সাহিত্যের আয়নায় ধরা দিক সত্য সুন্দর সমাজ
দূরে রেখে রেষারেষি-দলাদলি, হিংসা আর বিদ্বেষ
প্রবীণের ছায়ায় বেড়ে উঠুক নবীনের প্রতীতী
বেঁজে উঠুক জীবনের অধূনা উচ্ছ্বাস।’
এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গতবছর ৬ই বৈশাখ থেকে ১০ বৈশাখ ১৪১৯ (১৯ এপ্রিল থেকে ২৩ এপ্রিল ২০১২) পর্যন্ত পাঁচ দিনব্যাপী সাহিত্য সম্মেলন ও বইমেলার আয়োজন করেছিল সাহিত্যের সংবাদপত্র হিসেবে পরিচিত সাহিত্য বাজার পত্রিকা। পত্রিকাটির পঞ্চমবর্ষে পদার্পন উপলক্ষে ১৯ এপ্রিল ২০১২ বিকেল ৫টায় কবি সুফিয়া কামাল গণগ্রন্থাগার প্রাঙ্গণ, শাহবাগ, ঢাকাতে এই উৎসব ও বইমেলার উদ্বোধনী ঘোষণা করেন পত্রিকাটির সম্পাদকীয় বিভাগের তৎকালিন দুই উপদেষ্টা নাট্য নির্দেশক ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দিন ইউসুফ এবং নাট্যনির্দেশক ও অভিনেত্রী সারা যাকের।
প্রথমদিনের উৎসব ও সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়েজী, আবৃত্তি শিল্পী স্থপতি কাজী আরিফ, কবি এ এফ এম আকরাম হোসেন এবং বাংলা একাডেমীর পরিচালক শাহিদা খাতুন। উদ্বোধনী পর্বের আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন নাট্যজন সারা যাকের।
এ সময় প্রকাশকদের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন বই মেলার সমন্বয়ক আনোয়ার ফরিদী। প্রকাশকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন শ্রাবণ প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী রবিন আহসান। সবশেষে ছিল কণ্ঠশীলন বাচিকচর্চা কেন্দ্রের পরিবেশনা। এইদিনের অনুষ্ঠান উপস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন কবি মানস বিশ্বাষ।
বইমেলায় অংশগ্রহণ করেছিল পাঠক সমাবেশ, ম্যাগনাম ওপাস, প্যাপিরাস, শ্রাবণ, পড়–য়া, সন্দেশ, সাহিত্য বাজার প্রকাশন এবং লিটলম্যাগ সাম্প্রতিক ও ভনে।
প্রথমদিনের সেমিনারের বিষয় ছিল – বাংলাদেশের সাহিত্যচর্চা ও সাহিত্য পত্রিকার ভূমিকা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক এবং লিটলম্যাগ চিহ্ন-এর সম্পাদক রহমান রাজুর লেখা এই প্রবন্ধ পাঠ ও আলোচনা পর্বের নিমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন দৈনিক সমকালের যুগ্ম সম্পাদক কবি নাসির আহমেদ, যায়যায়দিন পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক কবি সালাম সালেহ উদ্দিন, মাটি পত্রিকার সম্পাদক কবি মারুফ রায়হান, ম্যাজিক লণ্ঠণ সংগঠনের সম্পাদক রতন মাহমুদ, ড. তপন বাগচী, লোক পত্রিকার সম্পাদক অনিকেত শামীম, সাম্প্রতিক পত্রিকার সম্পাদক আমিনুল বাসার, পথিক পত্রিকার সম্পাদক তারেক মাহমুদ প্রমূখ এবং এতে সভাপতিত্ব করার বিষয়ে ঐক্যমত ছিলেন সাহিত্য বাজারের উপদেষ্টা কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক।
হাসান আজিজুল হক অসুস্থতা জনিত কারণে ঢাকায় আসতে পারছেন না বলে জানিয়েছিলেন দু’দিন আগেই। তাই তাঁর পরিবর্তে কথা সাহিত্যিক রাহাত খানকে এই দিন সভাপতিত্ব করার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। অজ্ঞাত কারণে ড. তপন বাগচী ছাড়া এই দিনের সেমিনারের অতিথি ও সভাপতি কেউই অংশগ্রহণ করেন নাই।
২য় দিন
দ্বীতিয় দিন (৭ বৈশাখ ১৪১৯ ও ২০ এপ্রিল-২০১২ শুক্রবার) উৎসব পর্ব শুরু হয়েছিল বিকেল ৫টা থেকে সরাসরি সেমিনার পর্ব দিয়ে। এই সময়ের তরুণ গল্পকার সিলেটের বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজের প্রভাষক প্রশান্ত মৃধা নিজেই চলে এসেছিলেন নিজের লেখা প্রবন্ধ পাঠের জন্য। প্রবন্ধের বিষয় ছিল –
একাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশের গল্প-উপন্যাসের পর্যালোচনা
এই পর্বের বিশেষ অতিথি বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান ও কথা সাহিত্যিক রাহাত খান। আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন কথাসাহিত্যিক নাসরীন জাহান, অপরেশ বন্ধোপাধ্যায়, হামীম কামরুল হক, মনি হায়দার, শাহাদাত সোহাগ প্রমূখ। এখানে গল্পকার মনি হায়দার ও শাহাদাত সোহাগ উপস্থিত হলেও অন্যরা কেউই কথা রাখেন নাই। বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান অবশ্য পূর্বেই জানিয়েছিলেন যে, তিনি ঐ সময় ঢাকার বাইরে অবস্থান করবেন। এই পর্বের প্রধান অতিথি ড. আনিসুজ্জামান অজ্ঞাত কারণে অনুষ্ঠানের দিন তাঁর ফোন বন্ধ রেখেছিলেন এবং সভাপতি কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন অভিযোগ তুলেছিলেন তার অনুমতি ছাড়াই সাহিত্য বাজারের উৎসব নিমন্ত্রণ পত্রে তাঁর নাম ছাপা হয়েছে।
যদিও এই বিষয়ে সাহিত্য বাজার সম্পাদকের ব্যাখ্যা হচ্ছে- প্রত্যেক সম্মানীত জনকে প্রথমে পৃথক চিঠি প্রদান করে এবং একই সাথে ব্যক্তিগত মুঠোফোন ব্যবহার করে তাঁর সম্মতি গ্রহণ করা হয়েছে। ঐ সময়ের ফোন বক্সে নিশ্চয়ই এই বিষয়ের প্রমাণ রয়েছে। আমরা অনুমতি ছাড়া একজন অতিথির নামও ব্যবহার করিনি। ড. আনিসুজ্জামান স্যার তাঁর সম্মতি প্রদান করতে তিনদিন সময় নিয়েছিলেন। তবে আমাদের কিছু ভুল ছিল নিমন্ত্রণ কার্ড ছাপানোর ক্ষেত্রে চিঠি প্রদান করে সম্মতি পাওয়ার পরও অনেকের নাম কার্ড ছাপাতে গিয়ে কম্পিউটারের বিষয়ে জ্ঞান না থাকার কারণে কারও কারও নাম বাদ পড়ে গিয়েছিলো (চিঠিতে নাম আছে অথচ কার্ডে নাম না থাকার কারণে সুন্দরের চর্চারার মানুষেরা অসুন্দরের আচরণ করলেন, অনুষ্ঠানে না এসে)। এঁদের মধ্যে চ্যানেল আই-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক গল্পকার ফরিদুর রেজা সাগর, লিটেলম্যাগ অমিত্রাক্ষর সম্পাদক আমিনুর রহমান সুলতান ও আবৃত্তি শিল্পী আহকামউল্লাহ-এর নাম বাদ পড়ায় আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।
আবার অনুমতি প্রাপ্তির পর কার্ডে নাম ছাপা হয়েছে কিন্তু তাকে কার্ড প্রদান বা ফোনে যোগাযোগ করার কথা একদম ভুলে গেছি এমন অতিথিদের মধ্যে ম্যাজিক লণ্ঠনের রতন মাহমুদ এবং সাহিত্য বাজারের সার্বক্ষণিক বন্ধু কবি ও ছড়াকার আনজীর লিটন অন্যতম। এই ভুলগুলো শুধু মাত্র এই ভেবে ক্ষমা করুন যে, একা-একদম একা, কারো সাহায্য ছাড়া এই ৫দিনের বইমেলা ও সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন একজন মানুষ করেছে। জাতীয় দৈনিকের সাথে সম্পৃক্ত থাকার পরও যে সামান্য প্রেস রিলিজটা পৌঁছে দিতে পারেনি মিডিয়ার কাছে। সে সবাইকে ঘরে ঘরে যেয়ে নিমন্ত্রণপত্রটাও পৌঁছাতে পারেনি ঠিক সময়ে, পারেনি নিমন্ত্রণ পত্রটায় একবার চোখ বুলাতে, যে সবার নাম ঠিকঠাক আছে কি নাই। স্থান অভাবে কার্ডে কারো পদবী বা বিশেষণ ব্যবহার করা সম্ভব হয় নাই। এটাও একধরনের অপরাধ বৈকী।
যাইহোক, ২য় দিনের এই সেমিনার শুরু হয়েছিল আবৃত্তিশিল্পী শাহাদাৎ হোসেন নীপু ও তরুণ নাট্যকার নির্দেশক তানভীর সিডনীর উপস্থানায় কোনো সভাপতি, অতিথি ছাড়াই। প্রশান্ত মৃধার পাঠকৃত প্রবন্ধের উপর চমৎকার আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন দুই তরুণ গল্পকার মনি হায়দার ও শাহাদাত সোহাগ। একেবারেই শেষ মূহুর্তে এসে ঝিমিয়ে পড়া এই সেমিনার পর্বের প্রাণ সঞ্চালন করেছিলেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কবি আসলাম সানী।
কণ্ঠশীলনের দুই বন্ধু সালাম খোকন ও নুরুজ্জামান আবৃত্তি করে দর্শকদের অভিভূত করে দিলেন। সবশেষে ছিল ইউনিভার্সেল থিয়েটারের পরিবেশনায় জনপ্রিয় পথনাটক ‘উদ্ভাস্তু’ এর ৫২৩ তম প্রদর্শনী।
তৃতীয় দিন
উৎসবের ৩য় দিনটি ছিল সত্যিই ব্যতিক্রম (৮ বৈশাখ ১৪১৯ ও ২১ এপ্রিল-২০১২ শনিবার সকাল ১০ টা )। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পার্টি (বিএনপি)সহ সমমনা দলগুলোর ডাকে সকাল সন্ধ্যা হরতাল পালিত হচ্ছিল দেশব্যাপী। পূর্ব নির্ধারিত অনুষ্ঠান সূচীতে তাই কিছুটা পরিবর্তন আনতেই হলো। শিশু-কিশোর আবৃত্তিশিল্পী ও নাট্যকর্মীদের যাতায়াত সমস্যা বিবেচনায় সাংস্কৃতিক পর্বের আয়োজনটা বাদ দেয়া হলেও সেমিনার ও বইমেলা চলতে থাকলো।
এ দিনের সেমিনারের বিষয় –
কবিতার আধুনিকায়নের দুর্বোধ্যতায় কমে যাচ্ছে পাঠক
শীর্ষক প্রবন্ধটি লিখে পাঠিয়েছিলেন যশোরের সাগরদারী গ্রামের মধুসূদন একাডেমীর অধ্যক্ষ কবি খসরু পারভেজ। সকাল থেকেই কবিতা প্রেমীদের ফোন পাওয়া যাচ্ছিল। কারণ এর আগের রাতেই উৎসব কেন্দ্রিক ৫দিনের পাঁচটি প্রবন্ধ নিয়ে সাহিত্য বাজার উৎসব সংখ্যাটি পৌঁছে গিয়েছিলো বাংলাদেশের ৪৪টি জেলায়। বেশিরভাগ ফোনই আসছিল সিলেট ও চিটাগাং থেকে। এই পর্বের প্রধান অতিথি কবি বেলাল চৌধুরী ও সভাপতি কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী দুপুর ১২টাতেও চমৎকার আন্তরিকতা প্রকাশ করলেন এবং জানালেন যথাসময়ে পৌঁছে যাবেন তাঁরা। শুধু বিশেষ অতিথি কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা জানালেন তিনি ঢাকার বাইরে আছেন। জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছড়াকার আসলাম সানী সমস্ত দলমতের উর্ধ্বে উঠে দেখালেন তাঁর সত্যিকারের সাহিত্যপ্রেমী মনটাকে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক হয়েও মঞ্চে এসে মাউথপীস হাতে নিয়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠে উচ্চারণ করলেন সাহিত্য বাজারের সাম্যবাদী শ্লোগান –
‘সাহিত্যের আয়নায় ধরা দিক সত্য সুন্দর সমাজ
দূরে রেখে রেষারেষি-দলাদলি, হিংসা আর বিদ্বেষ
প্রবীণের ছায়ায় বেড়ে উঠুক নবীনের প্রতীতী
বেঁজে উঠুক জীবনের অধূনা উচ্ছ্বাস।’
এই পর্বের বিশেষ অতিথি ও আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকার আশ্বাস দিয়েছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা, কবি নাসির আহমেদ, কবি ড. মুহাম্মদ সামাদ, গবেষক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ, কবি ও ছড়াকার আসলাম সানী, কবি ও ছড়াকার আমীরুল ইসলাম, কবি বদরুল হায়দার, কবি তারেক মাহমুদ ছাড়াও তরুণ প্রজন্মের কবি শৈবাল আদিত্য, কবি সেলিম বালা, কবি মানস বিশ্বাস, কবি নাভেদ আফ্রিদী প্রমূখ। অথচ বিকেল পাঁচটার অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় আবৃত্তিশিল্পী ও প্রবন্ধ উপস্থাপক শাহাদাৎ হোসেন নীপু একে একে মঞ্চে ডেকে তুললেন কবি ড. মুহাম্মদ সামাদ, কবি ও ছড়াকার আসলাম সানী, কবি তারেক মাহমুদকে। রাস্তা থেকে জোর করে ধরে এনে সভাপতির আসনে বসানো হলো শ্যামল স্নিগ্ধ কবি মহাদেব সাহাকে। বলা যায়, কবি মহাদেব সাহার উদারতায়-ই অনেকটা প্রাণ পেল এই উৎসব। কিন্তু বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো স্বয়ং প্রকৃতি। হঠাৎই কোনো পূর্বাভাস না দিয়ে শুরু হল দমকা হাওয়া ও একই গতিতে বৈশাখী বৃষ্টি। কবি ড. মুহম্মদ সামাদ মাউথপীস হাতে আনন্দে চিৎকার করে বললেন Ñ ‘বৈশাখী বইমেলা ও সম্মেলনে বৈশাখের তা-ব না হলে কী জমে? বন্ধুরা আসুন এই বৈশাখে সাহিত্যেও এই সত্যিকারের উপস্থাপনায় বৈশাখী আড্ডা জমুক আজ এই চত্বরে।’
ততক্ষণে দর্শকদের অনেকেই চলে গেছেন নিরাপদ আশ্রয়ে। আমরা কয়েকজন বৃষ্টির ঝাপটা উপেক্ষা করে যখন প্রায় ভিজে দাঁড়কাক ঠিক তখনই সবাইকে মঞ্চের ছাউনীতে আশ্রয় নেয়ার জন্য আহ্বান জানালেন কবি আসলাম সানী। দর্শকদের মধ্যে তখন উপস্থিত ছিলেন গিতিকবি এম আর মঞ্জু, কবি আয়াত আলী পাটোয়ারী, কবি আব্দুল হক চাষী, কবি কৌমুদী নার্গিস, পারভীন আক্তার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি আবীদ হোসেনসহ তার বন্ধুরা। আমরা এই সাত আটজন শ্রোতা অতিথিদের পাশেই গোল হয়ে বসে পড়লাম। বৃষ্টির বেগও যেন বেড়ে গেল মূহূর্তেই। কবিতার আধুনিকায়নের দুর্বোধ্যতায় কমে যাচ্ছে পাঠক শিরোনামের পরিবর্তন করে যশোরের কবি ও অধ্যাপক খসরু পারভেজ সৃষ্টি শিল্পের ক্যানভাসে দূরহ কবিতা নামকরণ করেছিলেন। তার এই নামকরণকে কেন্দ্র করেই রবীন্দ্র, নজরুল, মাইকেল জীবনানন্দ হয়ে আলোচনার গতি জসিমউদ্দিন, ফররুখ আহমদ, আহসান হাবীব ও শামসুর রাহমানে এসে আরও যেন বেগবান হচ্ছিল। ড. মুহাম্মদ সামাদ তার জ্ঞানের সবটাই যেন উম্মুক্ত করে ঢেলে দিচ্ছিলেন বৃষ্টিভেজা মঞ্চের শ্রোতাদের মনের ভিতরে। এ এক অন্যরকম অনুভুতি। বৃষ্টির ঝাপটা থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য কেউ কেউ ছাতা দিয়ে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করছিলেন, কেউ আবার রক্ষা করার চেষ্টা করছিলেন সভাপতিকে।
কিন্তু সবাইকে থামিয়ে সভাপতি বলে উঠলেন- আরে সরাওতো এই ছাতা, এই বৃষ্টিতো আমাদের কবিতার প্রধান অলংকার। আজকের এই দিনটি স্মৃতি হবে সবার।
চতুর্থ দিন
চতুর্থ দিনও (৯ বৈশাখ ১৪১৯ ও ২২ এপ্রিল-২০১২ রবিবার) সকাল-সন্ধা বিএনপির ডাকা হরতাল চলছে। হরতালের ভিতরই অতিথিরা চলে এলেন সাহিত্য বাজার মঞ্চে। এই পর্বের প্রধান অতিথি: নাট্যব্যক্তিত্ব ও অভিনেতা মামুনুর রশীদ এবং সভাপতি নাট্যব্যক্তিত্ব ড. ইনামুল হক। বিশেষ অতিথি ও আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকার আশ্বাস দিয়েছিলেন নাট্যজন পীযূস বন্দোপাধ্যায়, শংকর সাঁওজাল, মাজহারুল হক পিন্টু, আহসান খান, তানভীর সিডনী, জাহিদ পিন্টু, রীবন খন্দকার প্রমূখ ।
হবিগঞ্জের তরুন নাট্যকার সিদ্দিকী হারুন-এর লেখা প্রবন্ধ – বাংলাদেশের নাট্যচর্চার অগ্রযাত্রায় সাহিত্যের ভূমিকা
বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন শংকর সাঁওজাল, আহসান খান, তানভীর সিডনী এবং মুন্সি আবু হারুন টিটো হরতালের কারণে নিজে আসতে না পারলেও অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্দেশক মামুনুর রশীদ বার বার ফোন করে উৎসবের খোঁজ নিচ্ছিলেন। শংকর সাঁওজাল এসেছেন শুনেই তিনি ফোনে কথা বলে প্রধান অতিথির দায়িত্ব তুলে দেন তাঁর হাতে। ছড়াকার কবি আসলাম সানী গ্রহণ করেন সভাপতির দায়ভার। বর্তমান সময়ের নাটকে মৌলিক গল্পের অভাবটা প্রকট হয়ে ওঠে এই আলোচনায়। ৮০এর দশকের পর সাহিত্যমানের নাটকের অভাব যেন কুড়ে কুড়ে খায় নাট্যজনদের।
পঞ্চম দিন
পঞ্চম ও শেষ দিনটিতেও ছাড় দিল না হরতাল। (১০ বৈশাখ ১৪১৯ ও ২৩ এপ্রিল-২০১২৩ সোমবার বিকেল ৩ টা ) সকালবেলাই কবি আসাধ চৌধুরী ফোন করে জানতে চাইলেন – আজও হরতাল পড়ল। তোমাদের সেমিনার কি হবে?
জ্বী হবে, আপনি তো আজ সভাপতি দাদা।
দেখি আবার হরতাল না হলে চলে আসবো ৬ টার মধ্যেই। বিকেল ৫টায় যথারীতি আমাদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যায়।
আবৃত্তি শিল্পী মীর বরকত-এর প্রবন্ধ – কবিতার পঠনশৈলী ও আবৃত্তিকারদের ভূমিকা
শীর্ষক আলোচনায় বিশেষ অতিথি ও আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকার আশ্বাস দিয়েছিলেন ভাস্বর বন্ধোপাধ্যায়, স্থপতি কাজী আরিফ, কবি অসীম সাহা, কবি নাসির আহমেদ, কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, আবৃত্তি শিল্পী গোলাম সারোয়ার, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তি শিল্পী হাসান আরিফ, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহকামউল্লাহ, শাহাদাৎ হোসেন নীপু, রেজিনা ওয়ালী লীনা, ফয়জুল আলম পাপ্পু প্রমূখ। আমাদের ভুলে নিমন্ত্রণ পত্রে আমরা আহকামউল্লাহ নামটি লিখতেই ভুলে গেলাম, অথচ তাঁর হাতে কি আনন্দেই না তুলে দিয়েছিলাম নিমন্ত্রণপত্রটি।
যাইহোক, এই পর্বের প্রধান অতিথি আবৃত্তি গবেষক ও অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী চলে আসলেন যথাসময়ে। তাকে পেয়ে মিডিয়ার বন্ধুরা বেশ উৎফুল্ল হলেন। শেষ দিনের বইমেলায় তাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ালেন তারা কিছুটা সময়। ভাস্বর বন্ধোপাধ্যায়ও চলে এসেছেন। এমন সময় কবি আসাদ চৌধুরী আবার ফোন করলেন। পরের দিনও হরতাল পরেছে এই সংবাদ জানিয়ে তিনি তার সভাপতির দায়িত্ব তুলে দিলেন আবৃত্তি শিল্পী ভাস্বর বন্ধোপাধ্যায়-এর উপর। সব ভালো যার, শেষ ভালো তার। আমাদের এই উৎসবের শেষ দিনটি সত্যিই খুব চমৎকার জমে উঠেছিল। কবি আসাধ চৌধুরী ও আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহকামউল্লাহ ছাড়া সবাই উপস্থিত এই মঞ্চে। কণ্ঠশীলনের বন্ধু সালাম খোকন এমআর আখতার মুকুলের ‘চরমপত্র’ আবৃত্তি করে দর্শকদের বিমোহিত করেন। উৎসব সমাপ্তির ঘোষণা দিলেন আবৃত্তিশিল্পী অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী।
র্ষক আলোচনায় বিশেষ অতিথি ও আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকার আশ্বাস দিয়েছিলেন ভাস্বর বন্ধোপাধ্যায়, স্থপতি কাজী আরিফ, কবি অসীম সাহা, কবি নাসির আহমেদ, কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, আবৃত্তি শিল্পী গোলাম সারোয়ার, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তি শিল্পী হাসান আরিফ, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহকামউল্লাহ, শাহাদাৎ হোসেন নীপু, রেজিনা ওয়ালী লীনা, ফয়জুল আলম পাপ্পু প্রমূখ। আমাদের ভুলে নিমন্ত্রণ পত্রে আমরা আহকামউল্লাহ নামটি লিখতেই ভুলে গেলাম, অথচ তাঁর হাতে কি আনন্দেই না তুলে দিয়েছিলাম নিমন্ত্রণপত্রটি।
যাইহোক, এই পর্বের প্রধান অতিথি আবৃত্তি গবেষক ও অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী চলে আসলেন যথাসময়ে। তাকে পেয়ে মিডিয়ার বন্ধুরা বেশ উৎফুল্ল হলেন। শেষ দিনের বইমেলায় তাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ালেন তারা কিছুটা সময়। ভাস্বর বন্ধোপাধ্যায়ও চলে এসেছেন। এমন সময় কবি আসাদ চৌধুরী আবার ফোন করলেন। পরের দিনও হরতাল পরেছে এই সংবাদ জানিয়ে তিনি তার সভাপতির দায়িত্ব তুলে দিলেন আবৃত্তি শিল্পী ভাস্বর বন্ধোপাধ্যায়-এর উপর। সব ভালো যার, শেষ ভালো তার। আমাদের এই উৎসবের শেষ দিনটি সত্যিই খুব চমৎকার জমে উঠেছিল। কবি আসাধ চৌধুরী ও আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহকামউল্লাহ ছাড়া সবাই উপস্থিত এই মঞ্চে। কণ্ঠশীলনের বন্ধু সালাম খোকন এমআর আখতার মুকুলের ‘চরমপত্র’ আবৃত্তি করে দর্শকদের বিমোহিত করেন। উৎসব সমাপ্তির ঘোষণা দিলেন আবৃত্তিশিল্পী অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী।