শান্তির মিছিলে মাত্র ৬ জন

আরিফ আহমেদ

Sharing is caring!

44

শান্তির মিছিলে মাত্র ৬ জন
– ছবি ওয়াহিদ হাসান রাজা

২০ ডিসেম্বর শুক্রবার বেলা তিনটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গুটিকয়েক লোকের সমন্বিত শ্লোগান চলছিল। শ্লোগানের ভাষা ছিল ভিন্ন- সহিংশতা আর নয়/শান্তির জন্য ঐক্য গড়ুন। জাতীয় ইস্যুতে সব দলের ঐক্য চাই/তা না হলে দুই নেত্রী পদত্যাগ করুন। দলমত নির্বিশেষে পাকিস্তানের অন্যায় আচারণের প্রতিবাদ করুন। সমঝোতায় আসুন/গণতন্ত্র রক্ষা করুন। আর নয় প্রতিহিংসা/ এবার চাই একতা। আমজনতা ঐক্য গড়ুন/নতুন দল গড়ে তুলুন।

শান্তির স্বপক্ষে আয়োজিত মানববন্ধনে এভাবেই শ্লোগান দিচ্ছিলেন মাত্র ৬ জন যুবক। তাদরে হাতে মাউথপিস আর একটি রিক্সার সাথে বাঁধা ছিল একটি মাত্র মাইক। আর যাদের নেতৃত্বে ছিলেন একজন পুস্তক বিক্রেতা বা হকার আনোয়ার হোসেন। তিনি জানালেন, এ সমাবেশে ইলিয়াস কাঞ্চন ও মাহমুদুর রহমান মান্না থাকবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন তাকে। অথচ তাদের কেউ এলেনই না।

১৯ ডিসেম্বর বেলা তিনটায় ফার্মগেট থেকে শনিআখড়া গামী মোহাম্মদপুরের একটি বাসে আনোয়ার নামের যুবকটির সাথে আলাপ। আনোয়ার বাসের ভিতর তিনটি বই ১০ টাকা মূল্যে বিক্রির চেষ্টা করছিল। নিউজপ্রিন্টের কাগজে ২০ পৃষ্ঠার একটি করে মোট তিনটি বই – গোপাল ভাড়ের হাসির গল্প, কালিদাসের শ্লোক এবং তথ্য কনিকা নামের এ বই যে-ই কিনছিল তার হাতে ধরিয়ে দিচ্ছিল একটি লিফলেট। লিফলেটটিতে লেখা – আর নয় সহিংশতা, শান্তির জন্য ঐক্য চেয়ে শান্তিকামী জনতার মানববন্ধন। স্থান জাতীয় প্রেসক্লাব, সময় ২০ ডিসেম্বর শুক্রবার, বেলা ২টা। প্রধান অতিথি- নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সভাপতি অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন।

বিষয়টা ভালো লাগলো। আনোয়ারকে কথা দিলাম যাবো এই সমাবেশে। শুধু কথাই দিলাম না, আনোয়ারের হয়ে ফেসবুকের সব বন্ধুদের জন্য বিষয়টি জানালাম ও সবাইকে আমন্ত্রণ জানালাম এই মহতী আয়োজনে শরীক হতে।

ফেসবুকে অনেক বন্ধুই অনেক বড় বড় বক্তব্য দিয়েছেন। তাদের মধ্যে সাংবাদিক, রাজনীতিবিদও আছেন। তাই একটা বিশ্বাস ছিল- হয়ত ফেসবুক বন্দুদের কেউ কেউ আসেবন এই শান্তিকামী জনতার মানববন্ধন কর্মসূচীতে।

দূর্ভাগা দেশের দুর্ভাগা নাগরিক আমরা। দেশ জ্বলছে দুইনেত্রীর প্রতিহিংসার আগুনে। আর আমরা ঘরে বসে বড় বড় কথা বলে দুইনেত্রীর চৌদ্দগুষ্ঠির উদ্দার করছি। আহ্ একবার ভাবুনতো? আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য কি রেখে যাচ্ছেন। সবখানেই কি স্বার্থ খুঁজলে চলে। সবাই কি স্বার্থপর হয়? না হয়েছে? জনাচারেক ভালো লোক তাই হাজির হয়েছে দেশের টানে, মায়ের টানে।

শুক্রবার জুম্মার পর বেলা ২টা ৩৫ মিনিটে প্রেসেক্লাবের সামনে পৌঁছতেই ধ্রুম ধ্রুম বোমা ফাটার শব্দে আতংকিত চারিদিক। মানুষের ছুটোছুটি, পুলিশের সতর্কতা। জাতীয় পার্টি ও কাজী জাফর-এর সমাবেশ চলছিল প্রেসক্লাবের আঙ্গিনায়। সেখানেই এই বোমার বিস্ফোরণ। আতংকে দর্শক আর আমজনতা সবাই ছুটে পালালেন।

আমরা ৬ জন বেলা ৩টায় যখন শান্তিপ্রিয় জনতার মানববন্ধন লেখা ব্যাণার নিয়ে দাঁড়ালাম রাস্তায় তখন পুলিশ আর ফটোসাংবাদিক ছাড়া কোনো লোক নেই। প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক ওয়াহিদ হাসান রাজা, ভোরের কাগজের শাহাদাত হোসেন আর যায়যায়দিনের আমারই সাবেক সহকর্মী সিনিয়র শাহিন ভাই ছুটে এলেন আন্তরিকতার টানে। তাদের একজন বললেন- সাহিত্য বাজার সম্পাদক কি ভুলে গেছে- এখানে মাথাপিছু ১০০ টাকা দিলে তবেই মিছিলে/মানববন্ধনে লোকের জমায়েত হয়? তবুও এই জনাচারেক লোকের ছবি তুলে নিলেন তাদের কেউ কেউ।

হেসে জানালাম- দাদা হৃদয়ের টানে এসেছি যে। দেশের প্রতি যাদের ভালবাসা আছে, তারা আজ নয়তো কাল জাগবে আর ছুটে আসবে। আসতেই হবে একদিন। দরকার হলে বাংলাদেশ আমজনতা পরিষদ (বাপ) নামে পৃথক রাজনৈতিক দলও গঠন হবে — একদিন, এভাবেই।

(বাংলাদেশ আমজনতা পরিষদ – বাপ) বিষয়ে পড়ুন প্রথম আলো ব্লগের সাহিত্য বাজার ও রাজখবর গ্রুপে।)

 

 

Print Friendly, PDF & Email

Sharing is caring!

About the author

ডিসেম্বর ৭১! কৃত্তনখোলার জলে সাঁতার কেটে বেড়ে ওঠা জীবন। ইছামতির তীরঘেষা ভালবাসা ছুঁয়ে যায় গঙ্গার আহ্বানে। সেই টানে কলকাতার বিরাটিতে তিনটি বছর। এদিকে পিতা প্রয়াত আলাউদ্দিন আহমেদ-এর উৎকণ্ঠা আর মা জিন্নাত আরা বেগম-এর চোখের জল, গঙ্গার সম্মোহনী কাটিয়ে তাই ফিরে আসা ঘরে। কিন্তু কৈশরী প্রেম আবার তাড়া করে, তের বছর বয়সে তের বার হারিয়ে যাওয়ার রেকর্ডে যেন বিদ্রোহী কবি নজরুলের অনুসরণ। জীবনানন্দ আর সুকান্তে প্রভাবিত যৌবন আটকে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় পদার্পন মাত্রই। এখানে আধুনিক হবার চেষ্টায় বড় তারাতারি বদলে যায় জীবন। প্রতিবাদে দেবী আর নিগার নামের দুটি কাব্য সংকলন প্রশ্ন তোলে বিবেকবানের মনে। তার কবিতায়, উচ্চারণ শুদ্ধতা আর কবিত্বের আধুনিকায়নের দাবী তুলে তুলে নেন দীক্ষার ভার প্রয়াত নরেণ বিশ্বাস স্যার। স্যারের পরামর্শে প্রথম আলাপ কবি আসাদ চৌধুরী, মুহাম্মদ নুরুল হুদা এবং তৎকালিন ভাষাতত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রাজীব হুমায়ুন ডেকে পাঠান তাকে। অভিনেতা রাজনীতিবিদ আসাদুজ্জামান নূর, সাংকৃতজন আলী যাকের আর সারা যাকের-এর উৎসাহ উদ্দিপনায় শুরু হয় নতুন পথ চলা। ঢাকা সুবচন, থিয়েটার ইউনিট হয়ে মাযহারুল হক পিন্টুর সাথে নাট্যাভিনয় ইউনিভার্সেল থিয়েটারে। শংকর শাওজাল হাত ধরে শিখান মঞ্চনাটবের রিপোটিংটা। তারই সূত্র ধরে তৈরি হয় দৈনিক ভোরের কাগজের প্রথম মঞ্চপাতা। একইসমেয় দর্শন চাষা সরদার ফজলুল করিম- হাত ধরে নিযে চলেন জীবনদত্তের পাঠশালায়। বলেন- মানুষ হও দাদু ভাই, প্রকৃত মানুষ। সরদার ফজলুল করিমের এ উক্তি ছুঁয়ে যায় হৃদয়। সত্যিকারের মানুষ হবার চেষ্টায় তাই জাতীয় দৈনিক রুপালী, বাংলার বাণী, জনকণ্ঠ, ইত্তেফাক, মুক্তকণ্ঠের প্রদায়ক হয়ে এবং অবশেষে ভোরেরকাগজের প্রতিনিধি নিযুক্ত হয়ে ঘুরে বেড়ান ৬৫টি জেলায়। ছুটে বেড়ান গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। ২০০২ সালে প্রথম চ্যানেল আই-্র সংবাদ বিভাগে স্থির হন বটে, তবে অস্থির চিত্ত এরপর ঘনবদল বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, আমাদের সময়, মানবজমিন ও দৈনিক যায়যায়দিন হয়ে এখন আবার বেকার। প্রথম আলো ও চ্যানেল আই আর অভিনেত্রী, নির্দেশক সারা যাকের এর প্রশ্রয়ে ও স্নেহ ছায়ায় আজও বিচরণ তার। একইসাথে চলছে সাহিত্য বাজার নামের পত্রিকা সম্পাদনার কাজ।