কিছুদিন আগে রাজধানীতে আয়োজিত এক সমাবেশে আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় সাংস্কৃতিক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেছেন, ‘যারা কবিতা আবৃত্তির সঙ্গে জড়িত তারা কখনো অন্যায় কাজ করতে পারে না। তারা যে কাজই করুক না কেন সে কাজ দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবেই পালন করে।’
তিনি বলেন, গান নৃত্য ও নাটক যারা করেন তাদের সবারই কিছু না কিছু চাওয়া পাওয়া থাকে, কিন্তু যারা আবৃত্তি করেন তাদের কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। তারা আবৃত্তি করে কোনো অর্থ উপার্জন ও করতে চায় না। দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকেই আবৃত্তি শিল্পে আসে।’
গত ১২ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে কণ্ঠশীলনে পুলিশী হয়রানী সংবাদ দেখার পর বিষয়টি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংগঠনের সিনিয়র সদস্য জহীরুল হক খান সহ কয়েকজন অপর সদস্যদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়রী করেছেন। যার ফলেই পুলিশ এই ব্যবহার করেছে বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। অন্যদিকে ‘আমি যুক্ত নই, অবৈতনিক শিক্ষাগুরু’ এ কথা বলার পরও বারবার যুক্ত হচ্ছে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপিকা সনজীদা খাতুনের নাম। কেন এই ঝগড়া? কিসের জন্য একটি প্রতিষ্ঠিত ও সুখ্যাতি অর্জনকৃত সংগঠন নিয়ে এতোটা বারাবারি চলছে? এ সময় আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদই বা কি ভূমিকা রাখছে এ সব কারণ খুঁজতে কণ্ঠশীলনের কয়েকজন শিক্ষার্থী ফেসবুক ইনবক্সে সাহিত্য বাজার কে অনুরোধ জানিয়েছেন। সাহিত্য বাজার এর নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে আমরা যোগাযোগ করি আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধরণ সম্পাদক আহকামউল্লাহ অমলসহ অধ্যাপিকা সানজীদা খাতুন, মীর বরকাত, জহীরুল হক খানসহ কণ্ঠশীলনের ঘনিষ্ঠ সদস্যদের সাথে।
শীর্ষ নিউজ ডটকম, ঢাকা : সাহিত্যের বাচিক চর্চা ও প্রসার প্রতিষ্ঠান কণ্ঠশীলনের আবৃত্তিকর্মীরা পুলিশি হয়রানির শিকার হয়েছেন। শুক্রবার পুলিশি বাধার মুখে ক্লাস করতে পারেননি সংগঠনটির শিক্ষার্থীরা। এছাড়া সংগঠনটির নতুন কমিটিকে ‘কণ্ঠশীলন’ নাম ব্যবহারে বাধা দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) দ্বিতীয় তলায় দীর্ঘ ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রতি শুক্রবার আবৃত্তির ক্লাস নিচ্ছেন সংগঠনটির প্রশিক্ষকরা।
এছাড়া প্রতি শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সংগঠনটির সাপ্তাহিক বৈঠকে মিলিত হয়ে সাংস্কৃতিক চর্চা তথা বাচিক প্রশিক্ষণ, আবৃত্তি, পাঠ ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে সংগঠনটি।
সংগঠনটির কর্মীদের অভিযোগ, ভর্তি পরীক্ষা থাকার কারণে শুক্রবার সকাল ৮টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কণ্ঠশীলন প্রশিক্ষক মীর বরকত যখন ক্লাস নিচ্ছিলেন তখন একজন পুলিশ এসে বলেন, ‘উপরমহল থেকে নির্দেশ এসেছে কণ্ঠশীলন নামের সংগঠন এখানে ক্লাস করতে পারবে না।’ এই বলে উদ্যান থেকে প্রশিক্ষকসহ শিক্ষার্থীদের বের করে দেন তিনি।
এরপর সকাল ১০টায় কণ্ঠশীলনের নিয়মিত বৈঠকে কর্মীরা সমবেত হলে পুনরায় পুলিশ এসে উদ্যান ত্যাগ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে, অন্যথায় পিটিয়ে উদ্যান থেকে বের করে আইনের হাতে সোপর্দ করার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির একাধিক কর্মী।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রইসুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে এবং আমরা নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। তবে আজ পুলিশের বাধায় আমরা হতবাক হয়েছি।’
এদিকে শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম শীর্ষ নিউজকে জানান, ‘আজ যারা সোহরাওয়ার্দীতে সভা করছিল তারা মূল দল থেকে বহিষ্কৃত তারা আর ‘কণ্ঠশীলন’ নাম ব্যবহার করে কোথাও কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারবে না।’
এদিকে শিল্প-সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে এরূপ পুলিশি হয়রানিতে কণ্ঠশীলন কর্মীসহ অন্যান্য আবৃত্তি সংগঠনের কর্মীরা তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেছেন।
শীর্ষ নিউজ ডটকম/সুজন/একেএ
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪
প্রথমেই আমরা যোগাযোগ করি অধ্যাপিকা সনজীদা খাতুনের সাথে। তিনি জানান, কণ্ঠশীলন নিয়ে প্রথমেই একটি বিবৃতি দিয়েছি, এরপর আর এ বিষয়ে কাউকে কোনো বক্তব্য আমি দেবনা। তিনি আর কিছুই বলতে রাজী নন।
জহিরুল হক খান শাহাবাগ থানায় সাধারণ ডায়রী করার বিষয়টি স্বিকার করে জানান, আমাদের সভাপতি পত্র পত্রিকায় যে কথা বলেছেন তার উপরে আর কোনো কথা নেই। আমরা আমাদের যা করার তা করবো ও করছি।
মীর বরকতের বক্তব্য
সাহিত্যের বাচিক চর্চা ও প্রসার প্রতিষ্ঠান কণ্ঠশীলন ১৯৮৪ সাল থেকে ত্রিশ বছর যাবৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে শুদ্ধ উচ্চারণ ও আবৃত্তি শিক্ষাক্রম পরিচালনা করে আসছে। পাশাপাশি বাঙালি সংস্কৃতিকে ধারণ করে আবৃত্তি, শ্রুতিনাটক, মঞ্চনাটক ইত্যাদি বহুবর্ণিল শিল্পমাধ্যমে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। ওয়াহিদুল হক, নরেন বিশ্বাস, শামসুর রাহমান, পটুয়া কামরুল হাসান, শওকত আলী প্রমূখ খ্যাতিমান শিল্পী-সাহিত্যিকের হাতে গড়া এই সংগঠনের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং শিল্পী ও কর্মীদের বিরুদ্ধে বিরূপ ও অশোভন প্রচারণা চালিয়ে ঐহিত্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানকে বিতর্কিত ও বন্ধ ঘোষণার অশুভ পরিকল্পনায় লিপ্ত রয়েছেন ঈর্ষান্বিত দু-একজন সদস্য। তারা আমাদের অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তিত্বদের নিকট বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা বলে তাদের ভাবমূর্তিকে ব্যবহার এবং প্রশাসনিক ক্ষমতা অপব্যবহারের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। চাতুর্যপূর্ণ কুৎসা রটনা এবং সংস্কৃতিকর্মীদের উপর নিপীড়ন চালনার যে পথ তারা গ্রহণ করেছেন তাতে এটি আমাদের সংস্কৃতির জন্য একটি অশনিসংকেত। মানবিক সৌন্দর্য পরিস্ফূটনের পথ পরিহার করে অসুন্দরের চর্চায় রত ব্যক্তি শ্রদ্ধেয় ওয়াহিদুল হকের নিকট হতে প্রকৃত শিক্ষা লাভ করেন নি। রুচিহীন কর্মকাণ্ডে মেতে উঠে তারা কেবল ওয়াহিদুল হকের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের অসম্মানই করছেন না, কণ্ঠশীলনকেও অমর্যাদাকর সংগঠনে পরিণত করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছেন। আমি সংস্কৃতিমান মানুষের কাছে আবেদন জানাই, তারা যেন এ ধরনের অন্ধকারের শক্তিকে প্রতিহত করেন ও আলোর সন্ধানে রত মানুষের পাশে দাঁড়ান। আমরা সকলে মিলে বরাবরের মতো সুন্দরের পথে হেঁটে যেতে চাই।
আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এএফএম আহকাম উল্লাহ অমল বলেন, প্রথমত টিএসসিতে পুলিশ দিয়ে আবৃত্তিকর্মীদের কাজে বাধা প্রদান, এটা অত্যন্ত নেক্কারজনক কাজ। আমরা এ ঘটনার নিন্দা জানাই। দ্বিতীয়ত : যারা নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করছে তারাই প্রকৃত কণ্ঠশীলন। এখন দেখা যাক, দু পক্ষই বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করে পরষ্পরের বিরুদ্ধে আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের কাছে কাগজপত্র জমা দিয়েছে । আমরা খুব শীঘ্রই এটা নিয়ে বসবো। তার আগে অনুরোধ থাকবে কেউ এমন কিছু করবেন না, যা সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য লজ্জাকর হয়।