“সবার জন্য প্রয়োজন, জন্ম ও মৃত্যুর পরপরই নিবন্ধন”
এই স্লোগান নিয়ে বুধবার ৬ অক্টোবর জেলা প্রশাসন বরিশাল এর আয়োজনে জাতীয় জন্ম নিবন্ধন দিবস ২০২১ উপলক্ষে চলছিলো আলোচনা সভা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) বরিশাল মোঃ আবদুর রাজ্জাক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক বরিশাল জসীম উদ্দীন হায়দার।
বরিশালে জেলা প্রশাসক যখন এই সংবাদ সম্মেলন করছেন ঠিক তখন সদর উপজেলার চাঁদপুরা ইউনিয়নের তালুকদার হাটের বাসিন্দা মোকলেছুর রহমান অভিযোগ করেন, সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর জব্বার সাক্ষরিত তার চারটি জন্ম নিবন্ধন এর একটি অনলাইনে রয়েছে, তাও মায়ের নাম ভুল। অন্য তিনটি নেই, নতুন করে তৈরি করার জন্য ৩০০ টাকার নীচে জন্ম নিবন্ধন হবেনা ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে।
একই অভিযোগ বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরামদ্দি ইউনিয়নের সঠিখোলা গ্রামের বাইক চালক স্বপন হালাদার ও সিংহবাড়ি বাজারের ফিরোজ মুন্সির।
চাঁদপুরা ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের ছাব্বির হাওলাদার জানান, তার বয়স সংশোধন করতে ৪০০ টাকা দেয়ার পরও তাকে আজো ঘুরাচ্ছেন কাইয়ুম ও তার লোক।
১ নং ওয়ার্ডের জামাল হাওলাদার জানান, তার ছেলের জন্ম নিবন্ধনে পেপার এ বাবার জায়গায় মা ও মায়ের জায়গায় বাবার নাম লেখা। এখন এটা ঠিক করতে ৩০০ করে চাচ্ছে।
পরিষদের সামনের প্রফুল্ল নাহার বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ মামুন হোসেন জানান, এখানে ক্লাস করতে এসে আমি অনেকর নিবন্ধন লিখে দিয়েছি। তারা বলেছেন, তাদের থেকে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন ৮০০ / হাজার টাকাও নেয়ার অভিযোগ আছে।
কম্পিউটারের বায়েজিদ মুলত সচিব কাইয়ুমের আত্মীয় খুব সম্ভব তারা মামা ভাগ্নে। তারা দুজনে মিলে এখানে একটা চক্র তৈরি করেছেন বলেও অভিযোগ এলাকার ভুক্তভোগীদের।
হত দরিদ্র শাহিদা বেগম, নকীব আহঞ্জী সহ একাধিক মানুষের অভিযোগ ২০০ ও ৩০০ টাকার নীচে জন্ম নিবন্ধন হয়না। কখনো কখনো আরো অনেকবেশী টাকাও নিচ্ছে। তারউপর আজ নয় কাল এভাবে মাসের পর মাস ঘুরতে হচ্ছে। নৈমিত্রের এই অজগ্রামে আসাযাওয়ায় অনেক কষ্ট। মানুষকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পথ হেঁটে আসতে হয় ও যেতে হয়। তারপরও যখন নিবন্ধন সনদ পাওয়া যায়না ও ঘুরতে হয় এই অঞ্চলের মানুষকে ।
তাদের অভিযোগের সুত্র ধরে সরেজমিনে নৈমিত্রের ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে
মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখা গেল রবিবার দুপুরে । এখানে নিবন্ধন করতে আসা মানুষের ভিড়ও জানালো শুধু মাত্র রবিবার ও বুধবার জন্ম নিবন্ধন করানো যায় এখানে। অন্য সময় বন্ধ থাকে কার্যক্রম। এখানে এসে অনেকের হাতের কাগজে দেখা যায়, সরকারি কাজের সাথে জড়িত কম্পিউটার অপারেটরের ভুলের চিত্র। কারো কাগজে
মায়ের নাম জামাল সিকদার
বাবার নাম শিউলি বেগম
আগের চেয়ারম্যান হেলাল সাক্ষরিত নথিতে এমন ভুল শুধরানোর দায় কি সাধারণ মানুষের?
এ রকম অসংখ্য কম্পোজ ভুলের মাশুল গুনছেন সাধারণ গ্রামের মানুষ।
ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সচিব আব্দুল কাইয়ুম যা বলেন
অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আব্দুল কাইয়ুম জানালেন, সরকারের জন্ম নিবন্ধন ফি ৫০ টাকাই আমি গ্রহণ করেছি। বাড়তি টাকা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার, কম্পোজার, কাগজপত্র ও প্রিন্টার কালির জন্য। আর এটা উপজেলা থেকে সিস্টেম করে দিয়েছে। শুধূ চাঁদপুরা ইউনিয়ন নয় সদরের সব ইউনিয়নে একই সিস্টেম।
কাইয়ুম আরো বলেন, ২০১৯ এর ৩ জুন আমি এখানে কাজ শুরু করার পর শুক্র ও শনিবার ছাড়া কখনো অফিস বন্ধ থাকেনি। সপ্তাহে পাঁচ দিনই কার্যক্রম চালু থাকে। তবে আমি কোনো কাজে ফিল্ডে গেলে তখন বন্ধ রাখতে হয়, কেননা আমি একা সবদিক কি করে সামলবো? এখানে আরো লোকবল খুব জরুরী।
চাঁদপুরা ইউনিয়ন পরিষদের অবস্থান সদর উপজেলা থেকে প্রায় ২৫ কিলো দুরত্বে। নৈমিত্র নামক এক অজপাড়া গাঁয়ে। যেখানে সরু সড়কে বড় কোনো বাহন চলাচলের অযোগ্য। নেই কোনো ভালো দোকানপাট। ফলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের এখানে খুব একটা আসাযাওয়া নেই। আর এ সুযোগে উপজেলার থেকে ঠিক করে দেয়া কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার ও অপারেটর বায়েজিদকে নিয়ে রমরমা বাণিজ্যের অভিযোগ সচিব আব্দুল কাইয়ুম এর বিরুদ্ধে।
তবে কম্পিউটার অপারেটর বায়েজিদ বলেন, তার আসাযাওয়া খরচ বাইকে প্রতিদিন ২০০ টাকা। এরপর খাওয়া ও অন্যান্য তো আছে।
গ্রামবাসীর দাবী, প্রতি রবিবার ও বুধবার এখানে শত শত মানুষের লাইন হয়। যা থেকে দিনে কম হলেও দশহাজার টাকা উপার্জন এই মামা ভাগ্নের। ( সচিব কাইয়ুমের ভাগ্নে হন বায়েজিদ।)
বিষয়টি জানতে উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টুকে ফোন দিলে তিনি জানান, আমিতো এ বিষয়ে কিছুই জানিনা। এখনই বিষয়টি তদন্তের ব্যবস্থা করছি।
আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মুনিবুর বহমান বলেন, উপজেলা থেকে এমনকিছু কখনোই সিস্টেম করা নেই। বরং স্থানীয়ভাবে কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগের নির্দেশনা আছে। আমি বিষয়টি এখনই দেখছি।
আর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব ( ডিডিএল) শহীদুল ইসলাম বলেন, আপনাদের সাংবাদিকদের হাতে প্রমাণ থাকলে আমাকে দিন। আমি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব। তবে এ বিষয়ে কতৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া মিডিয়ার সামনে কথা বলায় বাধ্যবাধকতা আছে।