চলতি বছর ২০১৪ এর এপ্রিলে সপ্তম বর্ষ অতিক্রম করবে সাহিত্য বাজার পত্রিকা। এ উপলক্ষে বর্ণাধ্য আয়োজনের প্রস্তুতিতে এবারই প্রথম সাহিত্য বাজার সাহিত্য পদক ঘোষণা করেছে পত্রিকাটির উপদেষ্টা পর্ষদ। প্রথমবারের এ পদকটির নামকরণ করা হয়েছে সাহিত্য বাজার এ এম জহুর স্মৃতি সাহিত্য পদক। যার মূল্যমান নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০,০০০ (ত্রিশ হাজার) টাকা। সব্যসাচী লেকক সৈয়দ শামসুল হক পাচ্ছেন প্রথমবারের এই প্রথম সাহিত্য পদকটি।
সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক সম্পর্কে
সৈয়দ শামসুল হকের জন্ম ১৯৩৫ সালে কুড়িগ্রামে। বাবা সিদ্দিক হুসাইন, মা হালিমা খাতুন। তাঁর বাবা চাইতেন ছেলে ডাক্তারি পড়বে। কিন্তু তিনি ডাক্তারি পড়ার চাপ এড়াতে ১৯৫১ সালে ভারতের মুম্বাই পালিয়ে যান। সেখানে তিনি বছরখানেক একটি সিনেমা প্রডাকশন হাউসে সহকারী হিসেবে কাজ করেন। এরপর দেশে ফিরে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ীই তিনি ভর্তি হন জগন্নাথ কলেজের মানবিক শাখায়। পরে ১৯৫৪ সালে তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। তবে ইংরেজি বিভাগে তাঁর পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনায় ইস্তফা দেন সৈয়দ শামসুল হক। এর কিছুদিন পর তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘’দেয়ালের দেশ’’ প্রকাশিত হয় ।
বাবার মৃত্যুর পর ১৯৫৬-৫৭ সালে বেশ অর্থকষ্টে পড়ে যান সৈয়দ হক। ওই সময় অর্থের জন্যই তিনি শুরু করেন চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য রচনা। ১৯৫৭ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত সৈয়দ হক ৩০টির মতো চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য রচনা করেন। সৈয়দ হকের লেখা ‘মাটির পাহাড়’, ‘তোমার আমার’, ‘রাজা এল শহরে’, ‘শীত বিকেল’, ‘সুতরাং’, ‘কাগজের নৌকা’ ইত্যাদি চলচ্চিত্র দর্শকপ্রিয় হয়।
সৈয়দ হক চলচ্চিত্রের জন্য গানও রচনা করেন। ‘এমন মজা হয় না গায়ে সোনার গয়না’, ‘এই যে আকাশ এই যে বাতাস’, ‘তুমি আসবে বলে কাছে ডাকবে বলে’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘তোরা দেখ দেখ দেখরে চাহিয়া’ ইত্যাদি গান সমৃদ্ধ করে বাংলা চলচ্চিত্রকে। তবে চলচ্চিত্র অংগনে তাঁর এ ব্যস্ততার মধ্যেও থেমে থাকেনি সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা কিংবা ছোটগল্প রচনা। ১৯৬১ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর কাব্যগ্রন্থ একদা এক রাজ্যে। ১৯৫৪ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত লেখা তাঁর ছোটগল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘তাস’, ‘শীত বিকেল’, ‘রক্ত গোলাপ’ প্রভৃতি।
বাংলা মঞ্চ নাটকেও শক্তিমান এক পুরুষ হিসেবে নিজের লেখনীর প্রমাণ দিয়েছেন সৈয়দ হক। তাঁর লেখা নাটকগুলোর মধ্যে ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ এবং ‘নূরলদীনের সারা জীবন’ সমকালীন অভিপ্রায়ের এক দৃপ্ত প্রকাশ। সৈয়দ হকের লেখা অন্যান্য নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘গণনায়ক’, ‘ঈর্ষা’, ‘নারীগণ’, ‘উত্তরবংশ’ ইত্যাদি।
অগণিত পাঠকের ভালোবাসার পাশাপাশি দেশের প্রায় সব প্রধান পুরস্কারই নিজের অর্জনের খাতায় জমা করেছেন সৈয়দ শামসুল হক। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো বাংলা একাডেমী পদক, একুশে পদক, আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, পদাবলী কবিতা পুরস্কার, জাতীয় কবিতা পুরস্কার, স্বাধীনতা পদক প্রভৃতি।
সৈয়দ শামসুল হকের ভাষ্য অনুযায়ী, তাঁর রচিত প্রথম পদ তিনি লিখেছিলেন এগারো-বারো বছর বয়সে। টাইফয়েডে শয্যাশায়ী কবি তাঁর বাড়ীর রান্নাঘরের পাশে সজনে গাছে একটি লাল টুকটুকে পাখি দেখে দুলাইনের একটি পদ “আমার ঘরে জানালার পাশে গাছ রহিয়াছে/ তাহার উপরে দুটি লাল পাখি বসিয়া আছে।” রচনা করেন। এরপর ১৯৪৯–৫০ সালের দিকে ম্যাট্রিক পরীক্ষার পরে ব্যক্তিগত খাতায় ২০০টির মতো কবিতা রচনা করেন। সৈয়দ শামসুল হকের প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় ১৯৫১ সালের মে মাসে। ফজলে লোহানী সম্পাদিত ‘’অগত্যা’’ পত্রিকায়। সেখানে “উদয়াস্ত” নামে তাঁর একটি গল্প ছাপা হয়।
সাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হকের শিক্ষাজীবন শুরু হয় কুড়িগ্রাম মাইনর স্কুলে। সেখানে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। এরপর তিনি ভর্তি হন কুড়িগ্রাম হাই ইংলিশ স্কুলে। এরপর ১৯৫০ সালে গণিতে লেটার মার্কস নিয়ে সৈয়দ শামসুল হক ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
সৈয়দ শামসুল হকের পিতার ইচ্ছা ছিলো তাঁকে তিনি ডাক্তারী পড়াবেন। পিতার এরকম দাবি এড়াতে তিনি ১৯৫১ সালে বম্বে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি বছরখানেকের বেশী এক সিনেমা প্রডাকশ হাউসে সহকারী হিসেবে কাজ করেন। এরপর ১৯৫২ সালে তিনি দেশে ফিরে এসে জগন্নাথ কলেজে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী মানবিক শাখায় ভর্তি হন। কলেজ পাসের পর ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন।
এ যাবৎ প্রকাশিত তাঁর রচনাবলী
প্রবন্ধ
হৃৎ কলমের টানে (১ম খন্ড ১৯৯১, ২য় খন্ড ১৯৯৫)
ছোট গল্প
তাস (১৯৫৪), শীত বিকেল (১৯৫৯), রক্তগোলাপ (১৯৬৪), আরন্দের মৃত্যু (১৯৬৭), প্রাচীন বংশের নিঃস্ব সন্তান (১৯৮২), সৈয়দ শামসুল হকের প্রেমের গল্প (১৯৯০), জলেশ্বরীর গল্পগুলো (১৯৯০), শ্রেষ্ঠ গল্প (১৯৯০)
কবিতা
একদা এক রাজ্যে (১৯৬১), বিরতিহীন উৎসব (১৯৬৯), বৈশাখে রচিত পংক্তিমালা (১৯৭০), প্রতিধ্বনিগণ (১৯৭৩), অপর পুরুষ (১৯৭৮), পরাণের গহীন ভিতর (১৯৮০), নিজস্ব বিষয় (১৯৮২), রজ্জুপথে চলেছি (১৯৮৮), বেজান শহরের জন্য কোরাস (১৯৮৯), এক আশ্চর্য সংগমের স্মৃতি (১৯৮৯), অগ্নি ও জলের কবিতা (১৯৮৯), কাননে কাননে তোমারই সন্ধানে (১৯৯০), আমি জন্মগ্রহণ করিনি (১৯৯০), তোরাপের ভাই (১৯৯০), শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৯০), রাজনৈতিক কবিতা (১৯৯১), নাভিমূলে ভস্মাধার, কবিতা সংগ্রহ, প্রেমের কবিতা, ধ্বংস্তূপে কবি ও নগর (২০০৯)
উপন্যাস
এক মহিলার ছবি (১৯৫৯), অনুপম দিন (১৯৬২), সীমানা ছাড়িয়ে (১৯৬৪), নীল দংশন (১৯৮১), স্মৃতিমেধ (১৯৮৬), মৃগয়ায় কালক্ষেপ (১৯৮৬), স্তব্ধতার অনুবাদ (১৯৮৭), এক যুবকের ছায়াপথ (১৯৮৭), স্বপ্ন সংক্রান্ত (১৯৮৯), বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ (১ম খন্ড ১৯৮৯, ২য় খন্ড ১৯৯০), বারো দিনের শিশু (১৯৮৯), বনবালা কিছু টাকা ধার নিয়েছিল (১৯৮৯), ত্রাহি (১৯৮৯), তুমি সেই তরবারী (১৯৮৯), কয়েকটি মানুষের সোনালী যৌবন (১৯৮৯), শ্রেষ্ঠ উপন্যাস (১৯৯০), নির্বাসিতা (১৯৯০), নিষিদ্ধ লোবান (১৯৯০), খেলা রাম খেলে যা (১৯৯১), মেঘ ও মেশিন (১৯৯১), ইহা মানুষ (১৯৯১), মহাশূন্যে পরাণ মাষ্টার, দ্বিতীয় দিনের কাহিনী, বালিকার চন্দ্রযান, আয়না বিবির পালা, কালঘর্ম, দূরত্ব, না যেয়ো না, অন্য এক আলিঙ্গন, এক মুঠো জন্মভূমি, বুকঝিম ভালোবাসা, অচেনা, আলোর জন্য, রাজার সুন্দরী।
কাব্যনাট্য (মঞ্চ)
পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় (১৯৭৬), গণনায়ক (১৯৭৬), নুরুলদীনের সারা জীবন (১৯৮২), এখানে এখন (১৯৮৮), কাব্যনাট্য সমগ্র (১৯৯১), ঈর্ষা।
কথা কাব্য
অন্তর্গত
বড় গল্প
তাস, রক্ত গোলাপ
অনুবাদ
ম্যাকবেথ, টেম্পেস্ট, শ্রাবণ রাজা (১৯৬৯)
শিশুসাহিত্য
সীমান্তের সিংহাসন (১৯৮৮), আনু বড় হয়, হড়সনের বন্দুক
চলচিত্র
নিষিদ্ধ লোবান অবলম্বনে মুক্তিযোদ্ধা নির্দেশক নাসিরুদ্দিন ইউসুফ পরিচালিত গেরিলা ছবিটি তৈরি হয়েছে।
পুরস্কার
বাংলা একাডেমী পুরস্কার, ১৯৬৬, আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৬৯, অলক্ত স্বর্ণপদক ১৯৮২, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৮৩, কবিতালাপ পুরস্কার ১৯৮৩, লেখিকা সংঘ সাহিত্য পদক, ১৯৮৩, একুশে পদক,১৯৮৪, জেবুন্নেসা-মাহবুবউল্লাহ স্বর্ণপদক ১৯৮৫, পদাবলী কবিতা পুরস্কার,১৯৮৭, নাসিরুদ্দীন স্বর্ণপদক, ১৯৯০, টেনাশিনাস পদক, ১৯৯০, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, চিত্রনাট্য, সংলাপ ও গীতিকার, মযহারুল ইসলাম কবিতা পুরস্কার ২০১১,
সৈয়দ শামসুল হক : জীবন কথা
কুড়িগ্রাম জেলায় ১৯৩৫ সালের এক শীতের রাতে সাত মাস না পেরোতেই তাঁর জন্ম হয়। খুব ক্ষীণ ছিলেন, ফলে মুখে খাবার দেয়া হত তুলোয় ভিজিয়ে। সে ক্ষীণ শিশুটিই বাংলাদেশের সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। ছোটবেলায় তাঁর বাবার লেখালেখি আর মায়ের সাথে কেরসিনের বাতির নীচে বসে লেখাপড়া এই দুটো স্মৃতি মানসপটে গেঁথে রয়েছে খুব পরিষ্কারভাবে, কবি মনে করেন এদুটো ঘটনাই তাঁর মধ্যে লেখা-পড়ার দিকে ঝোঁক তৈরী করেছিল, তাঁকে পড়ুয়া স্বভাবের করে দিয়েছিল, যার ফলে তিনি হয়তো আজ লেখক হতে পেরেছেন। জন্মের পর হাইস্কুল পর্যন্ত কুড়িগ্রামেই কেটেছে। তাই তাঁর প্রায় সব গল্প-উপন্যাসের প্রধান পটভূমি হল কুড়িগ্রাম জেলার জলেশ্বরী নামের এলাকা। মানসপটের কল্পনা আর বাস্তবকে মিলিয়ে এ স্থানটি তৈরী করেছেন। বাবার হাতে লেখাপড়ার প্রথম হাতেখড়ি হলেও কুড়িগ্রাম মাইনর ইংলিশ স্কুলে ক্লাস থ্রী থেকে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবনের সূচনা ঘটে। এরপর অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করে কুড়িগ্রামের পাট চুকিয়ে দেন, সময়টা ছিল ১৯৪৮ দেশভাগের পরের বছর, বাবা বললেন বড় হতে হলে বড় জায়গায় যেতে হবে। পূর্ববঙ্গের নতুন রাজধানী ঢাকার কলেজিয়েট স্কুলে ১২ বছর বয়সে শামসুল হককে তাঁর বাবা অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি করিয়ে দেন এবং সেখান থেকেই তিনি মেট্রিক পাশ করেন।
ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় থেকেই তাঁর বই পড়ার ভীষণ ঝোঁক ছিল। ১৬ বছর বয়স থেকে নিয়মিত লেখালেখি শুরু করেন। তিনি গল্প, কবিতা পাশাপাশি লিখে গেছেন। ছেলে বড় হয়ে ডাক্তার হবে এমন আশা করলেও ছেলের কিন্তু বরাবর সাহিত্য পড়ার শখ, সে ইচ্ছা বাবার কাছে ব্যক্তও করা হল। প্রত্যুত্তরে বাবা বললেন, ‘আইএসসিতে বিজ্ঞানের কেমিস্ট্রি, ফিজিক্স, বায়োলজি ইত্যাদি বিষয়গুলো পড়তে ভয় পাচ্ছো বলেই তুমি ডাক্তারি পড়তে চাইছো না।’ এ কথায় কিশোর শামসুল হকের আঁতে ঘা লাগলো। বাবার এই কথাটা ভুল প্রমাণ করার জন্য, এটাকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। ফলে তিনি আইএসসিতে টেস্ট পরীক্ষা পর্যন্ত পড়লেন এবং তখন জগন্নাথ কলেজের ১১’শ ছাত্রের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করলেন। টেস্ট পরীক্ষার ফলাফল দেখিয়ে তিনি বাবাকে বলেছিলেন, ‘আমি যে বিজ্ঞান ভয় পাই না এবং আমি বিজ্ঞান পারি এটা প্রমাণ করার জন্য আমি এতদিন বিজ্ঞানে পড়েছি। তবে আমি বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করতে চাই না। এখন আমি আর্টস পড়তে চাই।’ পরের বছর তিনি জগন্নাথ কলেজ থেকে মানবিক শাখায় আইএ পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী সাহিত্যে অনার্স পড়া শুরু করেন। তবে অনার্স শেষ করার আর সুযোগ হয়নি। তার আগেই বাবার মৃত্যু হয়, ফলে পড়ালেখা ছেড়ে জীবন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হয়েছিল। সময়টা ১৯৫৪, আট ভাই-বোনের সংসারের সকল দায়িত্ব বর্তেছিল সদ্য ১৮’য় পা দেয়া বড় ছেলে সৈয়দ শামসুল হকের ওপর। একই বছর তাঁর প্রথম গল্পের বইটি ছাপা হয়। প্রথম কবিতার বই ছাপা হয় ১৯৬১ সালে।
লেখক সৈয়দ শামসুল হক মনে করেন, সকুল ও কলেজ জীবনে কিছু অসাধারণ শিক্ষকের সান্নিধ্যে আসতে পেরেছিলেন। যাঁরা কিনা তাঁর মধ্যে ইংরেজী ও বাংলা দু’টো ভাষার খুব শক্ত ভিত গড়ে দিয়েছিলেন। যা পরবর্তিতে লেখালেখি ও পেশাগত জীবনে খুব সহায়ক হয়েছিল। ফলে কবি তাঁর শিক্ষক হিসেবে দৌলতুজ্জামান স্যার, ফরিদ মাস্টার, অনীবাবু, নৃপেনবাবু, থিতিনবাবু, রাজেশবাবু, সুকুমারবাবু, অজিতকুমার গুহ, প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ সালাহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক তত্তাবধায়ক সরকার প্রধান হাবিবুর রহমান শেলী’র মত কিছু নাম আজ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে চান।
তিনি আরও মনে করেন তাঁর বেড়ে ওঠার সাথে সাথে বুদ্ধির বিকাশ এবং চিন্তা করার শক্তি বিকশিত হয়েছিল পারিপার্শ্বিক পরিবেশের কারণে। যে এলাকায় তিনি বড় হয়েছেন সেখানে হিন্দু-মুসলমান মিলেমিশে বসবাস করতো। মুসলিম ঘরের সন্তান হিসেবে তাঁর মনে গেঁথে দেয়া হয়েছে মুসলিম কৃষ্টি, আচার-বিধান, সাহিত্য-কলা ও কোরানের বানী। অন্যদিকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষক, বন্ধু ও প্রতিবেশীদের সংস্পর্শে বেদ-মহাভারত, পূজা-অর্চনা ও বিভিন্ন পার্বণ-উৎসবের সাথে পরিচিতি হতে পেরেছেন। একই সাথে তাঁর বাবার ইচ্ছাতে ছোটবেলায় প্রতি রবিবারে পাড়ায় গীর্জায় বাইবেল পাঠের আসরে যেতেন। আর সে সময়ে বৃটিশ শাসনাধীন বাংলাদেশে সব জায়গায় একটা পাশ্চাত্যের ভাবধারা নিহিত ছিল, স্কুলে ইংরেজী সাহিত্য পড়ানো হত বাধ্যতামূলকভাবে। ফলে এরকম পরিবেশের কারণে তাঁর মধ্যে সনাতনী ধারার মধ্য থেকে মুক্ত চিন্তা ও সঠিক যুক্তিক্রম দিয়ে ভাবার শক্তি তৈরী হয়েছিল যা তাকে লেখক হতে সহায়তা করেছে।
কবি তাঁর লেখার মধ্য দিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও কথাগুলোকে প্রকাশ করার চেষ্টা করেন, চারিদিকের বাস্তবতাকে অনবরত পর্যবেক্ষণ করেন যার প্রেক্ষিতে মনের মধ্যে অনেক কথা তৈরী হয় এবং সেই কথাগুলোকে তিনি কখনও গল্প কখনও কবিতা বা প্রবন্ধের মাধ্যমে প্রকাশ করার চেষ্টা করেন। তিনি লেখেন নিজের আনন্দে, মূলত নিজের মনের অস্থিরতাকে দূর করার জন্য। এরপর তা আরও দশজনের মধ্যে ভাগভাগি করে নেয়ার জন্য সে লেখাগুলোকে কাগজে প্রকাশ করেন। তবে এ পর্যন্ত তিনি আসলে কত লিখেছেন তার সঠিক হিসেব করে দেখেননি।
তথ্যসূত্র : শামসুন নাহার রূপা, উইকিপিডিয়া ও বাংলার কণ্ঠ । গ্রন্থনা : সদানন্দ সরকার