অশ্বগন্ধার ঘুম
মুহাম্মদ নুরুল হুদা
তোমার পলিতে আমি অশ্বগন্ধা
ফুটে আছি সবুজ নিদ্রায়,
তোমার আমার সখ্য প্রাচীন মিশর
হয়ে এশিয়ায় মেসোপটেমিয়ায়,
বিদিশার নিশা হয়ে বঙ্গদেশ হয়ে
বৈদিক ভারত হয়ে লঙ্কাদ্বীপে যায়,
যায় দেশ থেকে মহাদেশে
সর্বরোগহর হয়ে ত্রিলোক সীমায়;
তোমার শক্তির ভ্রূণ
জন্মে-জন্মে প্রজন্মের সেতু,
স্নায়ুতে স্নায়ুতে আয়ু
প্রাণি মাত্রে বাড়ায় যেহেতু
তুলেছি মানব পাল
আশরীর মনদরিয়ায়;
মানুষ বসত করে
মহাপ্লাবনেও নবী নূহের নৌকায়;
আয় তোরা কে কে যাবি
লগ্নমগ্ন জোড়ায় জোড়ায়!
অশ্বগন্ধা নর আর অশ্বগন্ধা নারী
দুঃখের দহন বুকে সুখে নিদ্রা যায়।
বিদ্রঃ ব্যাপক স্বসম্পাদনা শেষে নতুন পাঠ দেয়া হলো।
পাপড়ি ও পরাগে উঠবে মেতে ?
হেনরী স্বপন
কিছুক্ষণ আগে দেখলাম,
প্রার্থনার পিঁপড়েরা এক হয়েছে এক টুকরো
চিনিরদানার চারপাশে–
টমেটো ক্ষেতের মতো রঙিন প্রার্থনাগুলো
জামার বোতাম খুলে দেখছে সবাই…।
অথচ এখনো একগুচ্ছ খুচরো পয়সা পকেটের মধ্যে দুলছে মর্মর শব্দে ;
কিছু নিরবতা ভাঙ্গছে গির্জার মখমল কার্পেটে জড়ানো ভয়ে,
কিছু স্পর্শ কাঁপছে ভূমিকম্পের মতো–
.
তাহলে এবার, তোমার উদ্যানে ফুটবে যে ফুল, পাপড়ি ও পরাগে উঠবে মেতে ?
………………………………..
বরিশাল, ০৩/০১/২০১৯
রূপোলী নদীর মেঘ
———-মামুন মোয়াজ্জেম
এক আসমান মেঘ তোমাকে দিলাম
তুমি রৌদ্র হলে ফিরিয়ে দিও হাসি-
নদীর চিলিক জলে রূপোলী দন্ত দেখিয়ে
হাওয়ামে উড়তা দিও লাল দোপাট্টা
ভরা নদীর মায়া যৌবনের পেয়ালা দিও উগড়ে !
জলের কাছে তারও নীচে ইলিশের কাছে
তুমি সমর্পিত হলে ওই আকাশ ফিরিয়ে দিও ।
আমারও দুচারটে আকাশের মালিকানা
খুব দরকার-
দু’তিনটে চাঁদ আর তেজোদ্দীপ্ত একটি সূর্যের
কোমল ও তেজের খেলার আকাশ ক্রীড়া মাঠ !
মেঘেদের বাড়ি গেলে কোমল ধোঁয়ার ওপর
তক্তপোষে সাজিয়ো হাওয়াই মিঠাই
আমিও নামবো জলে একটু পরে পা দুখানি মেলে
যেমন অচিন গাঁ পা ডুবিয়ে বসে থাকে নদীয়
তার কিনারে কৌশলী শেকড়ের মতো
একটু একটু নেবো জলের সুস্বাদ ।
এক দিগন্তে এক করে আকাশ ও নদীর মালিকানা
তোমাকে দেবো-
তুমি রৌদ্র হলে স্বত:স্ফূর্ত হাসি সাজিয়ো !
ঈর্ষা
ঈর্ষাগুলো তামাক বনে, স্বপ্নগুলো কই
নীরবতার এই চাতালে ফুটছে কথার খৈ
চোখের মতো চিহ্নগুলো প্রশ্ন হয়ে ফোটে
মানুষ কেন আলয় ফেলে দিগ্বিদিকে ছোটে?
স্বপ্নগুলো ঈর্ষা রঙে রাঙাচ্ছে আসমান
আগুনমুখো জোনাক গায়ে জড়ায় আলোয়ান
টেবিল জুড়ে পদ্যপিঠা মগজ জুড়ে সুর
মানবতার জয়ধ্বনি ছড়াচ্ছে অসুর
সুন্দরবন রূপ হারালে বেবাক মুখে কালি!
ঈর্ষাগুলো পালিয়ে যেতেই মুখর হাততালি…
রহমান হেনরীর কবিতা
সুবহে সাদিকে, আমরা, একটা তাগড়া ষাঁড় জবাই করি।
নিজেরাই প্রসেস করি। মাংস পাঠাই রান্নাঘরে। সকালের
নাস্তায়— আমাদের টেবিলে উঠে আসে মহিষ-ভূনা।
বিস্ময়ের গালিচা ফুঁড়ে বেরিয়ে আসতে চায় আমাদের
চোখ দাঁত জিহ্বা।
অগত্যা, পরের বারটির অপেক্ষা।
সুবেহ সাদিকে, আবার আমরা,
জবাই করি— লকলকে খাসি।
নিজহাতে প্রসেস করি। এইবার,
নিজেরাই ঢুকে পড়ি— রন্ধনশালায়।
নাস্তার টেবিলে উঠে আসে—
বকরি-ভূনা। ব্যাঁ ব্যাঁ করতে করতে,
আমাদের সবাইকে টেনে নিয়ে যায়
ভাদাল ঘাসের জঙ্গলে…
এভাবেই, একটা ম্যাজিক রিয়েলিটির মধ্যে ঢুকে পড়ে—
আমাদের মাংসাশী জীবন। আমাদের কণ্ঠস্বর ফুঁড়ে
বেরিয়ে আসে: গরু-মহিষ-বকরি-ভেড়ার মিলিতধ্বনি—
.
✔️
.
.
#রহমানহেনরী; #RahmanHenry
নাসরীন জাহান এর কবিতা
একটা অগ্নিময় জলরেখা শরীর বেয়ে
নিচে নেমে যায়।
বাতাসে দীর্ঘশ্বাস ছড়িয়ে দিই।
সেভলন,,সেভলন।
হাসপাতালের ছাদটা যেন একটা মিনি আসমান।
সমস্ত পোড়ামুখে ব্যান্ডেজ।
নিগুঢ় স্ট্যাচু হয়ে পড়ে থাকতে ইচ্ছে করে।
কিন্ত তীব্র যাতনা আমার সারা রক্তস্রোতে
বিষ পিঁপড়ে ছেড়ে দিয়েছে
নীল হিম রাত্রিতে তালের শাঁসের মতো আমার চোখ জেগে থাকে।
মহাস্বপ্নভাংগা প্রেমের দিকে আমার রক্তাক্ত আত্মা
নিথর চোখে চেয়ে থাকে।।
শাদা ঝুটি নার্সের মুখ ঝুঁকে আসে,কষ্ট হচ্ছে?
সমূলে ঘুরে দাঁড়ায় সত্তা,
আমার হন্তারকের মুখে থুতু ছিটিয়ে দেয়।
বলি,কষ্টের সাধ্য কি আমাকে কষ্ট দেয়?
অন্তরঙ্গ দৃশ্যাবলী
মৈথিলী
তুই আমায় শরীরী বললেই
এ শরীরে ভর করে যত কালকেউটের বিষ,
তুষের আগুনে ছারখার আমার পরকীয়া,
আমার নাভি উথলানো শেওলা
তোর অস্তমিত হাতের মুঠোয় তুলে দিয়ে
আমার কান্না পায়, ভীষণ এক কান্না
আমি নই মেনকা, নই রম্ভা, নই ঊর্বশী
তবু মৃদঙ্গ ভালো লাগে,
ভালো লাগে পিশাচের ডাক,
নিঃসঙ্গ বালিয়াড়িতে ভালো লাগে
ভরণ আর স্খলনের খেলা,
খেলা শেষ হলে মেঘ আকাশে উড়ান দেয়
পড়ে থাকে ঘুম ঘুম আজানিয়া সুর।
ঘাসের আগায় রক্ত শিশির
অকালে ঝরেছে কতো প্রাণ,
সুবাসিত রফিক বরকত জব্বারেরা-
রেখে গেছে প্রাণপনে-
বাংলা ভাষার মান।
তাই-লক্ষ মোমের মিছিল হাতে
মোম,মন কাঁদছে পুড়ে পুড়ে,
শহিদরা জ্বলছে-বোমা,বারুদহীন
যেনো সেই অগ্নি সমুদ্দুরে।
নীরবে বসে আজও শুনি তাই
স্বাধীন বাংলা ভাষার গান,
হারিয়েছি যুদ্ধে যাদের-
অলক্ষে খুঁজে বেড়াই তাদের
বেদীতে জানাই প্রণম্য সম্মান।
চোখে ভাসে এই বাংলার রুপ!
মা ভোলেনা ভাইয়ের টান,
উন্মুখ-ভারত বাংলা জড়ায়ে স্নেহ!
গরবিনী ভাষাও ঠিক যেনো –
আমার মায়েরই সমান।
বিশ্ববন্দিত বিশ্বলোকে মাতৃবিশ্ববাংলা
আবার বাংলার মাঝেই ঢাল তরবারি,
দুই বাংলায় দ্বিখন্ডিত আমরা;
মাতৃকূলেই-কাঁটা তারের বেড়া
পাড়ি দিতে নাই তরি।
সংগ্রামী শহীদদের প্রাণপাত
ভাষার আত্মবলিদান কি ভুলতে পারি!
আমরাও যে বাংলা ভালোবাসি।
তাই-বাংলা অমর একুশে অমর
চির অমর একুশে ফেব্রুয়ারি।।
—-
সাথী মন্ডল
কল্যাণী,ঘোষপাড়া
নদীয়া(ভারত)
বাংলাভাষা ও অক্ষয় মাঝির কথা
★ রাসেল আশেকী
এ এক অনন্ত সময়ের নিরন্তর ভাষার কাব্যপরমা।
পৃথিবী সৃষ্টির আগে স্রষ্টার পবিত্র ভাব থেকে সৃষ্টি হয় ভাষা। সেই ভাষা রক্ষার তাগিদে, পাখির ঠোঁটে আগুন দেখে আমরা সূর্যকে প্রদক্ষিণ করলাম, এবং সূর্যের গায়ে মানুষের গন্ধ পেয়ে ভাই বন্ধু পিতা ব’লে দু’হাত বাড়িয়ে উঁচুগলায় ডাকতে থাকলাম, সূর্য নেমে এলো পৃথিবীর বুকে সত্য-সত্য ব’লে।
আমরা সত্যকে শিল্পে, শিল্পকে সৌন্দর্যে এবং সৌন্দর্যকে সুন্দরে রূপান্তর করলাম। সুন্দর নিজেকে
ছড়িয়ে সবার মাঝে, জগৎ-সংসারের নির্মোহ দীপ্তিতে
হয়ে উঠল সবার মধ্যমণি– খুলে দিল গৃহবন্দি মানুষের চোখ-কান। কিন্তু প্রতিভাশূন্য কিছু বর্বর মেঘ তাঁকে ঘিরে ফেলল শ্যেন দৃষ্টির ইন্দ্রজালে, কেড়ে নিতে তাঁর মাতৃভাষা!
প্রাণভোমরার নাভি থেকে উত্থিত উত্তাপে তৎক্ষণাৎ সে হেসে উঠল এবং হাসতে থাকল, হাসতে হাসতে গুঁড়িয়ে দিল সেই অসভ্য মেঘের চালান, ডেকে বসন্ত বাতাস–
শিশিরমাখা ফুলের গালে ঝিরঝির ঝিরঝির সেই
বসন্ত বাতাস– যে বাতাস ছিল আমাদের কাছ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে, সেই বাতাস এলো আমাদের নিশ্বাসে।
আমরা রুখে দাঁড়ালাম আর প্রতিবাদে প্রকম্পিত করলাম ভাষাশত্রুর বুক! কেউ শহীদ, কেউ বীর হয়ে উদিত হলাম মাতৃভাষার বুকে শহীদ মিনার রূপে। যে শহীদ মিনার থেকে বেরিয়ে এলো পৃথিবীর প্রথম সকাল।
এমন সকাল পৃথিবীর বুকে আসেনি কখনো
এমন সূর্য কেউ দেখেনি আগে
যে সূর্যের তীর্যক রশ্মিতে আদিম কারাগারগুলো হয়ে গেল চিন্তার বাতিঘর এবং বাতিঘর বিলাতে থাকল ঘুমের ভেতরে জেগে থাকা স্বপ্ন।
আলোমুখী পতঙ্গ আর দেবদারু বৃক্ষের মতো মাথা উঁচু করে আমরা স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম এবং মৌমাছির
মতো জীবন বাঁধলাম তাঁর টানে।দেখলাম জীবনীশক্তির অবিনশ্বরে সে মৃত্যুহীন, ঐশ্বরিক শক্তির প্রবাহে অটল এক অক্ষয় মাঝি!
কখনো আকাশতলায় কখনো ভূ-পৃষ্ঠের জ্যোতির্ময় ছায়ায়, কখনো রৌদ্রের আঙুলে তুলে সারাজাহানের তেজ, হয়ে বাতাসের বাঁশি,জনসমুদ্রে আকাশ সৃষ্টির দৃষ্টিতে, আমাদের ভেতর থেকে সে হয়ে উঠল জন্মমাটির সমুদয় স্বপ্নের স্বপ্নপুরুষ, সাদাপৃষ্ঠার মতো সজীব আত্মায় গ্রন্থিত অমোঘ রাজ্যের রাজা, আর কঙ্কালে প্রাণ যুক্ত করে মৃত্যুকে জয় করা কবিতার কবি সমকালে পূর্ণ করে মহাকালের দায়িত্বভার–
দিল ভাষা, দিল স্বাধীনতা।
মনে পড়ে, অর্ধমানুষ অর্ধপশু তাড়ানো রাখালের মতো
নদী ও বায়ুপোষা শক্ত সুঠাম গর্দানসীন সেই অক্ষয় মাঝির কথা!
যার যাদুময় কণ্ঠের থেরাপিতে, সত্যেশ্বর প্রাণেস্মরে
জাগতো মাটি, নামতো আকাশ, মানুষের ময়দানে স্বাধীনতার মাঠে। আমরা থাকতাম প্রবাহে প্রাণবন্ত, উৎসবে পঞ্চমুখ।
কিন্তু মৃত আত্মার কিছু জীব তাঁকে হত্যা করে রাখল
পূজার বেদিতে, বসাল দেবতার আসনে!
তারাও ছাই-ভস্ম হয়ে উড়ে গেল চিরমৃত্যুর কাফনে!
ভালোবাসা ফিরে গেল স্বর্গে,নেমে এলো নরকের যন্ত্রণা
বিষবৃক্ষের ছায়াতলে!
কেউ দেখল, কেউ দেখল না, কেউবা আসন গাড়লো সিংহাসনের লোভে!
আর মনভাঙা মনমরা মানুষের দৃশ্য দেখতে দেখতে
আবেগভরা নারী ও মায়াকুমারীর মতো কান্নারত চোখে
নদী ও মাঠগুলো আরেকজন মাঝির আগমনের দিনক্ষণ গুনতে লাগল! আমি বললাম, মাঠবেষ্টিত নদীসকল শোনো– আবর্জনাস্তূপ থেকে বেরিয়ে দেখো, এসে গেছে সেই রাখাল, সেই মাঝি– কণ্ঠে তুলে-‘ আমি বাঙালি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলা আমার দেশ।’
ওরা মুগ্ধশ্রোতার মতো তা-ই হোক, তা-ই হোক ব’লে
স্রোত ঘুরিয়ে দিল মহাস্রোতের দিকে, মহাগর্জনে জেগে উঠল মানবদরিয়া! যার অমিত তরঙ্গ তোড়ে স্বর্ণালি বর্ণমালায় গাঁথা অসম সাহসী বাংলাভাষা সেই অক্ষয় মাঝির মতো শহীদ হতে হতে ফিরে পেল অনুভূতির তীব্র আলো, অনন্ত জীবন, স্বাধীনসত্তায় নিজেকে ছড়িয়ে বিশ্বময়–
ইউনেস্কো থেকে জাতিসঙ্ঘ, বটতলা থেকে পৃথিবীর হৃৎপিণ্ড, সর্বত্র, হেসে উঠল আমাদের প্রিয় বাংলাভাষা, প্রিয় বাংলাদেশ।
★ রাসেল আশেকী
ধানমন্ডি, ঢাকা
জীবন নজরুল এর কবিতা
র্বক্ষণ অজানা এক অনুভূতি
জলের মতো বন্দী রাখে।
এপেন্ডিক্স ঝুলে থাকা সৌন্দর্যের ছাপচিত্র।
মানুষ বিমূর্ততায় মুগ্ধ; অসহায় অসহিষ্ণু
শিশুর হাসি চাঁদের আলোয় গলে গলে
বৃষ্টির ফোঁটা জমে আমার অন্ধ চোখে।
দিগন্তে মা বসে বসে শৈশব সাঁজাতে ব্যস্ত;
আমি ভুল পথে ভুল মানুষের কাছে
উনুনে জ্বলি আগুন।
খুঁজি
খুঁজতে থাকি মায়ের কাছে সাজানো পুতুল।
ভালোবাসা নিরন্তর, আমি
ডুবে ভেসে ওঠে আবার ডুবি, তলিয়ে যাই
রঙিন ঘুড়ি, জোস্নায় কোমল ঠোঁটের মায়ায়
নিমিষেই উধাও রোদ, শুধু ঝরাপাতা চারদিক।
পিছনে দেখবো বলে সামনে তাকাই, দিকহীন সময়ে
ভালোবাসা ফেরি করি বিবিধ নিষেধাজ্ঞা রঙিন।
শীতকালে আইল্লার আগুনে পুড়ে যাবার আগে পুড়েছি বিশ্বাসহীনতায়।
ভালবাসার ব্যাধিতে জীবন বিলিয়ে নিরাপদ
থাকি অসুখে।
জীবন নজরুল
২৯/১০/২০১৮
একগুচ্ছো ছড়া
(এক)
শরৎ এলে
চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু
শরৎ এলে দোল খেয়ে যায়
সাদা কাশের বন,
তুলোর মত মেঘ গুলো সব
উদাস করে মন।।
শরৎ এলে শিশির ভেজা
ঘাসের ডগাই হাসে,
মাঠে মাঠে পাগলা হাওয়ায়
সবুজ ফসল ভাসে।
শরৎ এলে শাপলা শালুক
নদীর জলে ফোটে,
দুষ্টু ছেলে সাঁতার কেটে
অমনি সেদিক ছোটে।
শরৎ এলে পাখীর গানে
জুড়ায় সবার প্রান,
অাকুল করে শিউলী টগর
জুঁই চামেলীর ঘ্রান।
শরৎ এলে জোনাক মেয়ে
ছড়ায় শুধু অালো,
এই শরতে অানন্দ ঢেউ।
তাইতো লাগে ভালো।
(দুই)
হেমন্তর ছড়া
চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু
মিষ্টি শীতের নবান্নতে
হেমন্ত তাই এলো,
সবুজ মাঠে অানন্দতে
সুখটা ফিরে এলো।
তুলোর মত সাদা সাদা
মেঘগুলো সব ভাসে,
গাছে গাছে পাগলা হাওয়ায়
শিউলি টগর হাসে।
ভােরের বেলায় ঘাসে ঘাসে
শিশির কণা ঝরে,
ধুম পড়ে যায় পিঠা পুলির
এই বাঙালির ঘরে।
খেজুর গাছে মাটির কলস
রস পড়ে টুপ টুপ,
হেমন্তের এই শীত অামেজে
সবাই থাকে চুপ।
মাঠে মাঠে সোনালী ধান
চাষীর মুখে হাসি,
হেমন্তকাল অালোর ঝলক
মুক্ত তারার রাশি।
(তিন)
অাজব খবর শুনি
চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু
ওপাড়াতে অাজব খবর
তোমরা কেউ জানো?
ঘোড়া নাকি ডিম পেড়েছে
কেউ কি বলো মানো।
কোকিল নাকি পাহারা দেয়
সারাটা রাত জেগে,
কথা শুনে সিংহ মামা
তাইতো ওঠে রেগে।
অাসলো ঘোড়া দলে দলে
দেখবে এবার তারা,
এ সব খবর পাড়ায় পাড়ায়
ছড়ায় বলো কারা।
চালাক শেয়াল ছড়িয়ে খবর
দিচ্ছে সবার ধুলো,
ঘোড়া তো নয় ডিম পেড়েছে
লাল মুরগি গুলো।
কথা শুনে বনের পশু
হাঁ হাঁ করে হাসে,
বাঘ ভাল্লুক হরিণ হাতি
সবাই ছুটে অাসে।
(চার)
বাঙালীর কবি
চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু
রবীন্দ্রনাথ খাঁটি বাঙালী
সন্দেহ কারো অাছো ?
মায়ের টানে মাটির টানে
যারা থাকে কাছে কাছে।
অাকাশ নিয়ে বাতাস নিয়ে
লিখেছে হাজারো কবি,
ফুলের কথা ফলের কথা
গাছের কথা সবই।
শিশুর কথা লিখেছে ছড়ায়
জল টুপ টুপ করে,
একে্ছে কবি কত নানা ছবি
সব কিছু মনে পড়ে।
বিশ্বের সেরা বাঙালীর কবি
নোভেল পেয়েছে তাও,
তার গান শুনে মন উড়ে যায়
তুমি যদি গান গাও।
বাইশে শ্রাবণ এই বড় কবির
হঠাৎ হলো প্রয়াণ,
বাঙালীর মনে বিশ্ব জুড়ে
অাজও কবি অম্লান।
ধর্মে ‘মতি’ নেই
— অপূর্ব গৌতম —
মেয়ের বাবা তার হবু জামাইয়ের চারিত্রিক, আর্থিক খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা করছেন। হঠাৎ তার মনে পড়লো কলেজ বন্ধু এ্যালবার্ট ফস্কি ঐ এলাকার বাসিন্দা। অন্যান্য বন্ধুদের সহায়তায় এ্যালবার্ট ফস্কি’র মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে তাকে ফোন করল। মেয়েকে বিয়ে দিতে চাই তোমাদের এলাকায় ইত্যাদি অনেক গল্প হলো দুই বন্ধুর। ছেলের চারিত্রিক, আর্থিক সম্পর্কে জানতে চাইল মেয়ের বাবা জীবন সুন্দর ভরসা। এ্যালবার্ট ফস্কি তার বন্ধুকে বলল, মেয়ে বিয়ে দিবা-এটাতো একদিনের জন্য নয়, ভালোভাবে ভেবে চিন্তে বিয়ে দেয়াই ভাল। তার এই কথায় কিছুটা হোচট খেলো জীবন সুন্দর। বিভিন্নভাবে এ্যালবার্ট ফস্কির কাছে জানতে চাইল ছেলেটার কি সমস্যা ?
নেশা করে ? – না
দুর্নীতিবাজ ? – না
আগে বিয়ে করেছে ? – না
লুচ্চা-চোট্টা-বদমাইশ ? না
ধর্ষণ করেছে কখনো ? – না
মা-বাবাকে খাবার দেয় না ? – না
ব্যাংক ঋণে জর্জরিত ? – না
তবে ছেলেটার দোষ কোথায় দোস্ত ? এতোক্ষণ পর এ্যালবার্ট ফস্কি উত্তর দিল-ছেলেটার ধর্মে ‘মতি’ নেই। মানেটা হলো ছেলে ধার্মিক নয়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে জীবন সুন্দর ভরসা তার বন্ধুকে জানালো ‘আমি এমন ছেলেই খুঁজছিলাম’।
আরিফ আহমেদ এর গীতিকাব্য ১০৯
শিশির ভেজা ঘাসের ছোঁয়ায়
বেশতো ছিলো জীবন
হঠাৎ করে রৌদ্র এসে
বদলে দিল ভুবন।।
মুগ্ধ আমি রোদ্রস্নানে
মুগ্ধ সকাল বিকাল
দুপুর বেলার খরতাপে
অভিশপ্ত কপাল।।
শীতের সকালে
শিশিরকণাতে
ভোরের আলোর খেলা
দুপুরের রং
মন উচাটন
গোধুলীর পড়ন্তবেলা।।
জীবনের সকাল দুপুর রাত্রি
একই সমান
ভালোবাসা ভরা মন
সব হারানোর মেলা।।
দারুণ।
Confirm that you are not a robot, and Please note an amazingpremium pay for victory. http://bit.ly/2EQ9QjH