কবি আশিক আকবরের লেখনী (কবিতা ও গদ্য কবিতা)
ছেড়ে যাচ্ছি জানালা , ছেড়ে যাচ্ছি চেয়ার , ছেড়ে যাচ্ছি টেবিল ,
বারান্দা , বারান্দার সিঁড়ি , ধবধবে আঙ্গিনা , বাইডেক , বৈঠকখানা ,
ছেড়ে যাচ্ছি । পুকুরের ঘাট , ঝুপঝাঁপ সাঁতার , পুকুরে তাল পতনের ঢুপ , ছিপ বড়শী , বড়শী বেঁধা মাছের দৌড় , পানির আয়নায় গাছের দোল , ছেড়ে যাচ্ছি , ছেড়ে যাচ্ছি , মার্বেল খেলবার গোপাট , ত্রিরাস্তার মোড়ের আড্ডা , স্কুল ফেরতা কিশোরী , কাঁপা হাতে লেখা দম আটকানো চিঠি , ছেড়ে যাচ্ছি । সিমের পাতায় টুনটুনির বাসা , আম কাটা চাকু , ভর দুপুরে কাঠাল মুছির ভর্তা , ছেড়ে যাচ্ছি , ছেড়ে যাচ্ছি , কষ্ট হচ্ছে , খুব কষ্ট হছে । বুঝতেও পারছি না , নিজের হাতে কাটছি নিজের কলিজা । রক্তপাত এলে লিখছি কবিতা , শুনছি গান , দেখছি সিনেমা , এলোমেলো চালাচ্ছি পা , গুতোগুতি করছি কম্পিউটারে , ভুলে থাকতে চাচ্ছি , ভুলে থাকতে চাচ্ছি , চাইলেই কি ভুলে থাকা যায় ! ছেড়ে যাবার কালে ভুলে থাকা কি এতই সহজ ! ডাকে ডাব গাছ , ডাকে দুপুরের ঘুঘু , ডাকে পাতলা দাওয়ে কাটা পাট ক্ষেত , ডালি ভরা কলার হাটবার , বেড় জাল ফেলা মাছ ধরা ভোর , তিড়িং বিড়িং ফনিস্ক সাইকেল , বিকেলের ঘুড়ি , স্কুল পালানো ম্যাটিনি শো , ডাকে , ডাকে , বারবার ডাকে , কাকে রেখে কাকে ফেলে যাই , ও আমার ময়না পাখি , হেসেলের ক্ষীর , গুডা পিঠা , চর দখলের বর্শা , নৈশকালে মাছ ধরা কোচ , পাই পাই রাখা ভাংতি পয়সা । যেও না , যেও না , না হয় শরীরে পড়েছে আঁচড়ের দাগ , মনেও লেগেছে অকথ্য কথনের জলছাপ , সে তো মুহূর্তের ক্রোধ , দুদন্ড পরেই যাতে ফোটে ফুল , আনন্দ অপার । যাও , থেকে যাও , থেকে যাও , দেখো বারান্দার বেলী , ক্যাকটাস , পাতা বাহার , ম্যাগ্নোলিয়া , রডোডেনডন , মানিপ্যান্ট , ফরচুন ট্রি , ঝোপঘাস … শোকেসের হাতি , ঝিনুক , চীনা মাটির ব্যাংক … । ওয়ালে পেইন্টিং , সবই তো তোমার , কিচেনের হাড়ি , থালা বাটি , ভর্তার ডাটি … একছত্র রাজ্য তোমার , তবু চলে যাবে , যাও , থেকে গেলো আজিজ মার্কেট , চারুকলা , মধুর ক্যান্টিন , ছবির হাট , ফুটপাতের দেবদারু , মধ্যরাতে যৌথফেরা শীতল বাতাস , যাদুঘরের সামনের তুমুল মিছিল , থেকে গেলো
আ . আ
১/৪/১৬
জর্জ গলি , হাতিরপুল , ঢাকা ।
ছেড়ে দেবার পর ০২
শে গ্যালো
আমিও ছাড়লাম
দু’জনের নিঃশ্বাস এতো গরম উঠছিলো যে
পরস্পরকে পুড়ানো ছাড়া আমাদের আর কোন গত্যন্তর ছিলো না
ডোবা সূর্যকে আবার আকাশে তুলবার এটাই সর্বশেষ চাকু
০২/০৪/১৬
ছেড়ে যাবার পর ০৩
হেরে যাওয়ার জন্য আসিনি আমি । হারবো না আমি । নিজ কাছে হারা আত্মহননের হরিণ শিকার । হারো যদি – এইক্ষণে হারো । সবি তো প্রস্তুত , ফ্যান দড়ি টুল , বিষাক্ত পাতা বাহার , গ্যাসচুলা , ছাদ , তেলচুরা মারা বিষ । যাও , লাফ দাও । টুলে উঠো , ফ্যানে ঝুলো । খাও পাতা , পাতাবাহারের । ছাড়ো গ্যাসচুলা , দাও ঘুম । তেলচুরা বিষে বানাও শরবত । ঢক ঢক গিলো । জিতে যাবে । আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম না নিলেও নেবে কাফন ভিখারী । পয়সা বৃস্টি হবে তোমার লাশের উপর । জিতে যাবে তুমি । একটি দিনের জন্য জিতে যাবে । আরো যদি জিততে চাও , ভাত খাও , ঘুম যাও , দেবদারু আলো করে বসো । চাঁদ সূর্য পা কাছে করবে ঘুরঘুর ।
হারার জন্য আসিনি আমি । হারবো না আমি । জিতে যাবো । নিজের কাছেই জিতে যাবো ।
০২/০৪/১৬
জর্জ গলি , হাতিরপুল , ঢাকা ।
এমন বৃস্টি …
জিব্বা উড়ে যাচ্ছে চায়ের দোকানে
নড়েবড়ে বেঞ্চে
থাকতে যদি পাশে
বুঝতে চা কাকে বলে
বৃস্টি কাকে বলে
চায়ের দোকানে কে বা কারা ক্ষমতাকে খুন করে শাদা কবুতর উড়ায়
ওদের অপেক্ষায় পৃথিবীর যোনি কান্না করে জল ঝরায়
একে বৃস্টি বলে
আসবি কবে কামিনী কাঞ্চন , হীরার ধারের ছুরি
কেটে নিতে চায়ের তৃঞ্চার জিব্বা
আ . আ
৩১/০৩/১৬
কবিতা মতো ব্যাক্তিগত বিজ্ঞাপন
আহা ! কিভাবেই না বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি
তুমি থেকে , তুই থেকে , আপনি থেকে , আমরা থেকে
কেউ বুঝতেই চাচ্ছে না , বুঝতেই পারছে না
মেঘে জল থাকলে বৃস্টি হতো
সদর রাস্তার একজন মানুষ অন্ধকারে যেতো না
দেবদারু হাসতো পুলিশের সামনেও
থই থই জ্যোস্নায় হুলি খেলতো আমাদের চাঁদ
আ . আ
৩০/০৩/২০১৬
শওকত হোসেন এর কবিতা
গাঁজার বাউণ্ডুলে এক চিকন ধোঁয়া
আড্ডা ছেড়ে নীরব উঠে যায়…
মসৃণ কাদার ওপর এতকাল প’ড়ে থাকা আঙুলের দাগ
আয়ু রক্ষার দায়ে
আকাশে ব্যাপ্ত শরীর… আগুনে পোড়ায় —
দাগ … শুকায়। আড্ডার সবুজ গালের নৈকট্য ঘেঁষে
নিচে নেমে আসে ধোঁয়ার খুলি
চোখ না-ফোটা কুকুরের ছানা
তোমাদের সঞ্চিত ক্ষমার জলে মুখ ধুয়ে এলে
ক্লিশে রক্তের অনুশীলন– চোখ না-ফোটা ঘুমের ব্যাখ্যা–
ধোঁয়া সর্বত্র যাবে
ব্যাধির জোরে তোমাদের জান্লার শিকে
শেষ মৃত্যুর আগে প্রথম ঘুম
……………………
আমার লাগানো নিমগাছটা কেটে ফেলেছ– ওখানে
দালান বানাবে বলে–
অর্থ-সংকটের অজুহাতে বেচে দিয়েছ আমার পালা খাসিটা
তাও গোপনে–
ঘর নোংড়া করে বলে বেচে দিয়েছ কবুতরজোড়া–
আমাকে এখন আর প্রশ্ন করোনা আমার প্রতিক্রিয়া কী!
পাশের বাড়ির আলীর সাথে খেলতে-যাওয়া নিষিদ্ধ করেছ
ওর মা বাসাবাড়িতে কাজ করে বলে–
রাজনীতি-মিছিল থেকে সরে থাকতে বলেছ
নিরাপত্তা বিঘিœত হবে ভেবে–
বাবার এতো সম্পদ হলো কী-করে– নিষেধ করেছ ঘুনাক্ষরে জানতে–
প্রিয় সহপাঠি তৃণকে ধর্ষণ করে-করে মেরে ফেলেছে
খোদ রক্ষক জওয়ান-জানোয়ার–
এখন আর প্রশ্ন করোনা কোনটি আমার কাছে ভালো–
মুক্তি না পারাধীন–
আলো না অন্ধকার
ক্ষুধা না অন্ন
গুলি না উন্নয়ন–
আআহ্হ্হ্!! বলেছি-তো প্রশ্ন করোনা!!!…
বিনীতভাবে সবাইকে বলছি, ফেইসবুকে আর কোনো
প্রতিক্রিয়া দিতে আমাকে বাধ্য করোনা–
বন্ধুদের বুদ্ধিদীপ্ত চমৎকার সব স্ট্যাটাসে
আর কোনো লাইক দিতে পারবোনা আমি–
ক্ষমা করো আমাকে একটু একা থাকতে দাও–
রাত অনেক হয়েছে– আমাকে ঘুমাতে দাও–
দীর্ঘ ঘুমের পর যখন আবার জাগবো এই বাংলায়
আর কোনোই প্রশ্ন যেন আমাকে করা না-হয়–
বহুকাল ধরে প্রশ্নের পর প্রশ্নের পাহাড় করে আমি
উত্তর চেয়ে-চেয়ে বড় ক্লান্ত হয়ে পড়েছি–
তাই আজ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি–
একটু ঘুমাতে দাও–
শেষ মৃত্যুর আগে এই প্রথম ঘুম আমার…
……..
৫.৪.২০১৬ / রাত
প্রতিশোধপরায়ণ
…………..
একটি ইঁদুরকে রক্তাক্ত ক’রে
তার মৃত্যুর আগের– এই অগ্নিনৃত্য
আমাকে তৃপ্ত করছে
প্রকৃতির কষ্ট বুঝতে পেরেও
তার প্রতি এমন মনোভাব, যাতে
সে-ও বুঝে নেয়
কতটা রক্তাক্ত আমাকে করেছিলো।
এক দৃশ্যের কাছে
……………
বীভৎস এক দৃশ্যের কাছে জেনেছি
আমার চোখ গ’লে গেছে কি-না;
গলেছে পাখির ডিম, কমলালেবু-পৃথিবী, সহিষ্ণু চোখের মণি–
খতিয়ে দেখেছি আরো গেছে
যা ছিল পাঁজরের পুঁটলির ভেতর–
এই হৃদয় গলিয়ে দৃশ্যের শেষ হয়নি
মহাকালে আজও–
মানুষের হাতের ভূগোল পড়ে না তারা কেউ,
ভূগোলের পাঠযোগ্য এখন মানুষ!
মৃতের সাথে প্রেম
…………..
আমি কি মৃতের সাথে প্রেম করি
মোহনীয় ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকে তোমার লাশ;
একবার শীতল গালে চুমু খাই
আরেকবার আকাশে তাকাই
মৃতের হাসি-ভালোবাসাবাসি-মৃতের কান্নায়
আমার গায়ে জ্বর
শেষ-দৃশ্য কলার ভেলায় ভাসিয়ে তাকিয়ে থাকি
আড়াল হ’লে নদীর বাঁকে মৃতের উড়ন্ত আঁচল
সঙ্গম-দৃশ্যে বন্যার জলে
প্লাবিত আমার কবরের ওপর দিয়ে অজানায় ভেসে যায়
কচুরিপানা– আমারই অসংখ্য লাশের বহর…আমি
নাক উঁচিয়ে থাকি;
প্রতি সঙ্গমে উঠে আসে শাদা-মৃত-ফ্যাকাশে মাংস–
প্রচণ্ড অনিচ্ছা সত্ত্বেও যে-গুলো
ক্ষুধার অসহায় মুহূর্তে আমাকে খেতে বাধ্য করে পরিপার্শ্ব।