চা দোকানে চা খেতে যেয়ে যখন শুনতে হয় - 'সাংবাদিকরা সব বেজন্মা, ওদের আমি চা দেইনা।"
তখন একজন সংবাদকর্মী হয়ে আপনার কেমন লাগবে? ক্ষমতা থাকলে হয়তো ঐ দোকানটি উচ্ছেদ করে দেয়ার চিন্তা আমার মত আপনাকেও স্পর্শ করবে। আর চা দোকানদার যদি হন কোনো বয়স্কা নারী এবং মা তাহলে?
বরিশাল শহরের আলেকান্দা এলাকার সার্কুলার রোডে এমনই এক জটিলতার মুখোমুখি হয়ে প্রথমে হতবাক পরে লজ্জিত হতে হলো সবটা শুনে।
সাংবাদিকদের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার শেষে এক কাপ চা এগিয়ে দিয়ে ঐ একজন চা দোকানী মা বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় ক্ষমা চেয়ে বললেন, মাপ কইরা দেন বাবা। আপনের পরনের ঐ কালো রঙের কোর্তা ( সাংবাদিক কটি, যা আমি সবসময় ব্যবহার করি।) দেইখা মোর মন কইলে আপনেও সাংবাদিক। পাশেই বসা তার সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ে জানালো, মায়ের কথায় কষ্ট নেবেন না। ক্ষমা কইরা দেন।'
তারপর অনেক সময় নিয়ে গল্পগুজব করে
জানা গেল এক মায়ের কষ্ট গাঁথা জীবনের কথা। যে জীবন তছনছ করেছে কতিপয় সংবাদকর্মী। বেতন-ভাতা হীন সাংবাদিকতাকে যারা প্রশ্রয় দেন, এ জন্য দায়ী ঐ সব পত্রিকা ও প্রতিষ্ঠান। বেজন্মাতো সাংবাদিক নয়, আসলে ওরা।
বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানাধীন পাদ্রি শিবপুর ইউনিয়নের পাটশিবপুর গ্রামের পারুল বেগম স্বামী রহিম বাদশা নিজের বাড়িঘর রেখে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন গত দুটিবছর। দুই মেয়ে নিয়ে ভাড়া থাকেন বরিশাল শহরের বিভিন্ন এলাকায় । আলেকান্দার সার্কুলার রোডের বাসিন্দাদের সহযোগিতায় একটি টং দোকানে চা সিগারেট বিক্রি করে চলে তার পরিবারের জীবীকা।
গ্রামের পাকাবাড়ি রেখে শহরে এসে দুই মেয়ে নিয়ে অনেকটা লুকিয়ে লুকিয়ে থাকেন বলে জানান এই মা ও তার সন্তানরা। সাংবাদিক শব্দটি শুনলেই অভিসম্পাত দেন। আর বলেন, তার এই জীবনের জন্য দায়ী নাকি সাংবাদিক নামধারী কতিপয় মানুষ।
সাংবাদিকদের প্রতি এহেন ঘৃণা সচরাচর দেখা যায়না। তাই অনেকটা কঠিন হয়েই জানতে চাওয়া তার ঘটনা।
পাটশিবপুর গ্রামে বেশ সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস ছিলো এই মা পারুল বেগম ও তার সন্তানদের। ২০২০ সালের মার্চে করোনায় প্রথম লকডাউন ঘোষণার সময়ে এই মা ও তার সন্তানদের জীবনেরও লকডাউন শুরু হয়।
ঐসময় সৎ বড়ভাই কবির মোল্লার ছেলে সুজন মোল্লা ও সৎছোটভাই নজরুল মোল্লা গংদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ঘর ছাড়া পারুল বেগম ও তার মেয়েরা।
ঘটনার বিবরণে উঠে আসে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার চিত্র। তার দুই মেয়ে আয়শা ও রিমিকে নিয়ে স্বচ্ছল জীবনযাপন ছিলে তাদের । স্বামী গাড়িচালক রহিম মিয়া ও অন্য দুই মেয়ে ও দুই ছেলে থাকেন শহরে। স্বামী আরেকটা বিয়ে করে শহরেই থাকেন। তারপরও খোঁজখবর রাখতেন আগে। লকডাউনে ছেলেরাও কেউ আসতে পারেনি গ্রামে। এই সুযোগ নিয়ে বড়ভাইয়ের ছেলে সুজন মোল্লা ও তার বন্ধুরা সেজ মেয়ে আয়শাকে তুলে নিয়ে আটকে রেখে শ্লীলতাহানি ঘটায়। এ ঘটনায় প্রথমে শালিশ পরে মামলা হয়। মামলা মোকাদ্দমায় আজ তার জীবন হুমকির মুখে বলে জানান এই মা। ২০২০ সালের এপ্রিলের ২১ রোজার দিন এই ঘটনা ঘটায় বলে জানান তিনি।
এসময় স্থানীয় মেম্বর, পুলিশের এক দারোগা ও বরিশালের কোনো এক সাংবাদিক ও বাকেরগঞ্জের এক সাংবাদিক কৌশলে তার থেকে টাকা আদায় করে এবং কাগজে সই নিয়ে তাকেই বিপদে ফেলে চলে যায় বলে অভিযোগ রেকর্ড হয় ফোনের ভিডিও ক্লিপে।
মা পারুল বেগম আরো জানান,
বরিশাল প্রেসক্লাবে এসে মা ও মেয়ে বিচার দিলে কোনো ন্যায়বিচার আজো পায়নি তারা। উল্টো দুই মেয়ে নিয়ে গ্রাম ও ঘর ছাড়া হন তিনি। প্রাণের ভয়ে শহরে এসে ঘর ভাড়া করে থাকেন এখন। চা দোকান চালিয়ে দুইমেয়ে ও নিজের জীবন চালান।