শুরু হলো দুদিন ব্যাপী ওয়াহিদুল হক স্মারণিক মিলনোৎসব
‘তোমাতে রয়েছে সকল ধর্ম, সকল যুগাবতার’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে শুক্রবার সকাল দশটায় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার ্মাধ্যমে দুদিনব্যাপী ওয়াহিদুল হক স্মারণিক মিলনোৎসবের উদ্বোধন করলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী। ঢাকার শাহবাগে কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনের আঙিনায় আয়োজিত এ উৎসবে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উৎসব আহ্বায়ক মীর বরকত।
এ সময় কণ্ঠশীলন সভাপতি আহমাদুল হাসান হাসনুর সভাপতিত্বে ও কণ্ঠশীলন প্রশিক্ষক ও নির্দেশক গোলাম সারোয়ারের উপস্থাপনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহ্কাম উল্লাহ, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতিম-লীর সদস্য ঝুনা চৌধুরী, বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের সভাপতি মান্নান হীরা, জাতীয় কবিতা পরিষদের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হাবিবুল্লাহ সিরাজী, বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি ফকির আলমগীর। গণমাধ্যম সহযোগি এটিএন বাংলার ম্যনেজার (প্রোগ্রাম) আসলাম শিকদার এবং সাহিত্য বাজার সম্পাদক আরিফ আহমেদ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা শেষে কণ্ঠশীলনের সহ-সভাপতি মোস্তাফা কামালের আরম্ভকথায় একটি বর্ণিল শোভাযাত্রা নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের প্রাঙ্গণ প্রদক্ষিণ করে পুনরায় অনুষ্ঠানস্থলে এসে মিলিত হয়।
উৎসবের ২য় পর্বের পরিবেশনায় ছিল আবর্তন শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণ পর্বে শিক্ষার্থীরা কণ্ঠশীলন নিয়ে তাদের ভাবনা বিনিময় করে। এরপর উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সমবেত সঙ্গীতের পরে ওয়াহিদুল হকের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করেন মঞ্চসারথি আতাউর রহমান।
খেলাঘরের শিশুদের পরিবেশনা শেষ হতেই শুরু হয় সান্ধ্যকালীন প্রধান আকর্ষণ শম্ভু মিত্র রচিত ও গোলাম সারোয়ার নির্দেশনায় ‘চাঁদ বণিকের পালা (প্রথম পর্বের শ্রুতিরূপ)।
স্বরশ্রুতি ও স্বরকল্পনের দলীয় পরিবেশনা ও একক আবৃত্তির মাধ্যমে শেষ হয় প্রথম দিনের অনুষ্ঠানমালা। একক আবৃত্তিতে অংশগ্রহণ করেন- অধ্যাপক কাজী মদিনা, কাজী আরিফ, লায়লা আফরোজ, বেলায়েত হোসেন, এনামুল হক বাবু, হাসান আরিফ, মাহিদুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, ইকবাল খোরশেদ, নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলি, রেজীনা ওয়ালী লীনা, ফয়জুল আলম পাপ্পু, আহসান উল্লাহ তমাল ও কবি এ.এফ আকরাম হোসেন প্রমুখ। উৎসবের দ্বিতীয়দিন শনিবার সকাল দশটায় জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে উৎসব আরম্ভ হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ওয়াহিদুল হকের দীক্ষা নিয়েই নতুন ধারার সংস্কৃতি প্রচার ও প্রসারে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে কণ্ঠশীলন। ওয়াহিদুল হক সাংবাদিকতায় যেমন একটি বিশেষ দিকের উন্মোচন করেছেন তেমনি সংস্কৃতি জগতেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি কখনও নিজের নীতির সাথে আপোষ করেননি। তিনি মানেই কণ্ঠশীলন, কণ্ঠশীলন মানেই তিনি। তিনি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান ছিলেন। তাঁর বাহ্যিক অবয়ব সাধারণ মনে হলেও তিনি ছিলেন উচ্চ পর্যায়ের একজন মানুষ।
ইকবাল সোবহান চৌধুরী আরো বলেন, ওয়াহিদুল হক তার ছাত্র-ছাত্রীদের সবসময় আদর্শ নাগরিক ও উন্নত মানুষ হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন। স্বাধীনতার ইতিহাসে তার সাহসিকতা উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। এ দেশে সন্ত্রাসী ও মৌলবাদী শক্তি দেশের স্বাধীনতা ও নারীর অধিকারের বিরোধী। তারা গণতন্ত্র ও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার শত্রু। আমরা যদি এসব শত্রুকে চিহ্নিত করে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে এগিয়ে যেতে পারি তবে ওয়াহিদুল হকের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে পারবো।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, কণ্ঠশীলন শুধু আবৃত্তি অঙ্গণে নয় বরং শিল্পাঙ্গণেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে চলেছে। বাক চর্চাঙ্গণে কণ্ঠশীলন যে কাজ শুরু করেছিল তা আজ দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে আজ আবৃত্তির যে বিস্তৃতি তার মূলেই কণ্ঠশীলন এবং ওয়াহিদুল হক। তিনি আরও বলেন, তৃণমূল থেকে সংস্কৃতিকে তুলে আনতে হবে এবং রাষ্ট্রকে সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এগিয়ে নিতে হবে। আমরা সবদিক দিয়ে এগিয়ে গেলেও চিন্তার জগত থেকে পিছিয়ে আছি।
উত্সব আহ্বায়ক মীর বরকত জানালেন, প্রায় ৫০০ দর্শক ও শুভানুধ্যায়ীর জন্য শরবত, চা-নাস্তা ও দুপুরের খাবারের আয়োজন রাখা হয়েছে। উত্সব স্মরণিকা ‘ওয়াহিদুল হক স্মারণিক মিলনোত্সব ২০১৬’ প্রকাশ করা হয়েছে । মিডিয়া সহযোগি এটিএন বাংলা ও সাহিত্য বাজার প্রতিনিধি স্থায়ী ভাবে এ উত্সব আঙ্গিনায় অবস্থান করছেন ও সর্বশেষ সংবাদ অন্যান্য মিডিয়াকে অবহিত করছেন । সব মিলিয়ে সফল ও সার্থক একটি উত্সব আমরা করতে পেরেছি এ জন্য অসংখ্য কৃতজ্ঞতা সকলের কাছে ।
ওয়াহিদুল হকের তো আজ ৮৪তম জন্মদিবস ? তার সম্পর্কে কিছি বলুন ।
উত্তরে মীর বরকত মলিন হেসে বললেন – তাঁর সম্পর্কে বলবেন মঞ্চ সারথী খ্যাত নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের আতাউর রহমান আর শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়ারত আলী লাকী ভাই ।