ঢাকা, ২৫ অক্টোবর (সাহিত্য বাজার) : সরকারের অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে নারী-পুরুষ সবাইকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধী দলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকার ২ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন। তা না হলে প্রাথমিক কর্মসূচি হিসেবে আগামী ২৭ থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ৩ দিনের হরতালের ডাক দিয়েছেন তিনি।
১৮ দলীয় জোটের আয়োজনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসমুদ্রে বিএনপি চেয়ারপারসন সরকারকে ২ দিনের সময় দিয়ে বলেন, আজ (শুক্রবার) ও আগামী কালের (শনিবার) এর মধ্যে এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আলোচনা শুরু না করলে আগামী রবিবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সারাদেশে সর্বাত্মক হরতাল পালন করা হবে। এর মধ্যে যদি কোনো হত্যা, গুম হয়। তাহলে সকল দায়-দায়িত্ব আওয়ামী লীগকে নিতে হবে।
তিনি বলেন, সরকার জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। ক্ষমতার জন্য নয়, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আমরা আন্দোলন করছি। এ সরকার অবৈধ। এ পাঁচ বছরে উন্নয়ন বলতে কুইক রেন্টালের নামে কুইক মানি পকেটে ঢুকিয়েছে। আপনাদের অর্জন- শেয়ারবাজার, হলমার্ক, ডেসটিনি, আর ডেসটিনির ব্যাংক জালিয়াতি।
খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা গুম করার জন্য বাহিনী তৈরি করেছেন। কাদের নিয়ে তৈরি তাও জানি। ইলিয়াস আলী কে গুম করা হয়েছে। চৌধুরী আলমকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। শিবির নেতা দেলাওয়ারকে নির্যাতন, বিএনপি নেতা পিন্টুকে জেলে নির্যাতন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিরোধী দল কথা বলতে পারেনা । অফিসে যেতে পারে না । বিএনপি, জামায়ত অফিস অবরুদ্ধ। পুলিশ দিয়ে অফিসে হামলা হচ্ছে।
বেগম জিয়া প্রশাসনের উদ্দেশে বলেন, আপনারা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেন, অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন না। পুলিশ বাহিনীকে বলবো, আপনারা আর নির্যাতন করবেন না। কোনো সমস্যা হবে না। আমরা দলীয়করণ করবো না। প্রত্যেকে কাজে লাগাবো।
খালেদা জিয়া বলেন, পাঁচ বছরে উন্নয়ন হয়নি। গ্যাস পায় না। বিদ্যুৎ নেই। আপনারা এসেছেন দেশকে ধ্বংস করার জন্য, ভালো কিছুর জন্য নয়।গার্মেন্টস শিল্পকে ধ্বংস করেছেন, বাংলাদেশের সম্মান নষ্ট করেছেন। রানা প্লাজার রানা মুরাদ জংয়ের লোক। যারা সরকারের উন্নয়নের দাবি করছে। তারা বলুক পদ্মা সেতু কেনো হলো না, জানতে চান খালেদা জিয়া। সরকার গ্রামীণ ব্যাংককে বন্ধ করে দিয়ে দেশের মানুষকে গরীব বানাতে চায়। ড. ইউনূস সম্মানিত মানুষ। সম্মানিত মানুষকে সরকার সম্মান দিতে জানে না।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, ২৭ তারিখ থেকে এ সরকার সম্পূর্ণ অবৈধ। হাসিনার অধিনে কোনো নির্বাচন এ দেশে হবে না। হাসিনাকে অনেক আগেই মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। আমরা সংসদেও প্রস্তাব রেখেছি। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এতোদিনে সমাধান হতো। র্যাব-পুলিশ দিয়ে ক্ষমতায় থাকবেন, সেটা হতে দেয়া হবে না। এ দেশে সকল দলের অংশগ্রহণেই নির্বাচন হতে হবে। না হলে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। এক দলীয় নির্বাচন বন্ধ করতে হবে। আপনারা যদি মনে করেন, আপনারা জনপ্রিয়, জনপ্রিয়তা যাচাইয়ে নির্বাচন দিন। আমরা যে প্রস্তাব দিয়েছি। সেটা বাস্তবায়ন সম্ভব।
তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি হেলিকপ্টারে করে নৌকায় ভোট চাইছেন। খেয়াল করে দেখেননি নৌকা ফুটো হয়ে গেছে। সরকার একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছেন আপনারা। অনির্বাচিত অবৈধ সরকারকে সমর্থন দিয়েছেন আপনারা। মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিনকেও আপনারা আন্দোলনের ফসল বলে দাবি করেছিলেন।
খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা বারবার গণতন্ত্র ধ্বংস করছেন। এসব বন্ধ করে সোজা পথে চলেন। আপনি যে গর্ত খুঁড়ছেন, কিন্তু ওই গর্তে পড়বেন আপনিও। গর্ত থেকে ওঠার ক্ষমতা থাকবে না।
ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকার সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস-চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, সেলিমা রহমান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শামসুজ্জামান দুদু, এডভোকেট আহমদ আযম খান, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মাহাবুব উদ্দিন খোকন, এনডিপি সভাপতি গোলাম মোর্ত্তজা, কল্যাণ পার্টির সভাপতি সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান প্রমুখ বক্তৃতা করেন।