বাংলা সাহিত্যের বিরল প্রতিভা সৈয়দ মুজতবা আলী বাঙ্গালীর গ্রন্থ-বিমুখতা নিয়ে নানা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করেছেন। বই পাঠের সুফল সম্পর্কেও অবহিত করেছেন পাঠকদের। আজ প্রায় এক শতাব্দী পরেও মুজতবা আলীর সেই হতাশার সুরই যেন প্রতিধ্বনিত হয় বর্তমান লেখক-প্রকাশকদের কণ্ঠে। লেখক ও প্রকাশক বলছেন – পাঠক নেই। আর পাঠকরা বলছেন – ভালো লেখক নেই বাংলাদেশে, তার উপর বইয়ের দাম সাধ্যের সীমানার অনেক বাইরে। লেখক-প্রকাশক এবং পাঠকের এই বিপরীতমুখী অবস্থান সত্ত্বেও এই বাংলাদেশেই বই লিখে কোটিপতি হয়েছেন এমন লেখকের উদাহরণও রয়েছে। তাহলে `পাঠক কমে যাচ্ছে’ বলে কেন এই অভিযোগ? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই বইবাজারে লেখক-প্রকাশক ও পাঠকদের মুখোমুখি হয়ে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন আমাদের প্রতিবেদক সদানন্দ সরকার।
বইয়ের দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। যারা নিয়মিত বইয়ের পাঠক তাদের জন্য এটা অনেক বড় সমস্যা। এ অভিযোগ প্রায় সব পাঠকেরই। তারা বলেন – যাদের বইয়ের নেশা, তাদের অন্য বিনোদনে বাঁধা যায় না। ধনীরা নয়, বইয়ের পাঠক হিসেবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করতে হবে। জেলা শহরে এমন অনেক পাঠক আছেন যারা হুমায়ুন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন ও আনিসুল হক ছাড়াও যে দেশে আরো অনেক লেখক আছেন এটাই জানেন না। ‘আগুনপাখী’ উপন্যাসটি আনন্দবাজার পুরস্কার পাবার পর দেশীয় মিডিয়ায় সংবাদ দেখে অনেকে কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের লেখনী শক্তির পরিচয় জেনেছেন বলে স্বীকার করলেন তারা। তবে সেলিনা হোসেন বা নাসরীন জাহান এর নামও অনেকে শোনেননি, কেউ কেউ তাদেও লেখা পড়েছেন কিন্তু কিছু বোঝেন নি বলেও অভিযোগ পাঠকের। তাদেরকে পাঠকের সাথে পরিচয় না করানো, এটা প্রকাশকদেরই ব্যর্থতা বলে জানালেন পাঠকদের কেউ কেউ।
পাঠকদের সাথে একমত পোষণ করে আমাদের লেখকদের কেউ কেউ বলছেন, অনেক প্রকাশক আছেন যারা নিয়মিত সরকারী বিভিন্ন টেন্ডারে বই বিক্রি করার সুযোগ পান। তাদের প্রকাশিত বই কোন পাঠকের হাতে পৌঁছল কিনা, পাঠক কিনতে পারল কিনা, এ নিয়ে তাদের কোন ভাবনা নেই। সরকারের কাছে বই বিক্রি করে তারা লাভবান হলেন কিনা এটাই তাদের প্রধান বিবেচ্য। যে কারণে তারা ইচ্ছে করে বইয়ের দাম বেশি রাখেন। একজন নতুন লেখককে এভাবে শুরুতেই মেরে ফেলেন অনেক প্রকাশক।
আবার কেউ কেউ বলেন, অনেক ভালো লেখক সম্পর্কে কিছুই জানেন না পাঠক। মিডিয়ায় যাদের প্রচার আছে পাঠক তাদের সম্পর্কেই আগ্রহী। এ বিষয়ে একমত প্রকাশকরাও। তারা বলেন, পাঠকরা এখন মিডিয়ামুখী। এখন আর তারা পড়তে চায় না। যে পাঠক একসময় বই পড়ে সময় কাটাতেন, এখন সে স্যাটেলাইটে বিভিন্ন বিনোদন দেখে সময় কাটায়। বই পড়ার সময় এখনকার তরুণদের তো নেই-ই। প্রকাশকরা আরো বলেন, যারা বলছেন প্রকাশকরা সরকারের কাছে বই বিক্রি করতে ব্যস্ত, তারা ভুল জানেন, সরকার কয় টাকার বই কেনে? প্রকাশক তো ঘাড়ে করে বই বিক্রি করতে পারে না। তাদের যা করার তা ই করছে। বইতো খুব লাভজনক ব্যবসা নয় যে অন্য পণ্যের মতো মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেয়া যায়।
দেশীয় সাহিত্য সম্পর্কে মতামত জানাতে গিয়ে ‘দেশে কোনো ভালো লেখক নেই’, বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রীরা মুখের উপর এভাবেই কথাটি শুনিয়ে দিলেন। আবার কেউ কেউ বললেন, অনেকে আছেন ভালো লেখেন কিন্তু তাদের উপস্থাপনা ভঙ্গি ভালো লাগে না, সবচেয়ে বড় কথা বইয়ের দাম আমাদের দেশে এত বেড়েছে যে বই কিনে এখন আর আমাদের দ্বারা পড়া সম্ভব হচ্ছে না। লাইব্রেরীতে গিয়েতো গল্প-উপন্যাস পড়ার মজা থাকে না।
গত ১৫ই মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পাঠকক্ষের সম্মুখে অপেক্ষমান জার্নালিজম বিভাগের শেষবর্ষের ফারাহ্ তানাজি ও ব্রতী, ফিলোসফি বিভাগের পলাশ এবং ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনশীপ বিভাগের মাস্টার্স শেষবর্ষের ছাত্র শহীদুল ইসলাম অকপটে জানালেন তাদের প্রতিক্রিয়া।
ফারাহ্ তানজি
পাঠ্য বইয়ের বাইরে আমার খুব একটা পড়া হয়ে ওঠে না। শরৎচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বঙ্কিম চন্দ্র ছাড়া আর কারো বই পড়া হয়নি। দেশীয় কোনো লেখকের বই ভালো লাগে না।
ব্রতী
ছোটবেলা হুমায়ুন আহমেদ, মুহাম্মদ জাফর ইকবালের বই খুব পড়তাম। এখনো কিছু পড়ি সেটা অভ্যাস বসে। পড়ার পর কোন স্বাদ পাই না কিন্তু পড়ি। তবে বেশি পড়া হয় ভারতীয় বই। বাণী বসু, তিলোত্তমা মজুমদার, শীর্ষেন্দুর বই পড়তে খুবই ভালো লাগে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কিছু অনুবাদও ভালো লাগে। তবে আমাদের দেশের লেখকরা যে মানসম্পন্ন লেখা লেখেন না তা কিন্তু নয়, যেমন সৈয়দ শামসুল হক, নাসরীন জাহান খুব মানসম্পন্ন লেখেন কিন্তু তার উপস্থাপনা ভংগিটা আমার জন্য সহজবোধ্য নয়। তাই আমি পড়ি না। দেশীয় আর কারো বই পড়তে ভালোও লাগে না।
দেশীয় আর দু’একজন লেখক সম্পর্কে বলেন না? যেমন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, শওকত ওসমান, শওকত আলী, হুমায়ুন আজাদ কিম্বা হাসান আজিজুল হক? ব্রতীকে এ প্রশ্ন করা হলে তিনি যেন একটু বিরক্ত হলেন তারপর হুমায়ুন আজাদের বই সম্পর্কে বললেন, ওনার কবিতা পড়েছি ভালো লেগেছে কিন্তু নারী আর ঐ যে কী বাজে। হাসান আজিজুল হক খুব ভালো লেখেন শুনেছি, তার আগুনপাখীটা পড়তে গিয়ে কিছু বুঝিনি। তাই আর পড়া হয়নি। আসলে ভালো বই পেলে আমরা যারা পড়তে ভালোবাসি তারা দামের দিকে তাকাই না। যদিও আমাদের দেশের প্রকাশকদের প্রকাশিত বইয়ের গুণগত মান খুব ভালো নয়, তারপরও তারা মূল্যটা অনেক বেশিই রাখেন।
পলাশ
বেশি রাখবে না কেন? ঐ বইমেলার সময়ই তাদের ব্যবসা। একশ’ বই বিক্রী করেই এক বছরের খরচ পুশিয়ে নিতে চান তারা। আমি ভাই, সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত অনুবাদ থ্রীলারই পড়ি। এটাই আমার খুব প্রিয়। কখনো সুনীল ও বুদ্ধদেব বসু’র বইও পড়ি, দেশীয় অন্যকোন বই পড়ার সময়ও নেই।
শহীদুল ইসলাম
দেশে কোন ভালো লেখকই নেই। মাঝখানে আনিসুল হকের বই ভালো লেগেছিল, এখন আর লাগে না। মনে হয় তিনি বাচালতা করছেন।
এদিকে শাহাবাগের গণগ্রন্থাগারে পড়তে আসা মিরপুর কাজীপাড়ার বাসিন্দা মোঃ ইউ আকন্দ সেলিম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান থেকে পাস কওে চাকুরী অনুসন্ধানী ছাত্র ইয়াছিন আলী আসাদ জানান, আমরা সুযোগ পেলে সব ধরনের বই পড়ার চেষ্টা করি। ঘরে বসেও পড়ি আবার লাইব্রেরীতে এসেও পড়ি। তবে দেশের মধ্যে হুমায়ুন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন ও আনিসুল হক এবং দেশের বাইরে মার্ক টোয়েন, ম্যাক্সিম গোর্কি, শীষেন্দু, বানী বসু, সমরেশ মজুমদার, অরুন্ধতী ইত্যাদি বই বেশি পড়া হয়। সম্প্রতী সাহিত্যে নোবেল পেলেন কানাডিয়ান লেখিকা মুনরোর গল্প পড়লাম, ভালো লেগেছে। সেলিম বললেন, হুমায়ুন স্যারতো আর নেই। এখন আসলে দেশের বাইরের বইটাই বেশি পড়া হয়।
দেশীয় দু’একজন লেখক সম্পর্কে বলেন না? যেমন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, শওকত ওসমান, শওকত আলী, হুমায়ুন আজাদ কিম্বা হাসান আজিজুল হক এদের লেখার মান বা ধরণ আপনার কেমন লাগে? তাদের এ প্রশ্ন করা হলে দু’জনেই যেন খুব অবাক হলেন। মনে হল এ নাম তারা এই প্রথম শুনেছেন। মৃদু হেসে আসাদ বললেন – আসলে হুমায়ুন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন ও আনিসুল হক ছাড়াও যে দেশে আর কোন লেখক আছেন, এটাই আমরা অনেকে জানি না। হাসান আজিজুল হকের নামটা অবশ্য ইদানিং শুনছি। তাঁর কী একটা বই যেন আনন্দ পুরস্কার পেয়েছে। মিডিয়ায় লেখালেখি হয়েছে তাই জানি।
মাহাবুবে রাব্বানী
এ সময়ের একজন সচেতন পাঠক, কবি ও রম্য লেখক মাহাবুবে রাব্বানী বলেন, আমি একজন নিয়মিত পাঠক। দেশি-বিদেশী সব ধরনের লেখকের লেখনীর সাথে আমার সৌহার্দ্য রয়েছে। সবার লেখাই কম বেশি আমি পড়ি। আমার মতে, প্রকাশকদের উচিৎ পাঠক বৃদ্ধির চেষ্টা করা। প্রথমেই বইয়ের মূল্য কমাতে হবে। নিম্নবিত্ত এবং ছাত্র-ছাত্রীদের কম দামে ভালো বই পড়ার সুযোগ দিতে হবে। পাঠকের কাছে বই পৌঁছাতে হবে। জেলায় জেলায় বইমেলা করে পাঠকদের বইয়ের কাছে টেনে আনতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সাহায্য নিন, তাদের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরীতে আপনাদের প্রকাশিত সৃজনশীল বইগুলো তুলে দিন।
রাব্বানী আরো বলেন, এটা সত্যি যে অনেক পাঠক এখন মিডিয়া নির্ভর। আমি ইন্টারনেটে ক্লিক করে ভালো বইয়ের তালিকা সংগ্রহ করি। আন্তর্জাতিক বই বাজারের লেটেস্ট বইটি আমি ঘরে বসেই পড়ে ফেলতে পারছি। কিন্তু এ সামর্থ ক’জনের আছে? কতজন পাঠক স্যাটেলাইট নির্ভর হয়ে পাঠ থেকে সরে গেছেন? যাদের বইয়ের নেশা, তাদের অন্য বিনোদনে বাঁধা যায় না। এটা প্রকাশকদের বুঝতে হবে। ধনীরা নয়, বইয়ের পাঠক হিসেবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করুন। প্রকাশকদের প্রতি এটাই আমার অনুরোধ। আর আমাদের লেখকদের অনুরোধ করবো, দয়া করে আপনারা বিদেশী সাহিত্যের অনুকরণ বন্ধ করে, নোবেল পাওয়ার লোভটা সংবরণ করে, আমাদের লোকজ সাহিত্যের অনুসরণ করুণ। ঠকবেন না। পল্লী কবি জসিম উদ্দীনের প্রতিটি কবিতায় আপনার একটি উপন্যাস লুকিয়ে আছে।
লেখক-প্রকাশক ও পাঠকদের এ বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়ে এ সময়ের কয়েকজন লেখকের মুখোমুখি হলে তারা বলেন-
যতীন সরকার
লোক গবেষক, সাহিত্যিক এবং রাজনীতিবিদ যতীন সরকার বলেন, পাঠক নেই কথাটি ঠিক নয়। তবে পাঠক কমে যাচ্ছে কথাটি ঠিক। কেননা এখনকার তরুণদের মধ্যে পাঠস্পৃহা অনেক কম। আমাকে যেমন আমার ঠাকুরদা বাংলা অক্ষরগুলোর সাথে পরিচয় করাতে করাতে বইয়ের রাজ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে গেছেন এবং আজও আমি বইয়ের রাজ্য থেকে বের হতে পারিনি এমনটা এখন আর ঘটে না। কারণ এখনকার ছেলে-মেয়েরা ঠাকুরদা শব্দের সাথেই পরিচিত কিনা আমার সন্দেহ আছে। এখনকার তরুণরা স্যাটেলাইট নির্ভর। পড়ার চেয়ে দেখতে বেশি পছন্দ করেন তারা। কিন্তু বই পড়ার স্বাদ, যে একবার পেয়েছে সেই বুঝবে। তাই আমি বলবো পাঠক বৃদ্ধিতে মিডিয়ার ভূমিকা অপরিসীম। মিডিয়াই পারে তরুণদের এই স্বাদ ফিরিয়ে দিতে। অনেক ভালো প্রকাশনী রয়েছে, যারা ভালো বই করেন, কিন্তু তাদের প্রচারণাটা একটু কম। মিডিয়া কভারেজ পেলে তাদের বই সম্পর্কে পাঠক জানতে পারবে। বইয়ের ব্যবসা এতোটা লাভজনক নয় যে, প্রকাশকরা মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিতে পারেন। এছাড়া জেলায় জেলায় এখন সরকারীভাবে বইমেলার আয়োজন করা হচ্ছে, সঠিকভাবে মিডিয়া কভারেজ পেলে এই মেলাগুলোতেই পাঠক বাড়বে।
আতা সরকার
এ সময়ের একজন সামাজিক দায়বদ্ধ লেখক আতা সরকার বলেন, এ সময়ের পাঠক বিশেষ করে তরুণরা যাদের বই পড়েন তাদের বেশিরভাগই মূলধারার লেখক না। আমাদের সময় যারা জনপ্রিয় লেখক ছিলেন – নিমাই ভট্টাচার্য, নীহাররঞ্জন গুপ্ত, আশুতোষ মূখার্জী তারা খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। কিন্তু তারা মূলধারার লেখক ছিলেন না সেইভাবে। মূলধারার লেখকরা প্রচারের বৈগুন্যে সবসময় একটু পিছনে থাকেন। এটাই স্বাভাবিক। একই সময় আমাদের দেশে খুব জনপ্রিয় ছিল রোমেনা আফাজের ‘দস্যু বনহুর’। সেবার অনুবাদ ‘মাসুদ রানা’ এখনো জনপ্রিয়। এ ধরণের সস্তা জনপ্রিয়তা সবসময়ই থাকে। মূলধারার লেখক সম্পর্কে পাঠকের অবহিতি প্রচারগত কারণে কমই থাকে। কিন্তু সাহিত্যে টিকে থাকে মূলধারার লেখকরাই। এদিক থেকে আমার মনে হয় মূলধারার লেখকদের বই যারা প্রকাশ করেন, সেই প্রকাশকরাই মূলত পাঠকের সাথে লেখকের পরিচয় করিয়ে দেয়ার ব্যাপারে সিরিয়াস না। সবচাইতে প্রধান বিষয় হচ্ছে আমাদের প্রকাশকরা পাঠকদের কাছে বই পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে, বই বাজারজাত করার ক্ষেত্রে আধুনিক প্রক্রিয়াগুলো ব্যবহার করেন না। আমি সাম্প্রতিক কালে প্রকাশকদের যে প্রবণতা লক্ষ করেছি তা হচ্ছে – তারা বই প্রকাশ করে শুধু মাত্র সরকারী বড় সাপ্লাই ধরার জন্য। যে কারণে তারা পাঠকের নাগালের বাইরে বইয়ের দাম রাখেন, এই আশায় যে এতে সরকারীভাবে বিক্রি করতে গেলে তারা ভালো দাম পাবেন, এখানে হয়তো আরো কিছু লুকানো ব্যাপার রয়েছে। যে কারণে প্রকাশকদের এ্যম্বিশনই হচ্ছে সরকারীভাবে বই বিক্রী করা। এতে করে বই নিয়ে সরকারের যে একটা স্বদিচ্ছা, সেটা মাঠে মারা যাচ্ছে।
নাসরীন জাহান
জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক নাসরিন জাহান বলেন, পাঠক লেখক ও প্রকাশক এ তিনের সমন্বয় প্রয়োজন। পাঠক কী চায়, সেটা যেমন লেখককে বুঝতে হয়, ঠিক তেমনি প্রকাশকদেরও বুঝতে হবে। পাঠকের কাছে বইটি পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব তো প্রকাশকই নিচ্ছেন। এখন এ কাজটা প্রকাশক কিভাবে করবেন সেটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। আমরা একজন প্রকাশকের উপর বিশ্বাস করে, ভরসা করে আমাদের লেখা দেই। সেটা কত কপি বই বজারে এল, কত কপি বিক্রি হল কখনো তা জানতে যাই না, প্রকাশক যা বলেন বিশ্বাস করতে হয়। এখানে প্রকাশক আর লেখকের মাঝে একটা আন্তরিকতার সম্পর্ক থাকে বলেই বিশ্বাসটা তৈরি হয়। তেমনি পাঠকের বিশ্বাস তার লেখকের প্রতি প্রকৃতিগত। এ বিশ্বাসটা প্রকাশককেও অর্জন করতে হবে। তবে আমার মতে, প্রকাশককে আধুনিক বিক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করতেই হবে। বর্তমান বাজার প্রচারের বাজার। যার প্রচার যত বেশি সেই তত লাভবান হচ্ছেন। এটা তো প্রমাণিত। তাদের সংগঠন রয়েছে, এ সংগঠন থেকে মিডিয়াওয়ালাদের কাছে তারা বিজ্ঞাপনের ছাড় চেয়ে আবেদন করতে পারেন। অযথা পাঠককে দোষারোপ করে কী লাভ? কলেজ স্টুডেন্ট আর বেকারদের জন্য বইয়ের দাম তো আসলেই বাড়তি। সৃজনশীল বইয়ের পাঠক তো এরাই। চাকুরে বা ব্যবসায়ীরা কি বই পড়ার সময় পান? তবে আশার কথা এই যে, অন্যপ্রকাশ, প্রথমা, পাঠক সমাবেশ, চিটাগাং এর বাতীঘর এরা আধুনিক প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে। যা হয়ত আগামিতে অন্যদের পথপ্রদর্শক হবে।
রেজাউদ্দিন স্টালিন
এ সময়ের প্রতিশ্র“তিশীল কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন বলেন, আমি বলবো বর্তমান সময়ের পাঠকরা বই পড়তে চায়। বই পড়ার সদিচ্ছা তাদের আছে। কিন্তু বর্তমানে বইয়ের যে হারে মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে তাতে পাঠকের বই কেনার আগ্রহ নষ্ট হচ্ছে। কারণ আমাদের পাঠক কারা? স্বাভাবিক ভাবেই কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রীরা। চাকুরীজীবী বা আয়ক্ষম লোকের মধ্যে পাঠক কম। কারণ যারা আয় রোজগার করেন, তাদের জীবীকার জন্য ছুটতে হয়, বই পড়ার মত সময় তাদের হাতে খুব কম। তাছাড়া আমাদের দেশের পাঠকদের প্রবণতাই হচ্ছে ছাত্র জীবন শেষ, মানে তাদের আর পড়ার প্রয়োজন নেই। যে কারণে ছাত্র-ছাত্রীরাই আমাদের নিয়মিত পাঠক। কিন্তু বইয়ের মূল্য বৃদ্ধির কারণে এদের অনেকেই আর বই কেনার সামর্থ ধরে রাখতে পারেননি। যে কারণে পাঠক বাড়ছে না। আর একটা সমস্যা হচ্ছে বইয়ের সহজ প্রাপ্তি। যে বইটি খুঁজছি সেটি হাতের কাছে পাচ্ছি না। এটাও পাঠক হারাবার কারণ। আর এ জন্য দায়ী আমাদের দেশের প্রকাশকরা। তারা বাণিজ্যিক বইয়ের প্রকাশনায় ব্যস্ত হয়ে ভালো বইয়ের প্রতি অবিচার করেন, বিভিন্নভাবে। তবে তারা যে ভালো বই করেন না তা না। তবে সৃজনশীল বইয়ের প্রকাশনীর প্রচারণাটা একটু কম। এ জন্য মিডিয়া কভারেজ নির্ভর হলে চলবে না। জেলায় জেলায় বইমেলা করতে হবে, সে মেলায় বইটা পৌঁছাতে হবে। এতে করে পাঠক বাড়বে। যেটা ২১ শের বইমেলায় দেখা যায়।
প্রতিবছর বইমেলা এলেই ব্যস্ত হয়ে ওঠেন লেখক ও প্রকাশক। ব্যস্ত হয়ে পরে বাংলা বাজারের প্রকাশনা পাড়ার প্রিন্টার, বাইন্ডার ও কাগজওয়ালারা। সাধারণত ডিসেম্বরের জাতীয় গ্রন্থমেলা এবং ২১ শে বইমেলাকে ঘিরেই তাদের এই ব্যস্ততা শুরু হয়। চলতি বছর এ দৃশ্যে কিছুটা ভাটা পড়েছে বলে মনে হলো। যদিও এ বছর ডিসেম্বরের ১২ থেকে ২২ আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন ও বইমেলা করতে যাচ্ছে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইতোমধ্যেই চলছে এই উদ্যোগ আযোজন। ডিসেম্বরের জাতীয় গ্রন্তমেলাকে ঘীরে গত সেপ্টেম্বর থেকেই প্রেসগুলোতে ব্যস্ততা কিছুটা শুরু হয়ে গেছে বলে জানালেন কারুকর প্রিন্টার্স ও শিল্পশ্রি প্রকাশনীর সত্বাধিকারী সালাম খোকন। তিনি বলেন, জনপ্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদের অনুপস্থিতি এবার প্রচ-ভাবে নাড়া দিয়েছে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে। তাই ছাপখানায় এবার চাপ কম।
বাংলাবাজার ঘুরে দেখা গেল বইয়ের প্রকাশনা, বইমেলায় স্টল বরাদ্দ – এ সব নিয়ে প্রকাশকদের ব্যস্ততাও যেন এবার অনেকটা কম। তারপরও ব্যস্ততা আছে, ডিসেম্বরের জাতীয় গ্রন্থমেলা এবং একুশের বইমেলার শেষদিনে শেষ হয় প্রকাশকদের এই ব্যস্ততা। চলতি বছর ২১ শে বইমেলা ছিল অন্যান্য বছরগুলোর তুলনায় অনেক ব্যবসা সফল। প্রায় সব ধরণের বই-ই বিক্রি হয়েছে কম বেশি। তবে হঠাৎ করে কাগজের মূল্য বেড়ে যাওয়ার প্রভাবে বইয়ের দামও বেড়েছে, যে কারণে বইমেলা থেকেই অনেক পাঠক আপত্তি তুলে আসছেন যে, ‘বইয়ের দাম অনেক বেশি ধার্য হয়েছে’। জাতীয় দৈনিকগুলোতে এ নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে এবং বিশেষজ্ঞরা বার বার বলেছেন- ‘এতে অনেক পাঠক হারাতে হবে’। একুশের বইমেলায় প্রতি ১৬ পৃষ্ঠার জন্য (১ ফর্মা) মূল্য নির্ধারণ হয়েছে ২৫ টাকা। অর্থাৎ ৬ ফর্মাা বা ৯৬ পৃষ্ঠার একটি বই বিক্রয় মূল্য ধার্য হয়েছে ১৫০ টাকা।
তারপরও প্রকাশকরা বলছেন, বইয়ের দাম মোটেও বেশি নয়। আন্তর্জাতিক বাজারে কাগজসহ প্রকাশনা সংক্রান্ত দ্রব্যের দাম যে হারে বেড়েছে, তার সাথে সংগতি রেখেই বইয়ের দাম বেড়েছে এবং যতটুকু বেড়েছে তা পাঠকের সাধ্যের বাইরে নয়। এ নিয়ে প্রকাশকদের মুখোমুখি হলে তারা বলেন
মহিউদ্দিন আহমদ
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি এবং ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল)-এর সত্ত্বাধিকারী মহিউদ্দিন আহমদ জানালেন, বইয়ের মূল্যবৃদ্ধি সঙ্গত কারণেই হয়েছে। তবে স্কুল কলেজের বইয়ের ক্ষেত্রে কিছু অসামঞ্জস্য আছে। এর কারণ আমাদের সমাজের সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, স্কুলগুলোর ব্যবসায়িক মনেবৃত্তি, বাজার ব্যবস্থা এবং বিষয়টি অনুধাবন ও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবার ব্যাপারে অভিভাবকদের নিষ্ক্রীয়তা।
তিনি আরও জানান, আমাদের সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির বর্তমানে প্রায় ৫০ জন সদস্য রয়েছে, যারা প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বইবাজার থেকে দুর্নীতি দূর করতে। পাইরেসি বন্ধ করতে। যারা বলেন প্রকাশকরা সরকারী সাপ্লাই ধরতে ব্যস্ত, পাঠকের কাছে বই পৌঁছাতে চায় না। তারা সঠিক বলছেন না। সরকার কত টাকার বই কেনে? পাঠকের কাছে প্রকাশক কীভাবে পৌঁছাবে? বইয়ের লাভ দিয়েতো বিজ্ঞাপন দেয়া সম্ভব নয়। প্রকাশকরা কি তবে ঘাড়ে করে সারা দেশে বই ফেরী করে বেড়াবে? প্রকাশকদের পক্ষে যেটা সম্ভব হয়, সেটাই তারা করে। পাঠক সৃষ্টির মাধ্যমে চাহিদা সৃষ্টি, কোন প্রকাশক বা লেখকের একার ব্যাপার নয়। পুরো সমাজটাকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমি এ ব্যাপারে জাতীয় গ্রন্থনীতির প্রতি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো।
আহমেদ মাহমুদুল হক
এ প্রসঙ্গে মাওলা ব্রাদার্সের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ মাহমুদুল হক বলেন, বইয়ের দাম বেশি, পাঠকের এ অভিযোগ কিছুটা সত্যি। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দিকে যদি দেখি, তাদের তুলনায় আমাদের বইয়ের মান কোন অংশে খারাপ নয় এবং দামও খুব বেশি নয়। যেখানে সারা বিশ্বে কাগজের দাম বেড়েছে, পাশাপাশি বেড়েছে প্রিন্টিং ম্যাটারিয়ালস্- কালি, রং, প্লেট তেরি সরঞ্জাম ইত্যাদির দাম। সেখানেতো আমাদের কিছু করার নেই। কাগজের দাম কমলে বইয়ের দামও কমবে। আমরা এখন ফর্মা প্রতি (১৬ পাতা) বইয়ের মূল্য নির্ধারণ করেছি ২৫ টাকা।
শাহিদুল ইসলাম বিজু
পাঠক সমাবেশের সত্ত্বাধিকারী শাহিদুল ইসলাম বিজু জানালেন, আমরা যারা সৃজনশীল বইয়ের প্রকাশক তারাতো মিডিয়ার হাতে জিম্মী হয়ে আছি। একজন পাঠক সকালে ঘুম থেকে উঠে যে বইটির সংবাদ জানতে পারে বা দেখতে পায়, সে বইটির প্রতি তার একটা দূর্বলতা তৈরি হয়। আমাদের দেশে অনেক ভালো ভালো লেখক আছেন যাদের নামও পাঠক জানেন না। মিডিয়া যাকে ওঠায়, পাঠক তার কথাই জানতে পারে। মিডিয়ার কারণেই হাতে গোণা ক’জন লেখক কোটিপতি হচ্ছেন। অথচ একজন লেখক যিনি বহু কষ্টে টাকা জোগার করে নিজের টাকায় একটা বই প্রকাশ করেন, তার কাছে তো আর মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেয়ার মত টাকা থাকে না। বইটি বাজারে আনতেই যে তিনি নিঃস্ব হয়েছেন। এমনাবস্থায় যদি তার বইটি ভালো হয়, তাহলে মিডিয়ারই উচিৎ তাকে কভারেজ দেওয়া। উন্নত বিশ্বে প্রকাশকরা মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করছে, আর আমরা মিডিয়া দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছি। কারণ, আমাদের প্রকাশকদের মধ্যে কোন একতা নেই, তাদের বেশিরভাগই ঠিকাদার শ্রেণীর লোক। হাতে গোনা কয়েকজন আছেন যারা নেশা থেকে প্রকাশক হয়ে এখন কপাল চাপড়াচ্ছেন। পাঠক নেই বা পাঠক কমে যাচ্ছে কথাটা ঠিক নয়, বরং আমরাই পাঠকদের দূরে ঠেলে দিচ্ছি, মিডিয়ার মাধ্যমে হাল্কা মানের লেখকদের প্রাধান্য দিয়ে।
ওসমান গণি
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং আগামী প্রকাশনীর পরিচালক ওসমান গণি বলেন, শুধু যে বইমেলাকে কেন্দ্র করেই বই প্রকাশিত হয় তা কিন্তু সঠিক নয়। সারাবছর ধরেই কম বেশি বইয়ের প্রকাশনা চলছে। তবে একুশের বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। কারণ এ সময় বইয়ের রিটার্নটা ভালো পাওয়া যায়, যা জাতীয় গ্রন্থমেলাতেও পাওয়া যায় না। আমার মতে, জেলা শহরের পাড়ায় পাড়ায় বছরের সবসময়ই বইমেলার আয়োজন হলে পাঠক বাড়বে। পাঠ-অভ্যাস তৈরি হবে। পাঠ্যবইয়ের বাইরে গড়ে প্রতিবছর প্রকাশিত গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধসহ অনুবাদ বা অন্যান্য সাহিত্য বইয়ের সংখ্যা প্রায় হাজার খানেক। বইমেলা ছাড়া এ সব বইয়ের বিক্রি নেই বলতে গেলে।
পরিশেষে বলতে হয়, এখানে একটি জায়গায় পাঠক, লেখক ও প্রকাশকরা ঐক্যমত্যে পৌঁছালেন। তারা সবাই একযোগে মিডিয়ায় বইয়ের বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য ৫০ ভাগ ছাড় দেয়ার দাবী জানালেন। পাঠকরা তাদের সাক্ষাৎকার অংশে যুক্তি দিয়েছেন যে, হুমায়ুন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন ও আনিসুল হক ছাড়াও যে দেশে আর কোন লেখক আছেন এটাই অনেকে জানতেন না। ‘আগুনপাখী’ উপন্যাসটি আনন্দবাজার পুরস্কার পাবার পর দেশীয় মিডিয়ায় সংবাদ দেখে অনেকে হাসান আজিজুল হকের লেখনী শক্তির পরিচয় জেনেছেন। তাদের মতে, এ জন্য মিডিয়ার উচিৎ সব লেখকদের কভারেজ দেয়া এবং সব লেখকেরই বইয়ের জন্য ৫০ ভাগ ছাড় দেয়া। অন্যদিকে একটু ঘুরিয়ে একইকথা বলেছেন লেখকরাও। তাদের দাবী, পাঠকবৃদ্ধিতে মিডিয়ার ভূমিকা অপরিসীম। অনেক ভালো প্রকাশনী রয়েছে যারা ভালো বই করেন, কিন্তু তাদের প্রচারণাটা একটু কম। মিডিয়া কভারেজ পেলে তাদের বই সম্পর্কে পাঠক জানতে পারবে। বইয়ের ব্যবসা এতোটা লাভজনক নয় যে, প্রকাশকরা মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিতে পারেন। আর প্রকাশকরা তো বরাবরই বইয়ের বিজ্ঞাপনের জন্য শুধু বইমেলার সময় নয়, সব সময় ৫০ ভাগ ছাড়ের দাবী জানিয়ে আসছেন। তাদের এই দাবীর মুখেই মূলত ২১ শে বইমেলার সময় জাতীয় দৈনিকগুলোতে বইয়ের বিজ্ঞাপনে কিছুটা ছাড় দেয়া হয়। শুধু বইমেলায় নয় সারাবছরই বইয়ের বিজ্ঞাপনে ৫০ ভাগ ছাড় দেয়া হোক এ দাবী আমাদেরও। যদিও তাদের এই দাবী ওঠার আগেই ‘সাহিত্য বাজার’ বইয়ের বিজ্ঞাপনে ৫০ ভাগ ছাড়ের প্রস্তাব রেখে প্রকাশকদের দ্বারে বিজ্ঞাপন চেয়ে ঘুরেছে। কিন্তু কোন প্রকাশকের সহানুভূতি অর্জন করতে পারেনি। আজ পর্যন্ত পায়নি কোন প্রকাশনী বা বইয়ের বিজ্ঞাপন।