পরিব্রাজকের প্রতীক্ষা
অরুণিমা নাসরীন
রুখুসুখু কেশের শীর্ণসিঁথি পল্লবিত হয় তরল সুগন্ধি তেলে
উনুনের কামনার পীচবর্ণ জিহবা
তুষ্ট হয় শুকনো কড়িকাঠে
আ! আর্তবতী লবণকণ্যার নদীর স্ফটিকের ঘাঘরা
সংগুপ্ত হয় মাটির গহীন শব্দে
অবিরাম ধেয়ে আসে রাশি-রাশি তরঙ্গ-উচ্ছ্বাস –
পুরাতনী ঢেউ আছন্ন করে রাখে, শুধু আমাকেই নয়
সে কথা বিপুলা এ পৃথিবীও জেনেছিল ঢের।
দারিদ্রে পুড়ে পুড়েও, তথাপি, দূর্গা দিদিদের
দীর্ঘনেত্র পূর্ণ হয় অলৌকিক সেই পুঁতিরমালায়
আর অপুর মার্বেল ভর্তি ঘুমন্ত পকেটের গল্পটা খুলে যায়
ট্রেনের শেষ বাঁশীর ডাকে।
কারু-কারু কাঁটা-জঙ্গল কত জঙ্গমেও ভিজে-কাদায়
জলের স্ফটিক ধুয়ে চুয়ে পরিশ্রুত আলোর উপাখ্যান হয় –
কিন্তু, অনাহুত চক্র-বক্রতা শুধু আমাতেই !
আহা, কতোই না ঘুরেছি আলোর শরীর হয়ে
আকাশের কক্ষপথে
যদি একবার খুলে যায় বেনামী স্বপ্নের বদ্ধ কপাট
একবার যদি ফিরে পায় মন অপার্থিব প্রেমানল –
হা ঈশ্বর, নিস্পৃহ এই মায়াকন্টক দ্রাঘিমাংশে
মেলে নি আমার প্রেমচৈতন্যবর।
দৈববানীর ডানায় রাত্রি-গড়ানো
মুদ্রিত চোখের অশ্রুজল –
আমি কি ভুলে গিয়েছিলাম শাপগ্রস্ত জ্বরে ?
বোধশুন্য বেভুল চোখ চেয়েছিলো চাতক হতে,
তবু বৃষ্টি বাড়ায় নি তার সরল বাহু …
হায় প্রেম! জটিলতন্ত্রী প্রেম – হায় আমার হেম, জ্বালা
অধর আকাশের নির্লোভ সুগন্ধি জলেও মেটে নাই,
তাই রাই-জাতক কি এখনো পাতক!
এত যে অন্তরজমা গ্লানি, এত যে বিচ্ছেদ-সঙ্গীত
তবু বিভ্রান্ত মন – দুঃখের বিষাদীয়া জ্যোস্নাকে
ঢেকে রাখে ছোট্ট রূপোর আংটায়
ব্লক প্রিণ্টেড ব্লাউজের গোলক ধাঁধাঁয় ।
মস্ত একটা সোনার পালঙ্ক
কোনো এক রাক্ষুসির চোখ বাঁচিয়ে
রাতের বৈদেহী কবিতার মতো এক পরিব্রাজক
হয়ে ওঠে বহুকাল পর –
ব্যাকুল আর্তনাদে প্রতীক্ষা করে রাজপুত্রের,
যে পিষ্ট করবে
লবণ-পাথর রাজ্যের প্রাণ-ভ্রমর
সূর্যের শেষ আলোটুকু রাজকণ্যার
গোলাপী ত্বকে মুছবার আগেই।