‘ইয়াংকী বণিকদের বঙ্গবাণিজ্য ও প্রাচ্য চর্চা (১৭৮৫-১৮৩০)’ শীর্ষক একক বক্তৃতা পর্বে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায় মার্কিন-বাংলা বণিকদের উদার পৃষ্ঠপোষকতার প্রভাবে আমরা নিউ ইংল্যান্ডে একটি উদারমনা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর উত্থান দেখতে পাই। উল্লেখ্য যে, ধর্মীয়ভাবে নিউ ইংল্যান্ড ছিল একটি রক্ষণশীল সমাজ। কিন্তু প্রাচ্য সভ্যতার সান্নিধ্যে এসে অনেক ইয়াংকী বণিক ধর্মকে নতুনভাবে বিচার করার প্রয়াস পায়। প্রাচ্য-প্রতীচ্যের মিলনে সনাতন সাহিত্য-সংস্কৃতিতে নতুন প্রবাহ সৃষ্টি হোক এ বাসনা নিয়ে ইয়াংকী বণিকরা প্রাচ্য চর্চায় উদারভাবে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিতে শুরু করেন। দর্শন চর্চায়ও বঙ্গ-মার্কিন সম্পর্কের প্রভাব কম নয়। একক বক্তা বলেন, বিবেচনাযোগ্য বিষয় এই যে, বাণিজ্যিক দিক থেকে মার্কিন-বাংলা সম্পর্ক তাৎপর্যহীন হয়ে পড়লেও সাংস্কৃতিক দিক থেকে তা তেমন স্তিমিত হয়নি কখনো। মার্কিন বঙ্গ-বণিকদের স্থাপিত কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, জাদুঘর প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান এখনো বিদ্যমান এবং বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের দিক থেকে পালন করছে শক্তিশালী ভূমিকা। উপনিবেশোত্তর সময়কে বুঝতে হলে এ নিয়ে বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন আছে।
বাংলা একাডেমির ৫৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। ৩রা ডিসেম্বর ২০১৩ মঙ্গলবার বিকেল ৪:০০টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে এই একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলা একাডেমির ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোঃ আলতাফ হোসেনের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি শুরু হয়।
সভাপতির ভাষণে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, বঙ্গবিদ্যা চর্চার ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কাজ করে আসছে। এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বক্তৃতার বিষয়ও এর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ; একাডেমি শুধু আমাদের বিদ্যাচর্চা নয় বরং বিদেশিদের বঙ্গ এবং বৃহদার্থে প্রাচ্য চর্চার দিকে ফিরে তাকাতে চেয়েছে। কারণ গোলকায়নের এই সময়ে নিজেদের জাতিসত্তা-ভাষা-সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে বহু প্রেক্ষিত থেকে অবলোকনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন রাবেয়া বস্রী এবং ফারহানা শিরিন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন
ড. শাহাদাৎ হোসেন নিপু।