বাংলাদেশের কবিতা ও ছোটগল্প
বাংলাদেশ কোনটি? সাতচল্লিশ পরবর্তী না একাত্তর পরবর্তী, তা চিহ্নিত নয়।সাহিত্যে বাংলাদেশের কিছু নিয়ে লিখতে গেলে, তা চিহ্নিত করণ জরুরী।স্বাধীনতার পয়তাল্লিশ বছর পর যখন কেউ বাংলাদেশের কবিতা বা গল্প নিয় লিখছেন, তখন তার প্রেক্ষিত টা পষ্ট করা উচিত নয় কী?
ড. তাসলিমা বেগম এর পাচঁটি বিভিন্ন সময়ে লেখা প্রবন্ধ সংকলন ‘ বাংলাধেশের কবিতা ও ছোটগল্প’।প্রকাশ করেছে শৈলী প্রকাশন।মূল্য:২০০টাকা।
উৎসর্গ ড.আনিসুজ্জামা কে।প্রবন্ধগুলো -আবু ইসহাকের ছোটগল্প: বিষয় চেতনা ও শিল্পশৈলী,দুটি পারিবারিক গল্পে প্রতিফলিত নারীর সামাজিক-অবস্থান বিচার,রূপালী স্নান: আর্থসামাজিক পর্যালোচনা,রৌদ্র করোটিতে: সামাজিকতার স্বরূপ,কবির অঙ্গিকারনামা:সোনালী কাবিন।ভূমিকা লিখেছেন ড. মাহবুবুল হক।
এ ক’টি লেখা তার পরিকল্পিত গবেষণার ফলাফল নয় বলে আমার বাংলাদেশ প্রসংগটি প্রাধান্য পায়নি।ভিন্ন প্রেক্ষিতে লেখার এটি গ্রন্থণা।
ছোটগল্প নিয়ে দুটি ও কবিতা নিয়ে তিনটি আলোচনায় প্রবল তীক্ষ্ণ আন্তদৃষ্টি পাওয়া যায় প্রসংগ বিশ্লেষণে।
শিরোনাম বিষয় কেন্দ্রিক হলেও আলোচনা ব্যাক্তিকেন্দ্রিক।তবে বিষয় সংশ্লিষ্ট। ছোটগল্পের আলোচনায় সূচিবিদ্ধ হয়েছেন আবু ইসহাক, মানিক, হাসান আজিজুল হক।কবিতায়, শামসুর রাহমান- আল মাহমুদ।শিরো নাম দেখে হ য়তো কেউ বিভ্রান্ত হবেন বাংলাদেশের কবিতা ও ছোটগল্প নিয়ে সামগ্রিক আলোচনা ভেবে।তবে সুখপাঠ্য।বাঙালি লোকমানস উন্মোচনে কথা শিল্পী আবু ইসহাকের সাথে বিশ্লেষক ড.তাসলিমার সমাজমনোস্কতার মনতাজ ঘটেছে।নারীর সামাজিক মর্যাদা জীবন সংকট সব ভূগোলে অভিন্ন উঠে এসেছে তার দ্বিতীয় প্রবন্ধে। বিশ্লেষণী মনোভঙ্গীর সাথে তুলনামূলক সংশ্লেশে আলোচনাটি হয়ে ওঠে আবেগময়।পুরুষতান্ত্রিক বা পিতৃতান্ত্রিক পরাক্রম নিয়ে উচ্চবাক্য থাকলেও এর সামাজিক ইতিহাসটি অনালোচিত।একটি নারীবাদি মনের হাহাকার আছে বিশ্লেষণী ভঙ্গীতে।নারীর বর্তমান অবস্থা নিয়েমন্তব্যটি চমৎকার- ‘নিজেকে অতিক্রম করে আপন সত্তার সঙ্গ সম্পৃক্ত হয়ে বহমান জীবনে প্রবেশের অধিজার নারী এখানে অর্জন করেনি’। প্রশ্ন হচ্ছে ক্ষমতার সব কেন্দ্রে নারী থাকার পরও এখনো কী করেছে?
আল মাহমুদ এক সাক্ষাৎকারে আমাকে বলেছিলেন- বাংলাদেশের কবিতা বলতে এখনও শামসুর রাহমান আল মাহমুদ। প্রসঙ্গটি অতিকথন হলেও বাংলাদেশের কবিতা আলোচনায় এ দুজনই এসেছে।মান্নান সৈয়দ,রফিক আজাদ,নির্মলেন্দু গুন, ময়ুখ চৌধুরীর অবস্থান তাহলপ কোথায়? এর উত্তর হয়তো অন্য কোনোখানে, অন্য কোথাও নিতে হবে।আমি শহুরে কাক হয়ে সানগ্লাসে গ্রাম দেখতে অভ্যস্ত। তাই আমার আগ্রহ ছিলো কবির অংগিকারনামা। সম্প্রতি পড়েছিলাম শহীদুল সোনালী কাবিনের টীকা টিপ্পনী সহ ভাষ্যটি। ড.তাসলিমার আলোচনা পড়তে তাই সুখবোধ হচ্ছিলো।এ আলোচনায় একটি মন্তব্য চমক দেয়া-‘ প্রমোদরমণী থেকে শ্রমশীল বাঙালি জাতিতে উত্তরণের কৃতিত্ব ‘সোনালী কাবিন’-এর অন্যতম মহাত্ম্য।’….
পূর্ণেন্দু পত্রী পঙক্তি ‘ ওর মাঝে শহর ঢোকেনি। সবটাই সবুজ’।এর সাথে সমান্তরালে বলা’ আসলে সমগ্র বাংলাদেশ ও আল মাহমুদের কবিতার প্রধান রঙই হলো সবুজ – সত্যি পাঠক কে প্লুত করে।
‘ আমার মস্তিষ্কে নয়
আমার কৈশোরবুঝি বসে আছে চোখের ভিতরে
বিশাল ধনুকের হাতে ক্লান্ত এক সবুজ বালক”।
( আভূমি আনত হয়ে)
লাল সবুজের বাংলাদেশ তখন’ নিভয়ে, নির্বানে…বেচেঁ থাকে আমার হৃদয়ে মাহমুদীয় পংক্তিমালায়।
রূপালী স্নান ও রৌদ্র করোটিতে- কে নিয়ে নাগরিক চেতনার কাব্যধারা উন্মোচন আছে দুটো আলোচনায়। পাঠক তৃপ্ত হবে বাংলাদেশের কবিতা ও ছোটগল্পের একটি পর্যায়ের বিশদ ব্যাবচ্ছেদ দেখে।