বাঘ আঁকবো, যে বাঘ দেখে কেউ পাবে না ভয়,
আঁকবো সাগর, মানুষ যেন ঢেউয়ের সাথী হয়।
দুধেল রঙা আকাশ এঁকে ছড়িয়ে দেবে নীল,
সেই আকাশের সঙ্গে সবার থাকবে মনের মিল।
একজন আমীরুল ইসলাম এভাবেই সবার সাথে মনের মিল খুজেঁছেন। বিশেষ করে শিশুদের সাথেই তার অটুট বন্ধুত্ব চিরকাল। একাধারে তিনি ছড়াকার, শিশু সাহিত্যিক, গল্পকার এবং কবি। খুবই কম বয়সে তিনি যখন ওয়েস্ট এন্ড হাই স্কুলের ছাত্র তখন ‘খামখেয়ালি’ নামের ছড়া লিখে পেয়েছেন শিশু একাডেমীর অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার। ১৯৮৮ সালে তার প্রথম ছড়ার বই প্রকাশ করে কথক প্রকাশনী। বইটির নাম ‘খামখেয়ালির ছড়া’, এরপর তিনি লিখেছেন অসংখ্য গ্রন্থ। এ পর্যন্ত তার প্রকাশিত প্রকাশিত কাব্য ও গল্প গ্রন্থ প্রায় ২০০টি।
ঢাকার ছেলে আমীরুল ইসলামের জন্ম ৭ই এপ্রিল ১৯৬৪, লালবাগ, ঢাকা। পিতা প্রয়াত সাইফুর রহমান। মাতা প্রয়াত আনজিরা খাতুন। পিতব্য প্রয়াত কবি হাবীবুর রহমান ছিলেন খ্যাতনামা শিশুসাহিত্যিক। শিশুসাহিত্যের সকল শাখায় সমান বিচরণ তার। ২০০৬-এ পেয়েছেন বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার। সিকান্দার আবু জাফর সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় ছড়া উৎসব সম্মাননা ছাড়াও অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন আমীরুল ইসলাম।
চ্যানেল আই –এর নির্বাহী প্রযোজক আমীরুল ইসলাম কে দেখে অনেকেই হয়ত ভাববেন অনেক আরাম আয়েসে বেড়ে ওঠা মানুষ তাই ছড়া আর গল্পে পেকেছে তার হাত, পেয়েছেন এই খ্যাতিযশ। এ বিষয়ে তিনি খুব সুন্দর নিজের অবস্থা ব্যাখ্যা করেছেন ছোটদের জন্য লেখা স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ ‘ওয়েস্ট এন্ড হাই স্কুল’ – এর ভিতরে। বড়ভাইয়ের ছোট হয়ে যাওয়া জামা আর প্যান্ট পরে স্কুলে যেতেন তিনি।পায়ের স্যান্ডেল ছিড়ে যাওয়ায় সেলাই করে পরতেন। আজকের সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রকাশক আমীরুল ইসলামকে দেখে তার ছেলেবেলার কষ্টকর জীবন বৈচিত্র হয়ত অনেকের কাছে গল্প মনে হতে পারে। কিন্তু এই চরম সত্য নির্দ্বিধায় উস্থাপন করার সরলতাই আমীরুলকে সকরের আপন করে তুলেছে।
পেত্নী এঁকে রঙ ছিটিয়ে বানিয়ে দেবে পরী,
সেই পরীরা নাচবে আলোয়, শরীর ভরা জরি।
দুঃখে যাদের জীবন গড়া, দুঃখে ভরা বুক
প্রজাপতির ডানার রঙে আঁকবো তাদের মুখ।
তারই লেখা এ ছড়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই বুঝি আজ তিনি চ্যানেল আইয়ে কাজ করছেন। তৈরি করছেন নানা রকম অনুষ্ঠান। জরী পরাচ্ছেন, নাচাচ্ছেন, হাসি ফুটাচ্ছেন দুঃখ ভরা বুকের শিশুদের মুখে। আর তাকে এ কাজে সদাসর্বদা সাহায্য করচেন আরেক শিশু সাহিত্যিক ও চ্যানেল আইয়ের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। যার লেখা নাটক নিয়ে, ছোটকাকু সিরিজ নিয়ে আমীরুল হাটঁছেন ছোটদের সাথে, তালে তাল মিলিয়ে। ঈদ ম্যাগাজিন বা বিশেষ উৎসবে চ্যানেল আইয়ের ছোটদের অনুষ্ঠান তাই সকলের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠে।
রঙ পেন্সিল তুলির টানে আঁকবো হাজার ছবি
দুঃখ ভুলে সুখ আনবে আমার ছবি সবই।
ভাত পায় না যারা, তাদের জন্য ভাতের থালা
এঁকে তাতে ভাত ছড়াবো, মিটবে খিদের জ্বালা।
সবুজ রঙের ছোঁয়ায় ছোঁয়ায় আঁকবো এমন দেশ
যেই দেশে নেই যুদ্ধ-বিভেদ, হিংসা ও বিদ্বেষ।
হিংসা-বিদ্বেষ মুক্ত মানুষই প্রকৃত মানুষ। একজন আমীরুলকে আমরা যখন তারই লেখা ‘আকাশ কুসুম গল্প’ কিম্বা ‘কোনালের বাবা বন্ধু ও অন্যান্য গল্পের’ সাথে মিলিয়ে দেখি – আকাসকুসুম রূপকথা বইটিতে শিশুদের মনপোযোগী করে লেখা রাজপুত্র ও বটগাছ, রাজকন্যোর ঘুম, দৈত্যপাখির গল্প ইত্যাদির রচনা শৈলী ও উপস্থাপন ভঙ্গী তাকে আরো বেশি শিশুবন্ধু করে তোলে।
এ দিক থেকে অনেক ব্যতিক্রম কোনালের বাবা বন্ধু ও অন্যান্য গল্প – এখানে ‘মাকে মনে পড়ে’ নামের এই একটি গল্পেই পাঠকের ভাবনা ও আবেগ ছুঁয়ে যাবে লেখকের চিন্তা। ছোটদের জন্য লেখা গল্পে নাড়া দেয় বড়দের আমিত্বকে। ছড়াকার আমীরুল ইসলাম এখানে নিজেই তার সন্তানের কাছে বাবাবন্ধু বন্দু উঠেছেন যেন। এ গল্পগ্রন্থে এভাবেই ১৪টি গল্পকে গেঁথেছেন খুদে পাঠকের উপযোগি করে। রতন ও ঘোড়ার নাম রাজা, আলী হোসেন স্যার, ঈদের দিন, রবীন্দ্রনাথ, ঘুম ভাঙার পরে, সাদা ভাত, যুদ্ধ কখনো শেষ হয় না, একদিন আমিও একুশের ভোরে, বই মেলার গল্প, কোনালের বাবাবন্ধু, চাঁদের দেশে ও তালগাছ, আমি মায়ের কাছে যাব এবং বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু নেই নামের গল্পগুলো ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ উপস্থাপন করে পাঠকের কাছে।
পরিশেষে, এ কথা না বললেই নয় যে, তারই লেখা ‘জোছনা রোদের ছড়া’ নামের একটি কাব্যগ্রন্থ তুলে দেয়া হয়েছিল তিনজন শিশুবন্ধুর হাতে। শিশুবন্ধুরা একটু উল্টে দেখেই, ছড়া ভালো লাগেনা বলে বইটি প্রত্যাখ্যান করে। তার তুলে নেয় আকাশ কুসুম গল্প গ্রন্থটি। কর্মব্যস্ততার কারণে ছড়াকার আমীরুল ইসলামের গ্রন্থের ছড়ারগুলোর মান যেন পরে না যায়, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।