মাননীয় সাংস্কৃতিক মন্ত্রীর সংক্ষীপ্ত জীবন চরিত
আসাদুজ্জামান নূর ১৯৪৬ সালের ৩১ অক্টোবর নীলফামারী জেলা সদরে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবু নাজেম মোহাম্মদ আলী ও মাতার নাম আমিনা বেগম।
তিনি নীলফামারী মহাবিদ্যালয় থেকে ¯ স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত। তাঁর স্ত্রীর নাম ডা: শাহীন আখতার, যিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ব বিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক (শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও নিউরোলজিষ্ট)। আসাদুজ্জামান নূর এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের গর্বিত জনক।
তিনি ১৯৭২ সালে বহুল প্রচারিত সাপ্তাহিক চিত্রালীতে কাজ করার মধ্যদিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন । ১৯৭৩ সালে একটি বিজ্ঞাপন সংস্থার অধীনে একটি ছাপাখানায় ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৪ সালে সোভিয়েত দূতাবাসে (বর্তমানে রাশিয়া) প্রেস রিলেশন অফিসার হিসেবে যোগদেন। ১৯৮০ সালে ইস্ট এশিয়াটিক অ্যাডভারটাইজিং লিমিটেড এ (বর্তমানে এশিয়াটিক থ্র্রি সিক্সটি) জেনারেল ম্যানেজার পদে যোগদান করেন। তিনি ১৯৭২ সাল থেকে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত থেকে বাংলাদেশের নাটকের বিকাশের ধারায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত দলের ১৫টি নাটকে ৬০০ বারেরও বেশী অভিনয় করেছেন। তিনি দু’টি নাটকে নির্দেশনা দিয়েছেন। তার মধ্যে একটি দেওয়ান গাজীর কিস্সা-যা প্রায় তিন শতাধিকবার মঞ্চায়িত হয়ে রেকর্ড গড়েছে সর্বোচ্চ মঞ্চ নাটক প্রদর্শনীর। তিনি ১১০ টিরও বেশী টিভি নাটক, সিরিজ নাটকে অভিনয় করেছেন। তন্মধ্যে এইসব দিনরাত্রি, বহুব্রীহি, অয়োময় এবং কোথাও কেউ নেই ইত্যাদি অন্যতম। তাঁর রেডিওতে প্রচারিত নাটকের সংখ্যা ৫০ এর অধিক। তিনি মঞ্চের জন্য ব্রেখটেরে নাটকের বাংলা অনুবাদ, রবীন্দ্রনাথের তিনটি উপন্যাসের টিভি নাট্যরুপ এবং টিভির জন্য একটি মৌলিক নাটক রচনা করেন। তাঁর পুস্তকাকারে প্রকাশিত নাটকের নাম ‘এ মোর অহংকার’ ও ‘দেওয়ান গাজীর কিস্সা’ । তিনি নিজস্ব পরিচালনায় বিজ্ঞাপনী সংস্থার ৫০টিরও বেশী বিজ্ঞাপনচিত্র ও ভিডিও ছবি নির্মাণ করেন। তিনি নিয়মিত আবৃত্তি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে থাকেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ট্রাষ্টি সদস্য, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সদস্য ও বাংলাদেশ রাশিয়া মৈত্রী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
তিনি ১৯৬৩ সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নে যোগদান করেন। ১৯৬৫ সালে নীলফামারী কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন। তিনি দীর্ঘদিন প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে বিরত থেকে সংস্কৃতি কর্মী হিসেবে নানান রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন এবং স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারেরর দাবীতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের সঙ্গে আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯৮ সালের মাঝামাঝিতে প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগে যোগদান করেন।২০০২ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি সংসদীয় আসন ১৩-নীলফামারী-২ থেকে ২০০১ ও ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ৯ম জাতীয় সংসদের বিভিন্ন সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে সদস্য হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি প্রভৃতি। তিনি ২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদীয় আসন ১৩-নীলফামারী -২ আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হন এবং ১২ জানুয়ারি নবগঠিত মন্ত্রীসভায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
তিনি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহনের জন্য যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, বুলগেরিয়া, জাপান, ভিয়েতনাম, সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমানে রাশিয়া), ইতালি, ফ্রান্স, ভারত, জার্মানী, অষ্টেলিয়া,সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড সহ পৃথিবীর আরও বহুদেশ ভ্রমণ করেছেন।