নিরাপত্তা পেলে গ্রামে ফিরতে চান বরিশালের নির্যাতিতা মেয়ের মা পারুল বেগম

আরিফ আহমেদ

Sharing is caring!

চা দোকানে চা খেতে যেয়ে যখন শুনতে হয় - 'সাংবাদিকরা সব বেজন্মা, ওদের আমি চা দেইনা।"

আলেকান্দার সার্কুলার রোডের চা দোকান।

তখন একজন সংবাদকর্মী হয়ে আপনার কেমন লাগবে? ক্ষমতা থাকলে হয়তো ঐ দোকানটি উচ্ছেদ করে দেয়ার চিন্তা আমার মত আপনাকেও স্পর্শ করবে। আর চা দোকানদার যদি হন কোনো বয়স্কা নারী এবং মা তাহলে?

বরিশাল শহরের আলেকান্দা এলাকার সার্কুলার রোডে এমনই এক জটিলতার মুখোমুখি হয়ে প্রথমে হতবাক পরে লজ্জিত হতে হলো সবটা শুনে।

সাংবাদিকদের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার শেষে এক কাপ চা এগিয়ে দিয়ে ঐ একজন চা দোকানী মা বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় ক্ষমা চেয়ে বললেন, মাপ কইরা দেন বাবা। আপনের পরনের ঐ কালো রঙের কোর্তা ( সাংবাদিক কটি, যা আমি সবসময় ব্যবহার করি।) দেইখা মোর মন কইলে আপনেও সাংবাদিক। পাশেই বসা তার সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ে জানালো, মায়ের কথায় কষ্ট নেবেন না। ক্ষমা কইরা দেন।'
তারপর অনেক সময় নিয়ে গল্পগুজব করে
জানা গেল এক মায়ের কষ্ট গাঁথা জীবনের কথা। যে জীবন তছনছ করেছে কতিপয় সংবাদকর্মী। বেতন-ভাতা হীন সাংবাদিকতাকে যারা প্রশ্রয় দেন, এ জন্য দায়ী ঐ সব পত্রিকা ও প্রতিষ্ঠান। বেজন্মাতো সাংবাদিক নয়, আসলে ওরা।

মা পারুল বেগম


বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানাধীন পাদ্রি শিবপুর ইউনিয়নের পাটশিবপুর গ্রামের পারুল বেগম স্বামী রহিম বাদশা নিজের বাড়িঘর রেখে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন গত দুটিবছর। দুই মেয়ে নিয়ে ভাড়া থাকেন বরিশাল শহরের বিভিন্ন এলাকায় । আলেকান্দার সার্কুলার রোডের বাসিন্দাদের সহযোগিতায় একটি টং দোকানে চা সিগারেট বিক্রি করে চলে তার পরিবারের জীবীকা।
গ্রামের পাকাবাড়ি রেখে শহরে এসে দুই মেয়ে নিয়ে অনেকটা লুকিয়ে লুকিয়ে থাকেন বলে জানান এই মা ও তার সন্তানরা। সাংবাদিক শব্দটি শুনলেই অভিসম্পাত দেন। আর বলেন, তার এই জীবনের জন্য দায়ী নাকি সাংবাদিক নামধারী কতিপয় মানুষ।
সাংবাদিকদের প্রতি এহেন ঘৃণা সচরাচর দেখা যায়না। তাই অনেকটা কঠিন হয়েই জানতে চাওয়া তার ঘটনা।

পাটশিবপুর গ্রামে বেশ সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস ছিলো এই মা পারুল বেগম ও তার সন্তানদের। ২০২০ সালের মার্চে করোনায় প্রথম লকডাউন ঘোষণার সময়ে এই মা ও তার সন্তানদের জীবনেরও লকডাউন শুরু হয়।
ঐসময় সৎ বড়ভাই কবির মোল্লার ছেলে সুজন মোল্লা ও সৎছোটভাই নজরুল মোল্লা গংদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ঘর ছাড়া পারুল বেগম ও তার মেয়েরা।

ঘটনার বিবরণে উঠে আসে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার চিত্র। তার দুই মেয়ে আয়শা ও রিমিকে নিয়ে স্বচ্ছল জীবনযাপন ছিলে তাদের । স্বামী গাড়িচালক রহিম মিয়া ও অন্য দুই মেয়ে ও দুই ছেলে থাকেন শহরে। স্বামী আরেকটা বিয়ে করে শহরেই থাকেন। তারপরও খোঁজখবর রাখতেন আগে। লকডাউনে ছেলেরাও কেউ আসতে পারেনি গ্রামে। এই সুযোগ নিয়ে বড়ভাইয়ের ছেলে সুজন মোল্লা ও তার বন্ধুরা সেজ মেয়ে আয়শাকে তুলে নিয়ে আটকে রেখে শ্লীলতাহানি ঘটায়। এ ঘটনায় প্রথমে শালিশ পরে মামলা হয়। মামলা মোকাদ্দমায় আজ তার জীবন হুমকির মুখে বলে জানান এই মা। ২০২০ সালের এপ্রিলের ২১ রোজার দিন এই ঘটনা ঘটায় বলে জানান তিনি।

এসময় স্থানীয় মেম্বর, পুলিশের এক দারোগা ও বরিশালের কোনো এক সাংবাদিক ও বাকেরগঞ্জের এক সাংবাদিক কৌশলে তার থেকে টাকা আদায় করে এবং কাগজে সই নিয়ে তাকেই বিপদে ফেলে চলে যায় বলে অভিযোগ রেকর্ড হয় ফোনের ভিডিও ক্লিপে।

মা পারুল বেগম আরো জানান,
বরিশাল প্রেসক্লাবে এসে মা ও মেয়ে বিচার দিলে কোনো ন্যায়বিচার আজো পায়নি তারা। উল্টো দুই মেয়ে নিয়ে গ্রাম ও ঘর ছাড়া হন তিনি। প্রাণের ভয়ে শহরে এসে ঘর ভাড়া করে থাকেন এখন। চা দোকান চালিয়ে দুইমেয়ে ও নিজের জীবন চালান।

তার মেয়েদের নিরাপত্তা চান মা।

মেয়ে আয়েশা মাত্রই দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। নিজের জীবনের বিষয়ে কথা বলতে অনেক দ্বিধা। ছোটমেয়ে রিমি আর মা চা দোকান চালিয়ে কোনোভাবে সংসার চালালেও অভাব তাদের নিত্য সাথী। একটাই দাবী এই মায়ের - আমাকে আমার গ্রামে ফিরে যেতে দিন। গ্রামের ঘরে থাকার নিরাপত্তা দিন। আর কিছু চাইনা।

Print Friendly, PDF & Email

Sharing is caring!

About the author

ডিসেম্বর ৭১! কৃত্তনখোলার জলে সাঁতার কেটে বেড়ে ওঠা জীবন। ইছামতির তীরঘেষা ভালবাসা ছুঁয়ে যায় গঙ্গার আহ্বানে। সেই টানে কলকাতার বিরাটিতে তিনটি বছর। এদিকে পিতা প্রয়াত আলাউদ্দিন আহমেদ-এর উৎকণ্ঠা আর মা জিন্নাত আরা বেগম-এর চোখের জল, গঙ্গার সম্মোহনী কাটিয়ে তাই ফিরে আসা ঘরে। কিন্তু কৈশরী প্রেম আবার তাড়া করে, তের বছর বয়সে তের বার হারিয়ে যাওয়ার রেকর্ডে যেন বিদ্রোহী কবি নজরুলের অনুসরণ। জীবনানন্দ আর সুকান্তে প্রভাবিত যৌবন আটকে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় পদার্পন মাত্রই। এখানে আধুনিক হবার চেষ্টায় বড় তারাতারি বদলে যায় জীবন। প্রতিবাদে দেবী আর নিগার নামের দুটি কাব্য সংকলন প্রশ্ন তোলে বিবেকবানের মনে। তার কবিতায়, উচ্চারণ শুদ্ধতা আর কবিত্বের আধুনিকায়নের দাবী তুলে তুলে নেন দীক্ষার ভার প্রয়াত নরেণ বিশ্বাস স্যার। স্যারের পরামর্শে প্রথম আলাপ কবি আসাদ চৌধুরী, মুহাম্মদ নুরুল হুদা এবং তৎকালিন ভাষাতত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রাজীব হুমায়ুন ডেকে পাঠান তাকে। অভিনেতা রাজনীতিবিদ আসাদুজ্জামান নূর, সাংকৃতজন আলী যাকের আর সারা যাকের-এর উৎসাহ উদ্দিপনায় শুরু হয় নতুন পথ চলা। ঢাকা সুবচন, থিয়েটার ইউনিট হয়ে মাযহারুল হক পিন্টুর সাথে নাট্যাভিনয় ইউনিভার্সেল থিয়েটারে। শংকর শাওজাল হাত ধরে শিখান মঞ্চনাটবের রিপোটিংটা। তারই সূত্র ধরে তৈরি হয় দৈনিক ভোরের কাগজের প্রথম মঞ্চপাতা। একইসমেয় দর্শন চাষা সরদার ফজলুল করিম- হাত ধরে নিযে চলেন জীবনদত্তের পাঠশালায়। বলেন- মানুষ হও দাদু ভাই, প্রকৃত মানুষ। সরদার ফজলুল করিমের এ উক্তি ছুঁয়ে যায় হৃদয়। সত্যিকারের মানুষ হবার চেষ্টায় তাই জাতীয় দৈনিক রুপালী, বাংলার বাণী, জনকণ্ঠ, ইত্তেফাক, মুক্তকণ্ঠের প্রদায়ক হয়ে এবং অবশেষে ভোরেরকাগজের প্রতিনিধি নিযুক্ত হয়ে ঘুরে বেড়ান ৬৫টি জেলায়। ছুটে বেড়ান গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। ২০০২ সালে প্রথম চ্যানেল আই-্র সংবাদ বিভাগে স্থির হন বটে, তবে অস্থির চিত্ত এরপর ঘনবদল বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, আমাদের সময়, মানবজমিন ও দৈনিক যায়যায়দিন হয়ে এখন আবার বেকার। প্রথম আলো ও চ্যানেল আই আর অভিনেত্রী, নির্দেশক সারা যাকের এর প্রশ্রয়ে ও স্নেহ ছায়ায় আজও বিচরণ তার। একইসাথে চলছে সাহিত্য বাজার নামের পত্রিকা সম্পাদনার কাজ।