বৃহস্পতিবার। বসন্ত বাতাসে উৎসব মুখর অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৩তম দিন। বইবাজারে ছিল পাঠক ক্রেতার অভাবনীয় চাপ। আনন্দিত প্রকাশরা। অন্যপ্রকাশ আগামি, সেবা, প্রথমা, পুর্বাসহ প্রায় সব স্টলেই লক্ষ্যনীয় ভিড় ছিল এই বসন্তবেলায়। বইবাজার পরিণত হয়েছিল বাসন্তী মেলায়। এ দিন নতুন বই এসেছে ১১০টি এবং ১০টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। বিষয়ভিত্তিক বই ছিল : গল্প-১৮টি, উপন্যাস-২০টি, প্রবন্ধ-৯টি, কবিতা-২১টি, গবেষণা-০টি, ছড়া-১টি, শিশুতোষ-৮টি, জীবনী-২টি, রচনাবলী-০টি, মুক্তিযুদ্ধ-০টি, নাটক-১টি, বিজ্ঞান-১টি, ভ্রমণ-২টি, ইতিহাস-০টি, রাজনীতি-০টি, চিকিৎসা-০টি, কম্পিউটার-১টি, রম্য/ধাঁধা-০টি, ধর্মীয়-২টি, অনুবাদ-০টি, অভিধান-০টি, সায়েন্স ফিকশন-৩টি এবং অন্যান্য-১৭টি।
বিকেল ৪:০০টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় কাজী ইমদাদুল হক : এক বিস্মৃত মনীষা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রেজিনা সুলতানা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিশ্বজিৎ ঘোষ, মনজুরুর রহমান এবং ফারজানা সিদ্দিকা। সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ আবুল মকসুদ।
প্রাবন্ধিক বলেন, কাজী ইমদাদুল হকের আবদুল্লাহ উপন্যাসটিকে বাঙালি মুসলমান সমাজের সার্থক দর্পণ বলা যায়। বুদ্ধির অন্ধতার বিরুদ্ধেই ছিল কাজী ইমদাদুল হকের কলম-যুদ্ধ। তাঁর সামগ্রিক মূল্যায়ন করা খুব সহজ কাজ নয়। তিনি বলেন, তাঁকে বিচার করতে হবে তাঁর কালের মানদণ্ডে। ইতিহাসের যে সময় তিনি জন্মেছিলেন এবং বড় হয়ে উঠেছেন সেটিকে ক্রান্তিকাল বলা যায়। নানারকম সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈরিতার ভেতর দিয়েই তাঁর যাত্রা শুরু। বলা যায় যে বৈরিতার অতিক্রম করেই তাঁর চলিষ্ণু পদপে ক্রমশ একটি শক্তভূমি খুঁজে নেয়ার চেষ্টায় নিমগ্ন ছিল। তাঁর প্রদর্শিত সাহিত্যপথ বেয়েই পরবর্তী প্রজন্মের বহু লেখক সাহিত্যিকেরা হেঁটেছেন এবং আমাদের বর্তমানকে সমৃদ্ধতর করে তুলেছেন। পথিকৃৎ হিসাবে কাজী ইমদাদুল হক সর্বদাই থাকবেন অগ্রগন্য।
আলোচকবৃন্দ বলেন, স্বসমাজের মঙ্গলকামী ছিলেন বলেই কাজী ইমদাদুল হক বঙ্গীয় মুসলিম সমাজে বিদ্যমান রণশীলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন। অন্ধভক্তির মূলোৎপাটনের জন্য তিনি সাহিত্যিক সক্রিয়তাকে কাজে লাগিয়েছেন। সমাজের অনগ্রসরতার পাশাপাশি অভূতপূর্ব সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথাও তিনি তুলে ধরেছেন। তাঁরা বলেন, বাংলা উপন্যাসের বস্তুনিষ্ঠ গবেষণায় কাজী ইমদাদুল হক অগ্রগণ্য স্থান পাবার দাবিদার কারণ উপন্যাসের কাঠামোয় তিনি সময় ও সমাজের শিল্পিত-দ্বান্দ্বিক রুপায়ণ ঘটিয়েছেন।
সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, কাজী ইমদাদুল হক ছিলেন তাঁর সমসাময়িক মুসলমান লেখকদের মধ্যে অগ্রসর, আধুনিক ও অসাম্প্রদায়িক। তিনি ছিলেন একজন অবিচল বাঙালি জাতীয়তাবাদী। শুধু সাহিত্য নয়, পাশ্চাত্যের দর্শন ও বিজ্ঞানেরও তিনি ছিলেন একজন গভীর পাঠক।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে আবৃত্তি সংগঠন ‘ক’জনা’, শেখ উজ্জ্বলের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম’ (আসাফো)। এছাড়া এবং লুবনা মারিয়ামের নির্দেশনায় ‘সাধনা’ পরিবেশন করে সৈয়দ শামসুল হক রচিত নাটক ‘চম্পাবতী’।
আগামীকালের অনুষ্ঠান
আগামীকাল ২রা ফাল্গুন মাঘ ১৪২০/১৪ই ফেব্র“য়ারি ২০১৪ শুক্রবার সকাল ৯:০০টায় বাংলা একাডেমিতে অমর একুশে উদ্যাপন উপলে শিশু-কিশোরদের সংগীত প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিযোগিতায় ক-শাখা ২০০ জন (দেশাত্মবোধক গান) এবং খ-শাখা ১৪০ জন (গণসংগীত) প্রতিযোগি অংশগ্রহণ করবে। বিকেল ৪:০০টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে হাজি মহম্মদ মহসিন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আমজাদ হোসেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন ওয়াকিল আহমদ, পার্থ সেন গুপ্ত, শান্তনু কায়সার, আবদুল বাছির। সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ. আ. ম. স আরেফিন সিদ্দিক।
সন্ধ্যায় পরিবেশিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।