ফরিদুর রেজা সাগর। নামের সাথেই মিশে আছে সাগরের উচ্ছলতা। বৃহৎপরিসরে কিছু একটা করার জন্যই বুঝি এই সাগরের বেড়ে ওঠা। আর তাইতো আমরা তার লেখনীর গাঁথনীতে খুঁজে পাই দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য ভাবনার অপরিপক্ক সাঁতার। তার চিন্তায়, মেধায় ও মননে রয়েছে দেশের প্রতি গভীর ভালবাসা। আর তাইতো শিশুদের নিয়ে, দেশের মুক্তিযুদ্ধ ও রাজনীতি নিয়ে তার লেখনীতে স্পষ্ট হয় দেশপ্রেম।
কিছুদিন ধরে মন্টি আর রন্টি দু’জনেই খেয়াল করছিল, মানুষ মিছিল করে আর নানা রকম শ্লোগান দেয়। আরও একটা জিনিস ওদের চোখে পড়েছে, স্কুলে যাওয়ার পথে যতগুলো দেয়াল আছে সেখানে নানারকম কথা লেখা। – (গল্পের নাম, অন্যরকম গ্রন্থ – লাল বেবিট্যাক্সি) এই যে দেয়াল লিখনটাও যে শিক্ষার উপকরণ হতে পারে তা ফরিদুর রেজা সাগরের মত করে কেউ কি ভেবেছেন?
‘একুশের সংকলন বের হওয়ার চল্ তো একেবারেই উঠে গেছে।’
হ্যা। সেজন্যই সবাইকে আবার নতুন করে মনে করিয়ে দিতে চাই, এই শ্লোগানগুলো দিয়ে নতুন ধরনের একটা সংকলন বের করে।– গল্প – দেয়ালের লিখন, গ্রন্থ -লাল বেবিট্যাক্সি। েএটা কি নতুন চিন্তা নয়। দেয়াল লিখন ও শ্লোগান নিয়ে সংকলন প্রকাশ। এটা হতেই পারে। হয়ত আগামী বইমেলাতে ছোটকাকু ফান ক্লাব এটাকেই আশ্রয় দেবে তাদের নতুন কম্পোজিশানে।
শিশুতোষ লেখক ফরিদুর রেজা সাগরের লেখা ‘লাল বেবিট্যাক্সি’ গ্রন্থের দুটি গল্পের অংশবিশেষ তুলে ধরে আমরা আলোচনার সূত্রপাত করেছি। হাশেম খানের আঁকা ছবিতে চমৎকার লাল প্রচ্ছদ শিশুদের আকর্ষণ করবেই।চন্দ্রাবতী একাডেমি প্রকাশিত এই গল্পগ্রন্থে ডলফিন ও একটি মেয়ে, হৃদয়ের গান হৃদয়ের সুর, লাল বেবিটেক্সি, প্রথম হাসিসহ মোট ছয়টি গল্প রয়েছে। ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তে প্রকাশিত ৫০ পৃষ্ঠার এ বইটির মূল্য ৩০০ টাকা। এতোটা দামে তৈরি এ বইটি কি আদৌ শিশুদের জন্য এটাই ভাবতে হবে সাগরের উদারতা দিয়ে।
২০০৫ সালে শিশু সাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন চ্যানেল আই-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিশুতোষ লেখক ফরিদুর রেজা সাগর। একই সময়ে তিনি অর্জন করেন অগ্রনী ব্যাংক ও ইউরো শিশুসাহিত্য পুরস্কার। প্রায় ২৫ বছর ধরে সাহিত্য সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় কাজ করছেন ফরিদুর রেজা সাগর। ছোটদের পত্রিকা টইটুম্বর’ এর পরিচালনা পর্ষদের সদস্য তিনি। শিশু বয়সেই অভিনয় করেছেন তার বাবা ফজলুল হক নির্মিত শিশু চলচ্চিত্র ‘প্রেসিডেন্ট’-এর প্রধান চরিত্রে। মা প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনের গর্ভে ১৯৫৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী ফরিদুর রেজা সাগরের জন্ম।
সম্প্রতী ফরিদুর রেজা সাগর শিশু-কিশোরদের জন্য সিরিজ উপন্যাস তৈরিতে মনোযোগী হয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি লিখেছেন – কক্সবাজারের কাকাতুয়া, রাত বিরাতে সাতক্ষিরাতে, খেলা হলো খুলনায় ইত্যাদি সিরিজ গল্প।
অনেকে যারা কুয়াসা, দস্যু বনহুর, মাসুদ রানা সিরিজ পড়েছেন তারা খুব সহজেই ধরতে পারবেন এই ছোট কাকু সিরিজ রহস্য। এটাকে গল্প না বলে উপন্যাস বললেও ভুল বলা হবে না। আবার যদি বলেন ধারাবাহিক শিশুতোষ নাটিকা, তাতেও ভুল নেই। এটা আসলে এক এর ভিতর তিন বলে জানালেন চ্যানেল আই-এর নির্বাহী প্রযোজক এবং ২০০৬ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত আরেক শিশুসাহিত্যিক আমীরুল ইসলাম।
ফরিদুর রেজা সাগর
যদিও এ প্রসঙ্গে শিশুবন্ধু ফরিদুর রেজা সাগর বলেন ভিন্ন কথা। তিনি জানান, এটা একটা ধারাবাহিক রচনা। দস্যু বনহুর বা মাসুদ রানা বড়দের জন্য। কিন্তু ছোটদের জন্য কার্টুনগুলো ছাড়াতো ধারাবাহিক কিছু নেই। তাই এই ধারাবাহিক সিরিজ রচনার চেষ্টা। এটা শুধু শিশুদের জন্যই নয়, বড়দেরকেও আমি এটির মাধ্যমে বিনোদন দিতে চেয়েছি। এটা গল্প না উপন্যাস সে নিয়ে ভাবিনি। তবে ছোটকাকু’র প্রথম বইটির কক্সবাজারের ‘কাকাতুয়া’র গল্পগুলো নিয়ে এ পর্যন্ত ৮টি ধারাবাহিক পর্ব নির্মিত ও প্রচার হয়েছে। এটা চলমান প্রক্রিয়া। প্রথম বইটির সব পর্ব নিয়ে সিরিজ নাটক তৈরি শেষে ২য় বা ৩য় বই থেকে পরবর্তী সিরিজ বাছাই হবে।
তিনি জানান, আমার লেখা ছোট কাকু সমগ্র নিয়ে এ পর্যন্ত ২৫টি বই বা সিরিজ বই প্রকাশ করেছে অনন্যা প্রকাশনী। সর্বশেষে প্রকাশিত তিনটি বই-এর নাম- রাতবিরাতে সাকক্ষীরাতে, রাজশাহীর রসগোল্রা ও খালি খালি নোয়াখালি।
ছোট কাকু সিরিজের ব্যতিক্রম হচ্ছে -এর প্রতিটি নামকরণে রয়েছে শিক্ষার উপকরণ ও রোমান্টিকতার হাতছানি। যেমন- জাদুঘরের জাদুকর, গোলমালে গড়াগড়ি, ঢাক বাজলো ঢাকায়, চুপি চুপি চট্টগ্রামে, রংপুরের রংধনু, ময়মনসিংহের ময়না, নাটক নাটোরে, বকা খেয়ে বগুরায় ইত্যাদি নাম শুনে ছোট বন্ধুদেরতো বটেই বড়দেরও চুটে যেতে ইচ্ছে হবে এক লাফে টেকনাফে কিম্বা কাকুর সাথে কুমিল্লায়। কি যাবেন নাকি ? হাতে সময় না থাকলে কি আর করা বলুন, তাহলে ঘরে বসে চ্যানেল আইয়ের পর্দায় ছোটকাকুর সাথেই উপভোগ করুন মনের ইচ্ছেগুলো সাজিয়ে ধরার এই মনস্তাত্তিক বিনোদনে। ছোট কাকু ঘুরে বেড়াবেন ৬৪টি জেলায়। তার সাথে আমরাও দেখে নেব রূপবতী বাংলার অফুরন্ত রূপ লাবণ্য।
ছোটকাকু সিরিজের ভুলগুলো
ছোটকাকু সিরিজের এ যাবৎ প্রকাশিত ২৫টি গ্রন্থের ৮টি হাতে পেয়েছি। অনন্যা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত এ গ্রন্থগুলোর সবচেয়ে বড় ভুল হচ্ছে বাক্য কম্পোজের সময় সতর্কতা অবলম্বন না করা। যেমন – রাজশাহীর রসগোল্লা বইটিতে পৃষ্ঠা ১২তে ভদ্রলোক কায়েস চৌধুরীর দিকে ….. (দেখুন) ৬২ পৃষ্ঠার এ বইয়ের মূল্য ১০০ টাকা। খেলা হল খুলনায়- গ্রন্থের ১৪ পৃষ্ঠায় – খুলনা যাওয়ার সরাসরি কোনো নেই….. কিম্বা ১৮ পৃষ্ঠাতে – এখন আবার নতুন কোনো রহস্য খুঁজে…. (কারণে অকারণে বারবার রহস্য রহস্য করে রহস্য উপন্যাসের স্বাদটাই নষ্ট হচ্ছে না?)। বা ২০ পৃষ্ঠার … মিন্টু নিয়ে এনেছে আফ্রিকা…. এ জাতীয় অসংখ্য বাক্য তৈরি গত কম্পোজ বা মুদ্রন ভুল শিশুদের হতাশ করবে। (ছোটকাকু নিয়ে পাঠকের মন্তব্য আসছে..) খেলা হলো খুলনা’র রহস্য টাও যেন মিন্টুর বাবা ডাকপিয়ন পরিচয়ের মতোই জট পাকিয়ে ফেলেছে, যতই সামনে এগোবে পাঠক, ততই মনে হবে লেখক খেই হারিয়ে ফেলেছেন…। একদিকে যাবেন বলে যাত্রা করে অন্যদিকে পৌঁছে যাচ্ছেন। আর এটাই সত্যিকারের উপন্যাসিকের নিয়ম।
নাটক ছোটকাকু সিরিজ
ফরিদুর রেজা সাগরের কিশোর উপন্যাস ছোটকাকু অবলম্বনে ধারাবাহিক নাটক নির্মাণ করছেন জনপ্রিয় অভিনেতা নির্মাতা আফজাল হোসেন। গত ঈদুল আযহায় প্রচার হয়েছে এ সিরিজের দ্বিতীয় গল্প – রাজশাহীর রসগোল্লা যার স্যুটিং হয়েছে রাজশাহীর বিভিন্ন জায়গায়। রহস্য ও রোমাঞ্চকর গল্পের এ ধারাবাহিক নাটকটি নির্মাণের পাশাপাশি ছোটকাকু চরিত্রে অভিনয় করেছেন আফজাল হোসেন নিজেই। ধারাবাহিকের অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন অর্ষা, সীমান্ত প্রমুখ। বর্তমানে খেলা হল খুলনায় গল্পের নাটকের শ্যুটিং চলছে।