চ্যানেল আই এর রজতজয়ন্তী: আমরাও পাশে আছি বরিশালবাসী
আরিফ আহমেদ, (সাবেক সহকর্মী চ্যানেল আই)
“হৃদয়ে বাংলাদেশ উচ্ছ্বাস শুধু নয়,
মননে বিশ্বাসের বাঁধন…
শ্লোগান করেছি ধারণ
পঁচিশ বছর ধরে তাই
গেয়ে যাই… বাংলার জয় গান’…।
বাংলা আমার জন্মকথা
বাংলা জুড়ায় মনের ব্যাথা
কান্না-হাসি
দুঃখ সুখে
বাংলা আমার
মায়ের আদর… জড়িয়ে রাখা নক্সিকাঁথা
সবটুকু স্বাদ একসাথে পাই
যখন খুঁজে… মুগ্ধ নয়ন
হৃদয়ে বাংলাদেশ আর মননে চ্যানেল আই।। ”
বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল আই এর প্রথম জন্মদিনে বিশাল র্যালী নিয়ে আমরা যখন বেইলী রোডের থিয়েটার পাড়া মাতিয়ে তুলেছিলাম সেই ২০০১ সালের অক্টোবরে তখনকার সময়ের সাথে বর্তমানের অনেক ব্যবধান। ভাড়া বাড়ি, চিপা গলি ছেড়ে আজ চ্যানেল আই নিজস্ব ভবনে। নিজস্ব আঙ্গিনায় সাজিয়ে আসছে জমকালো উৎসব আয়োজন। ২৫ বছর পূর্তী মানে রজতজয়ন্তী উৎসবের বর্ণাঢ্য আয়োজন চলছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর এবং পরিচালক ও বার্তা বিভাগের প্রধান শাইখ সিরাজ নিজ হাতে নিমন্ত্রণ পত্র বিলি করছেন। সুন্দর আয়োজন পরিকল্পনা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ পরিচালক হাসান ভাই, অনুষ্ঠান প্রধান ছড়াকার ও সাহিত্য বাজার পত্রিকার উপদেষ্টা আমীরুল ইসলাম, তৃতীয় মাত্রার জিল্লুর রহমান, সংবাদ বিভাগের মীর মাসরুর, আরেফিন ফয়সাল, কাজল ঘোষ সহ সংশ্লিষ্টদের চোখের ঘুম উড়ে গেছে। অসুস্থ মানুষটিও এখন শিশুর মতো সরলতায় ছুটে বেড়াচ্ছেন, হৈচৈ করছেন। আর কিপটে হিসাবরক্ষক জিয়া ভাই নির্ঘাত বারবার বেহুশ হচ্ছেন ও মাথায় জল ঢালছেন। কেননা চ্যানেল আই এর জন্মদিন মানেই ভিন্নতা। আর ভিন্নতা মানেই অনেক অনেক টাকার হিসাব সামলাতে হবে জিয়া ভাইকে। হৃদয়ে বাংলাদেশের যত ছবি আঁকা আছে তার সবটাই হয়তো এই পহেলা অক্টোবর ২০২৩ এ পরিস্ফুটিত হবে চ্যানেল আই এর আঙ্গিনায়। আসবেন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ছাড়াও সিনেমা টেলিভিশন ও বেতারের সব শিল্পীদের সমন্বয় ঘটবে এদিন চ্যানেল আই এর আঙ্গিনায়। আমরা বরিশালের মাটিতে বসে তা দেখতে পাবো স্যাটেলাইট বা ইউটিউব ঘুরে চ্যানেল আই এর পর্দায় সরাসরি লাইভ অনুষ্ঠানে। তবে চ্যানেল আই নিয়ে বরিশালবাসী আগের মতো খুব একটা উচ্ছ্বসিত নয় বলে মনে হলো বরিশালের সুশীল সমাজ ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের আলোচনায়। বেশিরভাগ মানুষই বলছেন, ‘প্রথমদিকের চ্যানেল আইয়ের স্বাদ এখন আর নাই। তবে শাইখ সিরাজের কৃষিভিত্তিক অনুষ্ঠান হৃদয়ে মাটি ও মানুষ এবং মুকিত মজুমদারের প্রকৃতি ও জীবন গ্রামাঞ্চলের মানুষের জন্য খুবই উপকারী। আবার কেউ কেউ বলেন, নিউজের মান একদম নেমে গেছে। এখনকার চ্যানেল আই মানেই যেন, যা পাই তা-ই খাই।’
প্রবীণ সাংবাদিক, শব্দসৈনিক এবং বরিশাল সাহিত্য সংসদ এর প্রধান উপদেষ্টা অরূপ তালুকদার ২৫ বছর পূর্তী উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানটি গ্রামাঞ্চলের কৃষকদের জন্য খুবই উপকারী একটি অনুষ্ঠান। এটি যেন বন্ধ না হয়। বরিশাল তথা দক্ষিনাঞ্চলের সংবাদ আগের তুলনায় অনেক কম। এজন্য স্থানীয় প্রতিনিধিকে স্পেশাল এসাইনমেন্ট দেয়ার পরামর্শ দেন অরূপ তালুকদার।
২০০২ থেকে ২০১২ পর্যন্ত চ্যানেল আই এই বরিশালে খুবই জনপ্রিয় ছিলো বলে জানালেন বরিশাল প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট আইনজীবী মানবেন্দ্র বটব্যাল। তিনি এ বছর চ্যানেল আই সমর্থিত সাহিত্য বাজার পত্রিকার গুণীজন সম্মাননা গ্রহণ করার আনন্দ নিয়ে বলেন, প্রয়াত সাংবাদিক মাইনুল এর সময়ে বরিশালে আমরা চ্যানেল আই এর বিকল্প অন্যকোনো টিভি খুঁজে পাইনি। ২০০৪ সালের ২ অক্টোবর মাইনুল হাসান মারা যাওয়ার পর থেকে এ অঞ্চলের সংবাদ খুব একটা চ্যানেল আই ধারণ করে বলে মনে হয়নি, তাছাড়া ভালো কোনো প্রতিনিধিও এখানে তাদের নেই বলে জানান মানবেন্দ্র বটব্যাল।
প্রায় একই কথা বললেন আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় দৈনিক আজকের পরিবর্তন পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক কাজী মিরাজ মাহমুদ। তিনি বলেন, চ্যানেল আই বরিশালে খুবই জনপ্রিয় ছিলো। মাঝখানে কিছুদিন বরিশাল অঞ্চলের প্রথম মহিলা সাংবাদিক হিসেবে শাহিনা আজমীন এতে কাজ করেছেন। কিছু একটা সমস্যা হওয়ায় তিনি এখন আর কাজ করেননা। নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার কথা শুনেছিলাম। তবে অনেকদিন চ্যানেল আই আর দেখা হয় না, খোঁজও নেয়া হয়নি। তবে আমার ঘরে এখনো মাটি ও মানুষ এবং প্রকৃতি ও জীবন অনুষ্ঠান নিয়মিত দেখেন সবাই।
চ্যানেল আই এর ২৫ বছর পূর্তী উপলক্ষে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সভাপতিসহ সব সদস্যদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রেসক্লাবের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন বলেন, বরিশাল তথা দক্ষিনাঞ্চলের উন্নয়ন অগ্রগতি, সুখ দুঃখের কথা ইদানীং চ্যানেল আইতে খুব একটা তুলে ধরা হয়না। এটা হয়তো আমাদের সাংবাদিকদেরই ব্যর্থতা। আমরা ভালোকিছু তুলে ধরতে পারিনা। এজন্য চ্যানেল আইয়ের মতো প্রতিষ্ঠান পারে সাংবাদিকদের কর্মশালা করিয়ে দক্ষ করে তুলতে। চ্যানেল আইয়ের জনপদের সংবাদ বরিশালকে গুরুত্ব দেবে এটাই প্রত্যাশা করেন এসএম জাকির।
১৯৯৯ সালের ১ অক্টোবর যাত্রা শুরুর পর থেকে নতুনত্ব আর বৈচিত্রময় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে ইতোমধ্যে কোটি দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছে চ্যানেল আই। ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ’ স্লোগানে লাল-সবুজের বিশ্বাস ও চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে মননশীল সচেতন ও সৃষ্টিশীল জাতি গঠনে বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছে চ্যানেল আই। দেশের দর্শক যখন একটি মাত্র বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) দেখতে দেখতে একঘেয়ে আর ক্লান্ত হয়ে পরেছিল, তখন তাদের কাছে নতুন আশার আলো জালিয়ে চ্যানেল আই পৌঁছে যায় গ্রাম বাংলার প্রতিটি ঘরে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শতভাগ বিদ্যুতায়নের ফলে স্যাটেলাইট চ্যানেল এখন পৌঁছে গেছে প্রত্যন্ত এলাকায়। সাথে ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমতো আছেই। যদিও অনেকেই বলার চেষ্টা করছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যুগে আজকাল কেউ আর টেলিভিশনের পর্দার সামনে বসেন না। কিন্তু কেউ গভীরভাবে ভেবে দেখলে, অন্যরকম উত্তর পাবেন। কোনোভাবেই এর গুরুত্ব কমেনি। কিংবা টেলিভিশন হারিয়ে যাচ্ছে না। বরং নানা ফর্মে এগিয়ে চলছে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে। কারণ আগের মতো টেলিভিশন অনুষ্ঠান একবার প্রচার করেই এখন তা আর্কাইভে চলে যাচ্ছে না। ফেসবুক লাইভ, ইউটিউবসহ নানান ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আরো জীবন্ত হয়ে উঠছে টেলিভিশনের কনটেন্ট। দর্শকরা যখন ইচ্ছা তা দেখে নিতে পারছেন। ফলে গণমাধ্যম হিসেবে চ্যানেল আই এরও এখন আরো অনেক বেশি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞরাই যখন বলছেন, নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় চ্যানেল আই সবসময় সঠিক পথেই আছে। চ্যানেল আই বরাবরই নতুনত্বের প্রতিনিধিত্ব করে। তাই রজতজয়ন্তীর এই শুভক্ষণে দর্শক, শুভানুধ্যায়ীদের অভিনন্দন ও ভালোবাসা জানিয়ে অনুষ্ঠানমালায় নতুনত্ব আনা এবং নিমন্ত্রণ পত্র বিলি করছেন চ্যানেল আই পরিচালনা পর্ষদ। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়ে বরিশালবাসীর পক্ষ থেকে চ্যানেল আই পরিবারের সবাইকে জন্মদিনের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।