ওমর কায়সার – এর কবিতা
লিলি গাংগুলি পাখি নয়
তাই তার গান শুনতে পেয়েছিলাম খুব কাছাকাছি থেকে
পাখিরা শোনায় গান দূর থেকে
আর অরণ্যে সে আমাকে শুনিয়েছিল গান পাশাপাশি হেঁটে
পাতার জড়তা ভাঙতে ভাঙতে পাখির স্বভাবে।
তার নখ নিখুঁত রক্তিম
তাজা কোন শালিখের রক্ত দিয়ে মাখা
পোষা কোন টিয়ের মত তার গায়ে বাঁধা ছিল রুপোর নূপুর।
লিলি গাংগুলি পাখি নয়
পাখিদের পালক থাকে
লিলির শরীর ছিল পালকের মতো নরম
চিন্তায় চর্চায় যত্ন দিয়ে গড়া।
সে খুব ভোরে উঠে গলা সাধে
পাখিরা এমন নয় আকৃষ্ট করার মত কেউ না থাকলেও নিজস্ব মৌসুমকে
তারা গান শুনিয়ে চলে যায়।
লিলি গাংগুলি সত্যি পাখি নয়
কিন্তু কবিতার স্বার্থে যদি
আমার মন এবং স্মৃতিকে একটা সোনার পিঞ্জর ভাবি
সেখানে লিলি গাংগুলি
মধ্যরাতে উদাস দুপুরে
ডানা ঝাপটায়
শুধু ডানা ঝাপটায়।
মাটির মহিষ
মাটির গোপন গর্ভে অজাত ছিলাম,
কৌমের কাক্সার বীর্যে আমার উত্থান।
কুমারী ভূমির বুকে লাঙলের ঈষটানা দুষ্ট ইতিহাসে
আমি নই বলি উপচার,
খঞ্জরের তীè শীর্ষে অলীক মুদ্রার নৃত্যে বিন্দু বিন্দু খুন।
শ্রম নেই, শিরা-উপশিরা নেই আমার আকারে।
আমার কানের কাছে বাজবে না খঞ্জনার শিস।
চারুর সৌকর্য আমি, অন্ত্যজ সুষমা এক মাটির মহিষ।
আকাশ বুনন
একটি ম্যাচের বাক্সে মস্ত আকাশ বুনে ভাঁজ করে রেখেছি বালক,
তোমাকে শেখাবো তার নিখুঁত বুনন।
সূক্ষ্ম মহাজাগতিক তন্তু দিয়ে
ছায়াপথ থেকে বেছে বেছে কী ক’রে নত্র বসাতে হয়,
সপ্তর্ষির এক বিন্দু থেকে আরেক বিন্দুতে রেখা টেনে
কীভাবে বানিয়ে নেবে মসলিন আকাশ
সবটুকু জেনে যাবে সম স্বভাবে।
তার আগে বুড়িগঙ্গার তীর থেকে
এনে দাও আমার আঙুল–
রক্তাক্ত নিখোঁজ মূক বিজিত আঙুল।
চেয়ারের গান
স্বরমগুলের মতো সাজিয়ে রেখেছো সাত সাতটি চেয়ার
অথচ মানুষ আছে আটজন
একজন নিশ্চিত ঝরে যাবে জেনেও মানুষ চেয়ার-সঙ্গীত শোনে
আর বৃত্তাকারে ঘুরতে থাকে সাতটি চেয়ারের চারপাশে আটজন দখলমত্ত মানুষ
এভাবে বারবার একেকটি চেয়ার উঠে যাবে আর এক একজন মানুষ ঝরে যাবে।