অবশেষে ২০জুন শুক্রবার ২০১৪ থেকে মুক্তি পেল ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ ছবিটি। কবি নির্মলেন্দু গুনের কবিতা অবলম্বনে সরকারি অনুদানে নির্মিত মাসুদ পথিকের প্রথম চলচ্চিত্র এটি। কবিতার শিরোনামের সঙ্গে মিল রেখেই ছবিটির নাম রাখা হয়েছে ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’। ঢাকার বলাকা, মধুমিতা, স্টার সিনেপ্লেক্সসহ খুলনা, নেত্রকোণা, নরসিংদীতে একসঙ্গে ৯টি সিনেমা হলে মুক্তি পাচ্ছে এ ছবিটি। এরইমধ্যে লন্ডন, কানাডাসহ কয়েকটি দেশে পাঠানো হয়েছে ছবিটির প্রিন্ট।
১৯ জুন বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা ৩০ মিনিটে ঢাকার বলাকা সিনেমা হলে ছবিটির প্রথম প্রদর্শনী দেখার আমন্ত্রণ জানান কবি নির্মলেন্দু গুন ও মাসুদ পথিক। প্রদর্শনী দেখতে এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য কবি মুহাম্মদ নুরুল হুদা, কবি ড. মুহম্মদ সামাদ, মৃত্তিকা গুন, সৌমিত্র দেবসহ তরুণ প্রজন্মের কবি ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের অনেকে।
প্রদর্শনী শুরুর আগে পথিক মাসুদ বলেন, এ চলচ্চিত্র দেখা যাবে, কবি নির্মলেন্দু গুন তার এক বন্ধু নেকাব্বরের কথা বলেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় নেকাব্বরের গ্রাম, তার প্রেম আরও অনেক কিছু..। ছবিটিতে প্রায় ১৯টি প্রাণির উপস্থিতি দেখানো হয়েছে কচ্ছপ, বানর, দোয়েল পাখি ইত্যাদি। এমন কিছু উপস্থাপন করা হয়েছে এ ছবিতে যা আমাদের সচরাচর দেখা চলচ্চিত্র থেকে ভিন্ন।
বিস্তারিত কবিতাটি পড়েই জেনে নেয়া উত্তম।
‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’
নেকাব্বর জানে তাঁর সম্পত্তির হিসাব চাইতে আসবে না
কেউ কোনোদিন।
এই জন্মে শুধু একবার চেয়েছিল একজন, ‘কী কইরা
পালবা আমারে,
তোমার কী আছে কিছু তেনা?’
সন্ধ্যায় নদীর ঘাটে ফাতেমাকে জড়িয়ে দু’হাতে বুকে পিষে
বলেছিল নেকাব্বর;
‘আছে, আছে, লোহার চাককার মতো দুটা হাত,
গতরে আত্তীর বল – আর কীডা চাস্ মাগী।’
‘তুমি বুঝি খাবা কলাগাছ?’
আজ এই গোধুলিবেলায় প্রচন্ড ক্ষুধার জ্বালা চোখে নিয়ে
নেকাব্বর সহসা তাকালো ফিরে সেই কলাবাগানের গাঢ় অন্ধকারে।
তিরিশ বছর পরে আজ বুঝি সত্য হলো ফাতেমার মিষ্টি উপহাস।
পাকস্থলি জ্বলে ওঠে ক্ষুধার আগুনে, মনে হয় গিলে খায়
সাজানো কদলীবন,’
যদি ফের ফিরে পায় এতটুকু শক্তি দুটি হাতে, যদি পায়
দাঁড়াবার মতো এতটুকু শক্তি দুটি পায়ে।
কিন্তু সে কি ফিরে পাবে ফের?
ফাতেমার মতো ফাঁকি দিয়া সময় গিয়েছে ঢের চলে।
কারা যেন ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে গেছে সব শক্তি তার।
বিনিময়ে দিয়ে দেছে ব্যাধি, জরা, দুর্বলতা, বক্ষে ক্ষয়কাশ-
অনাদরে, অনাহারে কবরে ডুবেছে সূর্য, ফাতেমার তিরিশ বছর।
এখন কোথায় যাবে নেকাব্বর?
হয়তো গিলেছে নদী তার শেষ ভিটেখানি, কবর ফাতেমা-
কিন্তু তার শ্রম. তার দেহবল, তার অকৃত্রিম নিষ্ঠা কারা নিলো?
আজ এই গোধুলিবেলায় এই যে আমার পৃথিবীকে মনে হলো পাপ,
মনে হলো হাবিয়া দোজখ – কেউ কি নেবে না তার এতটুকু দায়?
মানুষ পৃথিবী ছেড়ে চায় না সুদুরে চলে যেতে, নেকাব্বর ভাবে,
অজানা অচেনা স্বর্গে বুঝি মেটে বাস্তবের তৃষ্ণা কোনোদিন?
তবু যারা চায়, তারা কেন চায়? তারা কেন চায়? কেন চায়?
নেকাব্বর শুয়ে আছে জীবনের শেষ ইস্টিশনে। তার পচা বাসী শব
ঘিরে আছে সাংবাদিক দল। কেউ বলে অনাহারে, কেউ বলে অপুষ্টিতে,
কেউ বলে বার্ধক্যজনিত ব্যাধি, – নেকাব্বর কিছুই বলে না।
কবি নির্মলেন্দু গুন ও কবি অসীম সাহাসহ নবীন প্রবীন মিলিয়ে ১৫ জন কবি অভিনয় করেছেন এ চলচ্চিত্রে। আরও অভিনয় করেছেন মামুনুর রশিদ, প্রবীর মিত্র, শিমলা, জুয়েল, বাদল শহিদ, রানী সরকার, রেহানা জলি, তারেক মাহমুদ, শেখ শাহেদ, সৈয়দ জুবায়ের, ফারহানা সুচি, সোহেল বয়াতি। ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ ছবিটির আবহ সংগীত পরিচালনা ও শব্দ সম্পাদনার কাজ করেছেন সাইম রানা। ছবিটির গান পরিচালনা করেছেন প্রিন্স মাহমুদ, মুশফিক লিটু, বেলাল খান, অসীম সাহা প্রমুখ। কণ্ঠ দিয়েছেন মমতাজ, বারী সিদ্দিকী, প্রিয়াংকা গোপ ও বেলাল খান। গান লিখেছেন নির্মলেন্দু গুণ, মাসুদ পথিক, অসীম সাহা, সাইম রানা প্রমুখ।