বরিশাল বিভাগের ৩৩ উপজেলার ১৭৩টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ যথারীতি সকাল আটটায় শুরু হয়ে বিকেল চারটায় শেষ হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে নির্বাচন বর্জন, বিচ্ছিন্ন সহিংসতা ও সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। শেষ পর্যন্ত ৩ জন নিহত ও শতাধিক আহত হবার সংবাদ পাওয়া গেছে।
প্রথম পর্যায়ের এই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় মোট ২৮ লাখ ৯৮ হাজার ৮৬৯ জন ভোটার অংশ গ্রহন করবেন বলে নর্বিাচন কমিশন আশা প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ১৯টি ইউনিয়ন পরিষদে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহন চলছে বলে জানা গেছে।
সকাল থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ভোট গ্রহন কার্যক্রম শুরু হয়। বরিশালের ১০টির মধ্যে ৯টি উপজেলার ৫০টিতে, পটুয়াখালীর ৭টির মধ্যে ৪টি উপজেলার ১৯টিতে, পিরোজপুরের ৭টি উপজেলার ৩২টিতে, ঝালকাঠির ৪টি উপজেলার ৩১টিতে, ভোলার ৭ উপজেলার ৪টি উপজেলায় ১২টি ইউপিতে এবং বরগুনার ৫টি উপজেলার ২৯টি ইউপিতে ২১ জুন সোমবার সকাল আটটা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয় এবং যথারীতি বিকেল চারটা কোতাও ৫টায় ভোট গ্রহন সমাপ্ত হয়।
বরিশাল সদর উপজেলার ৪, বাবুগঞ্জে ৪, গৌরনদীতে ৭, বানারীপাড়ায় ৭, বাকেরগঞ্জে ১১, হিজলায় ৪, মেহেন্দিগঞ্জে ২, মুলাদীতে ৬ এবং উজিরপুরে ৬ ইউনিয়ন নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৯ লাখ ২০ হাজার ৪৬৩ জন। এর মধ্যে নারী ৪ লাখ ৫২ হাজার ৩৩০ এবং পুরুষ ৪ লাখ ৬৮ হাজার ১৩৩ জন। এদিকে বরিশাল সদরের ৯ উপজেলায় ৫০ ইউনিয়নে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪৭৪ এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ছিলো ২ হাজার ৯৬৮টি।
এ ছাড়া বরিশাল জেলার সদর উপজেলার চরবাড়িয়া, মুলাদীর গাছুয়া, বাবুগঞ্জের জাহাঙ্গীরনগর এবং গৌরনদীর বাটাজোর ইউনিয়নে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে।
বেলা ১১টায় বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ও চাদশী ইউপির রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান জানান, সকাল দশটা পর্যন্ত দশ ভাগ ভোট পড়েছে। এখানে পরিস্থিতি ভালো, আশা করা যায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভোট দেওয়ার হার আরো বাড়বে। তিনি জানান, নারী ভোটারের উপস্থিতি এখানে বেশি।
কিন্তু তার কথার সাথে বাস্তব চিত্র কিছুপরেই বদলে গেল। এখানের খানজাপুরে কেন্দ্রের সামনেই সংঘর্ষে মেম্বর প্রার্থীর কর্মী নিহত হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেল।
সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হলেও ভোটকেন্দ্রের কোথাও কোথাও যথেষ্ট ভিড় দেখা গেছে। বিশেষ করে নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল অপ্রত্যাশিত রকমের বেশি। তবে, কোথাও সামাজিক দূরত্ব, মাস্কের ব্যবহার বা স্যনিটাইজেশন ব্যবস্থা দেখা যায়নি।
সরজমিন, বরিশাল সদরের টুঙ্গিবাড়িয়া, বারইকাঠী, পতাং ও জাগুয়ার ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করে উৎসব আমেজ লক্ষ্য করা গেছে। ৮০ প্রায় বয়সের নারীকেও দেখা গেছে পতাং ভোটকেন্দ্রে।
বেলা বারটায় বরিশাল বিভাগের সর্বদক্ষিণের উপজেলা মনপুরা থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার সংবাদ এলো। সেখানের হাজিরহাট ও দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সকাল সোয়া দশটা পর্যন্ত পাঁচ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন রিটার্নিং অফিসার সঞ্জীব কুমার সরকার। তিনি জানান, বৃষ্টির কারণে ভোটার উপস্থিতি কম। তবে পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর।
এর কিছু পরেই এলো দুঃসংবাদ। এখানেও চরফ্যাশনে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, গুলিতে একজন নিহত হবার সংবাদ লিখতে হলো।
এরপর বেলা তিনটা ত্রিশের মধ্যে বরগুনা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি থেকে ভোট বর্জন ও বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ সংবাদ আসতে শুরু করেছে। বরিশালের স্থানীয় অনলাইন পত্রিকা তা সংগে সংগে প্রকাশ করছে। যার শিরোনাম হয়েছে – পিরোজপুরে নৌকার কর্মীদের হামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ আহত ১০, বরগুনায় নির্বাচনে কারচুপি অভিযোগে এনে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ভোট বর্জন, বাউফলে ভোটকেন্দ্র দখলের চেষ্টা, চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ আহত ১০, হিজলায় খাগেরচর ভোটকেন্দ্র দখল নিয়ে আ’লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের সংঘর্ষ: পুলিশসহ আহত ১০ ইত্যাদি।
কিন্তু সদরের টুঙ্গিবাড়িয়ার ৯টি ভোট কেন্দ্রে ও জগুয়া ইউপিতে নারী পুরুষের সতঃস্ফুর্ত উপস্থিতি সহিংসতার ঐ ঘটনাগুলোকে ম্লান করে দেয়।
বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশন কার্যালয় থেকে জানা যায়, পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, পটুয়াখালী জেলার বাউফল ও বরিশালের বাকেরগঞ্জের দাড়িয়াল ইউনিয়নে কেন্দ্রের বাইরে বিচ্ছিন্ন সংঘর্র্ষের ঘটনা ঘটেছে। তবে, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
জেলার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘সকালে বৃষ্টির কারণে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। সময় যত বাড়ছে ভোটার উপস্থিতিও ততোই বেড়েছে। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিচ্ছেন, কোথাও কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আশা করছি সুন্দরভাবে ভোট গ্রহণ শেষ হবে।
চারটায় ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। ব্যস্ততার কারণে এখন আর কোনো নির্বাচন কর্মকর্তা ফোন ধরতে পারবেন বলে মনে হয় না। তারপরও নিজ প্রতিবেদন লেখার ফাঁকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নুরুল আমিন বিকাল চারটা ত্রিশ মিনিটে জানালেন। অধিকাংশ স্থানেই ভোট গ্রহন শেষ হয়েছে। কোথাও কোথাও ভোটারের উপস্থিতি থাকায় এখনো ভোট গ্রহন চলছে। কিছু বিচ্ছিন্ন সহিংসতার সংবাদ ও অভিযোগ আমাদের কানেও এসেছে তবে ভোটারদের সতঃফুর্ত উপস্থিতিতে তা ম্লান হয়ে গেছে।
তার এ বক্তব্যকে ম্লান করে দিয়ে গৌরনদীতে আরো একজনের নিহত সংবাদ। এবার বিজয় উৎসবে বোমা হামলায় প্রাণ দিলেন বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থক আবু বকর ফকির (২৭)। এতেও কমপক্ষে ১০ জন আহত হন।