Sharing is caring!
সাংস্কৃতিক জন কাজল ঘোষের রয়েছে সম্মৃদ্ধ ইতিহাস
সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ পঞ্চানন ঘোষ বরিশাল তথা ভারতবর্ষের সংগীত অনুরাগী প্রায় সকলের কাছে পরিচিত একটি নাম। যিনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও চারণ করি মুকুন্দ দাসের সহচর্যে ছিলেন তাঁর জীবনের বেশীরভাগ সময়। আধুনিক বরিশালের অনেকেই হয়তো তা জানেন না বা জানলেও হয়তো স্মরণ সমীরণে আছে দ্বিধাদ্বন্দ্ব বা মেরুকরণ। যে কারণেই হয়তো বরিশালের গর্বিত ইতিহাসের অংশ হতে পারেনি তার পরবর্তী প্রজন্মের কোনো উল্লেখযোগ্য অবদান। অবশ্য তিনি পটুয়াখালী জেলার খেপুপাড়ার বাসিন্দা হওয়াটাও একটা কারণ বটে। তবে বৃহত্তর বরিশালের গর্ব ছিলেন ওস্তাদ পঞ্চানন ঘোষ পটুয়াখালীর শহীদ স্মৃতি পাঠাগারটিতে গাঁথা আছে তাঁর স্মরণালেখ্য। তাঁরই ছেলে বরিশালের সাংস্কৃতিক সংগঠক ও সাংস্কৃতিক জন কাজল কুমার ঘোষেরকে সাহিত্য বাজার পত্রিকার গুনীজন সম্মাননা ২০২২ প্রদানের মাধ্যমে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে চায় পত্রিকা কর্তৃপক্ষ। আর এটা গ্রহণে সম্মতি দিয়েছেন কাজল ঘোষও। তারও জন্ম তৎকালিন বরিশাল জেলার খেপুপাড়া বা বর্তমান পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলাতেই। মা নীহার কনা ঘোষ একজন সফল শিক্ষিকা যিনি কাজলের জন্মের সময় খেপুপাড়া গার্লস্ স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ৫ ভাইয়ের মধ্যে কাজল তৃতীয়। বড় ভাই প্রদীপ কুমার ঘোষ (পুতুল) ও মেঝ ভাই শ্যামল কুমার ঘোষ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের রনাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। কাজল নিজেও একজন মুক্তিযোদ্ধা বলে জানালেন প্রতিবেদককে। তিনি বলেন, বাবা-মায়ের চাকুরীর সুবাদে ১৯৬১ সনে তারা খেপুপাড়া ছেড়ে বরিশালে চলে আসেন। ১৯৬২ সনে বরিশালের প্রতিষ্ঠিত মিশনারীদের সেইন্ট পলস স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন। পরে সেইন্ট পলস স্কুলের নামকরণ করা হয় উদয়ন স্কুল। ১৯৭০ সনে তিনি এই উদয়ন স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাস করেন এবং ১৯৭০ সনেই সরকারী ব্রজমোহন কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন এবং ব্রজমোহন কলেজ থেকে ১৯৭৪ সনে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন।
ছোটবেলা থেকেই কাজল বাবা মায়ের অনুপ্রেরনায় একটি সাংস্কৃতি পরিমন্ডলে বড় হয়েছেন। সংগীতজ্ঞ বাবার সন্তান সে। তাই স্বভাবতই শুরুতে সংগীত ও আবৃত্তি পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের যাত্রা শুরু হয় তার।পারিবারিক পরিমন্ডলে সংগীত চর্চা করে প্রান্তিক সংগীত বিদ্যালয়ে ১৯৭২ সনে ভর্তি হয়ে বেশ কয়েক বছর বরিশালের সংগীত অঙ্গনে কাজ করেন কাজল ঘোষ। এর পূর্বে ১৯৬৬ সনে কাজল যখন ৭ম শ্রেনীর ছাত্র তখন বর্তমান সংগীত শিল্পী ও বিশেষজ্ঞ তপন মাহামুদের নির্দেশনায় চাঁদের ছেলে নামক একটি নাটকে মূখ্য ভূমিকায় অভিনয়ের মধ্য দিয়ে নাটকেও যাত্রা শুরু হয় তার। এরপর থেকে আর থেমে থাকেনি নাট্যচর্চা। সংগীতে জাতীয় পর্যায়ের পুরস্কার সহ অনেক অনেক সম্মাননাও পেয়েছেন কাজল ঘোষ। একজন অভিনেতা, নির্দেশক নাট্য সংগঠক হিসাবে বরিশালে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি অনেকটা ব্যতিক্রমী ধারায়। বর্তমানে সামাজিক সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কাজল একজন পুরোধ্বা ব্যক্তিত্ব।
স্কুল, কলেজ, বেতার, টেলিভিশন ও বরিশাল নাট্যাংগনে (পদক্ষেপ, বরিশাল নাটক, উদীচী) চল্লিশের অধিক নাটকে অভিনয় করে কাজল বরিশাল সাংস্কৃতিক ও নাট্য ব্যক্তিত্ব হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছেন। সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় কাজল উদীচী বরিশাল জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি, বরিশাল নাটকের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি, জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদের সভাপতি, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান বরিশাল বিভাগের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন কয়েক বছর। সাংস্কৃতিক ও নাট্যাংগনে কাজ করার সুবাদে কাজল প্রায় ৪০টির অধিক নাটকে অভিনয় করেছেন এবং যার প্রদর্শনী সংখ্যা অর্ধ শতাধিক। তার অভিনিত উল্লেখ যোগ্য নাটক নুরুল দিনের সারা জীবন, যুদ্ধ এবং যুদ্ধ, তোমরাই, আর্বত, লাল সালু, সখিনা, সমাজ, আলী বাবার পাচালী, জমিদার দর্পন, বিবিসাব, লেট দেয়ার বি লাইট, গিনিপিগের খাঁচা, আয়নায় বন্ধুর মূখ, পদ্মাবতীর পাচালী, অন্ধ্যকারের নিচে সূর্য অন্যতম।
স্কুল, কলেজ, বেতার, টেলিভিশন ও বরিশাল নাট্যাংগনে (পদক্ষেপ, বরিশাল নাটক, উদীচী) চল্লিশের অধিক নাটকে অভিনয় করে কাজল বরিশাল সাংস্কৃতিক ও নাট্য ব্যক্তিত্ব হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছেন। সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় কাজল উদীচী বরিশাল জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি, বরিশাল নাটকের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি, জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদের সভাপতি, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান বরিশাল বিভাগের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন কয়েক বছর। সাংস্কৃতিক ও নাট্যাংগনে কাজ করার সুবাদে কাজল প্রায় ৪০টির অধিক নাটকে অভিনয় করেছেন এবং যার প্রদর্শনী সংখ্যা অর্ধ শতাধিক। তার অভিনিত উল্লেখ যোগ্য নাটক নুরুল দিনের সারা জীবন, যুদ্ধ এবং যুদ্ধ, তোমরাই, আর্বত, লাল সালু, সখিনা, সমাজ, আলী বাবার পাচালী, জমিদার দর্পন, বিবিসাব, লেট দেয়ার বি লাইট, গিনিপিগের খাঁচা, আয়নায় বন্ধুর মূখ, পদ্মাবতীর পাচালী, অন্ধ্যকারের নিচে সূর্য অন্যতম।
কর্মজীবনে একজন কেমিস্ট কাজল ঘোষ ১৯৭৮ সনে একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীতে কেমিষ্ট হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৮০ সনে ফার্মাসিস্ট হিসাবে রেজিস্ট্রেশন গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে আয়ূর্বেদিক মেডিসিন এর উপরে ০৪ বছরের কোর্স সম্পন্ন করে ডিএএমএস ডিগ্রি লাভ করেন। দীর্ঘ ৪০ বছর ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে ফার্মাসিস্ট হিসেবে কর্মরত থেকে বিভিন্ন সময়ে উৎপাদন ব্যবস্থাপক, মান নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থাপক, কারখানা ব্যবস্থাপক এবং গত ০৪ বছর থেকে কেমিষ্ট ল্যাবরেটরীজ লিঃ এর মহা-ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করছেন। ঘুরেছেন দেশ ও বিদেশে, বহু প্রশিক্ষনে অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভ্রমন করেছেন এবং জাপানে উৎপাদনশীলতার উপরে ১৫ দিনের একটি প্রশিক্ষন কোর্স সফলতার সাথে শেষ করেছেন।
রাজনিতি ও সামাজিক কর্মকান্ডের মাঝে ছাত্র জীবন থেকেই কাজল সম্পৃক্ত। স্কুল জীবন থেকেই বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থেকে কাজল একজন সমাজ সচেতন মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ব্রজমোহন কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় কাজল বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। এর পূর্বে ৬৯’র গণ অভ্যুত্থানসহ ৭০’র নির্বাচন ও স্বাধিকার আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। ৭১’র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার গর্বিত স্মৃতিচারণে কাজল বলেন, মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে আমি টাকি মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে অনারারি লেঃ তোফাজ্জেল হক খোকা চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রশিক্ষণ নেয়ার পরে মুক্তিযোদ্ধা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোঃ আক্কাস হোসেনের তত্ত্বাবধানে বনগ্রাম মুক্তিযোদ্ধা নিয়োগ কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কর্মরত ছিলাম। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন অবস্থায় বানারীপাড়া থানায় পাক বাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে জানান তিনি।
৭০’র নির্বাচন বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলন ও ৭৫’ পরবর্তী সৈরাচারি শাসনের বিরুদ্ধে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি জেলা পরিষদ পুকুর রক্ষা, বরিশালের বধ্যভূমি রক্ষা, বিবি পুকুর, অশ্বিনী কুমার হল, বঙ্গবন্ধু অডিটরিয়াম ও শিল্পকলা একাডেমি নির্মাণে মূখ্য ভূমিকা পালন করে নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে জানালেন মুখোমুখি সাক্ষাতে। এছাড়া সেক্টর কমান্ডার ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ ৭১’র মাধ্যমে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছেন কাজল ঘোষ ।
৭০’র নির্বাচন বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলন ও ৭৫’ পরবর্তী সৈরাচারি শাসনের বিরুদ্ধে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি জেলা পরিষদ পুকুর রক্ষা, বরিশালের বধ্যভূমি রক্ষা, বিবি পুকুর, অশ্বিনী কুমার হল, বঙ্গবন্ধু অডিটরিয়াম ও শিল্পকলা একাডেমি নির্মাণে মূখ্য ভূমিকা পালন করে নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে জানালেন মুখোমুখি সাক্ষাতে। এছাড়া সেক্টর কমান্ডার ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ ৭১’র মাধ্যমে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছেন কাজল ঘোষ ।
বর্তমানে কাজল ঘোষ বরিশালের সেক্টর কমান্ডার মুক্তিযুদ্ধ,৭১ এর বরিশাল মহানগরের সাধারণ সম্পাদক, দুর্নিতি প্রতিরোধ কমিটির সহ-সভাপতি, শ্রম আদালতের জুড়ি বোর্ডের সদস্য, বরিশাল সোসাইটি ফর ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিষ্ট এর সাধারণ সম্পাদক, দৈনিক আজকের বার্তার উপদেষ্টা, শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সহযোগী সদস্যসহ আরও বহু সংগঠনের উপদেষ্টা ও সংগঠক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে তিনি বহু সম্মাননা পেয়েছেন, তার মধ্যে আরজ আলী মাতব্বর স্মারক সম্মাননা, ভোরের কাগজ পত্রিকার স্মারক সম্মাননা উল্লেখযোগ্য । স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে সুখী ও সাংস্কৃতিক পরিবার কাজল ঘোষের।
Sharing is caring!