এক
তীরের দিকে প্রাণ ছুঁড়েছে পাখি;
বৃক্ষ এবার হাওয়ার দিকে ঝুঁকে
ডালপালাকে বলছে এখন নাকি
পর্ণরাজি বাতাস দেবে রুখে!
এমনতর ঋতুর আভাস পেয়ে
আবার আমার মৌন-আমন্ত্রণ
তোমাকে এই পত্র পাঠায় মেয়ে,
মরুমাঠে ক্লোরোফিলের বন
আমরা হবো। অন্ধ আজও যারা_
তাদের কথা অনুচ্চারে থেকে
সাপের মতো পালাক এঁকেবেঁকে,
এটাই একবিংশকালের ধারা।
বেতস-লতায় মনকে তোমার আঁকো।
পাথর-কঠিন, জলের মতো বাঁকো!
দুই
জীবনের সত্য সমীকরণ হলো এই যে, যখন তুমি
স্নাতক হচ্ছো দিনের আলোয় কিংবা স্বপ্নরেণুতে__
তুমি আর তুমি থাকো না, তখন তুমি ঠিক সে নও
তোমাকে দেখতে যা মনে হয়; আলো ও উত্তাপের
গ্যালভানাইজিং পদ্ধতিতে ভেতরে ভেতরে
বদলে যায় তোমার জীবন; কিন্তু এর সবকিছুই
নির্ভর করছে রাত্রিকে তুমি কী চোখে দ্যাখো
অথবা কীভাবে উপভোগ করো দীর্ঘ এক অন্ধকারকে,
যাকে তোমার মনে হয়েছিলো অফুরন্ত রাত, নিঃসীম;
রাত্রিকে যারা ভয় পায়, সতর্ক থেকো ওইসব
দুর্বলচিত্ত মানুষের থেকে! তারা তো টেনে আনে
ভূত ও অশরীরীর কল্পনা, আর বিলীন হয়ে যায়
অামাদের সমুদয় বাস্তবতা__ সবুজ এই সমতল,
অনুচ্চ পাহাড়, দরিদ্র এক উপসমুদ্র, নগরগুলো
অার আমাদের স্মৃতির ভেতরে থাকা স্বজনেরা;
অসহনীয় অন্ধকারে কাকে জড়িয়ে ধরেছিলে তুমি?
মাতৃগর্ভ, চাঁদ, স্বপ্ন, পৌরাণিক বিশ্বাস, স্মৃতিজ চুল?
কাকে চুম্বন করতে করতে পৌঁছে গিয়েছিলে ভোর-অব্দি
গোধূলি, বৃষ্টি, ঘনীভূত কুয়াশা? এসবই সেই নিয়ামক
যা তোমাকে বদলে দেবে সূর্যের ওয়েল্ডিং কারখানায়;
তিন
অবারিত গমক্ষেত। গতিশীল ও আঁকাবাঁকা
একটা রেখা তৈরি করে নড়ছিলো গমগাছগুলো;
সেদিকেই বন্ধুক তাক করে আছে একজন সৈনিক।
অফিসার বললো: হতে পারে কোনও খরগোশ, তবু
জীবন থেকে অন্য জীবনে লুটিয়ে পড়ার আগে
তাকেই নিশানা করে এক দুই তিনবার গুলি ছুঁড়লো
সেই সৈনিক। আসলে, খরগোশ নয়; সেটা ছিলো
সন্ত্রস্ত এক বালকের পলায়ন; যুদ্ধ যার অধিগম্য
নয়। সেই ঘটনার চুয়াল্লিশ বছর পর, আবারও__
আবারও খুললাম যুদ্ধপুস্তক, পড়লাম এবং
বন্ধ করলাম। কেননা, এখন আর যুদ্ধ নেই, এখন
কেবলই ক্ষমতার লড়াই। তবু, গতিশীল ও আঁকাবাঁকা
একটা রেখা তৈরি হচ্ছে গমক্ষেতের ভেতরে। তখন
হয়তো শেষ রাত্রির জ্যোৎস্না ফিকে হয়ে যাচ্ছে,
একটু পরেই সকাল আসবে বলে; কিন্তু গুলি চলছে
এক দুই তিনবার; খরগোশ নয় জীবন থেকে
মৃত্যুর দিকে লাফিয়ে পড়ছে কোনও না কোনও
যুবক; যে কিনা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতো:
চেতনাপক্ষের গুলি, পাকিস্তানীদের মতো এতোটা
নির্মম ও নির্বিচার হতে পারে না, কিছুতেই… না