মাঝে মধ্যে চিন্তা করি এত তেল পায় কই? ছেলেবেলায় মাঠে ময়দানে দৌঁড়ে বেড়াতাম কখনো ঘুড়ি নিয়ে, কখনো বা ক্রিকেট ফুটবল নিয়ে। বর্ষায় কর্দমাক্ত মাঠে ফুটবল খেলে পুকুরে সাতার কেটে চোরের মতো ঘরে ফিরতাম। কখনো প্রচণ্ড রোদ, কখনো বা বৃষ্টিতে খেলতে গিয়ে রাতে গাঁ পোড়া জ্বর আসত। মা সরষের তেলে রসুন গরম করে পায়ের পাতায় মালিশ দিতেন আর বলতেন, কত করে বলিরে বাবা আর যাসনে! কে শুনে কার কথা? বন্ধুরা ডাকলেই কুকুরের মতো দৌঁড়ে যায় আমার ছেলে। বিরক্ত হয়ে বলতাম, এত বক বক করলে মা তোমার সেবা লাগবেনা আমার। মায়ের মতো পৃথিবীর কোন সন্তানকেই কেউ সেবা দিতে পারেনা।
মায়ের কথা বা আমার ছেলেবেলার গল্প বলতে আসিনি। সমাজের তেলবাজদের দৌরাত্য নিয়ে হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতো তৈল প্রবন্ধ লিখতেও বসিনি। গোটা সমাজকে তেলবাজরা এতটাই পিচ্ছিল করে রেখেছে যে, আত্মসম্মান নিয়ে যারা চলতে চায় তারা পিছলে পড়ছে। একসময়ে রসিকতা করে বিটিভি’র আনন্দ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে দেখানো হতো- উপর মহলের কর্তাকে খুশি করতে পকেট থেকে তেলের শিশি বের করে ধান্ধাবাজ বলছে- স্যার মেখে নিয়েন। একালের ধান্ধাবাজরা আর তেলের বোতল নিয়ে যায় না। জিহ্বা, কণ্ঠ সবই তেলে-তেলে তৈলাক্ত। সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারলেই হয়। তেলের নহর বয়ে যায়। মন্ত্রী, এমপি, আমলা, ব্যবসায়ী সবার সামনে গিয়ে স্বত্ত্ব আড়াল করে মোসাহেবরা তেল থেরাপি দিতে দিতে বলে, যা করেছেন ঠিক করেছেন। যা করবেননা ভাবছেন তাও করুন। গোস্তাকি মাফ করুন জাঁহাপনা।
গেল বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকগণ যে প্রশ্ন করেছিলেন তা হুবহু সবারটা ছাপিয়ে দিয়েছিল ইত্তেফাক। প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনতো প্রয়োজনীয় নিউজ ট্রিটমেন্ট পেয়েছিলই তার সঙ্গে আলাদাভাবে জুড়ে দিয়েছিল প্রশ্নগুলো। একেকজন দাঁড়িয়েছেন আর প্রধানমন্ত্রীর বন্দনা করতে করতে রীতিমত বক্তৃতা করেছেন। তাদের বক্তৃতার ভেতরে প্রশ্ন হারিয়ে গেছে। সেই সংবাদটিতে সংবাদ কর্মীরা যে প্রকাশ্যে তোষামোদী করছিলেন, জনস্বার্থে প্রয়োজনীয় সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন করেননি সেটি উঠে এসেছিল তবু লজ্জা লাগেনি। খাসলত বদলায়নি। রাজনীতিবীদদের, মন্ত্রী-আমলাদের কতইনা সমালোচনা করি। কিন্তু আয়নায় নিজেদের বেশরম চেহারা দেখি না। মধ্যস্বত্ত্বভোগি সুবিধাবাদী চেহারা যে। পদক থেকে পদ, প্লট থেকে বিদেশ সফর এমনকি সরকারী টাকায় হজ কাফেলায়ও যেতে চাই’যে।
বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকলে একদল নাদুস-নুদুস হয়ে হাটে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হলে আরেক দল। সকল পেশার দলকানারা-তো বটেই, শিল্পী-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবি দলীয় কর্মীদের ঠেলা ধাক্কায় পেছনে ফেলে সামনে বসে থাকে। আমরা সবাই জানি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিক বান্ধব রাজনীতিবিদ। স্বভাবসুলভ তীর্যক বাক্য ছাড়লেও প্রশ্নের জবাব দিতে কখনো কার্পণ্য করেন না। ‘৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেই তিনি গণভবনে সংবাদ কর্মীদের নিয়ে চা চক্রের আয়োজন চালু করেন। বিদেশ সফর শেষে এসেই বা জাতীয় ইস্যুতে যেকোন সময় সংবাদ সম্মেলন করে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে তার দ্বিধা কখনো ছিলনা। এখনো নেই।
আমার অগ্রজ সাংবাদিকরা ভাল জানেন। নব্বই উত্তর গণতন্ত্রের জমানায় পেশার তারে জীবন জড়ানোর পর তৎকালীন বিরোধী দলের নেত্রী আজকের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ নিয়মিত কাভার করেছি। তার দলের সংবাদ কাভার করেছি। তার সঙ্গে সারাদেশ ঘুরেছি। তার স্নেহ কুড়িয়েছি, বাঁকা কথাও শুনেছি। কখনো খালি হাতে ফিরিনি। প্রশ্ন করেছি উত্তর পেয়েছি। মনে পড়ে, সেই ৯৪ সালের ঢাকার মেয়র নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে আজমীর গিয়েছিলেন। সেবারের দিল্লী সফর শেষে যেদিন ফিরলেন দিনটি ছিল শুক্রবার। রিল্যাক্স মুডে পাঞ্জাবী-পায়জামা পড়ে অফিস গিয়েছি। বিকেলে শেখ হাসিনা আসছেন শুনে সম্পাদক আমাকে পাঠিয়ে দেন বিমান বন্দরে। ভিআইপি লাউঞ্জে সাংবাদিকরা প্রবেশ করতে পারছিলেন না। মরহুম আব্দুর রাজ্জাকের গাড়িতে উঠে আমি ভেতরে চলে যাই। টাঙ্গাইলের মরহুম আবদুল মান্নান থেকে ঢাকার নির্বাচিত মেয়র হানিফসহ অনেকেই ছিলেন। ভিআইপি লাউঞ্জে এসে প্রাণবন্ত শেখ হাসিনা দিল্লী সফরের গল্প শুরু করতেই আমি প্রশ্ন ছুড়তে থাকি, তিনিও উত্তর দিতে থাকেন। ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা হয়েছে। লোকসভায় গেছেন। সেদেশের স্পিকার ও রাষ্ট্রপতি তাকে অনেক বই উপহার দিয়েছেন। সেখানকার সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিসহ অনেক কিছু অবহিত হয়েছেন বলে জানালেন। মরহুম আবদুল মান্নান কম কথা বলতেন। হঠাৎ বলে বসলেন, এসব পত্রিকায় যাওয়ার দরকার নেই। ওবায়দুল কাদের আমার ছাত্রলীগে পা রাখার সময়কার সভাপতি। তিনি আশ্বস্ত করলেন আমাকে দিয়ে ক্ষতিকর কিছু হবেনা। আস্থা রাখা যায়। কিন্তু মরহুম মান্নান সাহেবসহ কয়েক জনের পরামর্শে শেখ হাসিনা সব কিছু অফ দ্য রেকর্ড করে দিলেন। ভাবলাম রিপোর্টটি করতে পারলে শেখ হাসিনার সংসদীয় রাজনীতির প্রতি, সংসদের কর্মকাণ্ডের প্রতি যে আগ্রহ সেটি ফুটে উঠত। কিন্তু খালি হাতে ফিরে যাব? মনটা খারাপ হয়ে গেল। তিনদিন পরেই ছিল ঈদ। প্রশ্ন করে বসলাম, ঈদের শাড়ি কিনেননি? মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা উজ্জ্বল মুখখানি এবার বিষণ্নতার চাদরে ঢাকা পড়ল। বললেন, যখন ঈদের শাড়ি কেনার বয়স ছিল, তখন বাবা থাকতেন জেলে। আর পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর ঈদ আসেনি আমাদের জীবনে। পাশে বসা শেখ রেহানার চোখ তখন ছলছল। ভিআইপি লাউঞ্জের বাইরে আসার পর যখন গাড়িতে পা রাখছেন, তখন আজকের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বললেন, শুনেন পীর সাহেব! সব অফ দ্য রেকর্ড। অহমে লাগায় সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠি যেখানে মাননীয় বিরোধী দলের নেত্রী বলেছেন অফ দ্য রেকর্ড, সেখানে আপনি বলার কে? শেখ হাসিনা আমার দিকে শুধু একবার তাকালেন। অফিসে এসে ঈদের শাড়ি কেনা নিয়ে রিপোর্ট করলাম। মানবিক হৃদয়স্পর্শী রিপোর্ট পড়ে অনেকে টেলিফোনে আমাকে ধন্যবাদ দিলেন। ক’দিন পর মিন্টো রোডে বিরোধী দলীয় নেত্রীর লাল সরকারি বাসভবনে খবরের জন্য গেলে বাহাউদ্দিন নাছিম বললেন, রিপোর্টটি পড়েছি, চমৎকার করেছেন। বাড়তি এককাপ চা খাওয়ালেন। মিন্টো রোড থেকে ৩২ নম্বর বাড়ির মুজিব কন্যার স্টাফদের সঙ্গে মাখামাখি সম্পর্ক না থাকলেও খারাপ ছিলনা।
পেশাদারিত্বের জায়গা হারিয়ে কারো সঙ্গেই লতায়-পাতায় জড়াইনি। মাগুরার সেই কলঙ্কিত ভোট ডাকাতির উপনির্বাচনের দিন শেখ হাসিনা ছিলেন সেখানে। মিন্টো রোডে বিকেল বেলা গেলে এখন যারা বিতাড়িত কয়েকজন বিকৃত ভাবে জানতে চাইলেন ‘ইন্ডিয়া থেকে শাড়ি এনেছেন কিনা- এমন প্রশ্ন নাকি তুমি করেছ’-বলে প্রায় তেড়ে আসলেন। এদের অবস্থা এখন খারাপ থাকায় নাম নিলামনা। আরেকজন এসে বললেন, জানেন এই প্রশ্ন খালেদা জিয়াকে করলে, আপনাকে হুট খোলা জিপে উঠিয়ে নিয়ে যেত। আমি শুধু বললাম, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারকে যদি প্রশ্ন করা যায়- সামারের পোশাক কী? আমার দেশের নেত্রীকে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদের শাড়ি কিনেছেন কিনা- এ প্রশ্ন করাই যায়। সেদিন অফিসে ফিরে বলেছিলাম, আওয়ামী লীগ বিট আমি আর করবনা। সম্পাদক ও বার্তা সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী এবং মরহুম আহমেদ ফারুক হাসান আমাকে বুঝিয়ে শান্ত করলেন। ছাত্রলীগ করেছি এই বৃত্ত ভেঙ্গে পেশাদারিত্বের জায়গায় নিজেকে দাঁড় করাতে আমার দীর্ঘ সংগ্রাম করতে হয়েছে। ‘৯৬ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে ওয়েস্ট মিনিস্টার ডেমোক্রেসি স্টাইলে সংসদে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্ব চালু করেছিলেন। বিএনপি সংসদ বর্জন করে সেদিন সুযোগটি হাতছাড়া করেছে। সংসদেও শেখ হাসিনার উপস্থিতি বেশি। সংসদে মন্ত্রীর জায়গায় সদস্যদের স্থায়ী কমিটির সভাপতি তিনিই শুরু করেছিলেন। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে তৃণমূলে নারীর ক্ষমতায়ন তার হাত দিয়েই ঘটেছে। সরকারি টেলিভিশনের বাইরে প্রাইভেট টিভি চ্যানেল আকাশ-সংস্কৃতির দুয়ার খুলে তার সময়েই মানুষকে চোখ খুলতে সাহায্য করেছে। আইটি সেক্টরেও অভাবনীয় অর্জন তার হাত দিয়েই। নৈতিক সাহস থাকলে, মেধা ও যোগ্যতা থাকলে প্রিন্ট মিডিয়ার যারা সেখানে গিয়ে বন্দনা করছেন তারা নিজ নিজ কাগজে লিখতে পারেন। কই লিখেন না তো ! টিভি চ্যানেলের যেসব জাম্বুম্যানরা আমিত্ত্বের পাহাড়ে দাড়ান তারা পারলে ডকুমেন্টারি করুন-সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের। কিন্তু তা না করে সংবাদ সম্মেলনে গিয়ে কেন এই চাটুকারীতা?
২০০১ সালের নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পরদিন ঢাকা যখন প্রায় ভূতুড়ে নগরী তখন বিকেল বেলা তৎকালীন শেরাটন হোটেলে শেখ হাসিনাকে দাঁড়িয়ে সরাসরি প্রশ্ন করেছিলাম, সংসদে কি আপনারা যাচ্ছেন? তার ‘৯৬ শাসনামলে পার্বত্য শান্তি চুক্তি, গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি নিয়ে সংবাদ কর্মীরা সরাসরি প্রশ্ন করেছেন। কখনো তিনি ক্ষুব্ধ বা বিরক্ত হননি। বিএনপির মুখপত্র দৈনিক দিনকালের রিপোর্টার রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দিনের প্রেস সচিব মোখলেছুর রহমান চৌধুরীকে তিনি প্রশ্ন করার বেশি সুযোগ দিতেন। মিডিয়া বান্ধব শেখ হাসিনাকে সংবাদ সম্মেলনে বরাবরই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অথবা মাননীয় বিরোধী দলের নেত্রী বলে সম্বোধন করেছি। পেশাদারিত্বের এই মর্যাদা সেদিন আমি একা নই, আমার অগ্রজ-অনুজরাও রেখেছেন। ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা গণরায় নিয়ে আবার ক্ষমতায় আসেন। দিল্লী সফর শেষে ঢাকায় ফিরে এসে শীতের বিকেলে হোয়াইট হাউজের আদলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বাইরে সবুজ লনে সংবাদ সম্মেলন করলেন। রিপোর্টাররা প্রশ্ন করার সুযোগই পেলেন না। অনেক সম্পাদক ও কিছু সিনিয়র সাংবাদিকের নেত্রী বন্দনার ভাষণ দেশবাসী লাইভ টেলিকাস্টে দেখেছে। একজন সাহিত্যিক ও তৎকালীন প্রভাবশালী দৈনিকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক অন্যদের সঙ্গে চাপার জোরে না পারায় তার লেখা কলাম পাঠ শুরু করেছিলেন। সেই থেকে সংবাদ সম্মেলন মানেই পেশাদারিত্বের জায়গায় দাঁড়িয়ে সরাসরি প্রশ্ন নয়, অনুকম্পা, করুণা লাভের পথে আনুগত্য প্রকাশের রুচিহীন বন্দনা শুরু হয়েছে। এটা গণতন্ত্র ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কখনোই যায়না। প্রধানমন্ত্রী নিজেও হয়তো আড়ালে হাসেন দলকানা স্বার্থান্ধ সাংবাদিকতার নমুনা দেখে।
আওয়ামী লীগের জনসভা একসময় পল্টনে হত। জনসভার শুরুতে সকল ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ থেকে পাঠ করে তার অর্থ বুঝিয়ে দেয়া হত। আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত সুধাংশু শেখর হালদার এক জনসভায় গীতা পাঠ করে অর্থ বলতে গিয়ে এমন ভাবে শুরু করেছিলেন যে, মনে করেছিলেন মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা বিগলিত হবেন। কিন্তু শেখ হাসিনা মঞ্চ থেকে সঙ্গে সঙ্গে তাকে পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন এসব গীতায় লেখা আছে নাকি? সর্বশেষ ইন্দোনেশিয়া থেকে ফিরে এসে প্রধানমন্ত্রী যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন, সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের একজনের প্রশ্ন ছিল এরকম- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি দয়া করে তিন মাসের অবরোধ থেকে বিএনপিকে বের করার জন্য সিটি নির্বাচন দিয়েছেন। কিন্তু তারা সিটি নির্বাচনকে আপনার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ হিসেবে নিতে চায়- বিষয়টি কীভাবে দেখছেন? এই সাংবাদিক আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ঢাকায় ব্যাংক ও টিভির মালিকানার অংশিদারিত্ব পেয়েছেন। এক সাংবাদিক সরাসরি প্রশ্ন করেছিলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনকালীন সময়ে আমরা মুক্ত সাংবাদিকতা করতে পারবো কিনা- এর জবাব প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন আপনি এখন যেমন মুক্ত সাংবাদিকতা করছেন, তখনো তেমনি পারবেন। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে আরেকজন দাঁড়িয়ে বললেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আজকের সংবাদ সম্মেলনে চল্লিশটি ক্যামেরা দেখে আমি গর্বিত। এসব আপনার অবদান। আমার মনে আছে ৯৬ সালে আপনি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন বিটিভি আসত আর ইটিভি থেকে আমি আসতাম। বেসরকারি খাতে গণমাধ্যম দেয়ায় আমার মত অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এজন্য আমরা আপনার কাছে কৃতজ্ঞ। পরে তিনি ভূমিকম্প নিয়ে দু’টো প্রশ্ন করেন। আরেক সাংবাদিক জানতে চান বিএনপি ঢাকা সিটি ভাগ হওয়ায় দুই দিন হরতাল দিয়েছিল। এখন তারা বিভক্ত ঢাকা সিটির নির্বাচনে এসেছে। এটা তাদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড কিনা? প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারাতো সব সময়েই ডাবল স্ট্যান্ডার্ড। কিন্তু আরেক সাংবাদিক বলে উঠেন তারা মাল্টি স্ট্যন্ডার্ড।
এর আগের এক সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক চাকরিই চেয়ে বসলেন। কী সাংঘাতিক। সভ্য গণতান্ত্রিক দুনিয়ায় এমনটি ঘটে না। এভাবেই সংবাদ সম্মেলনকে উপস্থিত সাংবাদিকরাই পেশাদারিত্বের বৃত্তের বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ওইখানেও একই অবস্থা। যেন সাংবাদিক নয় দলীয় কর্মীরা প্রশ্ন করছেন। অনেকে বলেন, টানা অবরোধের কর্মসূচির ফাঁদে খালেদাকে দলকানা সাংবাদিকরাই টেনে নামিয়েছেন। দলীয় সাংবাদিকতা স্বাধীনতাপূর্ব বাংলাদেশেও ছিল। কিন্তু সেটি ছিল আদর্শ নির্ভর। স্বাধীন জাতিসত্ত্বার প্রশ্নে অবিচল।
এরশাদের সেনা শাসন জমানায় বঙ্গভবনে কবিতা পাঠের আসর বসত। যেসব কবিরা যেতেন তাদের বলা হয়েছিল রাজকবি। এখন গণতন্ত্রের ২৪ বছরে রাজকবি, রাজ সাংবাদিকতা, রাজ বুদ্ধিজীবী, রাজ শিক্ষক, রাজ লেখক, রাজ সংস্কৃতি কর্মী ও রাজ আমলা চারদিকে ডালপালা মেলেছে। মানুষ নয়, দুই দলের স্বার্থ রক্ষায় তাদের ঘুম নেই। সদ্য সমাপ্ত তিন সিটির মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী দিল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। বিএনপি’র পক্ষে শত নাগরিক কমিটির ব্যানার নিয়ে অশীতিপর বৃদ্ধ ঢাবির সাবেক উপাচার্য প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমদ দলীয় পেশাজীবীদের নিয়ে মাঠে নামলেন। লঞ্ছিত হলেন। তবুও আশা কোনদিন বিএনপি ক্ষমতায় এলে যদি রাষ্ট্রপতি হওয়া যায়। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর হয়ে সব্যসাচী লেখক অশীতিপর বৃদ্ধ সৈয়দ শামসুল হক পরানের গহীন ভিতরের মতো কাব্যগ্রন্থ, নিষিদ্ধ লোবান ও খেলারাম খেলে যা’র মতো কালজয়ী উপন্যাস এবং পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় আর নূরুলদীনের সারাজীবনের মতো অসাধারণ কাব্যনাট্যের রচয়িতা মাঠে নামেন দলকানা পেশাজীবীদের নিয়ে। আহা! যদি অনুকম্পা মিলে! দুই শিবিরে রাজকবি, লেখক, সাংবাদিক, আমলা, ডাক্তার, প্রকৌশলীর একটা অংশ তেলের নহর বইয়ে ছুটছেন। আর মানুষ বলছেন খেলারাম খেলে যাও। এত তেল কই পাও?
(দৈনিক মানবকণ্ঠে প্রকাশিত পীর হাবিবুর রহামনের এ লেখাটি সরাসরি তুলে ধরা হলো।)
দল কানা শব্দটির জন্য আপনাকে ধন্যবাদ