আগুনের দিন জ্বলে জ্বলে থাকে
আগুনের রাত আলো হয়ে যায়
আগুনের বৈভব বড় ভালোবাসি।
আমাদের পার্থক্য তো
আগুনে-রূপের ভেতর।
অরূপে যে যায় না চেনা !
রূপে আকারে এই সামান্য
আগুন হয়েই জ্বলি..
না থামুক আগুনের বিভীষিকা,
মোহনীয় ঢেউ !
আগুনের আঁচে
জ্বলুক না কেউ কেউ.।
কবি স্বাধীন চৌধুরী ব্যতিক্রম তার কাব্যিক ধারায়। আবার ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রেসক্লাব কিম্বা দৈনিক পত্রিকার বা গণমাধ্যমের উন্নয়ন সাংবাদিকতার উপদেষ্টা পদমর্যাদায়ও ব্যতিক্রমী পদচারণা তার। সাহিত্য সংস্কৃতির মাঠের নিয়ন্ত্রণ, ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদ ও বীক্ষণ কার্যক্রম তাকে পরিনত করেছে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বে। তিনি কবি, তিনি লেখক, আবার লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদকও। নানাকাজের সাথে যুক্ত একজন মানুষ স্বাধীন চৌধুরী কীভাবে সামাল দেন সবদিক এ প্রশ্ন তার বন্ধু মহলে যেমন, তেমনি পরিচিতজনদের মাঝেও।
স্বাধীন চৌধুরী বলেন, পৃথিবীতে আমাদের অবস্থান খুব অল্পসময়ের জন্য। এখানেতো আমরা আসলে মেহমান বা ভ্রমণকারী মাত্র। কাজের মাধ্যমেই তো বেঁচে থাকে মৃত্যুর পরের জীবন।
একজন মানুষকে কেমন করে সাহসী সিন্দাবাদ হয়ে উঠতে হয়-তা অনুধাবন করা যায় তাকে কাছ থেকে পাঠ করতে পারলে। করোনাকালীন সংকটে তার দায়িত্বশীল ভূমিকা বলে দেয় তিনি কতোটা মানব দরদী ও পরোপকারী।
সংগঠন পরিচালনায় দক্ষতা ও দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে মাঠে চলে এসে কার্যসাধন করা তার মতো আর পেরেছে ক’জনে? এখানেই লুকানো স্বাধীন চৌধুরীর আদর্শিক এবং মুক্তকণ্ঠের স্বকীয়তার পরিচয়।
ব্যাক্তি মানুষ হিসেবে তিনি সাদামাঠা ও সাধারণ হলেও ব্যক্তিত্বে দৃঢ়চেতা ও আপসহীন একজন। যা নিয়ে সঙ্কোচে থাকেন গুরুজন আর আতঙ্কে থাকেন বন্ধুরা। অসততা নয় সততার সাথে সাহিত্য সংস্কৃতির মাঠ সবসময় সরগরম ও সচল রাখাতে চান তিনি। এমনকি তার
মুক্তচিন্তার বক্তৃতা ও লেখায়ও প্রতিফলিত হয় আপোষহীন উচ্চারণ।
“মুখের ভাষা বুকের থেকে একটু আলাদা
কেউ তো বলে, হতে পারে একই রকম
সত্যি হলে তা।
কেউ তো বলে, এমন কী যে
বলতে হবে সব কথা!
কথা অনিবার্য হলে
ঝর্ণাধারার মতো কথারা ঝরে পড়ে।
বর্ণমালার কোন ধারাবাহিকতা নয় তখন
ভাষা-ধ্বনি শব্দবন্ধের গাঁথুনিতে
সাজে অপূর্ব কথন।
বাক্যের বিভা বুকের ভেতর জ্বলে
ঠোঁটের উপর নাচে।
ও ভাষা, উচ্চারিত হও
বুকের ভেতর বাজো, ঠোঁটের উপর নাচেi একতালে…
সৃজনশীল যে কোনো কাজে তার দক্ষতা ময়মনসিংহকে ছাড়িয়ে ঢাকা, বরিশাল অবশেষে ত্রিপুরার পথেও করেছে যাত্রা। চোখের সামনে নগরের প্রায় সর্বজনবিদিত বিদিত মানুষটি ধীরে অতিধীরে কখন যে অবয়ব ফেলেছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তা হয়তো নিজেই জানেন না স্বাধীন চৌধুরী। তিনি বলেন…….
শিশু কিশোর, নবীন তরুণ, তরুণী বা যুব ও যুবতী। আমি সকলের বন্ধু। সবাই আমার বন্ধু। প্রয়োজন মুহূর্তে সকলের সাথে সমান মেলামেশা এবং উৎসাহ উদ্দীপনা প্রদান জনিত আলাপচারিতায় আমি সবসময় আন্তরিক ।
এটাই ভিন্নতা সাংবাদিক স্বাধীন চৌধুরীর। তিনি প্রয়োজনে যেমন কথা বলেন, অপ্রয়োজনে ঠিক তেমনি নীরব ও শান্ত। কৈশোর থেকে চার দশকের বেশি সময়ের পদচারণায় এক নাড়ীর টান ময়মনসিংহ শহরের মাটি ও মানুষের সাথে। এখানের নদী, জল, প্রকৃতি, সংস্কৃতি সাহিত্য গণমাধ্যম ও উন্নয়ন পরিক্রমার সাথে।
তার সকল কাজের সবকিছুতে একটি লক্ষ্য খোঁজে পাওয়া যায়- যার নাম মানবিকতা। নীরবে ও সরবে অনেক কাজ করে চলেছেন এই মানুষটি । কিন্তু বাহুল্য আওয়াজ নেই কোনকিছুতে। তাকে বলতে শুনি- ‘আমার কাছে মানুষই পরম। মানুষের সেবাতো সয়ং সৃষ্টিকর্তার সেবা। তাইতো করোনাকালীন সংকটে তার লেখায় দেখতে পাই বিপর্যস্ত পৃথিবীর মানুষের জন্য উদ্বেগ। তিনি লেখেন
“করোনা’র দিন আর করোনা’র রাত
তাতে আজ নেই যেন কারো কোন হাত।
জীবনের বোধ আর বিবেকের কথা
কেউ যেন বলে শুধু যথা আর তথা..
মানুষের মনজুড়ে কি যে অমানিশা
অহোরাত খুঁজে ফেরা জীবনের দিশা।
সাম্যের পথে হাঁটা শুরু হোক তবে
মুক্তির পথ পেতে এসো এক হই সবে।”
তার কথা ও কাজের চমৎকার মিল। যা বিশ্বাস করেন তাই করে দেখাতে সচেষ্ট এই মানুষটি একজন করোনাযোদ্ধা। সংকটময় সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন শহরময়। খাবার সঙ্কটে কষ্টে থাকা মানুষের জন্য খাবার নিয়ে, কিম্বা আরেক করোনাযোদ্ধা সমাজসেবক আলী ইউসুফ এর সাথে অক্সিজেন সাপ্লাই দিতে নয়তো অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে। ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে, বিভাগীয় প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে শুধু সাধারণ মানুষের পাশে নয়, সংস্কৃতিজনদের কাছেও উপহার হিসেবে পৌঁছে দিয়েছেন অতি প্রয়োজনীয় জরুরি খাদ্যসামগ্রী। নিজের মানবিক চেতনার সংগঠন ‘মানবিক’-এর মাধ্যমে অস্বছল পরিবারগুলোর মাঝে যথাসাধ্য খাদ্য উপহার চলমান রেখেছেন।
তিনি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসগুলোতে খাদ্য দিতে পারার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি মানব সেবায় সকলকে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করার আহবান জানান সবসময়।
সেবা দিতে যেয়ে নিজেই অসুস্থ হয়ে পরেন স্বাধীন চৌধুরী। ফুসফুস জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে কষ্ট পাচ্ছেন গত প্রায় একটি বছর। তারপরও থেমে নেই তার কার্যক্রম। ঘরে বাইরে, বন্ধুমহলে সকলের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সাহিত্য সংস্কৃতির মাঠে ছুটে বেড়াচ্ছেন জীবন-জীবিকার প্রয়োজনেও।
স্বাধীন বলেন,
সময়ের প্রয়োজনে মানুষকে যে ঘুরে দাঁড়াতে হয়। বলিষ্ঠ কণ্ঠে উচ্চারিত হয়,
‘এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।
পিছিয়ে পড়ার খোঁড়া অজুহাত অগ্রহণীয় তা মনে করিয়ে দেন অদমনীয় কবি স্বাধীন চৌধুরী।
মাহমুদুল হাসান রতন
সম্পাদক
দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ, ময়মনসিংহ