বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি: মালিক ও ভাড়াটিয়া দ্বন্দ্বে সরব পক্ষ-বিপক্ষ নাগরিক কমিটি
বিশেষ প্রতিবেদক
একদিকে বীরবিক্রম অন্যদিকে বীরপ্রতীক নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ নাগরিক কমিটি গঠন করে ঐতিহ্যবাহী বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি পুনরুদ্ধার আন্দোলনে নেমেছে দুটি পক্ষ । এরমধ্যে বীরবিক্রম পক্ষ পুরোপুরি বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির পক্ষে সমর্থন জানিয়ে ৭ দফা দাবী পেশ করেছে জেলা প্রশাসক বরাবরে। অন্যদিকে বীরপ্রতীক পক্ষে চলছে জোর আন্দোলন গড়ে তোলার প্রস্তুুতি। ক্রমশ ফেসবুক ঘীরে বাড়ছে তাদের জনসমর্থন। উভয়ের মাঝখানে ঐতিহ্যবাহী পাবলিক লাইব্রেরির ভবিষ্যৎ ঝুলছে দুধারী তলোয়ারের উপর। যা নিয়ে বিব্রত বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরির বর্তমান সভাপতি জেলা প্রশাসক ও সাধারণ সম্পাদক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব)।
যদিও বিগত প্রায় ৩০ বছর ধরেই অনিশ্চিত ছিলো এই পাবলিক লাইব্রেরির ভবিষ্যৎ। তবে এটি পুনঃসংস্কারের আশ্বাস ছিলো প্রশাসনের সবসময়। যা আজ পর্যন্ত কখনোই বাস্তবায়ন হয়নি।
ঘটনার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত প্রায় দুই মাস ধরে বরিশাল নগরীর ঐতিহ্যবাহী পাবলিক লাইব্রেরিটি নিয়ে জোর আলোচনা ও বাকবিতন্ডায় সোশ্যাল মিডিয়া সরগরম করে তুলেছেন সামাজিক আন্দোলনের নেতা এনায়েত হোসেন শিবলু। তাদের দাবী সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স ইউনিটি তুলে দিয়ে ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক পাবলিক লাইব্রেরিটিকেে নিজস্ব জায়গায় পুনঃস্থাপনের। অন্যপক্ষটি নির্বাচিত কমিটিসহ ৭ দফা দাবী তুলে বর্তমান স্থানেই এটি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ চাচ্ছেন। দ্বিতীয় পক্ষটি মূলত বরিশাল জেলা প্রশাসনের সমর্থন নিয়ে ঐতিহ্যবাহী পাবলিক লাইব্রেরির নিজস্ব স্থানটিতে ভাড়াটিয়া হয়ে এখন কৌশলে দখল চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ প্রথম পক্ষের। আর এ নিয়ে বর্তমান রিপোর্টার্স ইউনিটি ও পুরাতন পাবলিক লাইব্রেরি ভবনের পুকুর পাড়ে উম্মুক্ত বই পাঠের আয়োজন করেন তারা। যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। সর্বশেষ গত ৩০ সেপ্টেম্বর পাবলিক লাইব্রেরি বাঁচাও আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে নাগরিক কমিটি। বীর মুক্তিযোদ্ধা কেএসএ মহিউদ্দিন মানিক বীরপ্রতীককে আহ্বায়ক এবং কাজী এনায়েত হোসেন শিবলুকে সদস্য সচিব করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে প্রথম পক্ষ। আবার বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রমকে আহ্বায়ক করে পাল্টা নাগরিক মতবিনিময় সভা করে জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছে রিপোর্টার্স ইউনিটি। এসময় নগরীর সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অনেকেই রিপোর্টার্স ইউনিটির পক্ষে সমর্থন জানিয়ে সাক্ষর করেছেন। স্মারকলিপিতে তারা ৭ দফা দাবী তুলে ধরেন।
১. ৩৭ বছর যাবত বন্ধ থাকা পাবলিক লাইব্রেরী পুনরায় সচল ও সমৃদ্ধ করা
২. পাবলিক লাইব্রেরী ভবন সংস্কার ও আধুনিক ভবন নির্মাণ
৩. প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করা
৪. নতুন আসবাবপত্র ক্রয় ও পুরাতন আসবাবপত্র সংস্কার করা
৫. মেয়াদোর্ত্তীন এডহক কমিটি বাতিল করে পূনাঙ্গ পরিচালনা কমিটি নির্বাচন করা
৬. নতুন পাঠক সৃষ্টিতে প্রচার ও প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনা
৭. পাবলিক লাইব্রেরীর সম্পদ ও সম্পত্তি রক্ষনাবেক্ষন করা। এসময় উপস্থিত ছিলেন এই নাগরিক কমিটির আহবায়ক প্রবীণ রাজনীতিবিদ
মাহবুব উদ্দীন আহমেদ বীরবিক্রম, যুগ্ম আহ্বায়ক বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি শুভংকর চক্রবর্ত্তী, সদস্য সচিব বরিশাল রিপোটার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল বিশ্বাস সহ অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।
এর আগেও এই পাবলিক লাইব্রেরি নিয়ে বিগত সময়ে অসংখ্য লেখালেখি হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু মৃতপ্রায় এডহক কমিটি নিয়ে এতোদিন একা একাই এটি পুনরুদ্ধারে সক্রিয় ছিলেন। হঠাৎ করে গত ১৭ সেপ্টেম্বর সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলার সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী এনায়েত হোসেন শিবলুর সমন্বয়ে বইপাঠের আয়োজন হয় এবং এ কর্মসূচিতে অংশ নেন পাবলিক লাইব্রেরি এডহক কমিটির সদস্য আমিরুল ইসলাম বুলবুল, প্রাক্তন সদস্য দেওয়ান ফখরুল ইসলাম, সামাজিক আন্দোলনকর্মী কাজী ফিরোজ, নজরুল ইসলাম, অঞ্জলী গুপ্তসহ শিক্ষার্থী ও সংস্কৃতিকর্মীরা। তাদের দাবী বিবির পুকুর পাড়ে নিজস্ব স্থানে পাবলিক লাইব্রেরি পুনঃস্থাপনের। এসময় তারা রিপোর্টার্স ইউনিটি ও সাংবাদিকদের দখলদার বলে আখ্যা দিলে দ্বন্দ্বের সুত্রপাত ঘটে। কেননা রিপোর্টার্স ইউনিটির পক্ষে এটি প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান স্বপন, সাংবাদিক সুশান্ত ঘোষ, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মিথুন সাহা সহ বেশ কয়েকজন শুভানুধ্যায়ী বলেন, ১৯৮৬ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত এই পাবলিক লাইব্রেরিটির কি অবস্থা ছিলো? বর্তমানেও এটির কি অবস্থা? কয়জন পাঠক আছে, বইয়ের জন্য প্রতিবছর যে আবেদন করতে হয়, তা কি কেউ করেছেন? অধ্যাপক বদিউর রহমান এই পাবলিক লাইব্রেরির নির্বাচিত সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, তিনি এবং ঐ পক্ষের বর্তমান আহ্বায়ক মহিউদ্দিন মানিক বীরপ্রতীকসহ প্রায় সবাই এই রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে অসংখ্য বৈঠক করেছেন। নাগরিক মতবিনিময় সভাতেও তারা ছিলেন। তখন তাদের কারো মনে হয়নি যে রিপোর্টার্স ইউনিটি অবৈধ। এখানে যাবোনা? ইত্যাদি বহুসংখ্যক প্রশ্ন তুলে ধরে তারা বলেন, রিপোর্টার্স ইউনিটি ২০০২ সালে বরিশাল জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে এই ভবনটি ভাড়া নেয় এবং সংস্কার করে এটিকে বর্তমান অবকাঠামো সৃষ্টি করেছে। এর আগে এটিতো বেদখল ও বাজে নোংরা আখরায় পরিণত হয়েছিল। আমরা কখনোই এটিকে আমাদের ভবন দাবী করিনি। মূল ভবনের নাম যা ছিলো, এখনো তাই আছে দাবী করে সিনিয়র সাংবাদিক আনিসুর রহমান স্বপন বলেন, আমার মতে বর্তমানে পাবলিক লাইব্রেরি যেখানে আছে সেখানেই যদি এটি সংস্কার করে বহুতল ভবন করা হয়, তাহলে নদী তীরবর্তী মুক্ত বাতাস ও মনোরম পরিবেশে প্রকৃত পাঠকের আনাগোনা বাড়বে। তবে সেজন্য আগে পাবলিক লাইব্রেরি প্রশাসনিক কাঠামো ঠিক করতে হবে। পাঠক তৈরি হতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ওনারা হয়তো শাহানারা আব্দুল্লাহ নামে মিলনায়তনের দোহাই দেবেন। কিন্তু এই মিলনায়তন রিপোর্টার্স ইউনিটির বাহিরে নয়, ভিতরে। রিপোর্টার্স ইউনিটি যেখানেই থাকবে, সেখানে এই মিলনায়তনটিও থাকবে বলে জানান সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক। এসময় সাবেক আরেক সভাপতি ও সাংবাদিক সুশান্ত ঘোষ বলেন, কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু যদি সত্যিই এই পাবলিক লাইব্রেরির মঙ্গল চাইতেন, তাহলে তিনি সরাসরি আমাদের কাছে এসে আলোচনা করতেন। আমরা একসাথে বৈঠক করে একটা ঐক্যমতে পৌঁছতাম। কেননা তিনি যে পাবলিক লাইব্রেরি বাঁচাও আন্দোলন করছেন তার সূচনাও আমাদের নিয়েই ছিলো। প্রায় ২০/২২ বছর ধরে বন্ধ পড়ে থাকা পাবলিক লাইব্রেরি নিয়ে হঠাৎ তার এই উৎসাহ ও আন্দোলন চেষ্টা আসলে সন্দেহজনক বলে মনে করেন সুশান্ত ঘোষসহ আরো অনেকেই। তবে সকলেই একবাক্যে স্বীকার করেন আমরা পাবলিক লাইব্রেরির এই ভবন ভাড়া নিয়ে সংস্কার করেছি। এজন্য কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে। ১৭ শতক জায়গা থেকে ৭ শতকের বেশি জায়গা অলরেডি বেদখল হয়েছে। আমরা ভাড়া নিয়ে এটি সংস্কার না করালে এতোদিনে এটাও দখল হয়ে যেত বলে জানান রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতৃবৃন্দ।
যতদূর জানা যায়, ১৮৫০ সালের ১৪ আগস্ট ‘পাবলিক লাইব্রেরি অ্যাক্ট অব ইংল্যান্ড’ পাস হওয়ার পর বাংলামূলুকেও ‘পাবলিক লাইব্রেরি মুভমেন্ট’ এর সূচনা হয়। কারণ এই আইনের ফলে তৎকালীন ভারতবর্ষে প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করে গণগ্রন্থাগার। যার ছোঁয়া লাগে তৎকালীন পূর্ববঙ্গেও। ১৮৫৪ সালে বগুড়া, যশোর, বরিশাল ও রংপুরে গণগ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা ছিল যুগান্তকারী ঘটনা। ১৮৫৪ সালে বরিশাল নগরীর এনএক্স ভবন সংলগ্ন বিবির পুকুর পাড়ে ১৭.৭০ শতক জায়গার উপর বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৫ সালে এটিকে অজ্ঞাত কারণে নগরীর বাঁধ রোডে স্থানান্তর করা হয়। এসময় ৫৬ শতক জমি পাবলিক লাইব্রেরিকে দিয়ে এটা জেলা প্রশাসনের অধিনে করা হয়। ফলে বিবির পুকুর পাড়ের নিজস্ব ভবনটি ২০০২ সাল পর্যন্ত পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে থাকে। ২০০৪ সাল থেকে এই লাইব্রেরীর যাবতীয় কর্মকাণ্ড আজ পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে বলে স্বীকার করেন আন্দোলনকারী সবাই। সরেজমিনে বাঁধ রোডে বর্তমান ভবনে গিয়ে এটির কেয়ারটেকার শহীদ গাজী নামে একজনকে পাওয়া গেল যে এই লাইব্রেরি এখনো পাহারা দিচ্ছেন এবং এজন্য জেলা প্রশাসন থেকে তাকে প্রতিমাসে ৪ হাজার টাকা সম্মানিও দেয়া হচ্ছে। তবে এ টাকায় তিনি সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করলেও এডহক কমিটির কারোই তার প্রতি কোনো নজরদারি নেই বলে অভিযোগ করেন তিনি।
শহীদ গাজী জানান, সাবেক জেলা প্রশাসকগণ নিজ পকেট থেকে তাকে প্রতিমাসে ঐ টাকা দিচ্ছেন। এ টাকায় বউ-বাচ্চা নিয়ে সংসার চলেনা বলে জানান তিনি।
তবুও তিনি এখনো লাইব্রেরির বইগুলো আগলে ঐ বর্তমান ভবনের ভিতরে পরে আছেন শহীদ গাজী। বইগুলো বেশিরভাগই পোকায় কেটেছে। ঘুণপোকা খেয়েছে টেবিল চেয়ার। অথচ এই গ্রন্থাগারের আজীবন ও সবশেষ কমিটির সদস্য এবং পাবলিক লাইব্রেরির সম্পদ রক্ষা কমিটির অন্যতম একজন কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু তখন একান্ত সাক্ষাতে জানিয়েছেন, লাইব্রেরিটি বন্ধ হওয়ার আগে এর সদস্য সংখ্যা ছিল ৫০০ জন এবং আজীবন সদস্য ছিলেন প্রায় ৬০০ জন। লাইব্রেরিটির সদস্য হতে গেলে প্রয়োজন হতো জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও এক কপি ছবি, ভর্তি ফি ছিল ২০০ টাকা। মাসিক ২০ টাকা করে সদস্য ফি নির্ধারণ ছিল।
তিনি আরো জানান, কোনও আনুষ্ঠিকতা ছাড়াই এটি বন্ধ হয়ে যায়। একাধিকবার চেষ্টা করেও এটি সচল করা সম্ভব হয়নি।
আর কেয়ারটেকার শহীদ গাজী জানান, লাইব্রেরিতে এখনো প্রায় ১৪ হাজার বই রয়েছে। এরমধ্যে দুর্লভ অনেক বই থাকলেও সেসব বিষয়ে সেখানকার দায়িত্বরতরা কিছুই বলতে পারেননি। তবে সচেতন পাঠকের ধারণা, প্রাচীন গ্রন্থগুলো ইতোমধ্যেই নষ্ট হয়ে গেছে।
এমতাবস্থায় পাবলিক লাইব্রেরি নিজস্ব স্থানে পুনঃস্থাপনের দাবীতে পাল্টাপাল্টি কমিটি গঠন ও নাগরিক মতবিনিময় সভার আয়োজন নিয়ে সচেতন নাগরিকদের মধ্যেও দ্বিধা দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাদের মতে, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের মধ্যে দ্বন্দ্ব কখনোই কাম্য নয়। বরিশালের অন্যতম কবি ও সংগঠক তপংকর চক্রবর্তী, হেনরী স্বপন, কবি ও গবেষক আসমা চৌধুরীসহ অনেকেই বলেন, যেখানে পাঠক এখন ফেসবুক ও গুগল নির্ভর, সেখানে পাবলিক লাইব্রেরির পাঠক এখন শুধু স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরাই বেশি হবে। সেজন্য স্কুল-কলেজ সংলগ্ন এলাকাতেই পাবলিক লাইব্রেরি কিছুটা সচল দেখা যায়। বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি যেহেতু ইতিহাস ঐতিহ্যের সাক্ষী বহন করছে, তাই এটিকে সচল রাখা সকলের ঐক্যবদ্ধ ইচ্ছে হতে হবে। পাবলিক লাইব্রেরি রক্ষণাবেক্ষণ খুবই কঠিন কাজ। তাই এটি প্রশাসনিক সহযোগিতায় হওয়াটা উত্তম বলে মনে করেন বরিশাল সাহিত্য সংসদ বসাস এর প্রধান উপদেষ্টা অরূপ তালুকদারও। তিনি বলেন, আমিতো এখানে দ্বন্দ্বের কিছু দেখিনা। কাগজপত্রে জায়গার মালিকানা পাবলিক লাইব্রেরির থাকলেও তাদেরতো সেই মালিকানা আগে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তাদের কমিটি কি আছে না আছে, সে কমিটির মালিকানা অধিকার আছে কি নাই তা পর্যালোচনা করার পর রিপোর্টার্স ইউনিটি মালিক পক্ষ থেকে ভাড়া নিতে পারবে। যেটা এখন তারা জেলা প্রশাসক থেকে নিচ্ছেন, সেটা তখনও পাবলিক লাইব্রেরি থেকে নিতে পারে। আর পাবলিক লাইব্রেরি পুনরায় চালু করতে সংস্কার করতেই হবে। সেক্ষেত্রে নিজস্ব ভবনটি দোতলা বা তিনতলা করে নিয়ে নীচে রিপোর্টার্স ইউনিটি উপরে পাবলিক লাইব্রেরি হতে পারে। এটা আন্তরিকতার বিষয়। এটা মোটেও দ্বন্দ্বের বিষয় নয় বলে জানান অরূপ তালুকদার।
এ বিষয়ে সম্প্রতি নিজের ফেসবুক স্টাটাসে কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু অবশ্য বলেছেন, আমরা কোন প্রতিষ্ঠানের বিপক্ষে নই। আমাদেরকে জড়িয়ে ব্যক্তি আক্রমণ করে কুমন্তব্য ছড়ানো হচ্ছে- এটা একধরনের মতলববাজী ফন্দি। মনে রাখতে হবে, কোন ভাড়াটিয়া স্থায়ী নয়।
শিবলু আরো লিখেছেন, উক্ত প্রতিষ্ঠানটি (বিআরইউ) ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ২০০৫ পর্যন্ত সদর রোডের হেলেনা মঞ্জিলে ছিল। সতেচন নাগরিকের মতে, পাবলিক লাইব্রেরি একটি ভাড়ার প্রতিষ্ঠান হতে পারে না। অতীতে যারা ওই প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিয়েছে তার দায় বিবেকবান ব্যক্তিরা নেবে না।
সূত্রমতে উক্ত প্রতিষ্ঠানটি বিগত ২০০৫ সালে পাবলিক লাইব্রেরির নিজস্ব ভবনে একহাজার টাকায় মাত্র ১টি কক্ষে ভাড়াটিয়া হিসেবে প্রবেশ করে। কমিটির অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও লাইব্রেরি ভবনে ভাড়ার জন্য তৎকালীন মেয়র এবং বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামালের সুপারিশ ক্রমে ভাড়া দিতে বাধ্য হয়েছিল। দূর্ভাগ্য ভাড়া নেবার কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পরে ওই প্রতিষ্ঠানটি পুরো লাইব্রেরি ভবনটি নিজেদের করায়ত্ব করে। এমনকি পাবলিক লাইব্রেরির মূল সাইনবোর্ডটি ভাড়াটিয়া প্রতিষ্ঠান নিজেদের প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড দিয়ে ঢেকে দেয়- যা ভাড়াটিয়া হিসেবে একটি অনৈতিক ও উদ্দেশ্যমূলক কর্ম। তখন ভাড়াটিয়াদের সাইনবোর্ডটি নামাতে আমি লিখিত ভাবে সভাপতিকে অবহিত করি এরপরে তারা সাইনবোর্ডটি খানিকটা সরিয়ে নেয়।
শিবলু আরো লিখেছেন, ২০১২ সালে লাইব্রেরি ভবন থেকে অবস্থানকারীদের নামিয়ে পুনরায় লাইব্রেরি চালুর উদ্দেশ্যে- আজীবন সদস্যসহ নগরীর বিশিষ্টব্যক্তিবর্গের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি আবেদনপত্র পদাধিকার বলে পাবলিক লাইব্রেরির সভাপতি ও জেলা প্রশাসকের বরাবরে দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে গঠিত পাবলিক লাইব্রেরির এডহক কমিটি লাইব্রেরি পুনরায় চালুর উদ্যোগ সম্পর্কে মৌখিক ও লিখিত ভাবে অবহিত করে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তা সম্ভব হয়নি। উপরোন্ত, কমিটিকে উপেক্ষা করে নানাভাবে এর বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ পরিবর্তন সাধিত করে। যা ভাড়াটিয়া হিসেবে সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ও দূরভিসন্ধিমূলক অপতৎপরতা। তখন বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, এটিকে লিজি সম্পত্তি হিসেবে প্রচার করছে। এখানে বলা যায়, এই প্রাচীন লাইব্রেরিটির পাঠকেন্দ্রটি এখান থেকে প্রায় ৩৭ বৎসর পূর্বে সরিয়ে নেয়া হয়। তাই এখনকার ৪৫ থেকে ৫০ বৎসরের অধিকাংশ নগরবাসী জানেই না, এখানে একটি পাবলিক লাইব্রেরি ছিল। তার উপর এ নগরের অধিকাংশ আগন্তুক ব্যক্তি যারা ১৯৮৫ পরবর্তী সময়ে কর্মসূত্রে কিম্বা ভাড়াটিয়া হিসেবে এই নগরে এসেছেন। লাইব্রেরির মূল ভবনে ভিতরে অবস্থানকারীরা সহজ পন্থা হিসেবে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রকারের অসত্য গল্প বানিয়ে প্রচার করায় বরিশালের আগন্তুক ব্যক্তিগন সহ নতুন প্রজন্ম বিভ্রান্তিকর তথ্য পাচ্ছে- যা পাবলিক লাইব্রেরিটির অস্তিত্বকে অস্বীকার ও অবজ্ঞা করার সামিল।
শিবলু বলেন, আমার একটি প্রশ্ন, উক্ত ভাড়াটিয়ারা প্রতিষ্ঠানটি ঘিরে নগরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গরা কেন তাদের প্রতিষ্ঠান স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য জেলা প্রশাসক, মেয়র কিম্বা জেলা পরিষদের এর নিকট থেকে সরকারী জায়গা বা ভবন লিজ নেন নি?
তথাকথিত দখলস্বত্ব আইন বাতিলের জন্য বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। তা না হলে আমাদেরকেই এই পাবলিক লাইব্রেরির নিজস্ব সম্পদ হারাতে হতো। নগরের প্রাণকেন্দ্রে বিবির পুকুরের পূর্ব পাড়ে ১৪.৬৮ শতাংশ জমি যা পূর্বে ছিল। ইতোমধ্যে ১৭.৭০ শতাংশ জমি হারিয়েছে এই ভাড়া দেওয়ার কারণেই।
আমি এই লাইব্রেরির ২০১৩ সালে গঠিত এডহক কমিটির সম্পত্তি রক্ষা উপ-কমিটির একজন সদস্য হিসেবে আমার দায় নিয়ে কথা বলছি এবং প্রয়োজনীয় কাজও করে চলেছি। এ কারনে আমাকে নিয়ে ভাড়াটিয়া প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারগণের যত জ্বালা ও গাত্রদাহ। এতে আমার কোন কিছু যায় আসে না।
এ নগরের একজন অধিবাসী এবং লাইব্রেরির আজীবন সদস্য হিসেবে এটা আমার দায়বদ্ধতা। আমার বাবাও ছিলেন এই লাইব্রেরির আজীবন সদস্য। এই কাজে এ নগরের অসংখ্য বিবেকবান মানুষেরা আমার পাশে আছেন, যারা আমাকে অনুপ্রাণিত করছেন এবং তাদের মূল্যবান সময় ও পরামর্শ দিয়ে আমাকে সহযোগিতা করছেন। আমরা জানি, ধান্দাবাজ ও স্বার্থপর ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বেশীদুর এগুতে পারে না।
আসলেই আপনারা এই প্রতিষ্ঠানটিকে আপন ভাবেননি কিম্বা নিজস্ব মনে করেননি। তা না হলে এত দিনে আপনাদের প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী ঠিকানা করেন নি কেন? এর দায় কেন পাবলিক লাইব্রেরি নেবে?
এনায়েত হোসেন শিবলু আরো লিখেছেন, পরিস্কার কথা, পাবলিক লাইব্রেরি ভাড়ার স্থান নয়। ভাড়াটিয়া হলে তিন মাসের নোটিশই যথেষ্ট। লাইব্রেরির কমিটির সাথে আলোচনা করে জেলা প্রশাসককে নোটিশ দিতে হবে।
আগামী ২১শে ফেব্রুয়ারী ২০২৪ আর্ন্তজাতিক মহান ভাষা দিবসে ঐতিহ্যবাহী বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরির দ্বার সকলের জন্য উন্মুক্ত করে বরিশালবাসী কলঙ্কমুক্ত হবে বলে ঘোষণা দেন শিবলু।
বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি নিয়ে দু’পক্ষের অভিযোগই পর্যালোচনা করছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম। খুব শীঘ্রই উভয়পক্ষের সাথে বৈঠক করে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।