অবশেষে দৈনিক আমাদের অর্থনীতি পত্রিকার সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান এবং সিনয়র সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ স্বীকার করলেন, তাদের এবং সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দের কিছু দায়িত্ব ছিল দেশ ও জাতির প্রতি। যা তারা সঠিক সময়ে পালন করছেন না।
গত ২২ ডিসেম্বর রাতে চ্যানেল আই-এর আজকের সংবাদপত্র অনুষ্ঠানের আলোচনায় এসে মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহামানের কাছে এ দায় স্বীকার করেন নাঈমুল ইসলাম খান। তিনি এ সময় সাংবাদিক নেতৃবৃন্দসহ বদরুদ্দোজা চৌধুরী, ড.কামাল হোসেন, আ.স.ম. আব্দুর রব প্রমূখ নাম উল্লেখ করে আহ্বান জানিয়ে বলেন, এখনো সময় আছে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এমন একটা কিছু শান্তিপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করি যা দুইনেত্রীকে সমঝোতায় আসতে বাধ্য করে।
প্রায় একই কথা বলেছেন ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যরাতে সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ। একুশে রাত অনুষ্ঠানে এসময় আরো উপস্তিত ছিলেন অর্থনীতি বিদ অধ্যাপক আব্দুল মান্নান এবং সিপিবির নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
কিন্তু বিকল্প কি করা যাবে? কি করলে এই দুইনেত্রী সমঝোতায় আসবেন। এ পথ হয়ত তারা কেউ-ই খুঁজে পাচ্ছেন না। বা পেতে চাচ্ছেন না। তাই তাদের জন্য আমরা প্রথম আলো ব্লগের ও সাহিত্য বাজার ডট কম-এর ২টি লেখা পুনরায় নীচে যুক্ত করলাম। সম্মনীত সম্পাদক, সিনিয়র সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ যদি এই লেখা দুটি থেকে কোনো পথ খুঁজে পান।
প্রথম লেখাটি
কেন চেয়ে আছ, গো মা, মুখপানে
নভেম্বর ১০, ২০১৩ – রাজখবর, রাজনীতি – 81 বার পঠিত
‘কেন চেয়ে আছ, গো মা, মুখপানে।
এরা চাহে না তোমারে চাহে না যে, আপন মায়েরে নাহি জানে।’
কবিগুরু রবী ঠাকুরের এ লাইনটি দিয়েই আজ এ প্রবন্ধের সূচনা করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ নামের মায়ের আজকের এই পরিস্থিতির কথা চিন্তা করেই হয়ত কবি এ কথাগুলো লিখেছিলেন।
বাংলাদেশের দুটি রাজনৈতিক দলের আচারণ এবং তাদের মধ্যকার হিংসা বিদ্বেষ আমাদের আজ বারবার মনে করিয়ে দেয় কবিগুরুর এ লাইন। তারা ‘আপন মায়েরে নেহি জানে’।
সবাই তারা (দুটি দলই) দাবি করছে, তারা মানুষের জন্য দেশের জন্য জান-পরাণ। কিন্তু কখনোই তারা রাস্তায় নেমে, গ্রামের মাটিতে হেটে দেখেনি, জানেনি এ দেশের মানুষ কি চায়।
একদল তাদের ৪৫ ভাগ সমর্থক কর্মীর ইচ্ছা স্বপ্ন বাস্তবায়নে ব্যস্ত। অন্যদল তাদের ৩৫ ভাগ সমর্থক কর্মীকে ইচ্ছে মৃত্যুর ফাঁদে বন্দি করছে অহরহ। মাঝখানে বন্দি ২০ ভাগ মানুষের কোন অস্তিত্ব নেই এ দল দুটির কাছে। অথচ এই ২০ ভাগ মানুষের হাতেই কিন্তু তাদের ভবিষ্যত নির্ভর।
২০১৪-এর নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এই মুখোমুখি মারমুখী অবস্থান নিয়ে যারাই একটু জোর গলায় প্রতিবাদ করছে, তাদেরই হুমকী-হামলা-মামলায় জড়িয়ে নাস্তানাবুদ করছে নেতা নেত্রীরা। রক্ষা পায়নি আসিফ নজরুল বা ড. পিয়াস করিমের মতো নিরীহ তর্কবাগিশরাও। যারা শুধু টেলিভিশন টকশো’তে সরকার ও বিরোধী দলের ভুলগুলো ধরিয়ে দিতেন।
টকশো’র এসব ব্যক্তিবর্গ কখনো সমস্যার সমাধান দিতেন না। বা দিতে চাইতেন না। কারণ, তাদের মতে রাজনৈতিক বিষয় রাজনৈতিক দলগুলোকেই সমাধান বের করতে হবে। যদিও তারা জানেন যে, রাজনৈতিক প্রতিটি বিষয়ই শেষ পর্যন্ত আর রাজনৈতিক থাকে না। এর প্রভাব এসে পরে জনজীবনে। বাজার থেকে শুরু করে পরিবহন ও কৃষি উৎপাদনেও। পরবর্তী সময়ে এ সমস্যা প্রকট হয়ে ব্যক্তিজীবনেও প্রভাব বিস্তার করে। যার ফল এখন তারা দেখতে পাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নামের এ রাজনৈতিক দলদুটির মূল ভিত্তি কি? জনগণ- সকরেই এক বাক্যে এ কথা বলে দেবেন। কিন্তু এই জনগণ কি আদৌ তাদের প্রতি আস্থাশীল?
এ প্রশ্নে অনেকেই মাথা চুলকাচ্ছেন?
অন্যদিকে জাতীয় পার্টি নামের তৃতীয় ভাগে বিভক্ত দলটি মেরুদ-হীন তাদের নেতৃত্বের সিদ্ধান্তহীনতায়। হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদের এবার অনেক সুযোগ ছিল। জনগণের কাছে যাওয়ার ও ভুল স্বীকার করে নিজেকে পুনঃপ্রতিষ্টা করার। কিন্তু নিজের বক্তব্য থেকে পিছলে যাওয়ার স্বভাব তার। তাই তাকে আর কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না।
এমতাবস্থায় জাতির বিবেক বলে খ্যাত আমাদের সাংবাদিক, কলামিষ্ট ও বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর কাছে কিছুটা প্রত্যাশার স্বপ্ন ছিল সাধারণ মানুষের। বিশেষ করে সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ যারা আছেন তাদের কাছে একটা সমাধান আশা করেছে গোটা জাতি।
কিন্তু দূর্ভাগা মায়ের হতভাগা সন্তান আমরা সবাই। এই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও শেষপর্যন্ত চোখে কালো চশমা পড়ে ঘরে ছেদিয়ে গেছেন। কারণ তারাও যে এ দুটি দলেরই অনুরাগি, অনুগামী। সাংবাদিকরাতো অনেক আগেই নিজের সত্বাকে বিলিয়ে দিয়েছেন। দুই ধারার দুইনেতা ইকবাল সোবাহান ও শওকত মাহমুদ দুইনেত্রীর উপদেষ্টা হয়ে বিবেককে কলঙ্কিত করতে পিছপা হননি। সাংবাদিক সংগঠনগুলো তাই চলছে এই দুই নেতার ছত্রছায়ায়। বহুধা বিভক্তিতে এদের উপর আর আস্থা নেই সাধারণ মানুষের। তাহলে উপায় কি?
এখন উপায় একটাই। ২০ ভাগ ঐ দলনিরপেক্ষ মানুষের প্রতি অনুরোধ, রাস্তায় নামুন। কোনো হামলা, মিছিল, ভাংচুর নয়। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে গণঅনশন কর্মসূচি পালন করি। ততদিন পর্যন্ত এই অনশন চলবে… প্রয়োজনে ক্ষুধায় কাতর হয়ে আমরা মৃত্যুবরণ করতে প্রস্তুত থাকবো। তবুও শান্তি প্রতিষ্ঠা করে আগামী প্রজন্মের হাতে একটা সুন্দর দেশ তুলে দেব। কিছু পাই বা না পাই সারা বিশ্ব আমাদের এই কর্মসূচিকে সম্মান জানাবে। আমাদের সন্তানরা এটা স্মরণ রাখবে। ইতিহাস কথা বলবে। আসুন যতদিন না এই দুইনেত্রী নিজ নিজ পদ থেকে পদত্যাগ করবেন অথবা দু’জন সুসম্পর্কের মাধ্যমে প্রথমে দলীয় গণতন্ত্র, পরে দেশের সাংবিধানিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় না হবেন, ততদিন এই অনশন কর্মসূচির বাস্তবায়ন করুন।
দ্বিতীয় লেখাটি
এবার আলোচনা চাই : তা না হলে গণ অনশন
আরিফ আহমেদ
১৭ অক্টোবর শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া ভাষণে এটা পরিস্কার যে নির্বাচন হচ্ছে । আগামী জানুয়ারতেই নির্বাচন শেষ করার ইঙ্গীত দিয়েছেন তিনি। সে নির্বাচন একক হোক বা গণতান্ত্রিক পদ্ধতীতে হোক, হবে । ২০ অক্টোবর রবিবার জাতীয় পার্টির সাথে তার বৈঠক এবং ২২ অক্টোবর দিনাজপুরের জনসভায় ভোট চেয়ে ওয়াদা করানো এ বিষয়টিকে আরো নিশ্চিত করেছে। এতে পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে যে, তিনিও পরিচ্ছন্ন একটা নির্বাচন চান, তা করবেনও।
অন্যদিকে ২১ শে অক্টোবর বিরোধী দলীয় নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিযার সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত পরিচ্ছন্ন বক্তব্য সারাদেশের সাধারণ মানুষকে আশাবাদী করেছে। যদিও তৎকালীন উপদেষ্টাদের জীবীত ও সুস্থ থাকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, তবুও যে সংঘাত ও সহিংশতার আশঙ্কা করা হচ্ছিল সে মেঘ এতে করে কিছুটা হলেও কেটেছে। বেগম জিয়ার বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতার প্রকাশ ছিল তার কোনোরকম নিন্দা ও বিদ্বেষ প্রকাশহীন এই ভাষণ। এর আগে পেশাজীবীদের মাঝে প্রদত্ত তার বক্তব্য এবং এই সংবাদ সম্মেলন। এতে তিনি নির্বাচনের যে রুপরেখা দিয়েছেন তা গ্রহণ করা না করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর নির্ভর করছে। তবে এরফলে দুইনেত্রীর মধ্যে আলোচনার একটা পথ উম্মুক্ত হয়েছে এবং ২২ াক্টোবর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফের কাছে চিঠি পাঠানো, তার সাথে ফোনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর-এর কথপকোথন একটি শান্তিপূর্ণ বাতাসেরই ইঙ্গিত বলতে হবে। তইতো আকবর আলী খানসহ অনেক বিশিষ্টজন ও সুশীল সমাজের নেতারা এখনও এটাকে নাটক বললেও আশাবাদী হয়ে উঠেছেন এবং বিশ্বাষ করতে চাইছেন- এবার আলোচনা হবেই। আর যদি না হয়, তাহলে ২৩ অক্টোবর প্রথম প্রহরে চ্যানেল আই-এর তৃতীয় মাত্রার অতিথি ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন এবং এম হাফিজউদ্দিন খান ও একুশে টেলিভিশনের একুশে রাত অনুষ্টানের অতিথি আসাফুদ্দৌলা এবং বদিউল আলম মজুমদারসহ সুশীল সমাজের নেতাদের প্রতি অনুরোধ জানাবো- দয়া করে এভাবে টক শোতে টকিং না করে রাস্তায় নামুন। আসুন আমরা সবাই একযোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনশন ধর্মঘট করে হলেও দুইনেত্রীকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করি ও সব অনিয়মের মিমাংশা করে ঘরে ফিরি।
বাংলাদেশ আমজনতা পরিষদ (বাপ) গঠন এখন খুবই জরুরী। দেশকে ভালোবাসেন, দেশের প্রতি দায়বদ্ধ প্রতিটি মানুষের প্রতি অনুরোধ আসুন নতুন নেতৃত্ব গড়ে তুলি। বাপ-এর প্রধান পর্ষদ কখনো ক্ষমতালোভী হবে না। কেন্দ্রিয় পদ আকঁড়ে রেখে বাপ-এর কোনো সদস্য বা সন্তান কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
সব ধর্মের প্রতি যারা শ্রদ্ধাশীল। সব মানুষের প্রতি যারা সহযোগিতার হাত বাড়ায় তারাই এ দলের নেতৃত্ব গ্রহণের যোগ্য হবেন।
কোনো ছাত্র সংগঠন, সাংবাদিক বা পেশাজীবী সংগঠন বাপ অনুমোদন করবে না।
দলীয় রাজনীতি থাকবে তবে কর্মক্ষেত্রে দলমতের উপরে থেকে কাজ করবেন বাপ সদস্যরা। জাতীয় সব ইস্যুতে একটাই দল থাকতে হবে – বাংলাদেশী দল।
যারা সহমত, আসুন ঐক্য গড়ি
বাংলাদেশ আমজনতা পরিষদ গঠন করি।
কিভাবে কি করতে হবে আমি জানিনা। তাই সাহয্য করুন। শ্রম দেব।