মীরপুর টু গুলিস্থান ভায়া মতিঝিল। বিকল্প পরিবহনের একটি চলতি বাসে যাত্রী হাতে গোনা জনাদশেক হবে। হরতাল অবরোধ, তার মধ্যেও জীবীকার তাগিদে ছুটছে মানুষ। প্রতিটি লোকের চোখে মুখে আতঙ্ক ছড়িয়ে আছে। পাশের লোকটি বোমা বহন করছে নাতো? এ আতঙ্কে একে অপরের মুখ দেখছে সতর্পনে।
মীরপুর ১১ থেকে এ বাসটিতে চেপে কাজীপাড়া পর্যন্ত আসতে না আসতেই যাত্রীদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেল। নির্বাচনাটা কি হাসিনা করবেই? এতো যে গণতন্ত্র গণতন্ত্র করল, শেষে কি গণতন্ত্রের মানসকন্যার হাতেই গণতন্ত্রের বলি হচ্ছে?
যুব বয়সের একযাত্রীর এই প্রশ্নের উত্তরে আরেকজন আওয়ামী মনা যুবক ক্ষেপে উঠলেন – আরে ভাই, বিএনপি নির্বাচনে না এলে হাসিনা বা আওয়ামী লীগের কি দোষ? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীতো বারবার বিএনপিকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তবুও না এলে কি করবে সে?
এবার কথা বলে উঠলো একজন মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক- বাবা কিছু মনে করনা, তুমি তো ফকির মহিউদ্দিন-এর সাথে চল, আমার বাসা তোমার কাছেই ঐ ১০ নং এ ব্লকে। তুমি নিজেই বুকে হাত দিয়ে বলতো- যদি তোমার ভাই, বন্ধু সবাইকে আটকে রেখে তোমাকে একা এভাবে যদি ডাকা হয়, তাহলে কি তুমি যাবে? বাদ দাও সে কথা, হাসিনাতো বঙ্গবন্ধুর কন্যা। তার মহত্ব, তার উদারতা হবে আর সবার চেয়ে আলাদা। দেশের মানুষ যে ভাবে মারা যাচ্ছে, তাতে দেশপ্রেম থাকলে তারতো রাজনীতিই ছেড়ে দেয়া উচিত, যে এই নোংরা রাজনীতেতে আমি আর নেই কথাটা বলে। তা না ছাড়ুক, নির্বাচন কালিন সরকারের প্রধান পদটা হাসি মুখেই ছেড়ে দেয়া জরুরী না?
এ কথায় যুবক খুব ক্ষীপ্ত হলেন- কেন, নেত্রী কেন রাজনীতি ছেড়ে দেবেন? ছাড়লে খালেদার ছাড়া উচিত। দেশের মানুষের জানমাল নিয়ে খেলছেন খালেদা আর জামায়াত শিবির। দেখেন, এই যে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে কাদের মোল্লার রায় নিয়ে নিন্দা করা হল, অথচ বিএনপি এর কোনো প্রতিবাদই করল না। এ থেকে পরিস্কার বোঝা যায়, বিএনপি এখন জামাত শিবিরের আখড়া। ওরা ক্ষমতায় এলে এ দেশ তালেবান হয়ে যাবে, এটা নিশ্চিত।
প্রথম যুবক আবারও মুখ খুললেন, হাঃ ঠিক বলেছেন, বিএনপি এলে দেশে তালেবান হবে, গত রাতে একুশে টিভির টকশোতে ঠিক এভাবেই বলেছেন আপনাদের নেতা আহমদ হোসেন। আর আওয়ামী লীগ আরেকবার ক্ষমতায় এলে এ দেশ যে অর্ধেকই ভারতের দখলে চলে যাবে না তার নিশ্চয়তা কে দেবে ভাই?
এ কথায় বাসের মধ্যে নিমিশে দুটি পক্ষ তৈরি হয়ে গেল। তর্ক একপর্যায়ে হাতাহাতিতে পৌঁছার পালা। বেকায়দায় পড়ে বাস চালক আগারগাঁও এর একটু আগে বাস থামিয়ে যাত্রীদের নেমে যেতে অনুরোধ করলে সবাই শান্ত হলেন। একজন শুধু আস্তে আস্তে বললেন- এই দুইনেত্রীর নেত্রীত্বে দেশ যতদিন চলবে, ততদিন এই দুরাবস্থাই হবে। এবার এ থেকে মুক্তি খুব জরুরী। এবার একজন স্বৈরাচারী পুরুষ দরকার এ দেশটা ঠিক করতে। আল্লাহ কি কাউকে পাঠাবেন?
গত রাতের একুশে টেলিভিশন-এর ও চ্যানেল আইয়ের টক শো আমিও দেখেছি। এতে অতিথি ছিলেন যথাক্রমে একুশের রাতে বিএনপির মোফাজ্জল করিম, ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা আমেনা মোহসীন এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অন্যদিকে তৃতীয়মাত্রার অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা প্রফেসর আবদুল মান্নান, সম্প্রতী ওসি পুরস্কার প্রাপ্ত মানবাধিকার কর্মী এ এইচ এম নোমান এবং বিএনপি নেতা শাখাওয়াত হোসেন বকুল।
একুশের রাত শুরু হয়েছিল নির্ধারিত সময়ের একটু দেরীতে। রাত ১২টা ১০ মিনিটে মনজুরুল আলম পান্নার উপস্থাপনায় এখানের অতিথিরা দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে একটা সমাধানের পথ দেখাবেন এটাই ছিল আমাদের দর্শকদের বিশ্বাস। অথচ এখানে আহমদ হোসেন-এর আচারণ ও তার আত্মঅহংটাই আমরা দেখলাম। ঠিক বাসের যুবকের মতোই একই সুরে কথা বলেছেন আহমদ হোসেন। তিনি অন্যদের কোনো কথা বলারই সুযোগ দিচ্ছিলেন না। অনেকটা দর্শক-জনতার সাথে বেয়াদপি বলবো আমি তার এই আচরণকে।
এদিক বিবেবচনায় জিল্লুর রহমানের উপস্থাপনায় তৃতীয়মাত্রা ছিল অনেক শালীন ও শান্তিপ্রিয় অতিথির অতীত খোড়ার নব কৌশলও বলা যায় এটাকে। অতীতের কথা বলবো না বলে শুরু করে আবদুল মান্নান স্যার পাকিস্তান প্রসঙ্গই টানলেন। কারণ অতীত না টানলে যে এই যুদ্ধাপরাধীর বিচারই হবে না, সেটাও ভুলে গিয়েছিলেন তিনি।
বিএনপি নেতা বকুল টানলেন সেই সিরাজ শিকদার প্রসঙ্গ। অবশেষে নোমান সাহেবের হস্তক্ষেপে অতীত খোড়া বন্ধ হলেও আপোস হল না। তর্কে তর্কে অনেক বেলা গেল। আমরা অন্ধকারের জাতি, অন্ধকারেই রয়ে গেলাম। তবে একটা বিষয়ে এখানে সবাই এক্যমতে পৌছেছিলেন যে- ১০ম জাতীয় এই নির্বাচন যদি হয় বা করে হাসিনা তাহলে গণতন্ত্রের গলা টিপে দেয়া হবে এবং দি ইকোনোমিক্স-এর প্রতিবেদনটিকেই সত্যায়ন করা হবে। এ নির্বাচনে আওযামী লীগ জিতবে আর হারবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ আমজনতা পরিষদ (বাপ) গঠন এখন খুবই জরুরী। দেশকে ভালোবাসেন, দেশের প্রতি দায়বদ্ধ প্রতিটি মানুষের প্রতি অনুরোধ আসুন নতুন নেতৃত্ব গড়ে তুলি। বাপ-এর প্রধান পর্ষদ কখনো ক্ষমতালোভী হবে না। কেন্দ্রিয় পদ আকঁড়ে রেখে বাপ-এর কোনো সদস্য বা সন্তান কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
সব ধর্মের প্রতি যারা শ্রদ্ধাশীল। সব মানুষের প্রতি যারা সহযোগিতার হাত বাড়ায় তারাই এ দলের নেতৃত্ব গ্রহণের যোগ্য হবেন।
কোনো ছাত্র সংগঠন, সাংবাদিক বা পেশাজীবী সংগঠন বাপ অনুমোদন করবে না।
দলীয় রাজনীতি থাকবে তবে কর্মক্ষেত্রে দলমতের উপরে থেকে কাজ করবেন বাপ সদস্যরা। জাতীয় সব ইস্যুতে একটাই দল থাকতে হবে – বাংলাদেশী দল।
যারা সহমত, আসুন ঐক্য গড়ি
বাংলাদেশ আমজনতা পরিষদ গঠন করি।
কিভাবে কি করতে হবে আমি জানিনা। তাই সাহায্য করুন। শ্রম দেব।