রাখ তোমার হাতের কাজ
অন্ধকারে যাচ্ছে ডুবে
তোমার শিশুর ভবিষ্যত।
স্বাধীন দেশের শ্বালীনতা নিচ্ছে লুটে
তোমার শিশুর আগামি দিন খাচ্ছে ভূতে
রুখতে হলে এই লুটেরা আর ভূতেরদল
দ্বন্ধ ভুলে আজকে সবাই ঐক্য গড়
রূখতে হবে হিংসা বিদ্বেষ
রুখতে হবে নষ্টনীতির স্মৃতিঘর
রুখতে হবে বিশ্বসভার
নষ্টজালে বন্দী সব মীরজাফর।
আমাদের বাংলাদেশে একটা গল্প প্রচলিত আছে। গল্পটা হচ্ছে, ‘দুই মুরগী ঝগড়া করছিল, ওদেরকে দেয়া খাবার নিয়ে। ঝগড়ায় ওরা এতোই মশগুল যে রাস্তার একটা ন্যাড়া কুকুর এসে কখন যে ওদের সেই খাবার খেয়ে চলে গেল, তা কেউ টেরই পেলনা।’ একসময় ওদের ঝগড়া থামলো বটে, তবে ওরা আর খাবারটা পেলনা।
বর্তমান বাংলাদেশটাকে এভাবে হিসেব করলে এই ন্যাড়া কুকুরটা যে কে হবে তা বোঝা মুশকিল। তবে গাইবান্ধায় অনুপ্রবেশকারী দুজন ভারতীয় পুলিশের গণপিটুনী খাওয়ার গুজবটি যদি সত্যি হয়, তাহলে আমাদের আতংকিত হবারই কথা। (দয়া করে গুজবে কেউ কান দেবেন না)।
২০ জানুয়ারি সোমবার ২০১৪। বাংলাদেশ জাতিয়তাবাদী দল (বিএনপি) সমাবেশ ডেকেছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। দলমত নির্বিশেষে দেশের সকল বিবেকবান মানুষ, যারা আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থক হয়েও আওয়ামী লীগের বর্তমান কজ কর্মের নিন্দা করছেন, তাদেরকেও এই সমাবেশে এসে ঐক্য গড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ।
মাত্র ১৮ ঘণ্টার নোটিশে এ সমাবেশের আয়োজন কতটা ফলপ্রুস হয়েছে তা অনেকেই প্রমাণ পেয়েছেন। সবচেয়ে বড়কথা এটি ছিল জামায়াতে ইসলাম মুক্ত একটি সমাবেশ। যা বিএনপিকে আবারো তার নিজস্বতায় ফিরিয়ে এনেছে। বলাবাহুল্য যে. জামায়াত ইস্যুতে বিএনপি তার নিজস্ব জনসমর্থন অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছেন। এমনটা যারা ভেবেছিল তাদের সে ভাবনা এ সমাবেশে ভুল প্রমাণ হল।
একইদিন ফেসবুক জুড়ে বাংলাদেশ আমজনতা পরিষদ (বাপ) নামের একটি সংগঠনের আহ্বান ছিল বিএনপির এই সমাবেশের পক্ষে। সংগঠনের প্রস্তাবক সাংবাদিক আরিফ আহমেদ এ সম্পর্কে বলেছেন, দেশের চলমান সংকট নিরসনে বাংলাদেশের বিবেকবান মানুষের উচিত হবে বিএনপির এই আহ্বানে সাড়া দেয়া। কারণ, সরকারের অতি আত্মবিশ্বাসে ধ্বস নামাতে না পারলে তারা আরো বেশি অহংকারি ও জনগণের জন্য ক্ষতিকর হয়ে এ দেশের মানুষের উপর আরো বেশি মাত্রায় নির্যাতন শুরু করবে।
আরিফ আহমেদ বলেন, আজ যে সারাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা-নির্যাতন এ জন্য অনেকাংশেই এই সরকার দায়ী। ভিন্ন ধর্মের শ্রদ্ধেয়জনেরা যদি একটু ভাবেন, তাহলেই বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে। তাদের সেই অর্পিত সম্পত্তি আইনের বিষয়টা কি হলো? সেটা নিয়ে কোনো উচ্যবাচ্য নেই কেন?
বাপ প্রস্তাবক আরো বলেন, এই যে নীলফামারীতে সাংস্কৃতিক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের উপর হামলার কথিত আসামীরা, মুখখোলার আগেই মারা যাচ্ছে- এতে কি প্রমাণ হচ্ছে? এরা কি নূর সাহেবের গাড়িবহরে হামলা মামলারই আসামি? বিষয়টি পরিস্কার নয়। আমিতো বলবো মাননীয় মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরেরর আরো অনেক সাবধান হওয়া উচিত। কারণ শত্রু তার কাঁধে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। সে মন্ত্রী হয়ে যাবে এটা হয়তো ভাবেনি। তাই সত্য যেন প্রকাশ না হয়, সেজন্যই আসামীদের হত্যা করা হচ্ছে। আমি নীলফামারী জলঢাকা এলাকার অলিগলিতে ঘুরেছি। জামায়াতের আমীর ও সাবেক এমপি মিজানুর রহমান-এর ইন্টারভিউ করেছি। জয়নাল আবেদীনের কর্ম আর মিজানের কাজ আকাশ পাতাল ব্যবধান। ডোমারের রউফ বা মুক্তার জনপ্রিয়তায় ধ্বস নেমেছে এই নূর সাহেবের কারণে। সৈয়দপুরের মানুষেরা ওখানে নূর সাহেবকে চায়। জামায়াত বিএনপির জোটই কি শুধু নূর সাহেবের শত্রু?
এই সন্ত্রাস ও দূর্নীতিমুক্ত একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে সবার আগে দরকার জনগণের সেবক একটি রাজনৈতিক দল। এ কথা এখন প্রায় সবাই স্বীকার করছেন। বিভিন্ন টেলিভিশন টক শোতে আলোচকরা একটি তৃতীয় দল না আসা পর্যন্ত এ অবস্তা চলতে থাকবে বলে বিশ্বাসও করেন। অধ্যাপক বদিউল আলম মজুমদার, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সাংবাদিক নাইমূল ইসলাম খান, সাংবাদিক নূরুল কবীর, সাংবাদিক নঈম নিজামসহ সুচিন্তার অধিকারী মানুষগুলো এ নিয়ে কথাও বলেছেন বেশ জোড়ে শোরে। যদিও গায়ের জোড়ের নির্বাচনে মহাজোট ভেঙ্গে পুনরায় ১৪ জোট সরকার গঠনের পর আমাদের সুশীল সমাজ ও নাগরিক সমাজ একদম চুপ মেরে গেছেন। কিছু কিছু টেলিভিশনে তারা নিষিদ্ধ বলেও শোনা যাচ্ছে।
তবে এটা সত্যি যে, রাজনৈতিক দল তো সে যে, নিজেকে আমজনতার গোলাম বলে বিশ্বাস করবে ও সেবা দিয়ে যাবে বিনা স্বার্থে। যা করেছেন মহাত্মা গান্ধী আর কায়েদে আজম জিন্না, আমাদের পূর্বপুরুষ শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মাওলানা ভাসানী ও কিছুটা হলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বলবেন বঙ্গবন্ধুর বেলা কিছুটা হলেও কেন? কেন তিনি পুরোটা নয়? কারণ, তিনিও ক্ষমতালোভী ছিলেন। আজ যদি তিনি (বঙ্গবন্ধু) স্বাধীন দেশে ফিরে এসে প্রধানমন্ত্রীর পদটি গ্রহণ না করতেন তাহলে এই দেশের প্রতিটি মানুষ তাকে জাতির পিতার সম্মান দিতে এতোটুকু কুণ্ঠিতবোধ করত না। শুধু এই ক্ষমতালোভী হবার কারণেই বঙ্গবন্ধু সবার কাছে বঙ্গবন্ধু থেকে গেলেন, জাতির পিতা হতে পারেন নাই। েোথাও কোথাও স্থপতি হয়েছেন। তবে তিনিও কিছুটা হলেও সেবক ছিলেন।
এ দেশে বসবাসরত হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি অনুরোধ আপনারা বুকে হাত দিয়ে বলেনতো, আপনারা কি সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের মানুষ? এ দেশকে কি ভালোবাসেন? দয়া করে সত্যিটা বলুন। কারণ, যদি এ দেশের মানুষ হিসেবে নিজেদের বিশ্বাস-ই করেন, তাহলে কেন নিজেদের সংখ্যালঘু বলছেন? আপনাকে নিয়েইতো আমরা ষোলকোটি মানুষ। যদি এ দেশকে ভালোবাসেন তাহলে কেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে বুক ফুলিয়ে প্রতিবাদ করছেন না। কেন? কেন যারা আপনাদের উপর হামলা চালাচ্ছে তাদের চিনতে পেরেও চুপ করে থাকছেন? বলবেন জীবনের ভয়ে। আরে দাদা, মরবেনতো একবারই। আপনি আমি সবাই মরবো। সত্য বলে, প্রতিবাদ করে, তবেই মরবো। জীবনের উপর হুমকী মনে হলেই জাতীয় পেসক্লাবে বা স্থানীয় প্রেসক্লাবে চলে যান ও সংবাদ সম্মেলন করে নিরপত্তা না পাওয়া পর্যন্ত প্রেসক্লাবের ভিতরে অবস্থান গ্রহণ করুন। অথবা ঐ যে আমজনতা পরিষদের (বাপ) নেতারা বলছেন, নিকটস্থ মসজিদের ভিতরে আশ্রয় নিতে। এটাও সুন্দর পরামর্শ। কেন তা করছেন না? ‘জামায়াত আর বিএনপি’ হামলা করছে বলে তোতা পাখির মত আউড়ে যাচ্ছেন একই কথা? আপনাদের এই কথার সূত্র ধরে জামায়াত ও বিএনপির রাজনীতি আজ হুমকীর মুখে। কিন্তু এরপর কি হবে ভেবেছেনতো দাদারা?
সত্য হচ্ছে আগুন। যা একদিন প্রকাশ পাবেই। আজ যদি আপনারা হুদুরামের দোষ বুদু রামের ঘাড়ে চাপান, তাহলে কাল এই হুদুরাম কিন্তু সত্যিই আপনার ঘাড় মটকে দেবে। তখন কার দোষ দেবেন? দয়া করে ঐক্য গড়ুন এবং সত্যকে প্রকাশ করুন নিঃশঙ্কোচে। এতে আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আপনার পরবর্তী বশংধর, আপনার সন্তানরা উপকৃত হবেন।