হাঁটি হাঁটি পা পা করে চ্যানেল আই-এর হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অতিক্রম করেছে দশটি বছর। এই দশ বছরের শুরুটা ২০০৪ সালেে বাজার ব্যবস্থাপনার উপর একটি প্রতিবেদন দিয়ে। সেখানে তিন টাকায় বিক্রি হওয়া একটি কৃষিপণ্যকে অনুসরণ করে শাইখ সিরাজ ঢাকায় এসে সেই একই কৃষিপণ্যটি কীভাবে ৩৫ টাকায় ক্রয় করেন, তা তুলে ধরে এই হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ জনপ্রিয় অনুষ্ঠানটি। তাইতো কৃষক কৃষাণীর অতি কাছের মানুষ শাইখ সিরাজ। যার আরেক নাম কৃষিবন্ধু। বুধবার দুপুরে চ্যানেল আই ভবনে এই হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ অনুষ্ঠানের দশ বছরপূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্শেলনে উঠে আসে কৃষকের কষ্টের এমনই সব অজানা কাহিনী।
এসময় পর পর তিন বছরের জন্য চ্যানেল আই কৃষি পদক ঘোষণা করেন ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড চ্যানেল আই-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। অনুষ্ঠানিক ভাবে ২০১১, ২০১২ ও ২০১৩ সালের জন্য কৃষিক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে পদকপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেন তিনি। এরা হচ্ছেন – যথাক্রমে বাংলাদেশে মাছ চাষ বিপ্লবের নায়ক, দেশী মাছের জাত গবেষণায় সাফল্য অর্জনকারী হ্যাচারি উদ্যোক্তা ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জের চরপুলিয়ামারির মৎস্য চাষী নুরুল হক, শতাধিক স্থানীয় জাতের ধানবীজ সংগ্রহ ও জাত উন্নয়ন গবেষনায় কৃষক পর্যায়ে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী, কৃষকদেরকে সংগঠিত করার সফল নায়ক সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার হায়বাদপুর গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম এবং দেশে জৈব পদ্ধতির চাষ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও গ্রামীন নারীদের কৃষিকাজের মাধ্যমে স্বনির্ভর করে তোলার এক নিরলস কর্মী নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার শৈকারচর গ্রামের কৃষক সেলিনা জাহান।
এছাড়া ২০১৪ সালের জন্য কৃষি গবেষণা ও উন্নয়নে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে চ্যানেল আই-এর পক্ষ থেকে আজীবন সম্মাননা প্রদানের জন্য ঘোষণা করা হয় বিশিষ্ট কৃষি বিজ্ঞানী ড. মতলুবর রহমানের নাম। আগামী ১৫ মার্চ ২০১৪ এক অনাড়ম্বর আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে প্রদান করা হবে ওই পদক ও সম্মাননা।
ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড চ্যানেল আই-এর ছাদঘরে ওই সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন হৃদয়ে মাটি ও মানুষের পরিকল্পক, উপস্থাপক ও পরিচালক, চ্যানেল আই এর পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ ও বিশিষ্ট সাংবাদিক ও দৈনিক সমকালের সম্পাদক গোলাম সরওয়ার।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে শাইখ সিরাজ হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানের বিভিন্ন সফল ও তাৎপর্যপূর্ণ অনুষ্ঠানের কথা তুলে ধরে বলেন, গত দশ বছরে কৃষি ও কৃষকের প্রতিটি চ্যালেঞ্জ, সমস্যা ও সম্ভাবনার জায়গাটিতে নিবিড়ভাবে মিশে গিয়ে কাজ করেছে হৃদয়ে মাটি ও মানুষ। আমরা চেষ্টা করেছি সরকার ও নীতি নির্ধারকের সঙ্গে কৃষকের মাঠের দূরত্বকে কমিয়ে আনতে। এর অংশ হিসেবে আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কৃষকের যেমন সাড়া পেয়েছি, একইভাবে সাড়া পেয়েছি সরকার, কৃষি বিজ্ঞানী, সম্প্রসারক, অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে সমাজের সকল শ্রেনীপেশার মানুষের।
কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানের এগারো বছরে পদার্পণ উপলক্ষে বিভিন্ন নতুন পদক্ষেপ গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন। এগুলির মধ্যে রয়েছে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন, জৈব সার প্রস্তুতকরণ, রাসায়নিক সারের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার থেকে কৃষককে বিরত করা, মানুষসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক নানা কারণে মাটি ও ফসলকে ক্ষতিকর পদার্থের মিশ্রণ থেকে রক্ষা করতে জনসচেতনামূলক প্রচারণা ‘গ্রো গ্রীন’, ব্যবসায় প্রশাসন অধ্যায়নরত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য ‘কৃষি উদ্যোগ প্রতিযোগিতা’, ও সারাদেশের কৃষকদের মধ্যে সমকালীন কৃষি জ্ঞান ও তথ্য আদান প্রদান নিয়ে কৃষি বিষয়ক একটি জাতীয় কুইজ প্রতিযোগিতা আয়োজন।
বিশিষ্ট সাংবাদিক গোলাম সরওয়ার বলেন, হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানটির সাথে আমি বেশ কয়েকটি পর্বে যুক্ত ছিলাম। এদেশে কৃষি তথা উন্নয়ন সাংবাদিকতার মাইল ফলক এ অনুষ্ঠানটি। এর মধ্য দিয়ে শুধু দেশের কৃষি ও কৃষকই উপকৃত হচ্ছেন না বিকশিত হচ্ছে উন্নয়ন সাংবাদিকতাও। গ্রামীন জীবন ব্যবস্থা ও কৃষির চিত্র এখন দেশের গণমাধ্যমগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। এতে শাইখ সিরাজের অবদান অনস্বীকার্য।