একজন শেখ মুজিবুর রহমান যেমন আর ফিরে আসবেন না, তেমনি তৈরি হবেন না একজন মেজর জিয়াউর রহমানও। কিছু বোকামী আর বয়সগত কারণে অনেক সম্ভবনা থাকার পরও হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ এখন নেতৃত্ব প্রদানে সম্পূর্ণই অযোগ্য।
যার সুযোগ নিয়েই গত ২৫ বছর ধরে বাংলাদেশে চলছে চুলোচুলির রাজনীতি।
আর এই চুলোচুলির রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জিয়া পত্নী বেগম খালেদা জিয়া ও মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা। জাতীয় সংকট মূহুর্তে তাদের এই দেশের রাজনীতিতে আগমন হলেও, তারা তাদের অতীত ভুলে গিয়ে এখন জাতিকেই ফেলেছেন চরম সংকটে ।
এমন একটা উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন যে তাদের অবর্তমানে এই দেশের রাজনীতিতে হাল ধরার মতন কেউ থাকছেনা।
অনেকে হয়তো বলবেন যে, কেন বংশ পরম্পরার রাজনীতিতে বেগম জিয়ার পুত্র তারেক রহমান ও হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়তো আছেন। আসলেই কি আছেন? ভেবে দেখুনতো…
জাতির চরম সংকট মূহুর্তে নিজের গাঁ বাঁচিয়ে বিদেশে বসে একজন বক্তৃতা, বিবৃতি দিচ্ছেন, আর দেশের যারা বিএনপি সমর্থক তাদের শান্তনা দিচ্ছেন শীঘ্রই ফিরবেন যুবরাজ।
বিএনপি নেতাদের এই শান্তনা বানী জনমনে কতটা গৃহিত হচ্ছে তা তাদের আন্দোলনের চেষ্টার ব্যর্থতায় স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।চিত্রাট উল্টো হতো যদি তাদের যুবরাজ দেশের মাটিতে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে রক্তাক্ত হতেন।
অন্যজনকে অনেকটা জোর করেই রাজনীতিতে প্রবেশের চেষ্টায় মরিয়া তার মা। যা নিয়ে ইতোমধ্যে দলের প্রবীণদের সাথে দ্বন্দ স্পষ্ট।বিদেশ প্রীতিমুগ্ধ এই যুবরাজ কখনো সাদারণ মানুষের সাথে মিশে দেখেননি। তাই সাধারণের কাছে তিনি অপ্রত্যাশিতই থেকে যাবেন।তদুপরি এই যুবরাজ সম্পর্কে মন্তব্য করার অপরাধে লতিফ সিদ্দিকীর আজ বেহাল দশা।
প্রত্যন্ত অঞ্চলের রাজনীতি কখনোই বংশপরম্পরায় বিশ্বাসী নয়। এখানে নেতা বলতে শের এ বাংলা, মাওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আজো উদাহরণ মুখে মুখে। আর রাষ্ট্রপতি প্রসঙ্গ এলেই জিয়াউর রহমান ও হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদকে স্মরণ করেন সাবই।
ধরুন, আজ হঠাৎ বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা পরলোকে চলে গেলেন। তাহলে বাংলাদেশের ভবিষ্যত কি? তাদের জীবিতদশায় যে যুবরাজদ্বয় রাজত্বে তেমন একটা গ্রহণ যোগ্যতা পাচ্ছেন না, তারা কি দুই নেত্রীর অবর্তমানে দেশের হাল ধরতে পারবেন? সাধারণ মানুষ কি তাদের মেনে নেবেন? এ প্রশ্নে বিতর্ক আসবে এটাই স্বাভাবিক।কিন্তু প্রশ্নটা ভাবনার, তাইনা?
এই দুই নেত্রী ইচ্ছেকৃত কৌশলে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টিতে বাধা তৈরি করে রেখেছেন তাদের নিজস্ব ছাত্র সংগঠন দিয়ে। ছাত্রদল ও ছাত্রলীগ নামের যে সংগঠন দুটি সমাজে বিরাজমান তারা জনমনের স্বস্তি নয় বরং আতঙ্ক। ছাত্র রাজনীতির ধারাবাহিকতা অর্থাৎ ডাকসু, চাকসুসহ কলেজ বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন না করে, নিরপেক্ষ নির্বাচনী ধারা রক্ষা না করে ছাত্র সংগঠনকে টিকিয়ে রাখা, আর এ কারণে ছাত্রদের হাতে শিক্ষার পরিবর্তে টেণ্ডার ও চাঁদাবাজীর মশলা তুলে দেয়ায় দেশে সাধারণ মেধাবী ছাত্ররা এখন রাজনীতি বিমুখ। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েরাতো রাজনীতির নাম শুনেই ঘৃণায় মুখ ঘুরিয়ে নেন। এটা কখনোই হত না যদি ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীর ভোটে তাদের ছাত্র নেতা নির্বাচিত হতেন। তাহলে দেশ ভবিষ্যতের নেতৃত্ব খুজেঁ পেত এদের মধ্যে থেকেই। কিন্তু দুই নেত্রী তা চাননি। তারা চাইছেন জাতি তাদের বংশ পরম্পরার রাজনীতিকে মেনে চলবে এবং তাদের সন্তানদের, তারও সন্তানদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবে। যে কারণে বর্তমান পরিস্থিতির ঘোলাটে দশা।
আওয়ামী লীগ যেমনটা এখন বুঝতে পারছে যে, দেশের মানুষ তাদের উপর আস্থা হারিয়ে বেশিরভাগ অংশই এন্ট্রি আওয়ামী লীগ মনোভাব পোষণ করছে, এবং নির্বাচন হলে তারা আর ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে না। তেমনি বিএনপি বুঝতে পেরেছে তাদের নেতৃত্ব জনমনে কোনো প্রভাব বিস্তার করছেনা। তাই তাদের কোনো আন্দোলনেই আর জনগণকে তারা পাশে পাচ্ছেন না। তবে সৌভাগ্য এই যে বিএনপির দলীয় সমর্থন কমলেও জনমনে আওয়ামি লীগ বিরোধীতা ক্রমশ বাড়ছে।
এমন পরিস্থিতিতে নতুন নেতৃত্ব খুবই জরুরী ছিল। তৃতীয় একটি রাজনৈতিক শক্তির উত্থান এতোটাই জরুরী যে তা না হলে আগামী ১০ বছরে আওয়ামি লীগকেই স্বৈরাচারী ভূমিকায় দেখতে হবে বাংলাবাসীদের। নতুন এই নেতৃত্ব হতে হবে একেবারেই আনকোরা নতুনের হাতে। কোনো দলভাঙ্গা নেতার হাতে নয়। আর এমন নেতৃত্ব কি আদৌ হবে এ দেশে। হবে তো বটেই। আজ নয়তো কাল কেউ একজন শেখ মুজিব আসবেন আবার এটাই প্রত্যাশা। শুনেছি ‘প্রতিদিন যে কাঁদে, সে একদিন হাসবেই’। আমরাও হাসবো একদিন।
(ছবিগুলোে ইন্টারনেট এ গুগল থেকে সংগৃহিত।)