শীষ্
আজ নিয়ে তিন মাস অতিবাহিত হচ্ছে আমরা লোকটাকে অনুসরণ করছি।
সরকারের উপর মহলের হুকুমে সকাল থেকে রাত্র বারটা পর্যন্ত ছায়ার মত লেগে আছি লোকটির পিছনে। লোকটির ছোটো খাট সব দোষত্রুটি এখন আমাদের নখদর্পে। কোন সময় সে কি করবে, তাও প্রায় মুখস্থ। এই যেমন একটু অসস্তিতে পড়লেই লোকটি বৃড়ো আঙ্গুল মুখে দিয়ে শিশুদের মতো চুষতে থাকে। লুকিয়ে নামাজ পড়ার প্রতি আগ্রহ বেশি। সে সময় নামাজে দাঁড়িয়ে খুব কান্না করে। কখনো দাঁড়িয়ে প্রশাব করে না। খুবই সাদামাঠা আর ধার্মিক একটা লোক এই আরাফাত মন্ডল। অন্তত এখন পর্যন্ত আমাদের গবেষণায় তাই মনে হচ্ছে।
তারপরও সরকারের উপর মহল বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নিজে এ লোকটি সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য চাচ্ছেন। কেন বা কি জন্যে তা জানার অধিকার আমাদের নেই। আমরা গোয়েন্দা বিভাগের দুই কর্মকর্তা আদাজল খেয়ে এই লোকটির পিছনে লেগে আছি। আমি কিরণ চৌধুরী ও আমার সহকর্মী মাহফুজা জেসমীন পালা করে লোকটিকে পাহাড়া দিচ্ছি। অথচ লোকটি এতই সাদামাঠা যে সে একবারের জন্যও তা টের পাচ্ছেন না। আসলে তার মতো এতটা সাধারণ একটা মানুষের পিছনে যে কোনো নজরদারী হতে পাওে, এটা যে শুনবে সে-ই হাসবে। তাকে নিয়ে আমাদের নিজেদের মধ্যেই এ নিয়ে কম হাসি ঠাট্টা হচ্ছে না।
জেসমীন বলেন, এটা একটা ছাগল টাইপের লোক। আর ছাগল টাইপের লোকরা বোকা আর সৎ মানুষ হয়। এর পিছনে আমরা অযথা সময় নষ্ট করছি। প্রধানমন্ত্রীর আসলে বুদ্ধিলোপ পেয়েছে। যুদ্ধেও পওে জন্ম তাই এ লোকটাকে আর যা-ই হোক রাজাকার বানাতে পারবেনা, তবে জামায়াত শিবির বানানো যেতে পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রে আবার আওয়ামী লীগের অনেক বড় নেতা ফেঁসে যাবেন এ লোকটির সাথে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে। অবশ্য যে প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জের গডফাদার খ্যাত শামীম ওসমানের পক্ষে এভাবে ওপেন দাঁড়িয়ে সংসদে কথা বলেন, তার মতো মানুষের কাছে এর চেয়ে বেশি আর কি আশা করা যায়?
জেসমীনের কথায় আমি ভড়কে গেলাম, দ্রুত তার মুখে হাত চাঁপা দিলাম। কী যাতা বলছেন, চাকুরীটা হারাতে চান নাকি? অযথা কোথায়? সরকার তো এ জন্য আমাদের বেতন দিচ্ছে ম্যাম। আমার কথা শুনে রাসভারী চেহারার জেসমীন গম্ভীর হলেন। হুম। কিন্তু একটা বিষয় লক্ষ্য করেছেন স্যার?
কি বিষয়?
এই যে লোকটার লাইফটা তো একটা ফুটো শিকের মতো। না নিজের উপকারে আসছে না অন্যের উপকারে আসছে। ছেলে মেয়ে নেই, আতকুরা। বংশের বাতি কে দেবে? বউয়ের কষ্ট উপার্জিত টাকায় খাচ্ছে, ঘুমাচ্ছে আর ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই বেচেঁ থাকায় কি লাভ? অথচ দেখেন, লোকটার এ নিয়ে কোনো টেনশনই নেই। দিব্বি শোয়া মাত্রই নাক টেনে ঘুম। এভাবে নিশ্চিন্ত ঘুম কত দিন ঘুমাইনা আমরা? এই একটা জায়গায় লোকটাকে খুব হিংসে হয় আমার।
কেন? আপনার এটা কেন মনে হচ্ছে, এটা একটা আন্ডার কভার বা খোলশও হতে পারে তাই না? তাছাড়া সে কারো ক্ষতিতো করছেনা। আর এই যে বললেন, বউয়ের উপার্জিত টাকায় সে খাচ্ছে আর ঘুমাচ্ছে এটাও তো ঠিক বলেননি। খাচ্ছে বটে, সে কিন্তু ঘুমাচ্ছে না। দেখছেন না, দেশের জন্য, মানুষের মঙ্গলের জন্য তার চিন্তা, তার চেষ্টা চলছে। নিজে কোনো অপরাধ করছেন না বরং অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদ করছেন। এই প্রতিবাদ করাটা কি কোনো কাজ না? এটা ক’জনে করছে ম্যাডাম বলুন। আমার তো মনে হচ্ছে এই লোকটা সাধারণ কেউ নয়। তা না হলে প্রধানমন্ত্রী কেন তাঁর প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন?
আমার কথা শুনে জেসমীন হাসিতে ফেটে পড়লেন। আপনার এখনো কি এটা মনে হচ্ছে যে, এই গবেটটা কোনো বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার গোপন এজেন্ট কিম্বা জামাত-শিবিরের ক্যাডার? আপনি মাসুদ রানা আর জেমস বন্ড পড়া বন্ধ করুন। আপনার মেয়েটাও কিন্তু মাসুদ রানার পোকা হচ্ছে।
হাঁঃ আমার মেয়েটা মাসুদ রানার পোকা হচ্ছে এটা যেমন ঠিক, তমনি সে তার মায়ের মতই ভীষণ দুষ্ট আর কৌশলী হচ্ছে এটাও ঠিক।
কী বললেন, তার মা বুঝি ভীষণ দুষ্ট? বলেই আমাকে মারার জন্য তেড়ে এলেন জেসমীন। আমি তার হাত চেপে ধরে বুকে জড়িয়ে নিলাম। জেসমীন আমার স্ত্রী। আমরা একসাথে কাজ করছি একই বিভাগে। তাই এ কাজটির দায়িত্বও আমরা পেয়েছি নজরদারীতে সুবিধা হবে বিবেচনায়। হচ্ছেও, আমরা নজরদারীর সময়টাকে তিনভাগে ভাগ করে নিয়েছি। সকাল থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত আমি লোকটিকে অনুসরণ করছি। অনুসরণ করতে খুব একটা কষ্টও হচ্ছে না। লোকটির ফোনে আগেই আড়িপাতা যন্ত্র লাগিয়ে রেখেছি। ঘরে মাত্র দুটি রুম, দুটি রুমেই রয়েছে লুকানো ভিডিও ক্যামেরা, বাথরুমেও রয়েছে একটি। রান্নাঘরে লাগাতে হয়নি, কারণ রুম থেকেই রান্নাঘর কভার হচ্ছে। লোকটির প্রতিটি কার্যক্রম আমরা ইচ্ছে করলেই দেখতে ও শুনতে পারি আর আমরা তা করিও, তবে রাত বারটার পর আর নজর রাখি না। দুপুর ১২টার পর জেসমীন নজর রাখে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সন্ধ্যার পর রাত ১০টা পর্যন্ত আবার আমার পালা।
এতে করে সুবিধা অনেক। আমাদের মেয়ে প্রান্ত এখন মাত্র ১১ বছর বয়স। বেশির ভাগ সময়টা সে তার নানীর কাছেই থাকে। তাই মেয়েকে নিয়ে আমাদের খুব একটা ভীত থাকতে হয় না। তারপরও মেয়েকে সময় দেয়ার একটা বিষয় থাকে, যা এই নজরদারীর ফাঁকে আমরা খুবই চমৎকার ভাবে দিতে পারছি। প্রথমদিকে রাত বারটা পর্যন্ত নজরদারী করতে হতে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে এই লোকটি আরাফাত মন্ডল রাত্র ৯টার পর কখনোই ঘরের বাইরে থাকে না। তার চেয়েও আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে হাতে গোনা মাত্র দুতিনজন বন্ধু তার। যাদের সাথে সে কিছুটা সময় কাটায়। তাও ফুটপাতের চা দোকানে। দুটো মাত্র বাঁজে অভ্যাস আবিস্কার করা গেছে এই তিনমাসে। এর একটা হচ্ছে ধুমপান করা। তবে খুব বেশি না দিনে ৭/৮টি সিগারেট ধ্বংস করে সে। কিন্তু অন্যটি খুবই স্পর্শকাতর আর এটা বলা একটু লজ্জাজনক। তবুও বলতেই হবে কারণ লোকটির খুটিনাটি সবই রিপোর্ট করতে হচ্ছে আমাদের, এমনকি তার এবং স্ত্রীটির মধ্যের সম্পর্কটুকুও। সব বাঁজে অভ্যাসগুলোও নোট করতে হবে। লোকটির এই ২য় বাজে অভ্যাসটি প্রথম লক্ষ করে জেসমীন। আমাকে দেখাতে যেয়ে ওর চোখ, কান, মুখ লজ্জায় লাল হয়েছিল। সে সাথে লোকটির উপর তীব্র ঘৃণা কাজ করছিল ওর মনে। বিবাহিত একটা লোক, যার ঘরে সুন্দরী স্ত্রী রয়েছে। স্ত্রীর সাথে যার সম্পর্ক খুবই চমৎকার এবং গভীর ভালবাসার বন্ধন স্পষ্ট, সেই লোকটি কেন বাথরুমে হস্তমৌথন করছিল? বিষয়টি প্রথম আমাদের কাছে খুবই রহস্যময় ছিল। বাথরুমে ভিডিও ক্যামেরা লাগানো থাকায় এ বাজে বিষয়টি আমাদের নজরে পরেছে। তানা হলে এ দিকটা জানাই হতো না। আমরা দেখলাম, সপ্তাহে একবার লোকটি এই জঘণ্য কাজটি করছে।
দুই
জেসমীনের সমস্ত চিন্তা এখন এই গবেট আরাফাত মন্ডলকে নিয়ে। কেন লোকটি ঐ জঘণ্য কাজটি কওে তার উত্তর খুজে বের কওে আমরা আরো হতভম্ব হয়ে পড়লাম। তার জীবন সম্পর্কে জেনে এখন আর ঘৃণা নয়, মায়া হচ্ছে। সে সাথে একটা মমত্ব অনুভব করছি আমরা দুজনেই। বলতে দ্বিধা নেই যে, কিছু কিছু বিষয়ে এই গবেট লোকটি এখন আমাদের গুরু হয়ে উঠছেন। আমরা আঢ়ালে আরাফাতকে গবেট বলছি, রামছাগল বলছি বটে কিন্তু মনে মনে ক্রমশ শ্রদ্ধা আর সম্মান বেড়েই চলছে। আমার সাথে একটু কথা কাটাকাটি হলেই জেসমীনতো এখন রীতিমত লোকটিকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে বলে, দেখেছ ওই লোকটি তার বউকে কত ভালবাসে?
আমি তখন জেসমীনকে ক্ষেপাতে বলি, ওরকম বউয়ের পয়সায় ঘরে বসে খাওয়ার সুযোগ পেলে আমিও বউকে খুব ভালবাসতাম। খাওয়াবে?
জেসমীন তখন বলেই ফেলেলো, তার মত পারবে? বউয়ের কোনোরকম শারীরিক সম্পর্কের সক্ষমতা নেই, এটা জেনেও অন্য মেয়ের কাছে না যেয়ে শুধু বউকে ভালোবাসতে পারবে, তবে খাওয়াবো।
হাঁ তাই। বিষয়টা জেসমীনই প্রথম আবিস্কার করে। বাথরুমে লাগানো ভিডিও ক্যামেরায় ধরা পরল বিষয়টি। লোকটির স্ত্রী গোসল করছিল। তখনই চিৎকার করে ওঠে জেসমীন। আমরা দুজনে কম্পিউটার স্ক্রীনে দেখতে পাই ব্রেস্টবিহীন একজন নারীকে। কৌতুহল থেকেই আমরা তার অতীত ঘাটার চেষ্টা করি ও জানতে পারি আরো কঠিন সত্যকে। আরাফাত মন্ডল এর স্ত্রী খুবই সুন্দরী, ভালো প্রতিষ্ঠানে চাকুরীও করছেন বটে তবে তার শরীরে দুটি প্রধান আকর্ষণই অকেজো। ব্রেস্ট ক্যানসার এর ফলে তার দুটো ব্রেস্ট কেটে শরীর থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। জরায়ু পথও প্রায় বন্ধ। কেমোথেরাপি নষ্ট করে দিয়েছে বাচ্চাদানী। এই অবস্থায় স্ত্রী’র সেবা করতে যেয়ে ভালো পদের চাকুরী ছেড়ে ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন আরাফাত মন্ডল। মাঝে মধ্যে পত্রিকায় দু’চারটি কলাম লেখাই এখন তার একমাত্র কাজ। তার যে বয়স সে অনুপাতে এখন আর কাজের জন্য মানুষের কাছে ধর্ণা দেয়ার মতো ধৈর্য্য বা সাহস কোনোটাই তার নেই।
সৎ মানুষ বলেই হয়ত অনেকটা ঘাঢ়তেড়া স্বভাব তার। গত তিনমাসে তার পিছনে ঘুরে এটা পরিস্কার বুঝতে পারছি যে এ লোকটি মুখে যা বলে, কাজে কর্মেও তার প্রকাশ থাকে। এলাকা বা আশেপাশের প্রতিবেশী তার কাছে কোনো পাওনা নেই। কোনো দোকানে সে বাকী করেনা। বন্ধুদের দুজন তার কাছে মোটা অংকের কিছু টাকা পায় বটে, তবে সে টাকার দাবিতে কোনো বন্ধু কখনো ঘরে আসবে না। এটা টাকাটা নেয়ার আগেই শর্ত দিয়ে রেখেছে। বন্ধুরাও তার প্রতি খুব উদার, তাই এই কঠিন শর্ত জেনে বুঝেই অনেকটা জোর করে টাকা ধার দিয়েছে তাকে।
মাঝে মধ্যেই দেশের রাজনীতি লোকটিকে অস্থির করে তোলে। বিএনপি, আওয়ামীলীগ দুটো দলের কোনোটাকেই তার পছন্দ নয়। নতুন একটি রাজনৈতিক দল তৈরির জন্য বিশিষ্টজনদের কাছে চিঠি দিয়ে এখন কান্ত হয়ে নিজেই একটি দল তৈরি করবে বলে ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে বেড়াচ্ছে।
আসলে কাজ না থাকলে যা হয়। কয়েকদিন আগে সে একা একা বাজারে গিয়ে দোকানদারদের বুঝাতে চেষ্টা করেছে, কেউ ওজনে কম দেবেন না। খবরদার, সামনে রমজান মাস। রমজান মাস হচ্ছে ক্ষমা আর রহমতের মাস। এই মাসে ভুলেও কোনো ক্রেতাকে ঠকাবেন না। তাহলে কিন্তু আপনি আর মুসলমান থাকবেন না। কাফের হয়ে যাবেন। লোকটির এই আচারণ দেখেই জেসমীন লোকটিকে গবেট উপাধী দিয়েছে।
ওর মতে, যেখানে তুমি পত্র পত্রিকায় লিখতে পারছো, সেখানে কেন এভাবে স্বশরীরে যেয়ে বুঝাতে চেষ্টা করছো। লোকেতো তোমাকে অপমান করছে। তোমাকে নিয়ে হাসছে।
আমি বললাম, হাসছে, তবে দেখ দু’চারজনতো ভাবছেও। এটাতো সত্যি যে রোজা রেখে কেউ মিথ্যা বললে বা কোনো অন্যায় করলে তার রোজা রাখার কোনো দরকার নেই। এটা তো পবিত্র কোরআনেই লেখা আছে, তাই না?
হাঁ লেখা আছে। মসজিদের ঈমাম সাহেবরাতো এ জন্য আছেন। তারা খুতবায় এ সব বলছেনও। এই পাগলটার কি দরকার এই ঝামেলায় যাওয়ার, জামাত শিবির বলে সন্দেহ করছে অনেকে। আমারতো মনে হচ্ছে এই জন্য ই আমরা লোকটার উপর নজর রাখছি। তাঁর লেখাগুলো পড়েছেন? ব্লগ ও পত্রিকায় তার সব লেখাই তো সরকার আর বিরোধী দলের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। তারউপর নতুন রাজনৈতিক দলের প্রস্তাব। ঠিক যখন জামাত শিবির নিষিদ্ধ নাটক চলছে তখন তার এ সব লেখনী ও দল গঠনের চেষ্টাটা তাকে সন্দেহের তালিকায় ফেলতে পারে।
জেসমীনের রাগাম্বিত বক্তব্য অনেকটা আমাকে আহত করলো। ও এমনভাবে কথাগুলো বলছে যেন, আমি নই, ওই লোকটি ওর স্বামী। আসলে লোকটার অনুসরণ করতে করতে আমরা তাকে ভালবাসতে শুরু করেছি। বিশেষ করে শবেবরাতের রাতে সে যখন তার পাড়ার মসজিদের ঈমাম সাহেবকে ডেকে কথা বলছিলেন, তখন আমি তার পাশেই দাঁড়ানো। আরাফাত সাহেব ঈমাম সাহেবকে সালাম জানিয়ে, খুবই বিনয়ের সাথে বললেন, মাপ করবেন হুজুর, আমার কথায় অপরাধ নেবেন না, যদি ভুল বলি ক্ষমা করবেন। আজ দয়া করে দান করার ফজিলত নিয়ে খুব বেশি কথা বলবেন না। বরং মসজিদের দানের টাকাটা যেন অসৎ আয়ের না হয়, এই দানের টাকায় কীভাবে মানুষের উপকার করা যায়, এই নিয়ে কিছু বলবেন। আর যদি পারেন, রমজানের জন্য মসজিদে একটা যুবকমিটি করে ফেলুন, যারা রমজান মাসে সেবার কাজ করবে, বাজারে ক্রেতা যেন না ঠকে তা নজরদারী করবে, ইফতার বিলি করবে। এ জন্য আলাদা একটা দান বাক্স করুন। মানুষ তার নিজের ভালোর জন্য দান করবে। জোর করে চেয়ে, লজ্জা দিয়ে নেয়া টাকা কখনো দান হয় না। এটা আমার চেয়ে আপনি ভালো জানেন।
সব শুনে ঈমাম সাহেব বললেন, আমি সব জানি আরাফাত সাহেব, কিন্তু মসজিদ কমিটির হুকুম যে আমাকে মানতে হয়। তবুও আমি চেষ্টা করবো।
এ ঘটনার কয়েকদিন পরেই রমজানের শুরু হল। পরিপক্ক রোজদার আরাফাত সাহেবকে দেখে আমিও এই প্রথম রোজা রাখার চেষ্টা করছি। ধর্ম বিষয়ে জেসমীনের জ্ঞান আমার তুলনায় অনেক বেশি। রোজা আর নামাজ সে কখনো কাঁজা করে না। জেসমীনের মতে, আরাফাত সাহেব একজন সত্যিকারের রোজদার। রোজার সব চেয়ে বড় যে বিষয় নিজের ইচ্ছের নিয়ন্ত্রণ, তা এই আরাফাত সাহেবই করছেন। লোকটির মধ্যে কোনো লোভ, লালসা, অন্য কোনো অন্যায় প্রবণতা আজ পর্যন্ত ধরা পরেনি।
আমিও বিষয়টি খেয়াল করলাম যে, চার রোজা গত হয়েছে, লোকটি এখন কথা বলা অনেক কমিয়ে দিয়েছে। একটা মিথ্যে কথা বা অন্যায় কোনো কাজ সে করেনি। তবে তারাবির নামাজে সে ফাঁকি দিচ্ছে দেখলাম। প্রথম দুইদিন পুরো তারাবির নামাজই সে পরেছে জামাতে। তৃতীয়দিন সে অর্ধেক পরে বের হয়ে এল। চতুর্থদিন তারাবী না পরেই চলে গেল ঘরে। বিষয়টা জেসমীনকে জানাতে সে যা ব্যাখ্যা দিল তাতে আর অভিযোগ করার কিছু পেলাম না। জেসমীন আমাক বুখারী শরীফ থেকে নবীজীর তারাবী আদায়ের বিষয়টি পড়ে শোনালেন, নবীজী প্রথম দুদিন জামাতে পরেছেন। পরবর্তীতে তিনি আর জামাতে না পরিয়ে একা একা পরেছেন বলে উল্লেখ আছে বুখারী শরীফে। তখন এ নিয়ে একজন সাহাবী প্রশ্ন করায় নবীজী তাকে বলেছেন, এটা যেন তোমাদেও উপর ফরজ না হয়ে যায়, তাই আমি জামাতে আর তারাবি পড়ছিনা।
আরাফাত সাহেবের ঘরে ইফতারের সময়টা খুবই আনন্দের সময় যেন। মিসেস আরাফাত অফিস থেকে ফেরেন ৫টার দিকে। এসেই শুরু হয় ইফতার তৈরির তোড়জোড়। না খুব ব্যয়বহুল কিছু নয়, তাদেও ইফতারের আইটেম ছোলাবুট, পিয়াজু ও আলুরচপের সাথে খেজুর আর শরবত। কখনো পিয়জু ও ছোলা বুটের বদলে চিড়াদই ও ফল। তাদের স্বামী স্ত্রীর এতো মধুর সম্পর্ক যে, তারা এখনো এক পেলেটে খাবার খাচ্ছে। এক গ্লাসে শরবত খাচ্ছে ও একে অপরকে খাইয়ে দিচ্ছে। যা দেখে জেসমীনও আমার কাছে সেটাই আশা করছে। এতে আমি একটু ক্ষুব্দও হচ্ছি। তবে জেসমীনের আমার ভালবাসার বন্ধনও কম নয়। মাত্র একহাজার এক টাকা কাবিনে আমাদের বিয়ে হয়েছে। আমাদের পরস্পরের প্রতি গভীর বিশ্বাসই আমাদের ভালবাসা।
তিন
রোজার অষ্টমদিন দুপুরে হঠাৎ জেসমীনের ফোন। এই যে স্যার আপনার মহামানব আরাফাত একটা ঘটিয়া আর ভন্ড লোক, দেখবেন যদি তাড়াতাড়ি আসেন। জেসমীনের কণ্ঠ বলে দিচ্ছে মারাত্মক কোনো অপরাধ এবার ধরা পড়েছে। রোজার কারণে লোকটির গুষ্টি উদ্ধার করা বাঁজে গালি শোনা থেকে বেচে গেলাম বটে তবে গালিগুলো যে এই মূহুর্তে জেসমীনের পেটে ঘুরপাক খাচ্ছে তাও স্পষ্ট টের পেলাম।
কেন কি হয়েছে? কি করেছে সে? বলতে বলতে আমি বাইক চালিয়ে ছুটে এলাম জেসমীনের কাছে। মাত্র দু’ঘণ্টা আগে জেসমীন ডিউটিতে এসেছে। আরাফাত তখন ঘরেই অনলাইনের পত্রিকা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। আরাফাতের ঘরটি ঢাকার শেষ সীমানায়ও বলা যায়। মীরপুরের কালশী রোডের একটি বাড়িতে দুইরুম নিয়ে স্বামী স্ত্রীর থাকা। সাদামাঠা জীবন যাপন যাকে বলা যায় আর কি।
কিন্তু এই মূহুর্তে আমি এসে থামলাম নয়াপল্টনের একটি হোটেলের নীচে। এখানের একটা পত্রিকার দোকানে দাঁড়িয়ে পত্রিকা পড়ার ভান করছে জেসমীন। পাশে দাঁড়াতেই সে আমার হাত ধরে নিয়ে চলল আরো দূরে যেখানে আমাদের কথা কেউ শুনতে পাবে না। জেসমীনের শরীর রাগে কাঁপছে। যেন আরাফাত সাহেব নয়, আমিই মস্ত অপরাধী। কী হয়েছে আরাফাত সাহেব কোথায়?
ইশারায় পাশেই ধানসিড়ি নামের হোটেলটি দেখালো, বলল সে আজ রোজা নেই। গোগ্রাসে তুন্দল আর গুরুর মাংস খাচ্ছে। পরপর তিনবার ঐ হোটেলটায় ঢোকার চেষ্টা করেছে। আবার ঘুরে চলে এসেছে। এখন খাচ্ছে। ইশারায় জেসমীন যে হোটেলটা দেখালো, সেটাকে আমরা গোয়েন্দা বিভাগের সবাই চিনি। এ হোটেলে দেহজীবীদের বসবাস আছে। আরাফাত সাহেব সেখানে যাবার চেষ্টা করছেন শুনে আমি মৃদু হাসলাম।
আমার হাসি দেখে জেসমীনের পিত্তি বুঝি আরো জ্বলে উঠলো, খুবই ক্ষীপ্ত স্বরে বলল, হাসছো কেন? তুমিও কি তবে…?
জেসমীনের কথা শেষ হয়নি, এর মধ্যেই খাবার হোটেল থেকে আরাফাত বের হয়ে এসেছেন। সোজা হাটা ধরেছেন নির্দিষ্ট ঐ হোটেলের দিকে। ইশারায় জেসমীনকে দাঁড়াতে বলে আমি চললাম পিছনে পিছনে। আরাফাত সোজা ঢুকে গেলেন ভিতরে, হোটেল বয়কে ডেকে বাথরুম কোথায় জানতে চাইলেন, তারপর সোজা ঢুকে গেলেন বাথরুমে। বয়টা আমাকে দেখে এগিয়ে আসতে চাইল, ওকে চোখ পাকালাম, তারপর বসে পড়ে একটা পেপার হাতে নিয়ে পড়ার ভান করছি। এখানে রিসিপশনে বসে এই হোটেলের কিছুই বোঝা যাবে না। মেয়েরা থাকে ৩য় ও চতুর্থ তলায়। বাথরুম থেকে অনেকটা সময় পর বের হলেন আরাফাত। সোজা উঠে গেলেন তৃতীয় তলায়, আমিও অনুসরণ করলাম। তারপরই থমকে গেলাম। কারণ থমকে গেছেন আরাফাত নিজেও। তার সামনেই একসাথে কাতার বদ্ধ হয়ে চারজন দেহজীবী মেয়ে নামাজ আদায় করছেন। আর এটা দেখেই থমকে গেছেন আরাফাত। তার মুখ কালো হলো, পরক্ষণে ইয়া আল্লাহ, ক্ষমা করুন বলেই আমাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে নীচে নামতে গেলেন, আমার হাত ধরে বললেন, দোহাই দাদা, এই রোজার মাসে ওদের কাছে আসবেন না। ওরাও তো আল্লাহর বান্দা। কথা শেষ না করেই ছুটে বের হয়ে গেলেন তিনি। যেন মহা কোনো শিক্ষা গ্রহণ করেছেন এমন একটা লজ্জা নিয়ে, নিজের গালে নিজেই মৃদু চড় দিতে দিতে একটি সিএনজি চালিত আটো রিকশায় চেপে বসলেন ভদ্রলোক।
আমি আর জেসমীন আজ আর তাকে অনুসরণ না করে দুজনে চলে এলাম রমনা পার্কে। উপরে কি ঘটেছে তা সবটাই জেসমীনকে বললাম। আগের চেয়ে কিছুটা শান্ত জেসমীনের তাও একটাই প্রশ্ন আরাফাত কেন এখানে এলেন? কেন আসবেন? যেন আরাফাত নয়, এটা আমি করেছি। ওর প্রশ্ন গুলো যেন আমার জন্য।
আমি ব্যাখ্যা দিলাম। গত ক’দিন থেকে তার শরীরে কিছু সমস্য তৈরি হয়েছে। অতিরিক্ত হস্তমৈথনের ফলে এটা হচ্ছে বলে তার এক ডাক্তার বন্ধু তাকে সাবধান করে দিয়েছেন। আমার সামনেই ঐ বন্ধু তাকে এই হোটেলের ঠিকানা দিয়েছিল। তাদের সব কথাবার্তা আমি শুনেছি, কেন কি ঘটছে তা আমি আগেই বুঝতে পেরেছিলাম বলে তখন হেসেছিলাম। জীবনে কখনো এসব হোটেলে আসেনি লোকটা, তাই আজ এসে সে প্রথমে সাহস সঞ্চয় করতে পারেনি। পরে ভরপেট খেয়ে সত্যি সত্যি তার বাথরুমের বেগ পেয়েছিল। তাই টয়লেটের খোঁজে খুব সহজেই সে ভিতরে প্রবেশ করতে পেরেছে।
কিন্তু জেসমীনের তবুও একটাই প্রশ্ন সে কেনো আজ রোজা ছিল না? রাতেতো তাকে সিহরীভাত খেতে ও ফজরের নামাজ পড়তে দেখলাম।
এবারও আমি হেসে ফেললাম, ওহ্ তোমার রাগের মূল কারণ তাহলে এই যে, সে কেন রোজা ভাঙ্গলো। চল বাসায় চল, তোমাকে দেখাচ্ছি।
রমনা থেকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে আমাদের বাসায় আসতে খুব সময় লাগেনি। জেসমীনকে সকাল নটার পরের ভিডিও ফুটেজ দেখতে দিয়ে আমি গোসলের জন্য গেলাম। জানি বিষয়টা দেখে জেসমীন আবার লজ্জাপাবে। সেসময় আমি সামনে না থাকাই উত্তম।
আরাফাত সাহেব ফজরের নামাজের পর ঘুমিয়ে পড়েন। ঠিক নটায় তার স্ত্রী অফিসে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন হঠাৎ তার চোখ আটকে যায় বিছানায় ঘুমে বিভোর স্বামীর শরীরে। লুঙ্গি ঠেলে সটান দাঁড়িয়ে থাকা অঙ্গটা তার দৃষ্টি কাড়ে। অনেকখন তাকিয়ে সেটা দেখেন তার চোখে জল। ঝুঁকে কাপড়ের উপর দিয়েই অঙ্গটিতে চুমু খান তিনি। মূহুর্তে ঘুম ভেঙ্গে যায় আরাফাত সাহেবের। স্ত্রীকে জড়িয়ে তুলে নেন বুকের উপর। কি ব্যাপার কাঁদছো কেন? স্ত্রীর চোখের জল মুছে দিতে দিতে হাত দিয়ে কাপড় ঠিক করেন তিনি।
তোমার ওটার যে খাবার দরকার। আমি দিতে পারছিনা, তুমি বাইরে কোথাও ব্যবস্থা নিতে পার না?
দূর পাগলী, ওটার জন্য বাথরুম আছে। বেশি খাবার দরকার হলে হাত দিয়ে চালিয়ে দেব। যাও সোনা, অফিসে যাও, এ নিয়ে ভেব না।
স্ত্রীটি উঠে অফিসে চলে যায়, দরজা বন্ধ করে দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পরেন আরাফাত। কিছুক্ষণ পরই ধরমড়িয়ে লাফিয়ে ওঠেন। লুঙ্গিটা টেনে দেখেন নির্দিষ্ট জায়গাটা ভিজে গেছে। অর্থাৎ ধাতু নির্গত হয়েছে। দ্রুত বাথরুমে যান তিনি। আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, দিলেতো আমার রোজাটা ভেঙ্গে। আজ এটাকে কিছু একটা খাবার দিতেই হবে। দেখি কি করা যায়।
চার (শেষ পর্ব)
এই ঘটনার অল্পদিনের মধ্যেই আরাফাত সাহেবের সাথে আমার খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেল। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর সে যেই চা দোকানটায় আড্ডা দেয়, সেখানে চা খেতে যেতেই আরাফাত সাহেব আমাকে দেখে এগিয়ে আসেন ও পল্টনের সেই হোটেলে আমাকে বাধা দেবার কথা স্মরণ করিয়ে নিজেই তার পরিচয় দেন। আমরা একসাথে চা খাই। আলাপের শুরুটা এভাবে হলেও মাঝখানে খুব খারাপ হয়েছিল। কারণ, শবে কদরের রাতে একটা সাদা মাইক্রোতে করে আমরা ঘুরতে যাবার নাম করে আরাফাত সাহেবকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলাম। তাকে সোজা নিয়ে যাই প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব বাংলোয়। ইতিপূর্বেই তার সম্পর্কে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই পড়েছেন সব। পড়ে খুব কেঁদেছেন আবার লজ্জাও পেয়েছেন। স্পেশাল ব্রাঞ্চের চীফ অব কমিশনার এসপি মান্নান সাহেব প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব লোক। সম্পর্কে তিনি আমারও মামা শ্বশুর। অর্থাৎ জেসমীনের মামা। তাই আমি আর জেসমীন এ সময় উপস্থিত ছিলাম। আমাদের সম্মুখেই প্রধানমন্ত্রী তাকে ধরে আনার আদেশ দিলেন। তার আদেশের ধরণটা আমরা উত্তেজনায় লক্ষ করিনি। করলে সতর্ক হতাম। তিনি বলেছিলেন, বাদর টাকে ধরে আন এক্ষুনি। আমরা ধরে আনলাম অনেকটা আসামীর মত করে। কেন কি জন্যে তা বুঝতে না পেরেই আমাদের এই আচারণটি পরবর্তীতে আমাকে খুব লজ্জায় ফেলেছিল। আর এ জন্য বারবার ক্ষমা চাইতে গিয়ে আরাফাতের উল্টো ধমক খেতে হয়েছে।
কেননা, আরাফাত সাহেবকে দেখেই প্রধানমন্ত্রী তাকে জড়িয়ে ধরে প্রচন্ড ভৎসনা ও গালাগাল দিতে শুরু করলেন যেন নিজের ছেলেকে বকছেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনেকটা এমন যে, কত লোক কতভাবে আমার থেকে সুবিধা নিচ্ছে, সাত-পাঁচ বুঝিয়ে দেশের অর্থ লুটে নিতে আসছে। আর আমার ছেলে হয়ে তুমি একটা বস্তিতে পরে আছ? একবার আমার কাছে আসলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হত? ভাগ্যিস তোমার বাংলাদেশ আমজনতা পার্টির দাবিগুলো আমার আমার ফেসবুক আইডিতে লিংক দিয়েছিলে, তাইতো খুঁজে পেলাম। এই সব বন্ধ কর, আমার প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ কর আজ থেকেই।
শুনেতো আমাদের পিলে চমকে উঠলো। একী বলছেন প্রধানমন্ত্রী, এই আরাফাত তার ছেলে কি কওর হয়? পরে জানলাম, প্রধানমন্ত্রীর স্কুল জীবনের বান্ধবীর ছেলে এই আরাফাত সাহেব। যেই বান্ধবীকে তিনি নিজের আপন বোন বলে দাবী করেন। শিশুবেলা আরাফাত সাহেব প্রধাননমন্ত্রীর কোলে শিস্ও করেছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এসেই আরাফাতের পরিবারের লোকদের সন্ধানে লোক লাগান। কিন্তু কেউ কোনো খোজ দিতে না পারায়, পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেই তিনি গোয়েন্দা সংস্থাকে নিযুক্ত করেন তাদের খুঁজে বের করতে। কিন্তু গোয়েন্দাদের কাছে পরিপূর্ণ তথ্য না থাকায়, তারাও ব্যর্থ হন। এমন সময় বাংলাদেশ আমজনতা পার্টি ও আরাফাত মণ্ডলের নামে অভিযোগ আসে গণজাগরণ মঞ্চ থেকে। কে এই আরাফাত জানতে স্পেশাল ব্রাঞ্চকে দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী। সরাসরি তার কাছেই রিপোর্ট করতে বললেন।
সে যাক, কিন্তু আমাদের তাজ্জব করে দিয়ে আরাফাত সাহেব যা বললেন তা শুনে সকলেই থ’ বনে গেলাম, সেজন্য না প্রধানমন্ত্রী প্রস্তুত ছিলেন, না আমরা কেউ। আরাফাত সাহেব বললেন, খালামনি, আমি তোমার প্রধান উপদেষ্টা হতে পারবো যদি তুমি এই মূহুর্তে দেশের শাসন ব্যবস্থায় কিছু জরুরী সংশোধনী এনে নিজে আগে পদত্যাগ কর।
প্রথম পরিবর্তন আনো তোমার রাষ্ট্রীয় যাবতীয় আইন শৃঙ্খলাতে। পবিত্র কোরআন অনুসারে আদালত ও পুলিশী আইন কার্যকর কর। চুরি করলে হাত কেটে দেবে, ঘুষ, দুর্নীতি, খুন, ধর্ষণ ইত্যাদি প্রমাণ হলেই মৃত্যুদ্বন্ড।
দ্বীতিয়ত, পরপর দুইবারের বেশি কেউ একই পদে কখনো থাকতে পারবে না। তুমিও না। দলের চেয়ে দেশ বড় এ মন্ত্রে চলতে হবে প্রতিটি নাগরিককে। তাই এই মূহুর্তে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করে, আগামি তিনমাসের মধ্যে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে তুমি পদত্যাগ কর। তবেই আমি তোমার উপদেষ্টা হতে পারবো। যদিও তখন আর তোমার কোনো উপদেষ্টারই প্রয়োজন হবে না। কারণ নিয়ম অনুযায়ি তুমি আর কোনোদিনই প্রধানমন্ত্রী বা দলীয় প্রধান হতে পারবে না। আমি বরং তোমার ছেলের উপদেষ্টা হব তখন। কথাগুলো বলেই আরাফাত সাহেব প্রধানমন্ত্রীর কক্ষ থেকে বের হয়ে গেলেন। ইশারা পেয়ে আমরাও তার পিছু নিলাম। মাইক্রোতে করে তাকে পৌঁছে দিলাম তার ঘরে। ঘরের সব আড়িপাতা যন্ত্র ছড়িয়ে নিলাম। সহকর্মীরা সবাই বিদায় নিলে আমি আনন্দে আরাফাত সাহেবকে জড়িয়ে ধরলাম।
দু ‘দিন পরে চীফ অব কমিশনার থেকে জানলাম, আরাফাত সাহেবের কথাগুলো প্রধানমন্ত্রীকে খুব ভাবনায় ফেলেছে, তিনি এ বিষয়ে জরুরী পরামর্শ সভা করেছেন বিশ্বস্ত কয়েকজনের সাথে। এতে সেনাপ্রধান, পুলিশ প্রধান ও দলীয় মাত্র দুইজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। তারা সকলেই সুন্দর একটি দেশ তৈরি করতে হলে আরাফাত যা বলেছেন তা করার পক্ষে একমত দিয়েছেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তার ছেলের ভবিষ্যত প্রসঙ্গ তুলে ১৫ই আগস্ট এর মত কোনো ঘটনা যেন আর না ঘটে সেই বিষয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ ক্ষেত্রেও সবাই পবিত্র কোরআনের আইনকে অনুসরণ করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। বলেন, এতে করে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের মানুষেরাও শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। সবশেষে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনে করনীয় বিষয়ে আলোচনা হয়, এতে আরাফাত সাহেব-এর মতো আরো চারজন মানুষকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী। যাদের হাতে নির্বাচন কমিশনকে ছেড়ে দিতে পারবেন তিনি।
স্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েই পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। বন্ধু আরাফাতকে জড়িয়ে ধরে এ তথ্য জানাতেই তিনি বললেন, আলাহ প্রদানমন্ত্রীর হায়াৎ বাড়িয়ে দিন, তিনি যেন আগামী সুন্দর দিনগুলো আমাদের সাথে আনন্দে কাটাতে পারেন।
ভালো লেগেছে ।
গল্পটা সুন্দর, ভালো লাগলো, তবে এতো বড় গল্প পড়ার সময় কি আছে? গল্পের শেষটা কেমন হবে জানার আগ্রহ থাকলো।
many word misstep