বাংলাদেশের বরিশালসহ সারাদেশের ৮৪৬টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এবারও বেশিরভাগ ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সয়ং। বরিশালের ছয়টি উপজেলার ৩১ টি ইউপিতে দ্বিতীয় ধাপের ১২ টায় এবং তৃতীয় ধাপে ৫ টায় এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এখানেও চরকাউয়া, শায়েস্তাবাদ, চন্দ্রমোহনসহ অনেক ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ। যা নিয়ে আতঙ্কিত স্থানীয় জনগণ। তবে নির্বাচন কমিশন ও জেলা প্রশাসক সংঘাতহীন নিরপেক্ষ ভোটের আশ্বাস দিয়েছেন।
সারাদেশে এ পর্বের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ৪ হাজার ৮০ জন। এরমধ্যে ৩১টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে একজন করে প্রার্থী হয়েছেন। যারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন বলে ধারণা করা যাচ্ছে। আবার অনেক ইউনিয়ন পরিষদে ২-৪ জন প্রার্থীও রয়েছেন। তবে শেষমুহুর্তে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা নির্বাচন কমিশনের।
বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। অন্য সব জেলায় কোথাও কোথাও একজন প্রার্থী থাকলেও বরিশাল বিভাগে এর চিত্র ভিন্ন। এখানে কোথাও ইউনিয়ন সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক দলীয়ভাবে মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জোর প্রস্তুতি নিয়েছেন।
বরিশাল সদরের শায়েস্তাবাদ, চরকাউয়া চাঁদপুরা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী দেখা গেছে। শায়েস্তাবাদ ইউপিতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক পেয়েছেন আরিফুজ্জামান মুন্না। এখানে আনারস প্রতীক নিয়ে শক্তিশালী বিরোধিতা করেছেন আওয়ামী লীগের মামুন তালুকদার। চরকাউয়া ইউপিতে দলীয় প্রতীক পেয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ছবি। সাংবাদিক ও স্থানীয় জনগণের সাথে অশোভন আচরণ, বিগত সময়ে এলাকার কোনো উন্নয়ন না করার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এ সত্বেও তার দলীয় মনোনয়ন টাকার বিনিময়ে হয়েছে বলে মনে করেন বিরোধীপক্ষ আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হারুন।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ৭৩ ইউপিতে আগামী ১১ ও ২৮ নভেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দ্বিতীয় ধাপের ৪৮ টি ইউপি এবং তৃতীয় ধাপের ২৫ ইউপিতে চলছে জোর জনসংযোগ। ব্যানার পোস্টার না করলেও প্রার্থীদের প্রচারণা থেমে নেই। বেশকিছু ইউনিয়ন পরিষদে সরেজমিনে এ চিত্র দেখা গেছে। বেশিরভাগ ইউপিতেই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা প্রচারণায় এগিয়ে আসেন।
এছাড়াও রয়েছেন ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলন এর জোড়ালো প্রতিদ্বন্দ্বী। সারাদেশে ইসলামী আন্দোলন এর ৩৬৮ জন প্রার্থী এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যারমধ্যে শুধু বরিশাল বিভাগের প্রার্থী ৭৩ জন এবং বরিশাল জেলায় ১২ জন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছে ৮৪৬টিতে। দুটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। এ ধাপের ৮৪৬টি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ৪ হাজার ৮০জন। তাদের মধ্যে ২ হাজার ৬৫৫ জনই স্বতন্ত্র এবং এরা বেশিরভাগ অংশই আওয়ামী লীগের নিজস্ব নেতাকর্মী। বাকিরা ১৭টি রাজনৈতিক দলের। এ নির্বাচনে ৮৩৮টিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
অন্যান্যদের মধ্যে জাতীয় পার্টির ১০৭, জাপা-জেপির ৩, জাকের পার্টির ৪৯, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের ২৬ ও বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির ৫ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। বিএনপির কেউ এ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেননি বলেও জানিয়েছেন নিক এর জনসংযোগ পরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান।
একই চিত্র তৃতীয় ধাপের নির্বাচনেও।
আগামী ২৮ নভেম্বর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ধাপে দেশের ১ হাজার ৭টি ইউপিতে ভোট হবে। একই দিনে দেশের ১০টি পৌরসভায়ও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সম্প্রতি (১৪ অক্টোবর) নির্বাচন কমিশন সভায় অনুমোদনের পর এ ধাপের ভোটের তফসিল ঘোষণা করেন ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার। এর আগে সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে কমিশন সভা হয়।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। মনোনয়নপত্র বাছাই ৪ নভেম্বর ও প্রত্যাহারের শেষ সময় ১১ নভেম্বর। ভোট গ্রহণ হবে ২৮ নভেম্বর।
১০টি পৌরসভায় মনোনয়নপত্র জমা, বাছাই, প্রত্যাহারের শেষ সময় একই রকম রয়েছে। এ সময় এসএসসি পরীক্ষা থাকায় ইসি সচিব বলেন, “পাবলিক পরীক্ষা-এসএসসি ও এইচএসসির সময়সূচি বিবেচনায় নিয়ে ভোটের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে । সেক্ষেত্রে কোনও ধরনের সমস্যা হবে না বলে মনে করি।
আগামী ২৪ থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে স্কুলগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ২৮ নভেম্বর ভোটে কোনও সমস্যা হবে কিনা জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, এই ভোটের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের কোনও আলোচনা হয়নি। তবে আমরা মনে করি, ২৮ নভেম্বর ভোট অনুষ্ঠানে কোনও সমস্যা হবে না। নির্বাচনের তারিখের প্রেক্ষিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পরীক্ষার সময় সমন্বয় করে নেবে।
যদিও বাংলাদেশের বাস্তবতায় ভোটের সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হয়। শিক্ষকদেরও অনেকে ভোটের দায়িত্বে থাকেন। এর আগে, প্রথম ধাপে ২১ জুন ২০৪ ইউপি ও ২০ সেপ্টেম্বর ১৬০ ইউপির ভোট এভাবেই অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দ্বিতীয় ধাপে ৮৪৮ ইউপির ভোট অনুষ্ঠিত হবে ১১ নভেম্বর। তৃতীয় ধাপে হাজারেরও বেশি ইউপির ভোট হবে।
চলতি বছরের মধ্যেই ইউপি নির্বাচন শেষ করা হবে উল্লেখ করে ইসি সচিব বলেন, দেশের ৩ হাজার ৭ শ’র মত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের উপযোগী রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ৩৬৪টির ভোট হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ৮৪৮টির তফসিল হয়েছে। তৃতীয় ধাপের জন্য ১০০৭ টিতে তফসিল সম্পন্ন হলো। এভাবে পর্যায়ক্রমে অন্যগুলোর তফসিল হবে। তবে কতটি ধাপে ভোট শেষ করা হবে সেটি এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।
এদিকে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ হবার কারণে বরিশালে নির্বাচনী সংঘাতের আশংকা সাধারণ মানুষের। তবে জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার স্পষ্ট বলে দিলেন, পূর্বের ন্যায় এবারও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে বরিশালে। কোনোরকমের নির্বাচনী সহিংসতা কঠিন হাতে দমন করা হবে। জনগণকে নিশ্চিত হয়ে ভোট প্রদানের জন্য ভোট কেন্দ্রে যাবার আহ্বান জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, সুস্থ সুন্দর নির্বাচনের জন্য আমরা সম্পুর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। গত জুলাইয়ের মতোই এ নির্বাচন পরিচ্ছন্ন হবে।