার্টনার। এপ্রিলে উৎসব হলো। ৫ দিনের সাহিত্য সম্মেলন বইমেলা। কিন্তু গ্রামীণফোন কোম্পানী কোনো সহযোগিতাই করল না। উৎসবের মাইকভাড়ার দেয়ার জন্য গোপনে হাতে টাকা গুজে দিলেন সারা যাকের।
এরপর পঙ্গু দশার শুরু।
২০১৩ তে আর বইমেলায় যাওয়া হলো না। সাহিত্য বাজার প্রকাশ বন্ধ। গত বছর জুনে এসে বন্ধু সালাম খোকন, রাশেদ খান ও আরনভ সালামের সহযোগিতায় আমরা সাহিত্য বাজার ডট কম করলাম, সাথে নতুন বিভাগ যুক্ত হলো রাজনীতির জন্য রাজখবর ।
উপদেষ্টা যারা ছিলেন তাদের কাছে অনলাইন বিষয়ে ফোন করে ও এসএমএস দিয়ে জানালাম। আমাদের প্রতিটি মূহুর্তের সবকিছুই তারা জানেন, তবুও খুব একটা সাড়া পেলাম না কারো কাছেই। তাই তাদের নাম আর এখানে (অনলাইন পত্রিকায়) ব্যবহার করাটা যুক্তিসঙ্গত মনে হয়নি। বিশেষ করে রাজখবর বিভাগটিতে নিরপেক্ষভাবেই রাজনীতির সমালোচনা হচ্ছে। তাই আমরা বিপদে পরলেও তাদের বিপদে ফেলতে চাই না।
চলতি বছর ২০১৪ অমর একুশে বইমেলায় স্টল নেয়ার সবখরচ দিতে রাজী হলো বন্ধু সালাম খোকন। ছুটে গেলাম বাংলা একাডেমিতে। মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান আমাকে দেখেই প্রথম বাজার, বাজার বলে মজা করলেন, তারপর জানালেন, যদি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বা বাংলা একাডেমির গেটের বাইরে বইমেলা যায়, তুমি স্টল পাবে।
অনেক আশায় দুটি সপ্তাহ মিরপুর টু বাংলা একাডেমি ঘুরে বেড়াচ্ছি। বাংলা একাডেমির পুকুরের মাছ বিক্রি হল। দেখলাম।েএ সময় মাছ দেখতে দেখতে ডিজি শামসুজ্জামান খান জানালেন, হাঃ তুমি স্টল পাচ্ছ। তবে ভিতরে ১৫০টির বেশি হবে না। তাই হয়ত বাইরেই পাবে। খুশি হলাম। আনন্দের সাথে বন্ধুদের জানালামও।
কিন্তু গত ২৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় মহাপরিচালক জানালেন কমিটি সাহিত্য বাজারকে স্টল দিতে রাজী না, আমি কি করবো?
এদিকে এ্ বইমেলাকে ঘীরে অনেক স্বপ্ন আমাদের। আগামী এপ্রিলে সাহিত্য বাজার ৭ম বর্ষ অতিক্রম করবে। ময়মনসিংহের নদের পারে ৭ দিন না হোক ৩ দিনের সাহিত্য সম্মেলন ও বইমেলা করার স্বপ্ন আমাদের। বইমেলা চলাকালে সারাদেশের লেখক পাঠকের সাথে এ বিষয়ে মতবিনিময় হবে। তাদের সাহায্য সহযোগিতায় হয়ত এ বছর কোনো না কোনো ফোন কোম্পানী স্পন্সর নিয়ে এগিয়ে আসবেন। তাহলে আমরাও প্রবর্তণ করবো সাহিত্য বাজার লেখক পুরস্কার ও দরিদ্র গুনীজনকে সহযোগিতা দেয়ার প্রথাটাও। হবে কি?
আমরা ধর্মভীরু। সত্য বলতে কখনো ভীত নই। যার প্রমাণ বাংলা একাডেমি সংক্রান্ত সংবাদে রয়েছে। হয়ত ঐ সংবাদে মুক্তধারা প্রসঙ্গ বা বাণিজ্যকরণ প্রসঙ্গটিই আমাদের স্টল না পাওয়ার অন্যতম কারণ। তবুও আমরা সত্য বলবো-ই।তাই আমরা জানি ও বিশ্বাস করি কোনো মানুষের উপর নয়, আল্লাহর ইচ্ছার উপর আমাদের ভবিষ্যত। হতাশ নই। আশাবাদী আমরা সবাই।
বন্ধুরা ও শুভানুধ্যায়ীগণ, সাহিত্য বাজার সাহিত্য সম্মেলন ও বইমেলা আগামী এপ্রিলের ২০ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে অনুষ্ঠিতব্যের সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।
আপনাদের যাদের সমর্থ আছে ছোট খাট বিজ্ঞাপন দেয়ার—- তারা ৭ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মূদ্রণ সংখ্যায় বিজ্ঞাপন দিন বা বিজ্ঞাপণ পেতে সহায়তা করুন।
একইসাথে লেখালেখিতে অভ্যস্ত বন্ধুরা আপনার সেরা লেখাটি আজই পাঠিয়ে দিন। সেরা লেখক পুরস্কার ছাড়াও থাকবে সেরা গ্রন্থ সমালোচক পুরস্কারও।
সাহিত্য বাজার http://shahittabazar.com/
ই-মেইল : info@shahittabazar.com
মোবাইল : 01712-140167/01916167350
আমরা প্রতারণা বা প্রবঞ্চনা জানিনা।
সুযোগ পেলে সততার সাথেই কাজ করে দেখাবো।
সম্পাদক
আরিফ আহমেদ
সাহিত্য বাজারের প্রকাশনা বন্ধ হওয়াতে হতাশ হয়েছিলাম । অনলাইনে পেয়ে ভালো লাগলো ।
এগিয়ে যাক সাহিত্য বাজার । বিকশিত হোক আধুনিক বাংলার সাহিত্য ।