মঞ্চে এলো কণ্ঠশীলনের নতুন নাটক ‘তাজমহলের টেন্ডার’
বিশেষ প্রতিবেদক
৫ই জুন ২০২৩ সোমবার সন্ধ্যা সাতটায় কণ্ঠশীলন প্রযোজিত নতুন মঞ্চনাটক ‘তাজমহলের টেন্ডার’-এর উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হলো বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হল, ঢাকায়। ভারতীয় নাট্যকার অজয় শুক্লা রচিত “তাজমহলের টেন্ডার” নাটকটির অনুবাদ করেছেন অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদী। নির্দেশনায় ছিলেন কণ্ঠশীলন অধ্যক্ষ মীর বরকত। নতুন নাটক তাজমহলের টেন্ডারের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন নাট্যজন লাকী ইনাম, চেয়ারম্যান বাংলাদেশ শিশু একাডেমি।
নাটক সম্পর্কে নির্দেশক মীর বরকত বলেনÑ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষক সফিকুন্নবী সামাদী উর্দু-হিন্দী সাহিত্য অনুবাদে সিদ্ধহস্ত। একটি হাস্যরসাত্মক নাটক অনুবাদের জন্য তাঁকে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। ভারতের বিশিষ্ট নাট্যকার অজয় শুক্লার ‘তাজমহল কা টেন্ডার’ নাটকটি দ্রুত অনুবাদ করে তিনি আমাদের হাতে তুলে দেন। প্রথম পাঠেই দলের সদস্যরা নাটকটি পছন্দ করেন। একটি ঐতিহাসিক বিষয়কে অবলম্বনের মাধ্যমে কাল্পনিক কাহিনির পরম্পরা সাজিয়ে নাটকটিকে হাস্যরসাত্মক ও চিরন্তন করে তুলেছেন নাট্যকার অজয় শুক্লা। ড. সামাদীর সহজ সরল অনুবাদকে কাজে লাগিয়ে অভিনেতারা কমেডি ধাঁচের অভিনয়ের মাধ্যমে হাস্যরস ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।
নাটকটিতে দেখা যায় বাদশাহ শাহজাহান তাঁর প্রিয় বেগম মমতাজের স্মৃতি রক্ষার্থে তাজমহল বানানোর ভার দিলেন চিফ ইঞ্জিনিয়ার গুপ্তাজীকে। ধুরন্ধর গুপ্তাজী ও তার সহকারী সুধীর ব্যবসায়ী ভাইয়াজীর সাথে হাত মিলিয়ে শাহজাহানকে ভুল বোঝাতে লাগলেন। তারা নানান কৌশলে বাদশাহর চোখে ধুলো দিয়ে তাজমহল বানানোর আগেই বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ এবং তা আত্মসাৎ করতে লাগলেন। বিভিন্ন দফতরের কর্তাব্যক্তি এবং শ্রমিক নেতারাও নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবৈধ সুবিধা ভোগের মাধ্যমে গুপ্তাজীর অনৈতিক কাজে সহযোগিতা করতে থাকে। এসব কারণে সম্রাটের আকাক্সক্ষা পূরণে চরম বিঘ্ন ঘটতে শুরু করে এবং তাজমহল নির্মাণে সময়ক্ষেপণ হতে লাগলো। শাহজাহান হতাশ হতে লাগলেন আর ভাবতে থাকলেন তার স্বপ্ন কি অধরাই থেকে যাবে? হ্যাঁ পঁচিশ বছর শেষ হয়ে যাবার পরেও তাজমহলের টেন্ডার বের হয় না। তবে মৃত্যুর পূর্বে সম্রাট শাহজাহান গুপ্তাজীর ধোঁকাবাজি বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তার জারি করা শাহী ফরমানবলে গুপ্তাজী এবং তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার করা হয়। নাটকের মাধ্যমে সবার চাওয়া পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দুর্নীতিযুক্ত অসুস্থ সমাজের স্তরে স্তরে সংঘটিত সকল ধরনের দুর্নীতির অবসান হোক।
১ ঘণ্টা বিশ মিনিটের নাটকটির সঙ্গীত পরিকল্পনা ও সুরে মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন অসীম কুমার নট্ট; আলো-আঁধারের খেলায় উৎড়ে গেছেন আলোক পরিকল্পক অম্লান বিশ্বাস; কোরিওগ্রাফি ও ডিজাইনে আমিনুল আশরাফ ও তাহরিমা প্রিয়াঙ্কা অনেক ভালো কাজ করেছেন; মঞ্চসজ্জা, পোশাক ও প্রপস দিয়ে প্রাসঙ্গিকতা ফুটিয়ে তুলেছেন লিয়া। এছাড়াও সমসাময়িক বিষয়ে দুটি র্যাপ গান লিখেছেন মীর বরকত।
নাটকটির প্রধান চরিত্র গুপ্তাজী ও তার সহকারী সুধীরের চরিত্রে সোহেল রানা ও সালাম খোকন নাটকটিকে এগিয়ে নিয়েছেন সঙ্গে ছিলেন সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ী ভাইয়াজীর চরিত্রে জে.এম মারুফ সিদ্দিকী। বাদশাহ শাহজাহান ও বেগম মমতাজের ভূমিকায় ছিলেন মোস্তফা কামাল ও আইরিন খানম। দরবারীর চরিত্রে ছিলেন আহমাদুল হাসান হাসনু, শফিকুল ইসলাম শফি এবং আল মামুন সিদ্দিক। রাজনৈতিক নেতার চরিত্র অনন্যা গোস্বামী ও অপরেশ সাহা সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। ভিজিল্যান্স কর্মকর্তা হিসেবে শফিক সিদ্দিকী, পরিবেশ কর্মকর্তা রূপে নিবিড় রহমান ও অ্যাকাউন্টস-এ মো. আব্দুল কাইয়ুম দুর্নীতি-ঘুষ বাণিজ্যের রূপ তুলে এনেছেন। চাপরাজী ও পত্রিকাওয়ালার হিসেবে ইকবাল হোসেন মানুষকে আনন্দ দিয়েছেন।
আবৃত্তির সংগঠন হিসেবে পরিচিত হলেও বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনভুক্ত কণ্ঠশীলন ১৯৯৩ সাল থেকে নিয়মিত মঞ্চনাটক প্রযোজনা করছে। কণ্ঠশীলন প্রযোজিত প্রথম তিনটি নাটকের নির্দেশনা দেন প্রয়াত সুখ্যাত অভিনেতা খালেদ খান (যুবরাজ)। নাটকগুলো ছিলো হেনরিক যোহান ইবসেনের এ ডলসহাউজ অবলম্বনে শম্ভু মিত্র রূপান্তরিত ‘পুতুলখেলা’, মাস্টার বিল্ডার অবলম্বনে ‘কারিগর’; ইউসুফ ইদরিসের দ্যা ফারফুরস অবলম্বনে ‘ভৃত্য রাজকতন্ত্র’। সৈয়দ শামসুল হকের ‘উত্তরবংশ’ নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন গোলাম সারোয়ার। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘রাজা-রানী’; মনোজ মিত্রের ‘যা নেই ভারতে’ এবং নিথর মাহবুবের ‘মুদ্রাগ্রহণ’ নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন মীর বরকত।