মানুষ কথা বলার জায়গা খুঁজছে ঃ বদিউল আলম মজুমদার
মানুষ কথা বলার নির্ভরতা খুঁজছেঃ বদিউল আলম মজুমদার
আরিফ আহমেদ
রাজশাহী, চট্টগ্রাম, রংপুর ও বরিশালের সংলাপে অংশ নিয়ে এটা পরিষ্কার যে, সাধারণ মানুষের মধ্যে ভিতরে ভিতরে ক্ষোভ দানা বাঁধছে। একান্ত সাক্ষাতে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার আরো বলেন, মানুষ কথা বলার, অভিযোগ জানাবার একটা নির্ভরশীল জায়গা খুঁজছে। যার প্রমাণ দেখা গেছে বরিশাল সংলাপে। নির্দিষ্ট বিষয়ের বাইরেও অনেক অভিযোগ উঠে এসেছে এখানে। যার উত্তরও চমৎকার দিয়েছেন স্থানীয় সাংসদ ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি। তিনি প্রশংসার দাবিদার।
২৫ ডিসেম্বর সকালে মুঠোফোনে সুজন, সিপিডি ও ইউএনডিএফ আয়োজিত বরিশাল সংলাপের অনুভূতি ব্যক্ত করে একথা বলেন সুজন সম্পাদক।
এর আগে রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও রংপুর সংলাপ বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাজশাহী সংলাপে ছিলো আশার বাণী। রাজশাহী অঞ্চলের যথেষ্ট উন্নয়ন হলেও সেখানে জনসম্পৃক্ততার অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ উঠে আসে বক্তাদের মুক্ত আলোচনায়। আর বাণিজ্যিক নগরীর চট্টগ্রাম অঞ্চলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সাথে সাথে শোভন কর্মসংস্থানের ওপর নজর দেয়া জরুরী হয়ে পড়েছে বলে দাবী উঠে এসেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর পক্ষ থেকে আয়োজিত চট্টগ্রাম সংলাপে।
রংপুর সংলাপে অংশ নিয়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় হতাশা ব্যক্ত করে সয়ং বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, লালফিতার দৌরাত্ম্য বড় বেশি। আমি নিজেও কিছুটা কাবু হয়ে গেছি। অলাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে হতাশার কথা জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী সিপিডি ও সুজন আয়োজিত রংপুর সংলাপে এই কথা বলেছেন।
আর তিনটি বিষয়ের উপরই গুরুত্ব আরোপ করেন বরিশালের বাসিন্দারা। এখানে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি দ্বন্দ্বের ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের বক্তব্যে। যার সূচনা দেখা গেছে রংপুর সংলাপে বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সির বক্তব্যেও।
জাতীয় উন্নয়নে অঙ্গীকার: শিক্ষা, শোভন কর্মসংস্থান, জেন্ডার সমতা শীর্ষক আঞ্চলিক সংলাপ নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ সিপিডি এবং জাতিসংঘ ডেভেলপমেন্ট ফান্ড ইউএনডিএফ প্রতিনিধিরা সারাদেশে ঘুরে ঘুরে আঞ্চলিক সংলাপের আয়োজন করছেন ও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সমাধানের পথও খুঁজছেন। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে এতে উপস্থিত থাকছেন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সাংসদ ও জেলা প্রশাসকগণ।
তাদের সাথে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ সরাসরি কথা বলেন। শিক্ষা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, অবকাঠামো ইত্যাদি নানা দিক নিয়ে আলোচনায় উঠে আসে দ্বিধা দ্বন্দ্ব, হতাশা ক্ষোভ।
এসব বিষয়কে সামনে এনে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, উত্তরবঙ্গের একটি জেলার চায়ের দোকানে তৃণমূলের একদল মানুষের সঙ্গে ঘণ্টা দুই কাটানোর অভিজ্ঞতা থেকে আমার মধ্যে কতগুলো উপলব্ধি সৃষ্টি হয়েছে। একটি উপলব্ধি হলো যে, দেশের বর্তমান পরিস্থিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ বিরাজমান। তৃণমূলের এসব মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় অসন্তোষ ভোট দিতে না পারার কারণে তাঁরা তাঁদের ভোটের অধিকারকে অনেক বড় করে দেখেন।
আমার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপলব্ধি হলো, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সবকিছু নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক অনাস্থা বিরাজ করছে। তাঁরা আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন আমাদের রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানের ওপর। রাজনীতিবিদদের সম্পর্কেও তাঁরা হতাশ, যদিও বর্তমান গ্যাঁড়াকল থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে তাঁরা দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার ওপর ভরসা রাখতে চান। সেনাবাহিনীর ওপর তাঁরা এখনো পুরোপুরি আস্থা হারিয়ে ফেলেননি।
এই যে ব্যাপক হতাশা-নিরাশার মনোভাব, তার পরিণতি দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। ইতিমধ্যে এরই প্রতিফলন দেখছি আমাদের তরুণদের মধ্যে, যাঁরা বিশেষত মেধাবী। তরুণেরা আজ বিদেশে পাড়ি দিতে এক পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে, যা জাতির ভবিষ্যতের জন্য কোনোভাবেই ইতিবাচক নয়। এর চেয়ে আরও ভয়াবহ হলো যে তরুণদের কেউ কেউ ধর্মভিত্তিক সমাধানের দিকে এগোচ্ছেন। ফলে সরকারের কঠোরতার কারণে উগ্রপন্থীদের প্রকাশ্য তৎপরতা তেমন দেখা না গেলেও, ধর্মান্ধ শক্তি ভেতরে-ভেতরে ক্রমাগত শক্তিশালী হচ্ছে বলেই অনেকের ধারণা।
বরিশাল সংলাপে অংশ নিয়ে এ ধারণা আরো বদ্ধমূল হয়েছে। তবে বরিশালের মুক্ত আলোচনা ছিলো অনেক বেশী প্রাণবন্ত এবং পানি প্রতিমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন, গর্বের সঙ্গে নিজেকে দূর্নীতি মুক্ত দাবী করেছেন। এট সত্যি প্রশংসনীয় বলে মনে করেন বদিউল আলম মজুমদার।