কৃষিতে সয়ং সম্পূর্ণ বাংলাদেশের সফল মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক
চলতি বছর কৃষিতে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর ক্রমহ্রাসমান আবাদি জমির সাথে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার বাড়তি চাপ মোকাবিলা করেও ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ৪৫৫.০৪ লাখ মেট্রিক টন দানা জাতীয় খাদ্য উৎপন্ন করেছে বাংলাদেশ। শুধু দানাদার ফসল নয় শাকসবজি, আলু, ডাল, পেঁয়াজ, তেল, মাছ, মাংস, দুধ, ডিমসহ প্রায় সব পর্যায়ে প্রভূত সাফল্য অর্জিত হয়েছে বলে দাবী সয়ং কৃষি মন্ত্রীর। এছাড়াও পাট রপ্তানিতে ও ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম স্থানে উঠে এসেছে। ধান, পাট, পেঁয়াজ, সবজি, আলু, আম, পেয়ারা, চাসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান এখন সূচকের ঊর্ধ্বক্রমে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনে কৃষি মন্ত্রণালয় এ বছর ৩৩.৬২ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন করেছে। যে কারণে চলতি বছর রমজানে সর্বপ্রথম পেঁয়াজের দাম ২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের থেকে ৭ লাখ মেট্রিক টন বেশি উৎপাদন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ পেঁয়াজ উৎপাদনে এ বছরে বিশ্বের ৩য় স্থান অধিকার করেছে। আর এ কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি কৃষি মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এরও। তার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছুটে বেড়ানো, কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে সরাসরি সম্পর্ক তৈরি ও কৃষকের পণ্য কৃষক বিক্রি করার মূল মন্ত্র প্রয়োগের কারণে এ সাফল্য অর্জিত হয়েছে বলে মনে করেন দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল ও ভোলার সাধারণ মানুষ।
কৃষিজমি কমতে থাকা, জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ তাই বিশ্বে অনন্য উদাহরণ। ধান, গম ও ভুট্টা বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। সবজি উৎপাদনে তৃতীয় আর চাল ও মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। এই অগ্রগতি নিয়ে কৃষি মন্ত্রী জানান, বর্তমান সরকারের পরপর দুই মেয়াদে চার দফায় সারের দাম কমানো হয়েছে। ১০ টাকার বিনিময়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, সেচের পানির ভর্তুকির টাকা সরাসরি কৃষকের একাউন্টে ট্রান্সফার করা এবং সেই সঙ্গে ১ কোটি ৮২ লাখ কৃষকের মাঝে উপকরণ সহায়তা কার্ড বিতরণ করা।যুগান্তকারী এসব পদক্ষেপের ফলে কৃষিতে এই ঈর্ষণীয় সাফল্য এসেছে। বর্তমান সরকারের প্রবর্তিত কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড দেশে ও বিদেশে বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়েছে দাবী করে কৃষি মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশের অনুসরণে ভারত সরকার কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে।
সম্প্রতি ভোলার কৃষি অঞ্চল পরিদর্শন করে কৃষি মন্ত্রী আরও বলেন, ভোলার লবণাক্ত জমিতে চাষ হচ্ছে ব্রি ধান ৬৭, বিনা ধান ১০। ভু্ট্রা, মুগ, সয়াবিন, সূর্যমুখী, শশার আবাদ দিন দিন বাড়ছে। তরমুজের ফলনও ভালো চলতি বছর । এছাড়া, পেঁয়াজ, বার্লি, পুঁইশাকসহ বিভিন্ন সবজি ফসল চাষ খুবই সম্ভাবনাময়। সরকারের প্রণোদনা পুনর্বাসন র্কাযক্রমের ফলে এসবের আবাদ দিন দিন বাড়ছে।
ফসলের এই আবাদ ও সম্ভাবনা সরেজমিনে দেখতে গত ১০ এপ্রিল রবিবার ভোলার সদর উপজেলার চর মনশা গ্রামে সমন্বিত ফল বাগান, বারোমাসি আম, সূর্যমুখী, চিনাবাদামসহ তেল জাতীয় ফসল ও পেঁয়াজের মাঠ পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ সরকারের কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক এমপি।
এসময় মন্ত্রী বলেন, বছরে ৮-১০ লাখ টন পেঁয়াজ আমাদের আমদানি করতে হয়। আমাদের প্রয়োজনের সময় ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। দেশে দাম বেড়ে যায়। আমরা পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চাই। ভোলায় বারি উদ্ভাবিত বারি-৪ পেঁয়াজের ফলন ভাল, সুস্বাদু। এটিকে আমরা সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। পেঁয়াজে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন নয়, ২-৩ বছর পরে পেঁয়াজ রপ্তানিও করতে পারবো বলে দাবী করেন কৃষি মন্ত্রী । এসময় মাঠে কর্মরত কিছু কৃষি শ্রমিকদের সাথেও কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী।
ড. আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, কৃষিতে বর্তমান সরকারের লক্ষ্য হলো কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা ও কৃষককে লাভবান করা। কিন্তু মুনাফাখোর, পাইকার ও আড়তদার, মধ্যস্বত্বভোগী, সামাজিক সমস্যা, চাঁদাবাজি প্রভৃতির কারণে কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য পায় না। মধ্যস্বত্বভোগী সারা পৃথিবীতেই আছে। কৃষকেরা তো সরাসরি কাওরান বাজারে পণ্য বিক্রি করতে পারবে না, কাউকে না কাউকে মাঝখানে দায়িত্ব নিতে হবে। কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগী যাতে কৃষক এবং ভোক্তাকে শোষণ ও ঠকাতে না পারে, তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। এটি নিশ্চিত করতে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।
কৃষি মন্ত্রী সম্পর্কে কিছু তথ্য
টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিবিদ ড. আব্দুর রাজ্জাক প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সরকারের কৃষি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ৭ জানুয়ারি ২০১৯ এ। এর আগে তিনি ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে টাঙ্গাইল-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরপর চারবারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ড. আব্দুর রাজ্জাক ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তৎকালীন খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং পরবর্তীতে ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ড. আব্দুর রাজ্জাক টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি গ্রামে ১৯৫৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম জালাল উদ্দিন এবং মাতার নাম রেজিয়া খাতুন। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং ১৯৭২ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৮২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পারডু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি অর্জন করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের পর তিনি যুক্তরাজ্যের অ্যাঞ্জেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ালেখা করেছেন। বাংলাদেশে ফার্মিং সিস্টেম রিসার্চ ও স্থায়ী গ্রামীণ কৃষি উন্নয়ন বিষয়ে তিনি অন্যতম একজন বিশেষজ্ঞ।
রাজ্জাক বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনে (বিএডিসি) একজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু করেন এবং ২০০১ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি জীবন শেষ করেন এবং একইবছর প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে শেখ হাসিনার চতুর্থ মন্ত্রিসভায় তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া ২০১৬ সাল থেকে তিনি আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটি সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। একজন সৎ ও সুবিবেচক মন্ত্রী এবং সাংসদ হিসেবে শুধু নিজ এলাকা নয়, সারাদেশে তিনি সমান জনপ্রিয়।